স্টেম সেল কী? কীভাবে এই ‘অচল’ জীবনকে সচল রাখে?
শুরুতে একটি গভীর চিন্তার বিষয়: পৃথিবী যখন তার অক্ষের ওপর লাটিমের মতো ১৫২৯ কিমি/ঘণ্টা গতিতে ঘুরছে এবং একই সাথে সূর্যের চারপাশে ১০৭২২৫ কিমি/ঘণ্টা বেগে ছুটছে, তখন কীভাবে এই গ্রহের সমস্ত কিছু টিকে থাকে? গতি জড়তার বৈজ্ঞানিক সূত্র এক ব্যাখ্যা দিলেও, দেহের অভ্যন্তরে যে অসামান্য প্রক্রিয়াটি আমাদের অস্তিত্বকে সচল রাখছে, সেটি হলো স্টেম সেল বা মূল কোষ।
প্রতি মুহূর্তে আমাদের শরীরের কোটি কোটি কোষ মারা যাচ্ছে, ক্ষয় হচ্ছে এবং ধ্বংস হচ্ছে। তাহলে কীভাবে আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো টিকে থাকে? এর উত্তর লুকিয়ে আছে এই সামান্য কিন্তু শক্তিশালী কোষগুলোর মধ্যে।
ঔষধ ছাড়াই ফ্যাটি লিভার দূর করুন একদম ন্যাচারালি।

স্টেম সেল কী এবং জীবন কেন অচল?
আমাদের শরীর গঠিত হয় কোটি কোটি কোষের সমন্বয়ে। এই কোষগুলোর বেশিরভাগই হলো বিশেষায়িত কোষ (Differentiated Cells)। অর্থাৎ, এদের সুনির্দিষ্ট কাজ রয়েছে, কিন্তু এরা নিজেরা বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ তৈরি করতে পারে না।
উদাহরণস্বরূপ, আমাদের পরিপাকতন্ত্র (নাড়িভুঁড়ি, যা প্রায় ২০-২৫ ফুট লম্বা) বিভিন্ন বিশেষায়িত কোষে তৈরি:
- শোষণকারী কোষ (Enterocytes): খাদ্য শোষণ করে।
- গবলেট কোষ (Goblet Cell): মিউকাস রস নিঃসরণ করে, যা পরিপাকতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয় এবং খাদ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করে।
- এন্টারোএন্ডোক্রাইন কোষ (Enteroendocrine Cell): খাদ্যের পরিশোষণ ও প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
রোগজীবাণু, অ্যাসিড বা খাদ্যের মাধ্যমে প্রবেশ করা ক্ষতিকারক রাসায়নিকের কারণে এই বিশেষায়িত কোষগুলো প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে। যদি নতুন কোষ তৈরি না হয়, তাহলে খুব দ্রুতই আমাদের পরিপাকতন্ত্র বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা।
আজীবন সুস্থ থাকতে হেলদি খাবার গুলো সম্পর্কে জানা দরকার।

স্টেম সেলের ভূমিকা: জন্মদাতা এবং মেরামতকারী
এখানেই স্টেম সেলের গুরুত্ব। স্টেম সেল হলো এক ধরনের অবিশেষায়িত কোষ যা শরীরের যেকোনো ধরনের বিশেষায়িত কোষে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
- পরিবর্তনকারী: পরিপাকতন্ত্রের মাত্র ১% এরও কম কোষ হলো স্টেম সেল, কিন্তু এই সামান্য সংখ্যক কোষ সম্পূর্ণ অঙ্গটির সকল ধরণের কোষ (যেমন এন্টারোসাইট, গবলেট সেল) প্রয়োজন অনুসারে সৃষ্টি করতে পারে।
- স্ব-নবায়নকারী: একই সাথে স্টেম সেল আবার নতুন স্টেম কোষও তৈরি করতে পারে—যে ক্ষমতা অন্য বিশেষায়িত কোষগুলোর নেই।
এই প্রক্রিয়াটি আমাদের রক্তে এবং অন্যান্য অঙ্গেও একইভাবে কাজ করে। সহজ কথায়, স্টেম সেল হলো আমাদের শরীরের মেরামতকারী (Repairing System) যা ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গকে মেরামত করে এবং নতুন অঙ্গে পরিণত করে আমাদের জীবনকে সচল রাখে।
আধ্যাত্মিক সংযোগ ও পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ মারা যাওয়ার পরও শরীরে অল্প কয়েকটি স্টেম সেল জীবিত থাকে। তাঁদের মতে, সঠিক পরিবেশ পেলে এই অল্প কয়েকটা স্টেম কোষ থেকে মৃত মানুষটিকে আবার জীবিত করা সম্ভব। এই তথ্যটি আল্লাহ্র সর্বশক্তিমান হওয়ার ধারণার সাথে মিলে যায়, যিনি কিয়ামতের মাঠে নির্ভুলভাবে আমাদের আবার জীবিত করে দাঁড় করাবেন। এই কোষগুলোই হয়তো পুনরুজ্জীবনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
খুব দ্রুত ওজন কমানোর সাস্থ্যকর উপায়।

প্রাকৃতিকভাবে স্টেম সেল বৃদ্ধির ৫টি উপায়
স্টেম সেলের উৎপাদন ও কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলা কোনো কঠিন কাজ নয়। জীবনযাত্রায় কিছু প্রাকৃতিক পরিবর্তন আনলেই এর উপকারিতা পাওয়া যায়:
১. ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (Intermittent Fasting) মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকা (যেমন ১৬ থেকে ২২ ঘণ্টা ফাস্টিং) শরীরকে স্টেম সেল উৎপাদনে উৎসাহিত করে, যা ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন ২০ ঘণ্টার উপবাস রাখা যেতে পারে।
২. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম গভীর ঘুম স্টেম সেলের পুনর্জন্ম এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। পর্যাপ্ত বিশ্রাম শরীরকে মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেয়।
৩. পুষ্টিকর খাদ্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার এই কোষ রক্ষা ও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যেমন:
- ব্লুবেরি, ব্রকলি, পালং শাক
- হলুদ (Turmeric), আদা
- মাছের তেল (Omega-3)
- সবুজ চা (Green Tea)
৪. নিয়মিত ব্যায়াম নিয়মিত শরীরচর্চা (বিশেষ করে হালকা দৌড় বা brisk walking) স্টেম কোষের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষের জীবনীশক্তি বজায় রাখে।
৫. স্ট্রেস কমানো ধ্যান (Meditation), যোগব্যায়াম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম স্ট্রেস হ্রাস করে, যা স্টেম সেলের পরিবেশকে অনুকূল রাখে।
এই কোষ কিভাবে রোগ সারিয়ে তুলে তা নিয়ে গবেষণা পত্র পড়ুন

ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন।
সেলিম হোসেন – তাং ২৫/০১/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।









