চাকরি ছেড়ে ইউটিউবার 

ভোর নেমেছে লন্ডনে। বাইরে তুষারপাত চলছে। জানালা খুললেই ঘরে ঢুকে পড়বে শরীর জমে যাওয়া ঠাণ্ডা। নিশার মন কিছুটা বিষণ্ণ হয়ে উঠে । দ্রুত তৈরি হয়ে অফিসে যেতে হবে। নিশা বিছানা ছেড়ে ওয়াশ রুমের দিকে ছুটলেন। তৈরি হয়ে মেট্রো স্টেশনের দিকে হাঁটছেন। ধীর পায়ে হাঁটা দুজন কে অতিক্রম করে গেলেন।

তুষারে পা পিছলে যেতে পারে। ঝুঁকি আছে জেনেও কিছুটা দ্রুত পায়ে হাঁটছেন নিশা। অফিসে সময়মত পৌঁছানোর ট্রেন ধরতে না পারলে ৮ মিনিট দেরি হয়ে যাবে। সিটে বসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। যাক, তাহলে সময়মত অফিসে ঢোকা যাবে।

প্রতিদিন একই অফিস, একই ধরনের কাজ। ধীরে ধীরে একঘেয়ে ঠেকছিল। ২০২২ সালে লন্ডনে ক্রেডিট এগ্রিকোলে সহকারী পরিচালক হিসেবে বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসেবে যোগদান করেন নিশা। তারপর থেকে একটানা চলছে। অফিসে বেশ সুনাম। কাজে কর্মে দারুন দক্ষ আর পরিশ্রমী। বাৎসরিক বেতন টাও মোটা অঙ্কের। ডলারে যার হিসাব বছরে ২ লাখ ৫৬ হাজার । বাংলায় দাঁড়ায় ৩,২১,৭১,২৩৮ টাকা !

জীবনে সফল হতে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের জীবনের যে দিক গুলোতে উদ্দীপনা পাবেন। 

এত বেতন, সম্মানজনক সর্বমোট ৯ বছরের কর্পোরেট ক্যারিয়ার তারপরেও একটা শূন্যতা অনুভব করেন নিশা। এখানে গৎবাঁধা একই কাজ, বিভিন্ন কর্পোরেশন, সরকারি পক্ষকে সহযোগিতা করা। কাজে কোন থ্রিল পাচ্ছিলেন না। গভীর ভাবনায় ডুবে গেলেন। কি করা যায় ? কি করা যায় ?

সিদ্ধান্ত ফাইনাল। ছেড়ে দিবেন চাকরি। মানুষের জন্য কাজ করবেন। মানুষের সাথে রিলেটেড থাকবেন। মানুষের জন্য কাজ করায় উত্তেজনা, আনন্দ, চ্যালেঞ্জ আছে। সেই সাথে মানসিক তৃপ্তি। যেই কথা সেই কাজ। অফিসে জানিয়ে দিলেন চাকরি টা তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন। হই হই পড়ে গেল অফিসে। এমন চাকরি কেউ ছাড়ে ?

একজন সহকর্মী জিজ্ঞেস করলেন চাকরি ছেড়ে কি করতে চান আপনি ?

কন্টেন্ট ক্রিয়েট করব। ইউটিউবার হব। বললেন নিশা, চমকে উঠলেনসহকর্মী, একই সাথে হতাশ।

একটা কাজ নিশা খুব ভালোভাবে করতে পারতেন। ব্যক্তিগত অর্থায়ন এবং আর্থিক খাতের কঠিন বিষয়গুলো সবার কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করতে। একবার তিনি তার বাবা-মাকে সাহায্য করেছিলেন প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড কর এড়িয়ে যেতে।

ইরানের বিখ্যাত শাসক নাদির শাহ্‌ কিভাবে দিল্লি জয় করলেন। 

তো নিজের এই জ্ঞ্যানকে ছড়িয়ে দিতে কন্টেন্ট ক্রিয়েট শুরু করলেন। ভিডিওর বিষয়বস্তু ছিল ব্যক্তিগত অর্থায়ন ও আত্মউন্নয়ন। ধীরে ধীরে তার চ্যানেলে ১০ লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার যুক্ত হয়। সি এন এন থেকে সাংবাদিক আসে সাক্ষাতকার নিতে। নিশা দারুন আনন্দিত হয়। নিশা এক বছরে ইউটিউব থেকে আয় হয়েছে বাংলা টাকায় ১১ কোটি টাকা সি এন এন কে জানায়। চোখ কপালে ওঠার মত বিষয় !!

২০২২ সালের জুনে নিশা সিদ্ধান্ত নেন প্রতি সপ্তাহে দুটি করে ভিডিও আপলোড করবেন তিনি। পরে একই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নিশা প্রতিদিন একটি ভিডিও আপলোড করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে এক মাসে ৫০ হাজার সাবস্ক্রাইবার পান। বর্তমানে তার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১৫ লাখের বেশী।

১৫ জুলাই ২০২৪ ইং সালে আমাদের মিডিয়া গুলো আগ্রহভরে প্রকাশ করে ইউটিউবার নিশা সাহার সফলতার গল্প।

ইউটিউবার নিশার কন্টেন্ট দেখলে বুঝবেন, কেন তিনি দ্রুত সফল হলেন।