সফল হওয়ার গোপন সূত্র: সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস ৮ টি
২৪ ঘণ্টার দিন ইলন মাস্ক বা সাকিব আল হাসানের জন্য যেমন, আপনার জন্যও ঠিক তেমনই। সময়ের এই একই বৃত্তে কিছু মানুষ কীভাবে অবিশ্বাস্য সফলতা অর্জন করেন? উত্তরটি খুব সহজ—সঠিক অভ্যাস এবং সেই অভ্যাসগুলোর ধারাবাহিক চর্চা।
সফল ব্যক্তিরা জন্মগতভাবে কেবল ‘ব্রিলিয়ান্ট’ নন; তাঁরা তাঁদের রুটিনকে এমনভাবে সাজিয়ে নেন, যাতে প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগে। আপনিও যদি এই আটটি অভ্যাস রপ্ত করতে পারেন, তবে আপনার ২৪ ঘণ্টাই হয়ে উঠবে অত্যন্ত মূল্যবান ও ফলপ্রসূ।
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের যে বিষয় গুলি সফল হতে আপনাকে উদ্দীপ্ত করবে।

সফল ব্যক্তিদের যে ৮টি অভ্যাস আপনার রপ্ত করা উচিত
সফল ব্যক্তিরা ঘুম থেকে ওঠার মুহূর্ত থেকে রাতে বিছানায় যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি কাজে সর্বোচ্চ মনোযোগ ও দক্ষতার জন্য কাজ করেন। এটি তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে দক্ষতা অর্জন করতে সাহায্য করে।
১. নিয়মিত বই পড়া: মস্তিষ্কের উদ্দীপক
সফল ব্যক্তিদের মধ্যে একটি সাধারণ অভ্যাস হলো—নিয়ম করে বই পড়া। বিল গেটস থেকে শুরু করে সমাজের প্রভাবশালী ইউটিউবার বা পেশাদার—প্রত্যেকেই জানেন যে বই হলো জ্ঞান এবং সৃজনশীলতার মূল উৎস।
- উপকারিতা: বই পড়লে আপনার শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পাবে, সাধারণ জ্ঞান বাড়বে এবং সৃজনশীলতা উদ্দীপিত হবে। এর ফলে আপনার বক্তব্য আরও শক্তিশালী ও মনোযোগী হবে।
- কার্যকরী পদ্ধতি: ডিজিটাল স্ক্রিনের চেয়ে কাগজের বইয়ে মনোযোগ দিন, কারণ গবেষণায় দেখা গেছে স্ক্রিনে পড়ার গতি ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত ধীর হতে পারে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে বা ভ্রমণের সময় নির্দিষ্ট কিছুটা সময় কেবল বই পড়ার জন্য রাখুন।
বিয়ার গ্রিলস যদি সফল হন, তাহলে আপনিও পারবেন।

২. ভোরে ঘুম থেকে ওঠা: দিনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহন
আপনি কি কাজের তাড়া না থাকলে বিছানা ছাড়তে চান না? সফল ব্যক্তিরা এখানে ব্যতিক্রম। তারা সবসময় পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে বিছানা ছাড়েন। সকাল ৭টার পরে ঘুম থেকে ওঠা সিইও খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।
- উপকারিতা: ভোরে ওঠার ফলে আপনি স্বাস্থ্যকর নাস্তা করতে পারেন, দিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো গুছিয়ে নিতে পারেন এবং দিনের শুরুতেই কিছু অতিরিক্ত উৎপাদনশীল সময় লাভ করেন। এটি আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
- কার্যকরী পদ্ধতি: প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কাজের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম (৭-৮ ঘণ্টা) নিশ্চিত করতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন এবং ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন।

৩. স্বাস্থ্যকর পানীয় গ্রহণ
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কফি বা দুধ চা নয়, সফল ব্যক্তিরা পানিশূন্যতা দূর করতে এবং শরীরকে ডিটক্স করতে মনোযোগ দেন।
- কার্যকরী পানীয়: বিছানা ছাড়ার পর লেবুর রস সহ এক মগ কুসুম গরম পানি পান করুন। চাইলে এর সাথে সামান্য আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিতে পারেন।
- উপকারিতা: এটি লিভারকে ডিটক্স করতে, হজমে সাহায্য করতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ত্বক সতেজ রাখতে সহায়ক।
পেটের হজম শক্তি বাড়াতে ন্যাচারালি যা করতে পারেন।

৪. ছোট বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া
অনেকেই ছোট ছোট বা খুঁটিনাটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়াকে ত্রুটি মনে করতে পারেন, কিন্তু সফল ব্যক্তিরা এর গুরুত্ব বোঝেন। ছোট ছোট বিষয়গুলোতেই একটি বড় স্বপ্নের বাস্তবায়ন লুকিয়ে থাকে।
- গুরুত্ব: “স্বপ্ন দেখা সহজ… কিন্তু ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আচ্ছন্ন থাকার মাধ্যমেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়,” বলেছেন লিন্ডা কাপলান থ্যালার।
- দৈনন্দিন প্রয়োগ: দুপুরে স্বাস্থ্যকর লাঞ্চ করা, দীর্ঘমেয়াদে সঞ্চয় করা, বা নতুন সাস্থ্যকর রেসিপি তৈরি করে সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করার মতো ছোট কাজগুলি আপাতদৃষ্টিতে নগণ্য মনে হলেও, এটিই সাফল্যের মূল ভিত্তি।
সুস্থ থাকতে যে খাবার গুলি সম্পর্কে জানতেই হবে।

৫. পরামর্শ গ্রহণের অভ্যাস
সফল ব্যক্তিরা কখনওই ভাবেন না যে তাঁরা সব জানেন। তারা জানেন, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সময় লাগে, তাই তারা অভিজ্ঞদের কাছে পরামর্শ চাইতে দ্বিধা করেন না।
- গুরুত্ব: লুলুলেমন (LuluLemon)-এর প্রতিষ্ঠাতা চিপ উইলসন বলেছেন যে তিনি সেরা পরামর্শ পেয়েছেন তা হলো—সাহায্য চাওয়া। “মানুষ সাহায্য করতে ভালোবাসে। সাহায্য না চাইলে আমাকে অনিরাপদ থাকতে হবে,” তিনি বলেন।
- কারা আপনার পরামর্শদাতা: বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, বস, পরামর্শদাতা (mentor), এমনকি বন্ধুদের কাছ থেকেও শেখার মতো অনেক কিছু আছে। যারা নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানী, তাদের কাছে যান এবং পরামর্শ নিন।
একমাসে দ্রুত ওজন কমানোর সহজ উপায়।

৬. বিছানা গোছানো ও থাকার জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখা
একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জায়গা মনকে পরিষ্কার রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়। অসংখ্য গবেষণা অনুসারে, একটি পরিষ্কার শোবার ঘর রাতে ভালো ঘুমের পরিবেশ তৈরি করে।
- মানসিক শান্তি: প্রতিদিন সকালে বিছানা গোছানো একটি সহজ পদক্ষেপ হলেও এটি দিনের শুরুতে আপনার মনে একটি অর্জনের অনুভূতি এনে দেয়। গ্রেচেন রুবিন যেমন বলেছেন, “আপনার বিছানা তৈরি করা এমন একটি পদক্ষেপ যা দ্রুত এবং সহজ। তবুও একটি বড় সুফল এনে দেয়।”
- নিয়ম: প্রতিদিন সকালে আপনার বিছানা সাজিয়ে নিন এবং আপনার থাকার জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
ঔষধ ছাড়াই আজীবন যেভাবে সুস্থ থাকবেন।

৭. সুস্থতা ও ফিটনেসকে লক্ষ্য করা
শরীরের সুস্থতা ছাড়া কোনো সফলতাই উপভোগ করা যায় না। সফল ব্যক্তিদের রুটিনে ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাবার আবশ্যিক।
- রিচার্ড ব্র্যানসনের উদাহরণ: ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসন তাঁর প্রাণশক্তির উৎস সম্পর্কে বলেন, “আমি কেবল ব্যায়াম করি।” তিনি মনে করেন, ব্যায়ামের কারণে তাঁর কর্মঘণ্টায় প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা যোগ হয়।
- উপকারিতা: নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যায়, ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়, রাতে ভালো ঘুম হয় এবং কর্মজীবনে মনোযোগ বাড়ে।
কোন বিষয় গুলো ঠিক থাকলে নিজেকে ফিট ধরে নিবেন।

৮. ব্যক্তিগত সময় বরাদ্দ করা
ব্যস্ততার কারণে আমরা প্রায়শই ভুলে যাই যে ‘আমি কে’ এবং আমার মন কী চাইছে। সফলতার জন্য সারাক্ষণ দৌঁড়ানো নয়, প্রতিদিন নিজের জন্য কিছু কাজমুক্ত সময় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
- বিশ্রামের গুরুত্ব: প্রতিদিন এক ঘণ্টা সময় রাখুন হাঁটা, পছন্দের একটি বই পড়া, বা কেবল বিশ্রামের জন্য।
- ছুটির সুফল: প্রজেক্ট: টাইম অফের গবেষণা অনুযায়ী, যারা তাদের সম্পূর্ণ ছুটির সময় ব্যয় করেন, তাদের পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় ৬.৫ শতাংশ বেশি। বিশ্রাম আপনার মানসিক শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করে।
কিভাবে সফলতা অর্জন করবেন। দেখুন মার্ক ম্যানসনের ভিডিও।

সফল ব্যক্তিদের অনুসরনে এখন আমরা একটা সামারি করতে পারি। দ্রুত ঘুমাতে যাব। ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠব। প্রয়োজনে পরামর্শ চাইব। ড্রয়ারের অপ্রয়োজনীয় কাগজ গুলো ফেলে দিব। সাস্থ্যকর খাবার খাব। নিয়মিত ব্যায়াম করব। সফলতা এবং তৃপ্তি দুটোই আসবে জীবনে।
ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – ১৪/০৩/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।









