প্রতিদিন কয়টা ডিম খাবেন ? কেন খাবেন ? ডিমের একটি রম্য গল্প। How many eggs can I eat per day ? 1 Funny story of egg.

ডিম
ডিমের দাম 

ছোট গোলাকার এই খাদ্য টিকে বলা হত, গরীবের প্রোটিন। কিন্ত দামের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে ডিম! তাই এই খাবার টি গরীবের প্রোটিনে সীমাবদ্ধ নেই। এটা কিনতে হলে বেশ পয়সা গুনতে হয়। আর এই প্রাণীজ খাবারের পুষ্টিগুন নিয়ে অনেকেই অবগত। তাই এটির চাহিদা এখন ধনী, গরীব, মধ্যবিত্ত সবার কাছে সমান। ব্যাপক চাহিদার কারনে দাম সমসময়ই ঊর্ধ্বমুখী। 

ডিম

ডিম খাওয়ার উপকরিতা 

শরীরে দ্রুত এনার্জি আসে এটি খেলে। এতে থাকা ভিটামিন বি খাদ্যকে অ্যানার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করে। তাই প্রতিদিন ব্রেক ফাস্টে খেলে সারাদিন ক্লান্তহীন থাকবেন। 

এতে থাকে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে। তাছাড়া আরও আছে কেরোটিনয়েড আর ল্যুটেন। যা বয়স হয়ে গেলে চোখের এক বড় সমস্যা, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

আরও আছে ভিটামিন ই যা কোষ আর ত্বকে থাকা ফ্রি র‍্যাডিকেল ধ্বংস করে। তাই ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও নতুন কোষ তৈরি হতেও সাহায্য করে থাকে। নিয়মিত খেলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

পেশী ব্যথায় অনেকেই ভোগেন। এতে থাকা ভিটামিন ডি পেশী মজবুত করে। নিয়মিত যারা ব্যায়াম এবং আমাদের হেলদি লাইফ স্টাইল অনুসরণ করেন তারা প্রতিদিন ৬- ৮ টা খেতে পারেন। 

নারী স্বাস্থ্যের উন্নতিতে জন্য প্রতিদিন ৫০-৬০ শতাংশ প্রোটিন দরকার হয়। যা এই সহজ পাচ্য খাদ্য থেকেই পাওয়া যায়। একটি ডিম থেকে ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন মিলতে পারে। 

এক সমীক্ষায় জানা গেছে, নিয়মিত খেলে হার্টে রক্ত জমাট বাঁধে না। তাই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি সারা শরীরেই রক্ত চলাচল সচল থাকে।

ওজন কমিয়ে আজীবন কিভাবে সুস্থ থাকবেন উপায় গুলো জেনে নিন।

ডিম

অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা আছে, এই খাবার টি খেলে নাকি কোলেস্টেরল বাড়ায়। যা একদমই ভুল। বরং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ওমেগা ৩ এই কাজটি করতে সাহায্য করে। আবার এই খাবার টি এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় প্রায় ১০ শতাংশ।

এটা লিপিড প্রোফাইলও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়া লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই রোজ নিয়ম করে খাবেন।

শরীরের সার্বিক সুস্থতায় কোলাইন খুবই প্রয়োজন। কোলাইনের ঘাটতি হলে লিভারের নানা সমস্যা বা নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হয়। ডিমে প্রায় ৩০০-৩৫০ মাইক্রোগ্রাম কোলাইন থাকে। তাই এটা খাবারে থাকলে লিভার ও স্নায়ু ভালো থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

প্রোটিনের মূল উৎস হলো অ্যামিনো অ্যাসিড। প্রোটিন তৈরিতে প্রায় ২১ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড লাগে। যার মধ্যে ৯টি শরীরে তৈরি হয় না। এজন্য বাইরে থেকে প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। যা মেলে ডিম থেকে।

হু হু করে বাড়ছে কিডনি রোগী। কিভাবে সুস্থ রাখবেন কিডনিকে জেনে উপায় গুলো। 

ডিম

নখ ভেঙ্গে যাওয়ার সমস্যায় অনেকই ভোগেন। নখ মজবুত করে সালফার। আর ডিম হলো এই সালফারের উৎস। নখকে সুন্দর ও সাদা রাখতেও সাহায্য করে সালফার। তাই নিশ্চিন্তে খেতে থাকুন।

অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় নারী ও শিশুরা বেশি ভোগে। শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন থাকলে অ্যানিমিয়া হয় না। আর এতে থাকে আয়রন। তাই নিয়মিত খেলে রক্তাল্পতার সমস্যার সমাধান হয়।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দুর্দান্ত কার্যকরী। ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা জ্বরে ভুগতে না চাইলে প্রতিদিন খান। এতে থাকা জিংক ইমিউনিটি সিস্টেমকে অনেকটাই শক্তিশালী করে।

হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে । হাড় মজবুত করে ফসফরাস। এই উপাদানটি আবার দাঁতও মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে এটা খাওয়া বন্ধ করবেন না। 

অনেকেই মনে করেন ডিম বোধ হয় ওজন বাড়ায়। বিশেষ করে এর কুসুম ওজন বাড়িয়ে দেয়! তবে এ ধারণা ভুল। বরং এটা ওজন কমাতে পারবেন। কারণন এটা অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। 

আপনার একটি বদ অভ্যাসে রাতে ঘুম আসে না, দেখুন কোন সেই বদ অভ্যাস। 

ডিম

ডিম কিভাবে খাবেন 

খাবেন অথচ ক্যালরির কথা ভাবছেন ? ওজন বা কোলেস্টেরল কমানোর কথা চিন্তা করেন। ফ্যাটি লিভারের কথা ভেবে ভয় পাচ্ছেন। তাহলে পোঁচ করে খান, ঘি বা নারিকেল তেল দিয়ে পোঁচ করবেন। সাদা অংশটা সিদ্ধ হবে, কুসুম কাঁচা থাকবে। 

পুষ্টি সর্বাধিক পেতে যতটা সম্ভব কম তাপমাত্রায় স্বল্প সময়ে রান্না করুন। যদি সুযোগ থাকে ফার্মের টা খাবেন না। এক্ষত্রে হাসের ডিম পাওয়া টা সহজ হবে। দেশি হাঁস বা মুরগীর ডিম বেশি পুষ্টিকর। দেশি প্রাকৃতিক চারণ করা মুরগি বা হাঁসের ডিমে ভিটামিন এ, ই, ওমেগা থ্রি ও ভিটামিন ডি ফার্মের চেয়ে তিন গুণ বেশি। সেই সাথে কোন এন্টিবায়োটিক বা রাসায়নিক থাকে না। ফার্মের মুরগীদের প্রচুর এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। খাবারে রাসায়নিক মেশানো থাকে। 

ডিম রান্নার ক্ষেত্রে ভালো তেল নির্বাচন করা উত্তম। যেমন অ্যাভোকাডো ও নারিকেল তেল এবং খাঁটি সরিষার তেল।  

এতে কোনো ফাইবার থাকে না। এ কারনে ফাইবার তথা আঁশ এর সাথে যোগ করুন, পালংশাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদি। 

এটা চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন হওয়ায় একে তেল বা ঘি দিয়ে খেলে সহজে শরীরে শোষিত হবে। তবে অবশ্যই তেল দিয়ে দীর্ঘ সময় ভাজবেন না।  

প্রতিদিন কয়টা খাবেন ? কেন খাবেন ? ডাঃ মজিবর রহমান কি বলেন। 

ডিম

সবুজ রঙের পালং শাকের সাথে ডিম। এখন বাজারে পালং শাক অনেক পাওয়া যায়। দামে কম এবং পুষ্টিকর। চারটা খেতে পারেন একসাথে।  তাই বলে এত গুলো একসাথে। সমস্যা হবে না ? না, কোন সমস্যা নেই বরং সাস্থ্যকর। এখানে প্রচুর হেলদি ফ্যাট রয়েছে। এই সহজপাচ্য খাবারে শুধুমাত্র ভিটামিন সি নেই। সবরকম পুষ্টি রয়েছে  কুসুমে। সাদা অংশ সবচেয়ে সহজে হজমকৃত প্রোটিন।

প্রতিদিন চারটা খেতে পারেন পূর্ণ “Meal” হিসেবে। তবে তারাই খেতে পারবেন যারা হেলদি লাইফ স্টাইল অনুসরন করেন। হেলদি ডায়েটে দিনে সর্বোচ্চ দুইবার “Meal” খাওয়া যায়। কেউ কেউ “One meal a day” সম্পন্ন করেন।অমলেট তৈরিতে ব্যবহার করেছি।  উপরের ছবিটা আমার ব্রেকফাস্ট এবং লাঞ্চ একসাথে। 

পড়ুন – অরগানিক খাবারের দেশ ভুটান। 

চারটা ডিম / পরিমাণ মতো পালং শাক / সরিষার তেল/ পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ / গোল মরিচের গুঁড়ো এবং পিং সল্ট। প্রথমে সালাদ খেয়েছি , এরপর অমলেট। চারটা খাওয়ার পরে যদি আরো খাবার খেতে ইচ্ছা হয়, তাহলে আপনারা ব্ল্যাক রাইস ঘি দিয়ে খেতে পারেন।

ডিম

ডিম নিয়ে গল্প 

ডিম কিনতে গিয়ে দোকানদার ভাঙা ডিম দিল কিনা খেয়াল রাখলেই হয়। কিন্ত অনেকেই ডিম বাছাবাছি করেন। এটা নিবনা, ওটা ছোট, ওটা চ্যাপ্টা, এত দাম কেন, নানান কথা বলেন। এরকম ক্রেতাদের উপর দোকানিরা বিরক্ত হন। তো এরকম এক ভদ্রলোক বাজারে গেছেন ডিম কিনতে। লোকটি দেখতে শুনতে ভালো, অনেক লম্বা। দরদাম করছেন। বললেন, ডিম গুলো এত ছোট কেন ?

দোকানদার স্থানীয় ঢাকাইয়া। বললেন, ডিম ভি বহুত বড় আছে। কিন্ত আপনি হালায়, তাল গাছের হমান লম্বা। অনেক উপর থেইকা দেখতেছেনতো, তাই ছোট মালুম হইতেছে।

ডিম

সেলিম হোসেন – ১২/০১/২০২৪ ইং     

Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *