গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট। চেক করতেই দুটো লাল দাগ ভেসে উঠল। মুহূর্তেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল আপানার সারা দেহে মনে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। যা কারও সাথে শেয়ার করা যায় না। শুধুই অনুভব। মাতৃত্বে পরিপূর্ণ হতে চলেছে আপনার জীবন।
এরপর বিশেষজ্ঞ পরামর্শের জন্য গেলেন। তারা আপনাকে পরামর্শ দিল একদম বেড রেস্টে থাকবেন।কারন আপনি অসুস্থ। ‘অসুস্থ’ শব্দটা মনটাকে ভেঙে দিল। আপনি নড়াচড়া বন্ধ করে দিলেন। একজন সুস্থ মানুষ যদি ৭ দিন একটানা শুয়ে বসে কাটায়, তাহলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বহু গুনে বেড়ে যায়।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হলে শর্করা কোষে ঢুকতে পারেনা। রক্তে থেকে যায়। রক্তে শর্করার এই থেকে যাওয়াকেই আমরা বলি ডায়াবেটিস। ৭ দিনেই যদি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়, তাহলে ৯ মাস বেড রেস্টে থাকলে কি অবস্থা হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
নারী সন্তান ধারনে সক্ষম। আল্লাহ তায়ালা নারী কে সেভাবেই তৈরি করেছেন। সন্তার গর্ভে থাকবে, ধীরে ধীরে বেড়ে উঠবে। নারীর জন্য এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এরপর যথাসময়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। সাধারনত কোন ব্যতায় ঘটে না। তাই গর্ভকালীন অবস্থার জন্য নারীকে অসুস্থ বলা সমীচীন নয়। এসময় ভালো কথা শোনানো দরকার। তার প্রয়োজন মমতা আর ভালবাসা।
বাবা মায়ের যে ভুল গুলো সন্তানের ক্ষতি করে

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস আমার অভিজ্ঞতা
আপনাদের কে জানাব, কত সহজ এবং ন্যাচারাল উপায়ে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মুক্ত থাকা যায়। তার আগে আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
২০১৮ সাল। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ জানতে পারলাম আমার স্ত্রী গর্ভবতী। স্ত্রী দ্বিতীয় সন্তানের মা হতে চলেছেন। আমরা আনন্দিত। নভেম্বরে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার নার্ভ দেখলেন, পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন। সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকার নির্দেশ দিলেন।
বাসায় ফিরলাম। স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার স্বাভাবিক কাজকর্ম গুলো করবে। নড়াচড়া করবে। খাওয়া দাওয়া করবে। যখন অসুবিধা মনে হবে, তখন রেস্ট নিবে। সব ঠিকঠাক মত চলছিল। তখন আমি হেলদি লাইফস্টাইল সম্পর্কে জানতাম না। সে প্রচুর খেতে লাগল। কারন সবাই বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিল। ওজন বেড়ে গেল।
আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা হল। ডায়াবেটিস ধরা পরল। ডাক্তার নিয়মিত ডায়াবেটিস চেক করতে বললেন। ইনসুলিন লিখে দিলেন। পরিচিত ফার্মেসিতে গেলাম ইনসুলিন দিতে। ছেলেটি বলল ‘ একবার ইনসুলিন দিলে নাকি সারাজীবন দিতে হয়।’
সন্তানের সফলতায় মাকে যা করতে হবে

আমি বললাম, তাহলে কি করব ?
ভাবীর খাবারের পরিমান কমিয়ে দেন। মিষ্টি খেতে দিবেন না। এতে করে ডায়াবেটিস বাড়বে না। ফার্মেসির ম্যানেজার তাকে ধমক দিল। বলল ‘ ডাক্তার ইনসুলিন দিতে বলেছে, দিয়ে দাও। তুমি পাকনামি কর কেন ? ঐদিন স্ত্রী কে ইনসুলিন দিলাম। আসলে ছেলেটি সম্পূর্ণ পরামর্শ দিতে পারেনি। একজন গর্ভবতী কিভাবে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মুক্ত থাকবে ? কোন খাবার গুলো খাবে ? সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে কি কি করতে হবে ?
বাসায় ফিরেই অনলাইনে বসলাম। সার্চ দেয়া শুরু করলাম গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ে গবেষণা পত্র। অনেক পেপারস পেলাম গুগলে। সেগুলো পড়লাম। এরপরে ইউটিউবে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ে আমেরিকান ডাক্তারদের কিছু কন্টেন্ট দেখলাম। আমি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মুক্ত থাকার উপায় পেয়ে গেলাম। বোনাস হিসেবে পেলাম কিভাবে গর্ভধারিণী ও সন্তান সুস্থ থাকবেন।
ডায়াবেটিস থেকে যেভাবে চির মুক্তি পাবেন ন্যাচারালি

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস যা করতে হবে
১. প্রথমত খাবার
এদিকটায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে। গর্ভবতী খাবেন জীবন্ত খাবার যেমন – সালাদ, দেশি ফল, গ্রিন স্মুদি। প্রতিবার খাবারের পূর্বে একবাটি সালাদ খাবেন। সালাদের ড্রেসিঙে লেবুর রস, টকদই ব্যবহার করবেন। পেটের গ্যাস কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাবেন। লাল চালের ভাত, নদীর মাছ, দেশী মুরগির মাংস, ডাল, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম এগুলো একজন গর্ভবতীর খাবার।
কোন প্রকার আলট্রা প্রসেসড ফুড খাবেন না। যেমন – পিতজা, বার্গার, চিকেন ফ্রাই, মিষ্টি, কেক, বিস্কুট, সিঙ্গারা, পুরি, চানাচুর, হোটেলের বিরিয়ানি ইত্যাদি। কোক, পেপসি, মোজো এজাতীয় সফট ড্রিঙ্ক। কোন প্রকার দোকানের জুস খাবেন না।
২. দ্বিতীয়ত ঘুম
ভালো ঘুমাতে হবে। এজন্য সন্ধ্যায় রাতের খাবার শেষ করবেন। রাত ১০/১১ টার মধ্যে সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় যেতে হবে। মোবাইল ফোন বা অন্য ডিভাইস দূরে থাকবে। বিছানায় শুয়ে ডাঃ ওয়েলের শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করবেন। কিভাবে করবেন ? 4-7-8 breathing season Dr Weil লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলেই পাবেন। ঘুমানোর পূর্বে এটা করলে স্ট্রেস দূর হবে। গভীর ঘুম হবে।
কোন বদভ্যাস রাতের ঘুম নষ্ট করে

৩. তৃতীয়ত হলুদের চা
এটা এক অসাধারন ন্যাচারাল মেডিসিন। হলুদে আছে কারকিউমিন। নিয়মিত হলুদ চা খেলে তা শরীরের ইনফ্লামেশন দূর হবে। ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ব্রণ চলে যাবে। হার্ট ও লিভারকে ভালো রাখে হলুদ। মুখের ত্বকে দাগ পরবে না। রয়েছে এমন আরও অনেক উপকারিতা।
তবে সেরা ফলাফল পেতে হলুদের সাথে পরিমান মত মেশাতে হবে গোল মরিচের গুড়ো। ‘কারকুমা’ ব্রান্ডের হলুদে পরিমান মত গোল মরিচ গুড়ো মেশানো থাকে। এটা অরগানিক। এই হলুদ ফার্মেসিতে কিনতে পাবেন। অনলাইনে অর্ডার করেও কিনতে পারেন।
৪. চতুর্থত স্পিরিচুয়ালিটি
বিজ্ঞানিরা এখন বলেন আমাদের সুস্থতার জায়গা তিনটি। শারীরিক, মানসিক এবং স্পিরিচুয়ালিটি ( আধ্যাত্মিক )। স্পিরিচুয়ালিটির যত্ন নেয়া জরুরী। ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠবেন। নামাজ আদায় করবেন। আপনি অন্য ধর্মের হলে, আপনার মত করে প্রার্থনা করবেন। কেউ কেউ মেডিটেশন করেন। এতেও স্পিরিচুয়ালিটি বাড়ে।

৫. পঞ্চমত এক্টিভিটি
নড়াচড়া বন্ধ করবেন না। স্বাভাবিক কাজকর্ম করবেন। তাহলে মেটাবোলিজম ভালো থাকবে। খাবার হজম হবে। শরীরে শক্তি পাবেন। গর্ভকালীন কিছু ব্যায়াম সেগুলো করতে পারেন। এতে করে পেট কাটা ছাড়াই নরমালি বাচ্চা প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। কোন ভারি কাজ করবেন না।
৬. ষষ্ঠত
গায়ে রোদ লাগাবেন। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত সময়ের রোদ। এতে করে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হবে। গর্ভকালীন বিষণ্ণতা চলে যাবে। ঘরের জানালা দিয়ে যেখানে রোদ ঢুকে সেখানে বসে রোদ লাগাতে পারেন। বাড়ির ভিতরে যে জায়গাটা নিরাপদ সেখানেও বসতে পারেন। অথবা বাসার ছাদে বসতে পারেন।
৭. সপ্তমত
ভালো বই পরবেন। এতে করে মনে প্রশান্তি আসবে। বই আপনাকে জ্ঞ্যানি করবে। কথিত আছে, মায়ের জ্ঞ্যান বাচ্চার মস্তিস্কে ঢুকে পরে। আপনি যত জ্ঞ্যানি হবেন, বুদ্ধিমান বাচ্চা দুনিয়াতে আসার সম্ভাবনা তত বাড়বে। সারাদিনে ৩০ মিনিটের বেশি অপ্রয়োজনীয় সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটাবেন না।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ে ডাঃ এরিক বারগ যা বলেন

আমরা ঠিক এগুলোই পালন করেছিলাম। ২০১৯ এর জুলাই মাসে আমার স্ত্রী কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সে সময় দুজনেই পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। আপনিও নিয়ম গুলো মেনে চলুন। তাহলে ওজন বাড়বে না। মা এবং সন্তান দুজনেই সুস্থ থাকবেন। ডায়াবেটিস ! ধারে কাছেও আসবে না। ইনশাআল্লাহ
ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ১৬/০৮/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.
Pingback: চারিদিকে হার্ট অ্যাটাক কারণ ৮ টি, লক্ষণ ও প্রতিরোধের পূর্ণাঙ্গ গাইড 8 causes of heart attacks around the world, a complete guide to symptoms an