চারিদিকে হার্ট অ্যাটাক কারণ ৮ টি, লক্ষণ ও প্রতিরোধের পূর্ণাঙ্গ গাইড 8 causes of heart attacks around the world, a complete guide to symptoms and prevention

হার্ট অ্যাটাক

চারিদিকে হার্ট অ্যাটাক

এইচ জয় দিনশাহের হার্ট এ্যাটাক হয় বিকেলের দিকে। নিজ অফিসে বসে থাকতেই। দ্রুততম সময়ে মারা যান। তারিখ ২০০০ সালের ৮ ই জুন। আমেরিকায় হই চই পরে যায়। এত দিনের প্রচলিত ধারনা ভেঙেচুরে যায়। সবাই জানত লাল মাংস, ঘি, তেল এ জাতীয় খাবারের কারনেই হার্ট এ্যাটাক হয়। কিন্ত দিনশাহ ছিলেন ‘আমেরিকান ভেগান সোসাইটির’ সভাপতি। তিনি কেন মারা গেলেন ?

তিনি তো মাছ মাংস ডিম ঘি তেল এ জাতীয় খাবার খেতেন না। খেতেন শুধুই ভেজিটেবল। তাহলে তার কেন হার্ট এ্যাটাক হল ? গবেষণা আগে থেকেই চলছিল। তথ্য সামনে চলে এল।  ডিম, মাছ, লাল মাংস, ঘি, বাটার, নারিকেল তেল, সরিষার তেল, অলিভ ওয়েল এসব সাস্থ্যকর চর্বি দায়ী নয়। আসুন জেনে মুল কালপ্রিট কে বা কারা।

আপেল সিডার ভিনেগারের অসাধারন সাস্থ্য উপকারিতা 

হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক

হার্ট অ্যাটাক কি 

চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে হার্টের । সারা শরীর থেকে ডিঅক্সিজেনযুক্ত রক্ত হার্টে যায়। এই রক্ত প্রথমে হৃৎপিণ্ডের রাইট অ্যাট্রিয়াম বা ডান অলিন্দে প্রবাহিত হয়। সেখান থেকে যায় রাইট ভেন্ট্রিকল বা ডান নিলয়ে। এবারে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজন হয় অক্সিজেন। রক্ত পালমোনারি ধমনির মাধ্যমে ফুসফুসে পাঠানো হয় অক্সিজেনের জন্য।

এরপর অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হার্টে ফিরে আসে। লেফট অ্যাট্রিয়াম বা বাম অলিন্দে প্রবেশ করে লেফট ভেন্ট্রিকল বা বাম নিলয়ে যায়। এবারে হার্ট রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় পাম্প হিসেবে কাজ করে। সারা শরীরে রক্ত সরবরাহের মাধ্যমে শরীর সচল রাখে।

আমাদের হার্ট একটি মাসক্যুলার অর্গান। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে, হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা দরকার। একারনে হার্ট অক্সিজেনযুক্ত রক্ত নেয় করোনারি ধমনির মাধ্যমে। করোনারি আর্টারি তিনটি ১. লেফট করোনারি আর্টারি, ২. রাইট করোনারি আর্টারি ৩. লেফট অ্যান্টেরিয়র ডিজেন্ডিং আর্টারি।

এই তিনটি আর্টারি বা ধমনির মধ্যে যখন সমস্যা দেখা দেয়। তখন ধমনির কিছু অংশ বা পুরোপুরি ব্লক হয়। বিধায় হার্টের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। পার্সিয়াল বা অংশত ব্লক হলে তাকে অ্যানজাইনা পেকটোরিস বলা হয়। আর সম্পূর্ণ ব্লক হলে তাকে বলা হয় হার্ট অ্যাটাক।

হু হু করে বাড়ছে কিডনি রোগী বাঁচার উপায় কি 

হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক

হার্ট অ্যাটাকের কারণ ৮ টি    

১.আলট্রা প্রসেসড ফুড হার্ট এ্যাটাকের প্রধান আসামী। বাজে খাবার বডিতে ইনফ্লামেশন তৈরি করে। ইনফ্লামেশন ( প্রদাহ ) থেকে আসে হন্তারক, হার্ট এ্যাটাক।

২. অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও ধূমপানের কারনে হার্ট এ্যাটাক হতে পারে। হয়ত একারনে কমবয়সীদের মাঝেও হার্ট এ্যাটাক দেখা যাচ্ছে।

৩. যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের অসুখের শেষ নাই। হার্ট এ্যাটাক হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা আছে ডায়াবেটিস রোগীদের।

৪. উচ্চ রক্তচাপে অনেকেই নিয়মিত ঔষধ খান আর নিশ্চিত থাকেন অনেকেই। তারপর হঠাৎ একদিন বিপদ নেমে আসে। অতএব সাবধান !

৫. মোটা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। শরীরের অতিরিক্ত ওজন হার্ট এ্যাটাকের অন্যতম কারন।

৬. শারীরিক ওজন কম, কিন্তু শরীরে ইনফ্লামেশন আছেন। তাদেরও হার্ট এ্যাটাক হতে পারে।

৭. কায়িক পরিশ্রম, ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি না করা, শুয়ে-বসে থাকা। যে কোন সময় দুসংবাদের কারন হতে পারে।

৮. ক্রমাগত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, রাত জাগা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কারণে বডিতে ইনফ্লামেশন বেড়ে যায়। হার্ট এ্যাটাক হতে পারে।

ঔষধ ছাড়াই আইবিএস সেরে যাবে 

হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ

১. বুকে ব্যাথা 

বুকে ব্যথা হওয়া হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণ। দুই বুকের মাঝখানে মুষ্টিবদ্ধ হাত রাখলে যেটুকু জায়গা এটাকে রেট্রোস্টার্নাল পেইন বলা হয়। ব্যাথাটা আসবে বুকের ভেতর থেকে। এই জায়গার ব্যথাকেই হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা বলে।

২. হাত ও ঘাড়ে ব্যাথা 

বুকের ব্যথা একসময় বাম হাত ও ঘাড়ের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। চোয়াল, পেটেও ব্যথা হতে পারে।

৩. শ্বাস কষ্ট 

ব্যাথা যখন বেশি বেড়ে যায়, তখন শ্বাস কষ্ট এবং কাশি হতে পারে।

৪. প্রেশার কমে যাওয়া 

এসময় প্রেশার কমে গিয়ে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।

৫. জ্ঞ্যান হারানো 

বুকের ব্যাথার তীব্রতার কারনে অনেক রোগী অজ্ঞান হয়ে পরে।

৬. বমি হওয়া

কারও কারও ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব হতে পারে।

৭. বুক ধরফর

বুকের ভিতর ধরফর করে।

গর্ভাবস্থায় আর ডায়াবেটিস হবে না 

হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়

হার্ট অ্যাটাক একটি গুরতর সমস্যা। রোগী যে কোন সময় মারা যেতে পারেন। বুকে ব্যথা অনুভূত হলে দেরি করা যাবেনা। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ মনে হলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে জরুরি স্বাস্থ্য সেবায় (৯৯৯) ফোন করতে পারেন।

আক্রান্ত ব্যক্তি যেন নড়াচড়া কম করেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন। শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। রোগী যদি জ্ঞান হারায় বা শ্বাস নিচ্ছে না এমন হলে সঠিক নিয়মে কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন বা সিপিআর দিতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে সিপিআর কীভাবে দিতে হয় সেটি জানেন এমন কোনো ব্যক্তি ছাড়া না জেনে যে কেউ সিপিআর দিতে পারবেন না।

আক্রান্ত ব্যক্তিকে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ অ্যান্টি প্লাটিলেট ড্রাগ দেওয়া যেতে পারে। যা রক্ত তরল করার জন্য ও ধমনিতে রক্ত প্রবাহে বাধা কমাতে সহায়ক। কারো যদি আগে থেকে হার্টের সমস্যায় নাইট্রোগ্লিসারিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসক, তাদেরকে তাৎক্ষণিক অবস্থায় জিহ্বার নিচে ওই ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। অন্যদের বেলায় দেওয়া যাবে না।

হার্ট অ্যাটাক হলে শ্বাস প্রশ্বাসের গতি কমে যায়। এ সময় কাশি দিলে রিফ্লেক্স হয়। যার ফলে প্রেশার বাড়ে এবং হার্ট রেটও বেড়ে যায়। সেজন্য কাশি দিতে বলা যেতে পারে রোগীকে।

যেভাবে ঔষধ ছাড়াই আজীবন সুস্থ থাকবেন 

হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে যা করবেন  

প্রথমত লাইফস্টাইল পরিবর্তন করুন। রাত জাগা ছেড়ে দিন। রাতে দ্রুত বিছানায় চলে যান। ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ধূমপান, মদ্যপান ছেড়ে দিন। সব ধরনের আলট্রা প্রসেসড আজ থেকে ত্যাগ করুন। যেমন – বার্গার, কেক, পিতজা, চিকেন ফ্রাই, বিস্কুট, চানাচুর, সফট ড্রিঙ্ক এজাতীয় খাবার।

হলুদের চা ইনফ্লামেশন কমাতে দারুন কাজ করে। আমি প্রায় দিনেই খাই। হলুদ নেই ‘কারকুমার’ টা। তাদের দাবী প্রডাক্ট অরগানিক। আর বিশেষ পদ্ধতিতে হলুদ প্রস্তত করা হয়। একারনে হলুদের সব গুনাগুন অক্ষুন্ন থাকে। হলুদে মেশানো থাকে সঠিক মাপে গোল মরিচের গুলো।

তৈরি করা সহজ। একমগ গরম পানিতে এক চামচ ( কৌটার ভিতরে দেয়া থাকে ) হলুদ দেই। এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল। চা চামচের এক চামচ মধু দেই। চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করি। ব্লিনড করলে আরও ভালো হয়।

লবন খেলে হার্ট এ্যাটাক হয় ? কি বলছেন ডাঃ জেসন ফং 

হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক

প্রথম দিকে খেতে খারাপ লাগলে অল্প পরিমান উপাদানে তৈরি করবেন। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হবেন। হার্ট অ্যাটাক বাসার ধারে কাছেও আসবে না। ইনশাআল্লাহ

পোস্টটি সবাইকে শেয়ার করতে পারেন। কারন এখন ক্লাস নাইনের মেয়েও হার্ট অ্যাটাক করে। সেলিম হোসেন – তাং ২১-০৮-২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া

Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *