স্ট্রেস এর লক্ষন কি স্ট্রেস কি
২৪ শে মে আরও একটি ভোর নামল। ধীরে ধীরে জেগে উঠল যশোর শহর। এই শহরের মনিহার এলাকায় একটি মার্কেট নাম ‘ সামস মার্কেট’। মার্কেটের দোকানদাররা দোকানপাট খুলছেন। এই মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় বাস করেন খালেদা সুলতানা খানম। স্বামী মারা গেছেন। সাথে থাকেন ২৪ বছর বয়সী পালিত ছেলে ‘সামস’।
দুপুরের পর ট্যাঙ্কির পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল। অনেক সময় ধরে দোকানদাররা পানি পাচ্ছিলেন না। বাধ্য হয়ে তাদের একজন দুইতলায় চলে যান। সুলতানা কে পানি ছাড়তে বলার উদ্দেশ্যে। কিন্ত সুলতানার বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। ডাকাডাকি করে কোন সারা পাওয়া যায় না। ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করা হয়।
পুলিশ এসে ডাকাডাকি করলে সামস দরজা খুলে দেয়। ভেতরে খাটের উপর পরে ছিল সুলতানার লাশ। সামস স্বীকার করে সে তার মাকে খুন করেছে। খুন শেষে রাতে তার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল। পালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিল। কেন সামস খুন করল মাকে ?
সামস গত ৫ বছর ধরে মাদক সেবন করে আসছিল। সব মাদকাসক্তরাই প্রচণ্ড স্ট্রেসে থাকে। তারা রীতিমত বিষণ্ণ হয়। দুশ্চিন্তা করে। এই আধুনিক জীবনযাপনে আমরা সবাই কমবেশি স্ট্রেসে থাকি। স্ট্রেস হচ্ছে কারণ। আর ডিপ্রেশন ও দুশ্চিন্তা হলো তার প্রভাব। ডিপ্রেশন মনের সঙ্গে শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। স্ট্রেস এর লক্ষন কি কি । মুক্তির উপায় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। তার আগে জেনে নিই কোন হরমোন দায়ী।
মন ভালো করতে সন্যাস গুরু কি শেখালেন শিস্যকে ?

স্ট্রেস হরমোন কি
স্ট্রেস হরমোন গুলি স্ট্রেসের সময় ব্যক্তির শরীরের ভিতরে পরিবর্তন করার জন্য এন্ডোক্রাইন গ্রন্থি দ্বারা নিঃসৃত হয় । শক্তির উৎসগুলিকে সচল করা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করা এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় নয় এমন বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে। স্ট্রেসের সময় অন্য হরমোনের নিঃসরণও হ্রাস পায়। কিছু সুপরিচিত স্ট্রেস হরমোন হল।
১. কর্টিসল প্রধান মানব স্ট্রেস হরমোন
২. ক্যাটেকোলামাইন যেমন অ্যাড্রেনালিন এবং নোরপাইনফ্রিন
৩. ভ্যাসোপ্রেসিন
৪. গ্রোথ হরমোন
জানেন কোন হরমোন গুলো আপনার মন কে ভালো রাখে ?

মানসিক চাপকে গুরুত্ব দিন। ক্রনিক স্ট্রেস সামাল দিতে না পেরে অনেকেই ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। যে কাজটা করেছেন ‘ সামস ‘। পারিবারিক, সামাজিক ও চাকরিজনিত কারণে স্ট্রেস হতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হওয়া, ডিভোর্স, রুচি ও পছন্দগত অমিল, সমাজের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে এমন টা হতে পারে।
নিজেকে আউটকাস্ট ভাবা, কর্মস্থলে বিরুপ পরিস্থিতির শিকার হওয়া, বসের দুর্ব্যবহার, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা বা কাজের অত্যধিক চাপ, কাজ হারানোর ভয় ইত্যাদি আমাদেরকে তাড়া করে বেড়ায়। অর্থনৈতিক কারণেও আমরা স্ট্রেসের শিকার হই। নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যের সাথে তাল মেলাতে না পেরে অনেকেই হাঁপিয়ে উঠি।
আর্থিক নিরাপত্তার অভাবও মানসিক চাপের কারণ। তবে এসকল চাপ সামাল দেওয়ার কিছু তরিকাও আছে। ‘স্ট্রেস আউট’ অর্থাৎ মনের ভেতর জমানো ছোটো ছোটো কষ্টগুলো যেন দীর্ঘমেয়াদে বাসা না বাঁধে সেই জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আসুন জেনে নিই
যে পাঁচটি খাবার কখনো খাবেন না।

অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কি
ফ্রি র্যাডিকেল শব্দটার সাথে আমরা পরিচিত। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মূলত ফ্রি র্যাডিকেলের উৎপাদন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেল গুলোকে অকার্যকর করে দেয়। যখন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সঠিকভাবে কাজ করে না। তখন ডিটক্সিফাই করার ক্ষমতা শরীরের থাকে না। শরীরের এই অবস্থাই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস শরীরে অনেক প্যাথোফিজিওলজিক্যাল অবস্থার সৃষ্টি করে। এর মধ্যে রয়েছে পার্কিনসন রোগ এবং আলঝাইমার রোগ, জিন মিউটেশন এবং ক্যান্সার, দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি সিন্ড্রোম, ভঙ্গুর এক্স সিন্ড্রোম, হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীর ব্যাধি, এথেরোস্ক্লেরোসিস, হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা, হার্ট অ্যাটাক এবং প্রদাহজনিত রোগ।
ঔষধ ছাড়াই আজীবন সুস্থ থাকার উপায় জেনে নিন।

স্ট্রেস এর লক্ষন কি
কমবেশি সবাই আক্রান্ত হই স্ট্রেসে। মোবাইল দেখুন, টিভি চালু করুন, হোয়াটস এপ দেখুন , অথবা যে কোন নোটিফিকেশন চেক করুন। তাহলেই আপনার নানা ধরণের চাপের সম্মুখীন হতে পারেন। এগুলো আপনাকে মানসিকভাবে আক্রান্ত করতে পারে, নিশ্চিতভাবেই। অতিরিক্ত চাপ আপনাকে বিরক্ত করতে পারে, মেজাজ খারাপ করে দিতে পারে।
১. ব্রন ওঠা বেড়ে যাওয়া
মানসিক চাপের সময়, ব্রন ওঠা বেড়ে যেতে পারে। ধরুন এমনিতে যদি ব্রন ওঠে দিনে ২ টা, স্ট্রেস বাড়লে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন মুখে অনেক গুলো ব্রন। এর জন্য দায়ী স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল এবং এর অতিরিক্ত নিঃসরণ। ত্বক বিশেষজ্ঞ ধবল জি. ভানুসালি , এমডি, বলেন, অবশ্যই, ব্রণ অন্যান্য কারণেও হতে পারে। যেমন আপনার খাদ্যাভ্যাস, পিএমএস, আবহাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু যদি আপনি অতিরিক্ত চাপ অনুভব করে করেন। তাহলে এটি ত্বকে বেশ ভালোভাবেই দেখা দিতে পারে।
দ্রুত ওজন কমানোর উপায় জেনে নিন।

২. গোলাপি রঙের গাল
এসি রুমে বসে আছেন। এরপরেও গরম লাগছে, আপনি ঘামছেন। শারীরিক কোন পরিশ্রমও করছেন না তারপরও এমন হচ্ছে। এমন অবস্থায় আপনি ফর্সা হলে আপনার গালে মেকাপ ছাড়াই গোলাপি রঙের আভা দেখা দিতে পারে। “এটি হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘাম এবং চাপ বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত।
৩. সবসময় ক্লান্তি বোধ করা

৪. হঠাৎ চুল পরতে শুরু করে
যখন মানসিক চাপের মাত্রা খুব বেশি হয়ে যায়, তখন চুল ঝরে পড়া খুবই স্বাভাবিক। আপনি হয়তো গোসল করার সময় একটু বেশি ঝরে পড়া লক্ষ্য করতে পারেন। অথবা, আপনি টেলোজেন এফ্লুভিয়াম নামক আরও তীব্র চুল পড়ার সমস্যায় পরতে পারেন। এর ফলে আপনার মাথার ত্বকে টাক পরে যেতে পারে। তবে চিন্তার কারন নেই স্ট্রেস ম্যানেজ হলে আবার নতুন চুল গজাবে।
৫. রক্তে শর্করার পরিমান কম
অতিরিক্ত স্ট্রেস রক্তে শর্করার উপর প্রভাব ফেলতা পারে। যার ফলে আপনি অস্থির এবং দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন। এমন সময় খুব ক্ষুধা অনুভব করতে পারেন। এই ভয়াবহ অনুভূতি সাধারণত রাতের বেলা বা ভোরে কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে হয়।
গ্রাম বাংলার টেপা টেঁপির গল্প শুনুন

হাত পা কাঁপা অতিরিক্ত স্ট্রেসের আরেকটি শারীরিক লক্ষণ । একটু খেয়াল করুন আপনি যদি ফোনের দিকে হাত বাড়াতে যান হাত কাঁপে। আরও লক্ষ্য করেন যে ফোনের নির্দিষ্ট জায়গায় চাপতে গিয়ে আঙ্গুল কাঁপছে। লিখতে গিয়ে আঙুল কাপছে। এর কারণ হল আপনার শরীরের জমে থাকা চাপ ভয়ের আকারে বেরিয়ে যাচ্ছে।
৭. হঠাৎ অজ্ঞান হওয়া
এমন “মূর্ছা যাওয়ার মতো” ঘটনা ঘটতে পারে। কোন কারন ছাড়াই। এটাকে বলে “সিনকোপ”, আর এটা ঘটে যখন শরীরে রক্তচাপ কমে যায় ।
৮. ব্যাথা অনুভব করা
স্ট্রেসে থাকলে মাথাব্যাথা হতে পারে। ঘাড় বা শরীরের অন্য কোথাও ব্যাথা হতে পারে। চোয়ালে বা পিঠে ব্যাথা হতে পারে। যদি উপরের কোন কোন লক্ষন থাকে এবং হঠাৎ ব্যাথা হয় তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে আপনি প্রচুর স্ট্রেসে আছেন।
৯. চেহারা মলিন
আমরা যখন কমফোর্ট ফিল করি বা ভালো মুডে থাকি তখন আমাদের চেহারা দেখতে সুন্দর হয়। যদি স্ট্রেস অনুভব করি, তাহলে চেহারা মলিন দেখায়। মুখের ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। এটি প্রদাহ বৃদ্ধি এবং ফ্রি র্যাডিকেল উৎপাদনের কারণে হয়।
ছাগল কেনার রঙ্গ, ক্রেতা হতবাক।

১০. সর্দি-কাশি লেগেই থাকে
স্ট্রেস আমাদের ক্লান্ত করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে। এর ফলে রোগজীবাণু সহজেই আক্রমন করতে পারে। যে কারণে স্ট্রেস আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঘন ঘন ঠান্ডায় আক্রান্ত হন ।
শরীর স্থিতিস্থাপকতা, শক্তি, সহনশীলতা এবং জীবনযাত্রার মান সবকিছুই অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলির সঠিকভাবে কাজ করার উপর নির্ভর করে। স্ট্রেস কমিয়ে দিন, দেখবেন ঠান্ডা ঋতুতেও আরও সুস্থতার সাথে দিন পার করছেন।
১১. দাঁত কামড়ানো
অতিরিক্ত স্ট্রেস চোয়ালের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। দাঁতে দাঁত চেপে কামড়াতে মন চায়। কসমেটিক ডেন্টিস্ট মার্ক হেলম বলেছেন, দাঁতের স্বাস্থ্য নষ্ট করার পাশাপাশি, কোমর চেপে ধরা চোয়ালের ব্যথাও হতে পারে। যা দারুন অশান্তির সৃষ্টি করে। স্ট্রেস এর লক্ষন কি আশাকরি বিষয় গুলো বুঝতে পেরেছেন। এখন আমরা জানব স্ট্রেস সমস্যা পরিত্রানের উপায় গুলো কি কি।
মানুষ কখন পুরুষাঙ্গ প্রদর্শন করে, কেন করে ?

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কি
উন্নত দেশগুলোতে এখন স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও উপদেশমূলক সেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। আমি মনে করি, It’s all about attitude to life. মানুষ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। তবে সবার আগে চাই ট্রাবল শুটিং। কী বা কে আমাকে স্ট্রেস দিচ্ছে সেটা সবার আগে শনাক্ত করতে হবে।
তার জন্য চাই সঠিকভাবে চিন্তা করা। আবার কিছু ফিজিক্যাল ইস্যুও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত উইম হফের নিশ্বাসের ব্যায়াম ভালো সাপোর্ট করবে স্ট্রেস কমাতে। আর সঠিকভাবে চিন্তাও করতে পারবেন।
সাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ও পরিমিত ঘুমের অভ্যেস, শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম, সর্বোপরি মেডিটেশন বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারলে অনেকটাই চাপমুক্ত থাকা যায় বলে বিশেষজ্ঞদের মত। আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা দারুন কাজে দেয়।
শরীরে ভিটামিন বি ১২ কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানেন ?

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট বই
বিভিন্ন কর্পোরেট হাউসে বিক্রয় কর্মীদের নানারকম স্ট্রেস সামলাতে হয়, স্ট্রেস সামলাতে হয় বিভাগীয় প্রধান থেকে একজন সিইওকে । উদ্যোক্তাদের চাপের কোনো শেষ নেই । আবার যারা নতুন ক্যারিয়ার তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কিন্তু ব্যাটে-বলে হচ্ছে না, তাদের চাপও কম নয় । ব্যক্তিজীবনে সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকেও অনেকে চাপে ভোগেন ।
বই স্ট্রেস কমাতে আপনাকে দারুনভাবে সাহায্য করতে পারে। নিচে স্ট্রেস মুক্তির ৫ টি বইয়ের তালিকা দিলাম। বই পড়ুন স্ট্রেস মুক্ত থাকুন।

স্ট্রেস কমানোর ব্যায়াম
প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট অর্থাৎ কমপক্ষে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট মাঝারি ‘অ্যারোবিক’ ব্যায়ামের পরামর্শ দেয় আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন। যদি আপনার সময় কম থাকে, পুরো ৩০ মিনিটের সেশনটি সারাদিনে তিনবার ১০-মিনিট করে ভেঙে ভেঙে করতে পারেন।

* দ্রুত হাঁটা বা জগিং;
* সাঁতার কাটা;
* টেনিস;
* নাচ;
* রোয়িং।
এমনকি শীতকালের খেলা ব্যাডমিন্টন। পেশি-শক্তিশালী ব্যায়ামের ক্ষেত্রে ভারোত্তোলন করতে পারেন। এমনকি বাগান করা বা লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি বেয়ে উঠার মতো সহজ কিছু ব্যায়ামও আপনার স্ট্রেস কমিয়ে দিতে পারে।

অ্যারোবিক ব্যায়াম হচ্ছে, ১৮০ সংখ্যা নিন। এর থেকে আপনার বয়স বিয়োগ দিন। যে সংখ্যা ফলাফল হিসেবে পাবেন, সেটা আপনার হার্টের বিট। ধরুন আপনার বয়স ৪০ তাহলে আপনার অ্যারোবিক ব্যায়ামে হার্টের বিট হচ্ছে ১৪০ অর্থাৎ ব্যায়াম করার সময় ১৪০ এর উপরে আপনার হার্টের বিট উঠলে আপনি অস্থির হয়ে পরবেন।