সাপ পৃথিবীর মধ্যে –
সাপ শব্দটা শুনলেই অনেকেই আঁতকে উঠি। ভয়ে জড়সড় হয়ে পরি। আসলে বেশিরভাগ সাপই ভয়ংকর নয়। বরং শান্ত শিষ্ট ভীত। কিছু সংখ্যক আছে যারা বিষাক্ত। যাদের কামড়ে মানুষ বা অন্য প্রাণী মারা যায়। সাধারণত এরা আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে আক্রমণ করে।
পৃথিবীতে প্রায় ৬শরও বেশি প্রজাতির বিষাক্ত সাপ রয়েছে। তাদের মধ্যে ২শ প্রজাতির সাপ মানুষের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কোনো কোনো সাপের কামড়ে পচে যায় শরীরের মাংস। কোনো কোনো সাপ গিলে খেতে পারে আস্ত মানুষ। পৃথিবীতে এমন অনেক সাপ আছে যাদের ছোবলে মৃত্যু অনিবার্য। এবার আমরা জেনে নিই ১০ টি সাপের পরিচিতি। আরও জানব পৃথিবীর কোন কোন জায়গায় এদের বসবাস।
১. হাইড্রোফিলিস বেলচেরি সাপ পৃথিবীর
অনেকে ইনল্যান্ড তাইপানকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ হিসেবে মনে করে। আদতে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ হলো বেলচেরি। প্রকৃতপক্ষে এটি ইনল্যান্ড তাইপানের চেয়েও প্রায় ১০০ গুণ বেশি বিষাক্ত।
পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত এ সাপটি খুবই ভদ্র স্বভাবের। এটি সাধারণত কাউকে কামড়ায় না। তবে বারবার একে বিরক্ত করলে এটি কামড় দিতে পারে। এ সাপটি নিয়ে বেশি ভয়ের কারণও নেই। কারণ এটি কাউকে কামড়ালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিষ ঢুকায় না। তবে কারো ভাগ্য খারাপ হলে এর বিষাক্ত ছোবলে ১৫ মিনিটের কম সময়েই তার মৃত্যু ঘটতে পারে। ১০০০ মানুষ বা ২.৫ লাখ ইঁদুর মারতে প্রয়োজন মাত্র কয়েক মিলি গ্রাম বেলচেরির বিষ।
পড়ুন – এই মদ কেন এত সারা ফেলেছে মদ্যপদের কাছে।
২. তাইপান সাপ পৃথিবীর
তাইপান এরা ভুমিতে বসবাস করে। পানিতে যায় না। আর ভুমিতে বসবাসকারী সাপের মধ্যে তাইপান সবচেয়ে বিষাক্ত। প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর প্রজাতির সাপ। এর বিষাক্ত ছোবলে একজন মানুষ সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকারও কোনো রেকর্ড নেই।
তাইপান সর্প পরিবারের ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে ইনল্যান্ড তাইপান অনেক বেশি বিষাক্ত। ইনল্যান্ড তাইপানের ক্ষেত্রে এক ছোবলে সবচেয়ে বেশি প্রায় ১১০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত বিষ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। এর কয়েক মিলিগ্রাম বিষই ১০০ লোক বা প্রায় ২.৫ লাখ ইঁদুর মারার জন্য যথেষ্ট।
এ সাপগুলো ১.৮ মিটার থেকে ৩.৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সবচেয়ে ভয়ংকর ধারণা করা হলেও এরা খুব সহজেই বশ মানে। তবে একে কোনো কারণে বিরক্ত করা হলে শিকার জায়গা থেকে নড়ার আগেই এটি প্রচণ্ড বেগে কয়েক বার ছোবল দিয়ে দিতে পারে।
৩. ক্রেইট সাপ পৃথিবীর
তাইপানের পর এই সাপটি মাটিতে বসবাসকারী সাপ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত। এদের এশিয়ায় পাওয়া যায় এবং ৯০ সেন্টিমিটার থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হয়।
এরা যে কোনো সাধারণ কোবরা থেকে প্রায় ১৫ গুণ বেশি বিষাক্ত। দিনের বেলায় নিষ্ক্রিয় থাকলেও রাতের বেলায় বের হয়। মানুষের শ্লিপিং ব্যাগ, বুট বা তাবুর নিচের লুকানো এই সাপের একটি বড় অভ্যস। ইন্ডিয়ান ক্রেইট ইন্ডায়ার সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ।
৫. ফিলিপাইন কোবরা সাপ পৃথিবীর
মাটিতে বসবাসকারী পৃথিবীর ৩য় সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ এটি। এরা প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ক্রেইটের পরেই এরা সবচেয় বিষাক্ত প্রজাতির সাপ। শারীরিক অঙ্গ ভঙ্গির সাথে এরা দারুন তাল মেলায়, নাচতে পারে। ফিলিপাইনের সবচেয়ে বিষাক্ত এ সাপ । ফিলিপাইনে সাপুড়েরা সাপের নাচ দেখানোর সময় বেশি ব্যবহার করে এই কোবরাদের। সকল কোবরার মতো এরাও রেগে গেলে মাথার দুই পাশে হুড দেখা যায়।
এক মাসে দশ কেজি ওজন কমাবেন, জেনে নিন উপায়।
৫। ইন্ডিয়ান কিং কোবরা সাপ পৃথিবীর
মাটিতে বসবাসকারী দের মধ্যে ৪র্থ বিষাক্ত হলো ইন্ডিয়ান কোবরা। ফিলিপাইন কোবরার পর এরাই পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত। এরা সাধারণত ৩.৫ মিটার থেকে ৫.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এরা পৃথিবীর বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলেও এরা মানুষকে তুলনামূলক কমই কামড়ায়। এ সর্প ছোবলের ভয়ে অন্য বিষাক্ত সর্প গুলোকে আক্রমণ করে না। তবে অবিষাক্ত সাপই এদের অন্যতম প্রধান খাদ্য।
এরা বেশি ক্ষুধার্ত হলে অন্য বিষাক্ত সর্পও এমনকি নিজের প্রজাতির সর্পকেও হজম করে। এরা জংলি প্রজাতির এবং সাপের খাদক হিসেবে পরিচিত। ইন্ডিয়ান কিং কোবরা ছোবলের সময় যে কোনো সাপ থেকে বেশি বিষ নিক্ষেপ করে। স্ত্রী কিং কোবরা এর ডিমের চারপাশে বাসা বাঁধে। এর বাসার কাছাকাছি কিছু এলে এটি অস্বাভাবিক আক্রমণাত্মক আচরণ করে। কিং কোবরা খুবই গভীর জঙ্গলের অধিবাসী।
৬। রাসেল ভাইপার সাপ পৃথিবীর
ভয়ংকর দর্শন এ সাপ পৃথিবীর ভূমিতে বসবাসকারী পৃথিবীর বিষাক্ত সর্পগুলোর মধ্যে পঞ্চম। এটি খুবই রাগী ধরনের। সম্ভবত অন্য যে কোনো বিষাক্ত সর্পের চেয়ে এ সাপই মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে।
এটি কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে এবং এত প্রচণ্ড বেগে শিকারকে ছোবল মারে, পালিয়ে যাওয়ার আর কোনো উপায় থাকে না। এর বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে, যারা খামারবাড়ি থেকে শুরু করে গভীর জঙ্গল পর্যন্ত বসবাস করে। এরা সাধারণত ১ মিটার থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিন অঞ্চলে এদের উপদ্রব বেড়েছে। ক্ষেত খামারে কৃষককে আক্রমন করছে। বিশেষ করে চর এলাকায়। বাদাম তোলার এদের কামড়ে মৃতের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ভিডিও দেখুন – কোলেস্টেরল নিয়ে এই গবেষণা আপনাকে চমকে দিবে।
৭। ব্লাক মাম্বা সাপ পৃথিবীর
আফ্রিকার আতঙ্ক এ সর্পটি ভূমিতে বসবাসকারী সবচেয়ে বিষাক্ত সর্পগুলোর মধ্যে ৬ষ্ঠ। এরা আক্রমণের জন্য খুবই কুখ্যাত। এরা আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়ংকর প্রজাতির এবং সাধারণ মানুষ এদের থেকে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গেই দূরে থাকে। এটি শুধু প্রচণ্ড বিষাক্তই নয় প্রচণ্ড আক্রমণাত্মকও।
এর কামড় থেকে শিকারের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। এটি ভূমিতে বসবাসকারী সকল প্রজাতি থেকে দ্রুত গতির এবং ঘণ্টায় প্রায় ১৬ থেকে ১৯ কিমি যেতে পারে। এর বিভিন্ন প্রজাতিও খামারবাড়ি থেকে গভীর বন পর্যন্ত ছড়িযে ছিটিয়ে বাস করে। এ প্রজাতির সাপগুলো প্রায় ৪.৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
৮। হলুদ চোয়াল বিশিষ্ট্য টম্মিগফ
স্থানীয়ভাবে ফার-ডি-ল্যান্স নামে পরিচিত এ সর্পটি ভূমিতে বসবাসকারী সর্পগুলোর মধ্যে ৭ম বিষাক্ত। এরা প্রচণ্ড রাগী ধরনের এবং সামান্য উত্তেজিত করলেও প্রচণ্ড ছোবল মারতে পারে।
এদের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর হার খুবই বেশি। এদের কামড়ে মানুষের দেহকোষ এত এমনভাবে ধ্বংস হতে থাকে যে, শরীরে পচন দেখা দেয়। সাধারণত কৃষি জমি এবং খামারবাড়িতে এদের দেখা যায়। এরা গড়ে ১.৪ মিটার থেকে ২.৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
৯। মাল্টি-ব্র্যান্ডেড ক্রেইট সাপ পৃথিবীর
এটি মাটিতে বসবাসকারী পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সর্পের মধ্যে ৮ম। সাধারণ ক্রেইটের মতো এরাও রাতের বেলা খুবই সক্রিয় হয়ে ওঠে। এদের সাধারণত জলাভূমিতে মাছ, ব্যাঙ বা অন্য সাপের সন্ধানে বের হতে দেখা যায়। এরা গড়ে ১.৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। চীন ও ফিজিতে এদের বেশি দেখা যায়।
সাপের কামড়ে বিশ্বে মিডিয়াতে হাসাহাসি, কিন্ত কেন ?
১০। টাইগার স্নেক সাপ পৃথিবীর
এরা ভূমিভিত্তিক পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সর্পগুলোর মধ্যে ৯ম। এরা অস্ট্রেলিয়া বসবাসকারী এক ধরনের সর্প যারা শরীরে প্রচুর পরিমাণে বিষ তৈরি করতে পারে। এদেরকে শুষ্ক অঞ্চল, তৃণভূমি, জলাভূমি, মানববসতি সব জায়গায়ই দেখা যায়। এরা সাধারণত ১.২ মিটার থেকে ১.৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
উল্লেখ্য, সাপের বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী, প্রাণী জগতের, কর্ডাটা পর্বের, মেরুদণ্ডী উপপর্বের, সরোপ্সিডা শ্রেণির আঁশযুক্ত, স্কোয়ামান্টা বর্গের, সার্পেন্টেস উপবর্গের সদস্যদের সাপ বলে অভিহিত করা হয়। তবে বৈজ্ঞানিক ও জেনেটিক পরির্বতন অনুসারে গিরগিট থেকেই সাপের জন্ম। যার ইতিহাস ১৫ কোটি বছরের মতো।
লেলিয়ান ফর্মুলা অনুসারে, একমাত্র অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সকল মহাদেশেই সাপের উপস্থিতি দেখা যায়। এদের সর্বমোট ১৫টি পরিবার, ৪৫৬টি গ্রোফ ও ২,৯০০টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে এ পৃথিবীতে; যা ১০ সে.মি. (থ্রেড সর্প) থেকে শুরু করে সর্বচ্চো ২৫ ফুট বা ৭.৬ মিটার (অজগর ও অ্যানাকোন্ডা)। সম্প্রতি আবিষ্কৃত টাইটানওবোয়ার জীবাশ্ম প্রায় ৪৩ ফুট লম্বা হিসেবে দেখা গিয়েছে। তবে বেশিরভাগ প্রজাতির এই প্রাণী বিষহীন এবং যেগুলো বিষধর সেগুলোও আত্মরক্ষার চেয়ে শিকার করার সময় বিভিন্ন প্রাণিকে ঘায়েল করতে বা নিজকে বাঁচানোর জন্য বিষের ব্যবহার প্রয়োগ করে।