স্বপ্নময় শৈশব কাল এবং কৈশোরে বাবা মায়ের ৫ টি ভুল – 5 mistakes parents make during their dreamy childhood and adolescence

শৈশব কাল এবং কৈশোরে
ওজন কমাতে সুস্থ থাকতে Vinegar capsules

শৈশব কাল এবং কৈশোরে বাবা মায়ের ৫ টি ভুল

প্রস্রাবের চাপে রাতের ঘুম ভেঙে গেল। টয়লেট থেকে ফিরে বারান্দায় দাঁড়ালাম। এখান থেকে মহল্লার অনেক গুলো বাসা চোখে পরে। কিছু বাসার বাতি নিভে গেছে। কোন বাসায় জ্বলছে। পাশের বিল্ডিং থেকে ভেসে আসছে বাচ্চাদের কথা বার্তা আর হাসাহাসির শব্দ। তারা বাবা মায়ের সাথে জেগে আছে। গল্প করছে।

বিছানায় ফিরে ঘড়ির দিকে তাকালাম। রাত ২ টা ১২ মিনিট। অবাক হয়ে গেলাম, বাচ্চা গুলো এখনো জেগে আছে। কত হতে পারে তাদের বয়স ? ৯-১০ বা ১১ বছর। বাবা মা কেন তাদের কে ঘুমাতে পাঠায় নাই ?

বাচ্চাদের বয়স যখন ১০-১২ বছরের মধ্যে থাকে, তখন তারা ‘প্রি টিন’ অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ টিন এজের আগের সময়। এই সময় বাচ্চাদের ঘুমানো দরকার ৮/১০ ঘণ্টা। আমাদের ব্রেইনের মাঝের একটা কাঠামো, সাইজে আঙুর ফলের মত। বিজ্ঞানিরা এর নাম দিয়েছেন ‘ হাইপোথ্যালামাস’।

যে মোবাইল রোগে আক্রান্ত ছোট বড় অনেকেই 

শৈশব কাল এবং কৈশোরে
শৈশব কাল এবং কৈশোরে

শৈশব কাল এবং কৈশোরে হরমোন 

প্রি টিন বাচ্চাদের রাতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ লাইটের মত জ্বলে ওঠে হাইপোথ্যালামাস। আর তার ফলে পিটুইটারি গ্লান্ডে কাজ শুরু হয়। এই গ্ল্যান্ড দু ধরনের হরমোন নিঃসরণ শুরু করে। এই হরমোন দুটো হল FSH এবং LH. সকালের অনেক আগে এবং রাতের মধ্যেই নিঃসরণের ক্ষণস্থায়ী কাজটি সম্পন্ন হয়।

এই দু ধরনের হরমোন রক্তের মাধ্যমে বাচ্চাদের বিভিন্ন অঙ্গে প্রবাহিত হয়। এর ফলে অঙ্গ গুলোতে পরিবর্তন আসে। সহজ ভাষায় যৌবনের আগমন ঘটতে থাকে।

অনেক পরিবার এখন দেরিতে ঘুমাতে যায়। যার বেশীরভাগ কারন, অসচেতনতা আর হেলাফেলা। যা বাবা মা এবং বাচ্চাদের সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রি টিন বাচ্চারা যদি সঠিক সময়ে ঘুমাতে না যায়, তাহলে হরমোন নিঃসরণ ঠিকমত হবেনা।

আর এটা বাচ্চার শারীরিক মানসিক ভাবে বেড়ে উঠতে বাধার তৈরি করবে। বাচ্চা যখন টিন এজে পৌঁছাবে তখন নানান শারীরিক মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারে। আমারা ইতিমধ্যে কিছু লক্ষন দেখছি। কাউন্সেলিং চেম্বারে টিন এজদের ভিড় বাড়ছে। বিপদ এড়াতে, জেনে নেই আমাদের কি করতে হবে।

যে কারনে কমবয়সীদের লিভার নষ্ট হয় 

শৈশব কাল এবং কৈশোরে
শৈশব কাল এবং কৈশোরে

১. অস্বাস্থ্যকর খাবার ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা

শিশুদের সুস্থতার সাথে বেড়ে ওঠার জন্য বাবা-মায়ের সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সমান মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

  • খাবারের ভুল: শিশুদের ন্যাচারাল ও স্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত করুন। প্রসেসড ফুড, জাঙ্ক ফুড, দোকানের জুস এবং সফট ড্রিংকস সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে হবে। অনেক বাবা-মা জেনেও আনন্দের সাথে বাচ্চাদের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ান, যা তাদের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
  • আবেগ উপেক্ষা: কৈশোরকাল অত্যন্ত আবেগপ্রবণ একটি সময়। তাদের আবেগ ও অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখুন। তারা যেন সহজেই তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে। কোনো চাপ অনুভব করলে তা শনাক্ত করে সাহায্যের হাত বাড়ান। তাদের অনুভূতিগুলো আন্তরিকতার সাথে শুনুন। তাদের চিন্তায় সরাসরি বাধা না দিয়ে শুধু ভালো-মন্দের বিষয়টি বুঝিয়ে দিন।

সন্তানের সফলতায় মায়ের ভুমিকা 

শৈশব কাল এবং কৈশোরে
শৈশব কাল এবং কৈশোরে

২. সন্তানের প্রশ্ন ও মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া

আপনার সন্তান যখন বড় হচ্ছে, তখন তার কৌতূহল বাড়ছে। সে জানতে চায়, মতামত দিতে চায়। ল্যাপটপে কাজ করার সময়ও হয়তো সে প্রশ্ন করে বসে।

  • প্রশ্ন না শোনা: শিশুদের কৌতূহলকে গুরুত্ব দিন। তারা যখন কোনো ধারণা বা মতামত প্রকাশ করে, তখন সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাদের স্পষ্টভাষী, আগ্রহী এবং নির্ভীক হতে উৎসাহ দিন।
  • মনের ভাব প্রকাশে সাহায্য: অনেক কিশোর-কিশোরী (বিশেষ করে অন্তর্মুখী) তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। তাদের সাহায্য করুন মনের কথা খুলে বলতে। চিন্তা করতে উৎসাহিত করুন। একইসাথে, সমালোচনা গ্রহণ করতেও শেখান।

যে খাবার গুলো ত্বককে ফর্সা করে 

শৈশব কাল এবং কৈশোরে
শৈশব কাল এবং কৈশোরে

৩. অতিরিক্ত আঁকড়ে থাকা ও নিজস্ব ভাবনা গঠনে বাধা

যখন সন্তান শিশু থেকে কৈশোরে পা দেয়, তখন তার স্বাধীনতা প্রয়োজন হয়। সে তার মতো করে আলাদা রুমে থাকতে চায় বা ব্যক্তিগত পরিসর তৈরি করতে চায়।

  • আঁকড়ে থাকা: অনেক বাবা-মা বাচ্চাদের অতিরিক্ত আঁকড়ে ধরে থাকতে চান, যা তাদের বিকাশের পথে বাধা। এই সময় তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত নিজের মতো করে থাকতে এবং নিজস্ব ভাবনা তৈরি করতে। এটিই নিজেদের পরিচয় এবং দায়িত্ববোধ তৈরি করার মোক্ষম সময়।
  • স্বাধীনতা: সন্তানকে তার নিজস্ব পরিসর (সীমার মধ্যে) তৈরি করে দিন। এতে তার ব্রেইনের বিকাশ ঘটবে এবং সে স্বাধীনভাবে ভাবতে শিখবে। তবে খেয়াল রাখবেন, যেন স্বাধীনতার সুযোগে তার উপর কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে।

ওজন কমাতে যেভাবে খাবেন বুলেট ফফি 

শৈশব কাল এবং কৈশোরে
শৈশব কাল এবং কৈশোরে

৪. অনলাইন বিপদ সম্পর্কে অসচেতনতা ও নজরদারির অভাব

বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেট যেমন আশীর্বাদ, তেমনি এর ক্ষতির দিকও রয়েছে। শৈশব ও কৈশোরে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সাবধান থাকা আবশ্যক।

  • অনলাইন কেয়ারের অভাব: সাইবার বুলিং, হয়রানি, গেমের নেশা, ফিশিং এবং অনলাইন হুমকির মতো অনেক বাজে ঘটনা এখন সংবাদপত্রে আসছে। অনেক বাবা-মা বাচ্চাদের অনলাইন ব্যবহারে খেয়াল করেন না।
  • সচেতনতা: সন্তানদের ডিজিটাল প্রযুক্তির কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার স্বাস্থ্যকর ব্যবহার সম্পর্কে তাদের জ্ঞান দিন। অনলাইনে নানা হুমকি সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তোলা বাবা-মায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সামাজিক মেলামেশা বাড়াতে মাঝে মাঝে আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যান।

বাবা মা যেভাবে সন্তানদের ক্ষতি করেন 

শৈশব কাল এবং কৈশোরে
শৈশব কাল এবং কৈশোরে

৫. শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে বাড়তি আগ্রহে ভুল নির্দেশনা

এই বয়সে ছেলেমেয়েরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে ঘন ঘন যায়, চেহারার দিকে তাকায় এবং শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করে। কেউ তাদের চেহারা নিয়ে কটু কথা বললে তারা মনে খুব কষ্ট পায়, যা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

  • শারীরিক উচ্ছ্বাসকে নিরুৎসাহিত করা: বাবা-মায়ের উচিত তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। তাদের বলুন, “পৃথিবীতে তুমি একজনই। তোমার মতো আর কেউ নেই। তোমার যোগ্যতা তোমাকে সেরা করে তুলবে।” তাদের উৎসাহিত করতে হবে যেন তারা নিজের প্রতি যত্ন নেয় এবং নিজেকে ভালোবাসে।
  • পোশাক ও প্রশ্রয়: টিনএজ সন্তানকে তার পোশাক বাছাই করতে দিন, তবে শালীন ও অশালীন পোশাকের উপযোগিতা বুঝিয়ে দিন। স্বাস্থ্যকর পোশাক চেনা শেখান। পরিণত বয়সের আগেই ড্রাইভিং বা অন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় প্রশ্রয় দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

যাদের কম বয়সী সন্তান আছে, তারা এই বিষয়গুলোতে সাবধান হোন। বাচ্চাকে সঠিক ভাবে বেড়ে উঠতে দেওয়া বাবা-মায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

পোস্টটি ভালো লাগলে সব বাবা-মাকে শেয়ার করে দিন।

শৈশব কৈশোর কাল নিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিউট অব মেন্টাল হেলথের গবেষণা পড়ুন 

শৈশব কাল এবং কৈশোরে
শৈশব কাল এবং কৈশোরে

সেলিম হোসেন – তাং ১১-০৯-২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *