জীবনানন্দ দাস এবং
ডিপ্রেশনের ভয়াবহতা। কবি কি ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। ডিপ্রেশন কবির কি সমস্যা তৈরি করেছিল। আমারা বিস্তারিত জানব। চলুন শুরু করি। ১৮৯৯ সালের ১৭ ই এপ্রিল বরিশালে জন্ম গ্রহন করেন। বাংলা সাহিত্যে জীবনানন্দ দাস খুবই প্রভাবশালী কবি, ধারনা করা হয় রবীন্দ্র, নজ্রুলের পর তার কবিতাই সবচেয়ে বেশি পঠিত হয়েছে। তার বিখ্যাত কবিতা , বনলতা সেন, সুরঞ্জনা ইত্যাদি।
জীবনানন্দ দাস কাব্য চিন্তার বৈশিষ্ট
আমাদের এই কবির কবিতায় বারবার উঠে এসেছে প্রকৃতির ছবি। বাংলার সৌন্দর্য কে তিনি তুলে ধরেছেন অমর কাব্য গ্রন্থ ‘ রূপসী বাংলায়’। তাঁর কবিতায় শুধু প্রকৃতি নয়, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্কও প্রকাশিত। নিঃসঙ্গতা, জীবন এবং মৃত্যুর প্রতি তাঁর গভীর দৃষ্টিভঙ্গি কবিতাকে আরও মরমি করে তুলেছে। যেমন- তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বনলতা সেন’, যেখানে তিনি এক নির্জন, ক্লান্ত জীবনের শেষে শান্তি খুঁজে পান বনলতা সেনের মধ্যে। যদিও কবির সমালোচকরা বলেন, বনলতা সেন কবিতাটি মার্কিন লেখক, কবি এডগার এলান পো এর লেখা ” To Helen ” কবিতার অনুবাদ কপি।
জেনে নিন – কোন অভ্যাস রাতের ঘুম নষ্ট করে।
জীবনানন্দ দাস ও আধুনিকতা
আমাদের বাংলা সাহিত্যে প্রথম আধুনিক কবি কে, অনেকেই রায় দিয়েছেন জীবনানন্দ দাস। তাঁর কবিতার মধ্যে রূপ ও বোধের যে সমন্বয় তা সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিল। তাঁর কবিতার ভাষা এবং শব্দের ব্যবহার ছিল পরিমিত কিন্তু শক্তিশালী। অন্যদিকে কবিতার ছন্দ ও বিন্যাসে যে গভীরতা পাওয়া যায়, তা বাংলা আধুনিক কাব্যের বিকাশে দারুন ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ প্রকাশের পর থেকে তিনি আধুনিক কবিতার অন্যতম পথিকৃৎ হয়ে ওঠেন। কবি হিসেবে সমাদৃত ও পরিচিত হলেও তার বাংলা সাহিত্যে সমান অবদান রয়েছে, তিনি তার মৃত্যুর পূর্বে ২১ টি উপন্যাস এবং ১২৬ টি ছোট গল্প রচনা করে গেছেন।
কবির জীবনীকাররা বলেন, দাম্পত্য জীবনে কবি ছিলেন ভীষণ অসুখী, অভাব অনটন, প্রেম বিষয়ক জটিলতা, সবকিছু মিলিয়ে তিনি ছিলেন দারুনভাবে ডিপ্রেসড। দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে তিনি সপরিবারে কলকাতা চলে যান, সেখানে বেশ কিছুদিন বেকার থাকেন, ডিপ্রেশন আরও বেড়ে যায়।
তখনকার সময়ে কলকাতার লোকজনের যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল ট্রাম। ঘড়ঘড় শব্দে রেলগাড়ির মত দেখতে ট্রাম চলে বেশ ধীর গতিতে, একটু দ্রুত গতিতে হাঁটলে ট্রামের সাথে পাল্লা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। তাই বাস, ট্রাক এর মত ট্রামে মানুষ এক্সিডেন্ট করে না, মারা যায় না।
জীবনানন্দ দাস, একটি প্রিয় কবিতা
তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও — আমি এই বাংলার পারে
র’য়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে;
দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে
ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে
নেচে চলে-একবার — দুইবার — তারপর হঠাৎ তাহারে
বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে নিয়ে হৃদয়ের পাশে;
দেখিব মেয়েলি হাত সকরুণ — শাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে
শঙ্খের মতো কাঁদে: সন্ধ্যায় দাঁড়ালে সে পুকুরের ধারে,
খইরঙা হাঁসটিরে নিয়ে যাবে যেন কোন্ কাহিনীর দেশে –
‘পরণ-কথা’র গন্ধ লেগে আছে যেন তার নরম শরীরে,
কল্মীদামের থেকে জন্মেছে সে যেন এই পুকুরের নীরে –
নীরবে পা ধোয় জলে একবার — তারপর দূরে নিরুদ্দেশে
চ’লে যায় কুয়াশায় — তবু জানি কোনোদিন পৃথিবীর ভিড়ে
হারাব না তারে আমি — সে যে আছে আমার এ বাংলার তীরে।
দেখুন – ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।
জীবনানন্দ দাস – ডিপ্রেশন, মৃত্যু
কিন্তু জীবনানন্দ দাস ছিলেন ডিপ্রেসড, তাই উদ্ভ্রান্তের মত পথ চলতে গিয়ে ১৯৫৪ সালে ১৪ ই অক্টোবর দক্ষিণ কোলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন ও ২২ শে অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
যারা ডিপ্রেশনে ভোগেন, তাদের জীবন ভয়ংকর জটিল সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়। আপনি বা আপনার কোন নিকটজন ডিপ্রেশনে ভুগলে মুক্তি পেতে পারেন সহজেই। প্রথমত যে কাজটি করতে হবে, মনোযোগ দিয়ে প্রার্থনা করতে হবে, অর্থ্যাত নামাজ আদায় করতে হবে। দ্বিতীয়ত নিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে, এটা ম্যাজিকের মত কাজ করে। তৃতীয়ত নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, ব্যায়াম ডিপ্রেশন দূর করতে দারুন কাজ দেয়। এর সাথে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করবেন।
ডিপ্রেশন দূর করা কোন ব্যাপারই না, শুধু আপনার সচেতনতা প্রয়োজন। জীবনানন্দ দাস এবং ডিপ্রেশনের ভয়াবহতা। আমরা কি কিছু শিখলাম ?
সেলিম হোসেন – তাং ১৭/০১/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী