রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস কি ক্ষতিকর – শক্তির উৎস রেডমিট খাবেন ৬ টি কারনে Is red meat harmful? – 6 reasons to eat red meat, a source of energy

রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস
মেরিন কোলাজেন তারুন্য ধরে রাখে - Marine colagen কিনতে এখানে ক্লিক করুন

রেডমিট বা লাল মাংস কি আসলেই ক্ষতিকর? কখন এটি নিরাপদে খাবেন 

ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে যখন লাল রঙে লেখা ‘রেডমিট খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ’ উপদেশটি চোখে পড়ল, তখন হয়তো আপনার মন ভেঙে গিয়েছিল। গরুর মাংসের স্বাদ, খাসির লেগ রোস্ট বা ভেড়ার ভুনা মাংসের মতো প্রিয় খাবারগুলো ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা মনে হতাশা নিয়ে আসে। আপনি ভাবছেন, যদি প্রিয় খাবারই না খেতে পারি, তবে শুধু ঔষধ খেয়ে কী লাভ?

ভয় নেই! লাল মাংসের ব্যাপারে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। রেডমিট ক্ষতিকর কিনা, তার উত্তর নির্ভর করে আপনি কেমন জীবনধারা অনুসরণ করছেন তার উপর। সঠিক লাইফস্টাইল মেনে চললে আপনি ঔষধ ছাড়াই সুস্থ থাকতে পারবেন এবং তৃপ্তি সহকারে লাল মাংস খেতে পারবেন আজীবন।

আসুন, প্রথমে জেনে নিই রেডমিট আমাদের জন্য কতটা উপকারি এবং কেন এটি বর্জন করা কঠিন।

জেনে নিন মোবাইল পরিবারে কি ক্ষতি করছে 

রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস
রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস

রেডমিট কী এবং কেন এটি লাল?

লাল মাংস বা রেড মিট বলতে বোঝায় প্রাপ্তবয়স্ক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাংস। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এতে মায়োগ্লোবিন (Myoglobin) নামক প্রোটিনের উচ্চ উপস্থিতি। এই মায়োগ্লোবিনের কারণেই মাংস অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে লালচে দেখায়।

সাধারণ রেডমিট উৎস: গরুর মাংস, মহিষের মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস, দুম্বার মাংস, উটের মাংস এবং হরিণের মাংস।

রেডমিটের অপরিহার্য উপকারিতা

লাল মাংসকে প্রায়শই খারাপ চোখে দেখা হলেও এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান সরবরাহ করে:

অ্যামাইনো অ্যাসিডের একমাত্র সম্পূর্ণ উৎস

রেডমিটে প্রায় ২০ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যার মধ্যে ৯টি হলো ‘এসেনশিয়াল’ (অপরিহার্য)। আমাদের শরীর এই ৯টি এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না; এগুলো অবশ্যই খাবার থেকে গ্রহণ করতে হয়। একমাত্র রেডমিটেই এই ৯টি এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড একসাথে পাওয়া যায়।

কেন মানুষ এত হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছে 

রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস
রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস

শরীরে অ্যামাইনো অ্যাসিডের মূল কাজ:

১. গঠন ও মেরামত: পেশি, হাড়, চুল, নখ এবং চামড়া তৈরির জন্য প্রোটিন অপরিহার্য, যা অ্যামাইনো অ্যাসিড দ্বারা গঠিত।

২. হজম ও বিপাক: হজম প্রক্রিয়া, মেটাবলিজম, হরমোন নিয়ন্ত্রণ ও স্নায়বিক সংকেতে অ্যামাইনো অ্যাসিড বিশেষ প্রোটিন ও হরমোন তৈরি করে।

৩. রোগ প্রতিরোধ: অ্যামাইনো অ্যাসিড দ্বারা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৪. শক্তির উৎস: অন্য কোনো উৎস থেকে শক্তি না এলে শরীর অ্যামাইনো অ্যাসিড ভেঙে শক্তি উৎপন্ন করে।

৫. মানসিক স্বাস্থ্য: ট্রিপটোফ্যান, টাইরোসিনের মতো অ্যামাইনো অ্যাসিড মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মতো রাসায়নিক উৎপাদনে সাহায্য করে, যা আমাদের মেজাজ ও ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে।

৬. টিস্যু বৃদ্ধি: ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু সারিয়ে তুলতে এবং নতুন টিস্যু বৃদ্ধিতে অ্যামাইনো অ্যাসিডের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

এখন প্রশ্ন হল, এত উপকারী খাবার খাবেন না ? উত্তর হ্যাঁ অথবা না দুটোই হতে পারে।
যদি বর্তমান প্রেসক্রিপশনে চলেন, বাকি জীবন ঔষধ খাবেন। অসুস্থ থাকবেন। সুস্বাদু রেডমিট খেতে পারবেন না।

রেডমিট খাওয়ার জন্য দরকার হেলদি লাইফস্টাইল

লাল মাংস তখনই ক্ষতিকর হয়ে ওঠে, যখন আপনার জীবনযাত্রা স্বাস্থ্যকর হয় না। আপনি যদি বর্তমান জীবনধারা এবং প্রেসক্রিপশনে চলেন, তবে বাকি জীবন অসুস্থ থাকবেন। কিন্তু যদি আপনি আপনার লাইফস্টাইল বদলান, তবে ঔষধ ছাড়াই সুস্থ থাকবেন এবং লাল মাংস তৃপ্তি সহকারে খেতে পারবেন।

একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার (Healthy Lifestyle) জন্য এই ৭টি বিষয়ে মনোযোগ দিন:

গ্রিন টির উপকারিতা জানলে আজ থেকেই খাওয়া শুরু করবেন 

রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস
রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস

১. স্বাস্থ্যকর খাবার (সঠিক চর্বি ও পুষ্টি)

স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো চিনতে হবে। মনে রাখবেন, রেডমিট ক্ষতিকর নয়, ক্ষতিকর হলো জাঙ্ক ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত চিনি। আপনার হাতের কাছের সেরা খাবারগুলো বেছে নিন:

  • প্রাকৃতিক খাবার: দেশি শাক-সবজি, দেশি মুরগি, হাঁস, দেশি মুরগি/হাঁসের ডিম, ভেড়া/ছাগলের মাংস, দেশি গরুর মাংস, ঘি, মধু, মাখন, সব ধরনের বাদাম, ডাল বা শস্য দানা, দেশি ফলমূল, নদীর মাছ, সমুদ্রের মাছ।
  • মিষ্টিতে সতর্কতা: মিষ্টি জাতীয় খাবারে প্রক্রিয়াজাত চিনির বদলে দেশি চিনি বা লাল চিনি, গুড় বা নারকেল চিনি ব্যবহার করুন।

২. প্রোবায়োটিক (অন্ত্রের স্বাস্থ্য)

পাকস্থলী সুস্থ রাখতে প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার অপরিহার্য। এটি আপনার হজম এবং সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করবে।

  • প্রোবায়োটিক উৎস: কিমচি, সাওয়ার ক্রাউট, টক দই, ডার্ক চকোলেট, পনির এবং আপেল সিডার ভিনেগার।

৩. ব্রিদিং এক্সারসাইজ (শ্বাসের ব্যায়াম)

মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে শ্বাসের ব্যায়াম খুব জরুরি।

  • পদ্ধতি: ইউটিউবে ডাঃ উইলসের ৪-৭-৮ শ্বাসের ব্যায়াম বা উইম হফের শ্বাসের ব্যায়াম অনুসরণ করতে পারেন।

৪. নিয়মিত ব্যায়াম

সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।

  • নিয়ম: সপ্তাহে অন্তত ৪-৫ দিন ৩০-৪০ মিনিট হালকা বা মাঝারি মানের ব্যায়াম অবশ্যই করুন।

৫. ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা রোজা

নিয়মিত ফাস্টিং বা রোজা রাখা স্বাস্থ্যকর জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শরীরের মেটাবলিক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।

৬. স্ট্রেস বা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

মানসিক চাপ ভালো ঘুম নষ্ট করে এবং হজমের সমস্যাসহ অনেক রোগের জন্ম দেয়।

  • ধর্মীয় ও সামাজিক কাজ: নিয়মিত নামাজ আদায় করুন, ধ্যান বা মেডিটেশন করুন। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করুন এবং সামাজিক মেলামেশা বাড়িয়ে দিন।
  • শ্বাসের ব্যায়াম: এটি মানসিক চাপ কমাতেও দারুণ কার্যকর।

৭. সূর্যের আলো

ভিটামিন ডি-এর প্রাকৃতিক উৎস হলো সূর্যের আলো, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।

  • সময়: প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে অন্তত ৩০ মিনিট সূর্যের আলো গায়ে লাগানোর চেষ্টা করুন। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩-৪ দিন এটি করা উচিত।

রেডমিট নিয়ে ডাঃ এরিক বারগ কি বলেন 

রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস
রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস

সহজ এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি শুধু রেডমিটই খেতে পারবেন না, বরং আজীবন ঔষধ ছাড়াই সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।

যারা রেডমিট খেতে ভয় পান, তাদের এই পোস্টটি শেয়ার করে দিন।

লেখক: সেলিম হোসেন – ১৫/০৯/২০২৫ ইং তথ্যসূত্র: Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals. 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *