কিছুই ভালো লাগেনা? অস্থির মন ও ডোপামিন আসক্তি থেকে মুক্তির ১৫ দিনের রুটিন!
উফ! আর ভাল্লাগে না। এই অনুভূতিটা কি আপনার খুব পরিচিত? রিলস থেকে শর্টস, টিকটক থেকে ফেসবুকে endless স্ক্রলিং—তারপরেও শান্তি নেই। কোনো পোস্টে গালি শুনে মেজাজ খারাপ হওয়া, আবার মিডিয়ায় সুন্দরীদের হাসিমুখ দেখে মনে নানান ইচ্ছা জাগা… ঠিক এমন সময় স্ত্রীর ফোন এলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠা। হঠাৎ করেই সবকিছু বিস্বাদ, স্ত্রীকে বিরক্তিকর মনে হওয়া, সেক্স ড্রাইভ কমে যাওয়া, আর বার্গার, কেক, মিষ্টির প্রতি প্রবল ক্ষুধা?
আপনার এই ভালো না লাগার মূল কারণ হলো: আপনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন—মস্তিষ্কের ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের ওপর।
আজই এই চক্র থেকে বেরোনোর উপায় জানা যাক!

নিউরোট্রান্সমিটার এবং কিছুই ভালো লাগেনা
নিউরোট্রান্সমিটার হলো রাসায়নিক বার্তাবাহক, যা ছাড়া আপনার শরীর কাজ করতে পারে না। তারা নিউরন (স্নায়ু কোষ) থেকে কাছাকাছি নিউরনে রাসায়নিক সংকেত বহন করে।
আমরা যখন খুশি হই বা আনন্দ পাই, তখন এই বার্তাবাহক নিউরন থেকে নিউরনে আনন্দ সংবাদ পৌঁছে দেয়। আবার, দুঃখ বা কষ্টের কিছু দেখলে নিউরোট্রান্সমিটার বিস্বাদের বার্তা পাঠায়।

ডোপামিন (Dopamine): আনন্দের চালক
ডোপামিন হলো সেই নিউরোট্রান্সমিটার যা আনন্দ, উদ্দীপনা এবং আমাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো ঠিক এই ডোপামিনকেই লক্ষ্য করে ডিজাইন করা হয়েছে।
- ডোপামিন: আনন্দ, পুরস্কার, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ।
- সেরোটোনিন: মেজাজ, আবেগ এবং সামাজিক আচরণের নিয়ন্ত্রণ।
- GABA (গাবা): সংকেত প্রবাহে বাধা দেয়; শান্ত থাকার অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে।
- অ্যাসিটাইলকোলিন: মনোযোগ, স্মৃতি এবং ঘুম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ক্রমাগত ফ্যাটিগ নিয়ে বিস্তারিত বলছেন ডাঃ এরিক বারগ

ডোপামিন সোশ্যাল মিডিয়ার দখলে
আপনার মনোযোগ বা ‘ফোকাস’ হলো আপনার অমূল্য সম্পদ। সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন অ্যাপ এই মনোযোগকে দখল করে তা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে। তাদের আয় বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর আবিষ্কার হলো নোটিফিকেশন। এই নোটিফিকেশনই আমাদের ক্রমাগত স্ক্রিন চেক করতে বাধ্য করে।
আসক্তির চক্র:
১. প্রথম দিকে: অল্প কন্টেন্ট দেখলেই ডোপামিন আপনাকে আনন্দ দিত এবং আপনি মজা পেতেন। ২. বর্তমানে: আপনার মস্তিষ্ক এখন সেই অল্প ডোপামিনে আর সন্তুষ্ট নয়। ঘন্টার পর ঘণ্টা স্ক্রলিং করেও বিরক্ত হয়ে পড়ছেন, কারণ কোনো কন্টেন্টই ব্রেইনে চাহিদামতো ডোপামিন উদ্দীপিত করতে পারছে না।
এই ডোপামিন ডে-সেনসিটাইজেশনের কারণেই আপনার জীবনে শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। ফলস্বরূপ: কিছুই ভালো লাগেনা, ঘুমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে বা বাড়িতে সামান্য কারণে অতিরিক্ত রাগ ও বিরক্তি।

অশান্ত হৃদয়কে শান্ত করার ১৫ দিনের চ্যালেঞ্জ
এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য আজই নিজেকে ১৫ দিনের একটি রুটিন দিন। এটি আপনার ডোপামিন রিসেপ্টরকে রিক্যালিব্রেট করবে এবং জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে।
যা যা অবশ্যই করবেন:
১. সোশ্যাল মিডিয়ার সময় সীমিত করুন:
- সারাদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় কাটাবেন না।
- রাত ৯ টার পর ফোন থেকে দূরে থাকুন।
- সকাল ৯ টার পূর্বে কোনো অ্যাপে ঢুকবেন না। সম্ভব হলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার একেবারেই বন্ধ করুন।
২. চিনি ও প্রসেসড খাবার বাদ দিন:
- চিনিযুক্ত খাবার এবং প্রসেসড ফুড খাওয়া ছেড়ে দিন। সানফ্রানসিসকো ইউনিভারসিটির অধ্যাপক রবার্ট লাসটিংয়ের মতে, চিনির আসক্তি নিকোটিনের মতোই শক্তিশালী।
৩. সূর্যের আলোয় থাকুন:
- প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে ৩০-৪৫ মিনিট রোদে থাকুন। এটি ভিটামিন ডি এবং সেরোটোনিন নিঃসরণে সাহায্য করে।
৪. টিভি দেখা নিয়ন্ত্রণ:
- সন্ধ্যার পর টিভির সামনে বসবেন না। এটিও আপনার বিরক্তির অন্যতম কারণ হতে পারে।
৫. ব্যায়ামের বিকল্প নেই:
- প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম প্রাকৃতিকভাবে ডোপামিন নিঃসরণ করে, যা আপনার মনকে ভালো লাগার অনুভূতি দেবে।
৬. আধ্যাত্মিকতা বা মেডিটেশন:
- জামাতে মনোযোগ দিয়ে নামাজ আদায় করুন (অন্য ধর্মের হলে মেডিটেশন করুন)। এটি আপনার ‘ফোকাস’ বাড়াতে সাহায্য করবে।
৭. স্বাস্থ্যকর খাদ্য:
- প্রতিদিন খাবারে ডিম, ঘি, এবং বাদাম রাখুন।
- গরুর মাংস খেতে কোনো বাধা নেই, তবে তা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রান্না করা হতে হবে।
৮. জীবন্ত খাবার খান:
- প্রতিদিন সালাদ খান। ভাতের চেয়ে সবজি বেশি খান। অবশ্যই লাল চালের ভাত খান।
৯. সুযোগের ব্যবহার:
- সময় পেলেই অফিসের চেয়ার ছেড়ে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন।
১০. শ্বাসের ব্যায়াম:
- নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম করুন। (যেমন: ইউটিউবে ‘Wim Hof Method’ বা ‘Dr. Weil 4-7-8 Breathing’ লিখে সার্চ দিতে পারেন)।

এভাবে মাত্র ১৫ দিন চলুন। আপনি নিজেই অনুভব করবেন জীবনে শৃঙ্খলা ফিরেছে, মনে তৃপ্তি পাচ্ছেন, কাজে ফোকাস বেড়ে গেছে। এমনকি আগের চেয়ে স্ত্রীকে অনেক বেশি সুন্দরী মনে হবে!
বহু মানুষ এমন সমস্যায় ভুগছেন। সবার উপকারের জন্য পোস্টটি শেয়ার করে দিন।
লেখক: সেলিম হোসেন – তাং – ০৬/০৯/২০২৫ ইং









