কোন ব্যাক্তিকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া, তাকে জোর করে আটক রাখা। অপহরণের প্রধান উদ্দেশ্য হল ভিকটিমকে কোন প্রকার অনিচ্ছাকৃত দাসত্বের অধীন করা। তার ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও কিছু অপরাধমূলক কাজ করার জন্য তাকে ফাঁসানো বা তার নিরাপদ মুক্তির জন্য মুক্তিপণ আদায় করা। চাঁদাবাজরা কাউকে অপহরণ করে চাঁদাবাজির জন্য। বিপ্লবীরা অপহরণ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে। পৃথিবীর সব দেশেই এটাকে গুরতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এর শাস্তি হিসেবে আছে মৃত্যুদণ্ড।
ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য অপহরণ হতে পারে। অপরাধী গ্যাং এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি অর্থনৈতিক কারণে, আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করতে বা সমর্থন তৈরি করতে অথবা কষাকষির সুবিধা পেতে “অপহরণ” করতে পারে। তবে শিশু অপহরণ আলাদা ভাবে দেখা হয়। আইনের চোখে শিশু অপহরণের ধারা আলাদা।
স্কুল ছাত্রী অপহরন মামলা
যুবকের নাম রিফাত, বয়স ২৬ বছর। তিনি ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্রীকে অপহরণ করেছেন। অভিযোগ ছাত্রীর বাবার। ঘটনাটি গাজীপুরের পূবাইলে। বুধবার রাত ৯টার দিকে রিফাত ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে বলে জানা যায়। ১৩ জানুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে অনলাইন পোর্টাল নিউজ টি প্রকাশ করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে রিফাতের নামে একটি মামলা করেছেন। অভিযুক্ত রিফাত পূবাইল ৪১নং ওয়ার্ডের খিলগাঁও এলাকার সামসুল হক মোল্লার ছেলে। মামলার এজহারে বলা হয়, রিফাত ওই স্কুলছাত্রীকে প্রায়ই স্কুলে যাওয়া আসার পথে উত্যক্ত করতো। ঘটনার দিন রাতে রিফাত ছাত্রীর বাড়িতে ওঁত পেতে থাকে। ছাত্রী গভীর রাতে প্রকৃতির ডাকে বের হয়। এমন সময় রিফাত তাকে ধরে নিয়ে করে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওই ছাত্রীকে না পেয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হন বলে জানিয়েছেন ছাত্রীর বাবা।
তবে এরকম মামলায় তদন্ত করলে ভিন্ন ঘটনা বেরিয়ে আসে। তাই মামলার সততা নিশ্চিত করতে তদন্ত কর্মকর্তা পূবাইল থানার এস আই রাসেদুর রহমান বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে জানান।
আসলাম সেরনিয়াবত, একজন ব্যবসায়ী। অফিস বারিধারায়। তিনি গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কার সিলেকশনের স্বত্বাধিকারী। অফিস শেষ করে তিনি মিরপুরে যান একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শের জন্য। ফিরছিলেন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে। তার সাথে অন্য একটি গাড়িতে ফিরছিলেন হাবিবুল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী। আসলামের গাড়ী যখন কালসি মোড় ফ্লাই ওভারের নিচে পৌছায়, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরা কয়েকজন ব্যক্তি আসলামের গাড়ি থামানোর জন্য ইশারা দেন।
এ সময় চালক গাড়ি থামালে ভেতরে আসলাম আছেন কি না জানতে চান ইশারাকারীরা। আসলাম গাড়ি থেকে নামেন। আসলামকে থামতে ইশারাকারী দের সঙ্গে থাকা সিভিল পোশাকের এক ব্যক্তি আসলামের হাতে থাকা দুটি মুঠোফোন নিয়ে নেন। এরপর আসলামকে একটি গাড়িতে তুলে তাঁরা দ্রুত স্থানত্যাগ করেন। থানায় অভিযোগে এমনটাই জানিয়েছেন আসলামের ভায়রা তারেক হোসেন। তবে পল্লবী থানার ওসি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানে কাউকে জোর করে গাড়িতে তুলতে দেখা যায়নি। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখছে। খবরটি প্রথম আলো প্রকাশ করে
অবাক বিষয় এত দ্রুত গ্রেফতার হল অপহরণকারী। যে কোন অপহরণ ঘটনা ঘটানোর আগে দুষ্কৃতকারীরা অনেক পরিকল্পনা করে। একারনে তাদের ধরতে পুলিশকে অনেক বেগ পেতে হয়। তাহলে এক্ষেত্রে কি ঘটেছিল ? এ ঘটনায় আসামীর নাম হাবিবুর শেখ। বাড়ি আত্রাই উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে। বাবার নাম নজরুল শেখ। যাকে অপহরন করা হয়েছে তিনি আমিরা আফছানা। বাড়ি রাণীনগর উপজেলার বলিদাগাছী গ্রামে। বাবার নাম আনোয়ার হোসেন।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার ২রা সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং সকালে। আনোয়ার হোসেন ঘটনার পর ৫ ই সেপ্টেম্বর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন তার মেয়ে পাশের আদমদীঘি থানার চাঁপাপুর বাজারের একটি মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষিকা। মাদরাসায় যাতায়াতের পথে হাবিবুর শেখ তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতেন। বিয়ে মিথ্যা প্রলোভনও দিয়েছেন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে বাড়ির সামনের রাস্তায় আমিরাকে একা পেয়ে হাবিবুর অপহরণ করে নিয়ে যান। মেয়েকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে থানায় মামলা করেন তার বাবা আনোয়ার হোসেন।
রাণীনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী মাসুদ জানান, বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলা হওয়ার পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। পরে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নিউজ টি প্রকাশিত হয় ৭ ই সেপ্টেম্বর। আসলে ঘটনা কি ঘটেছিল, অনুমান করতে পারেন !!
ভারতের জয়পুর, ছয় বন্ধু রেস্টুরেন্টে বসে বিকেলের নাস্তা খাচ্ছিল। এদের মাঝে দুজন কিশোর বয়সী, চারজন কৈশোর পেরিয়েছেন। আশপাশের টেবিল গুলোতে অনেকেই খাচ্ছিলেন। কেউ খেতে খেতে আইফোন টিপছিলেন। কেউবা ল্যাপটপ, বন্ধুদের সাথে গল্প হাহাহাসি করছিলেন। ছয় বন্ধুদের সবার হাতেই কমদামী ফোন। ল্যাপটপ নেই। অন্যদের দামী ডিভাইস দেখে তাদের ঈর্ষা হয়। সবার মাঝে আফসোস দেখা যায়। অমিত, বিজন কে বলে তোর বাবা তো বড় ব্যবসায়ী তুইতে দামী ফোন, ল্যাপটপ কিনতে পারিস !
বিজন হতাশ স্বরে বলে, অনেকবার বলেছি বাবাকে কিন্ত কিনে দেয় না। অমিত, বিজনের কানের কাছে নিচু স্বরে কিছু কথা বলে। বিজনের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। এরপর সবাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। দীর্ঘ আলোচনার পর তারা সিন্ধান্তে আসে ” অপহরণ”। কিন্ত কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এই দুষ্কর্ম। এটা তো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বিবেক, বলে আমরা ইউটিউব থেকে শিখব। কিভাবে করতে কি করতে হবে। সবাই একসাথে বলে ওয়াও !
১ লা সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং। সন্ধ্যার দিকে বিজন বাসা থেকে বের হয়, একটি কাজের কথা বলে। মাকে বলে খুব অল্প সময় পরেই ফিরে আসব। কিন্ত ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিজন আসে না। এরপর আরও সময় পেরিয়ে যায়। বিজনের খবর নেই। নেই তো নেইই। বাবা মায়ের উদ্বেগ বাড়ে। বিজনের ফোনও বন্ধ। তাকে খুজতে বের হয় পরিবারের লোকজন। বাবা মায়ের দুশ্চিন্তা বাড়তেই থাকে। রাত ১০ টার দিকে বাবা শঙ্কর লালের ফোনে কল আসে। আপনার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ছেলেকে ফিরে পেতে আমাদের কে দিবেন ৪০ লাখ রুপি।
বাবা গভীর রাতে নিকটস্থ মোহনা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি তাঁর অভিযোগে বলেছেন, অজ্ঞাতরা বিভিন্ন নম্বর থেকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছে ও মুক্তিপণ হিসেবে ৪০ লাখ রুপি দাবি করেছে। বিজনের বাবা আরও অভিযোগ করেন, পরদিন বেলা ১১টার মধ্যে মুক্তিপণ না পেলে অপহরণকারীরা তাঁর ছেলের একটি আঙুল কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এরপরও মুক্তিপণ না দিলে ওই ছেলেকে মেরে লাশ বানানোর হুমকি দেয় অপহরণকারীরা।
মোহনা থানার উপপরিদর্শক ‘শঙ্কর লাল’ বিষয়টি আমলে নেন। গভীর রাতে এফআইআর গ্রহণ করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে একটি দল গঠন করে তদন্ত শুরু করেন। পাঁচ শতাধিক ক্যামেরায় ধারণকৃত সিসিটিভি ফুটেজ এবং কারিগরি নজরদারির সহায়তায় পুলিশ জানতে পারে, একটি গাড়িতে করে ওই কিশোর ও অপহরণকারীরা টংক শহরের দিকে গেছে।’
শঙ্কর লাল বলেন, ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে জয়পুরের দিকে আসার সময় পুলিশ তার ছেলে এবং অপহরণ কারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পুলিশকে দেখে তারা ভীত হয়ে পড়ে ও পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ মোহনা মান্ডি এলাকা থেকে বিজনকে উদ্ধার করে। বিজন তখন পুলিশকে বলে, অপহরণকারীরা তাকে সেখানে ফেলে পালিয়ে গেছে। এরপর শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ, বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ ঘটনা। বিজনের বাবা স্তম্ভিত হয়ে যান। তার ছেলেই এই অপহরনের মুল পরিকল্পনা কারী। নিজেই নিজেকে অপহরণ করেছে। এরপর এই নাটকের পরিকল্পনাকারী বাকি পাঁচজনকেও আটক করা হয়।
বিজন নিজে দামী মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ কেনার জন্য এই নাটক সাজিয়েছিল। কিনে দিতে চেয়েছিল বন্ধুদেরও। কিন্ত শেষমেশ সবাই ধরা পড়ে। কিশোর দুজন কে পুলিশ ছেড়ে দেয়। বাকি চারজন কে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। ঘটনাটি বেশ ভাইরাল হয়ে যায়।