মনের যত্ন কেন জরুরি: চার স্ত্রীর একটি রূপক গল্প
শরীর ও মনের সংযোগ: আমাদের নীরব মহামারি
যে জিনিসটি ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, কিন্তু মানব জীবনে রাখে এক দারুণ প্রভাব। তা হলো আমাদের মন। দৃশ্যত আমরা কেবল শরীরকেই দেখতে পাই, কিন্তু শরীর আর মন মিলেই একজন মানুষ। শরীর যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কারণে অসুস্থ হয়, তেমনি মনও অসুস্থ হতে পারে।
শরীর ও মনের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় সংযোগ:
- শরীর অসুস্থ হলে মন খারাপ হয়ে যায়।
- মন খারাপ থাকলে শরীরে কোনো কাজে উৎসাহ আসে না।
- আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের বেলায়ও শরীর ও মন একসাথে সাড়া দেয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ (২০১৮-১৯) অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ১৬.৮ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১২.৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এই হিসাব ভয়াবহ, এবং প্রায়শই আমরা জানিই না যে আমরা কতটা মানসিক ভাবে অসুস্থ।
যে অভ্যাস গুলো মানুষ কে সুখী করে তোলে

চায়ের আড্ডায় চার স্ত্রীর গল্প
জাহিদ ইসলামের মতো অনেকেই হয়তো ভাবছেন, “আমি কি মানসিক ভাবে অসুস্থ?” এই বিষয়েই মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বন্ধু বেলাল আহমেদের সাথে এক সন্ধ্যায় আড্ডা জমেছিল।
সুন্দর চায়ে চুমুক দিতে দিতে জাহিদের প্রশ্নে বেলাল একটি গল্প বললেন, যা তিনি বিদেশে প্রশিক্ষণে শুনেছিলেন।
রূপকের প্রেক্ষাপট
এক ধনী লোকের ছিল চারজন স্ত্রী।
- ছোট স্ত্রী: ভদ্রলোক তাকে খুবই ভালোবাসতেন, সবচেয়ে দামি উপহার কিনে দিতেন, সবসময় সাথে নিয়ে ঘুরতেন। তিনি ছোট স্ত্রীর রূপে মুগ্ধ ছিলেন এবং তাকেই নিজের আনন্দ ও তৃপ্তির মূল জায়গা মনে করতেন।
- দ্বিতীয় স্ত্রী: তাকেও বেশ ভালোবাসতেন। এই স্ত্রী সব সম্পত্তি এবং বাড়িঘর দেখাশোনা করতেন। যার ফলে ভদ্রলোক স্বস্তি অনুভব করতেন।
- তৃতীয় স্ত্রী: তিনি এই স্ত্রীকে কিছুটা ভালোবাসা দিতেন। এই স্ত্রী ব্যবসায়িক কাজে সহায়তা করতেন।
- প্রথম স্ত্রী: প্রথম স্ত্রীর বেলায় ভদ্রলোক ছিলেন একেবারেই উদাসীন। তিনি তাকে ভালোবাসতেন না বা আদর-যত্ন করতেন না। ফলস্বরূপ, বড় বউ বিষণ্ণ, হতাশ এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
ত্বকের উজ্জলতা বাড়ানো এবং বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকানোর ন্যাচারাল উপায়ের কোলাজেন কিনুন

পরিণতি যখন ঘনিয়ে এলো
একদিন ভদ্রলোক খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সবরকম চিকিৎসা শেষে ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিলেন। মৃত্যুর ঠিক আগে, তিনি তাঁর চার স্ত্রীকে ডাকলেন এবং জানতে চাইলেন, “আমার মৃত্যুর পর তুমি কি আমার সাথে যাবে?”
- ছোট স্ত্রী: উত্তর দিলেন, “অসম্ভব! আমি কেন তোমার সাথে যাব?”
- দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রী: তারাও একই কথা বললেন, “প্রশ্নই ওঠে না। তুমি মারা যাওয়ার পর কেন তোমার সাথে যাব?”
ভদ্রলোক খুব বিমর্ষ হলেন। যাদের জন্য এত কিছু করলেন, সবাই তাঁকে মুখের ওপর না করে দিল। ঠিক এমন সময় একটি ক্ষীণ কণ্ঠ শুনতে পেলেন। কেউ খুব কাছে এসে বলছেন, “তোমার কোনো চিন্তা নেই। আমি তোমার সাথে যাব।”
বিস্মিত ভদ্রলোক তাকিয়ে দেখেন, তার প্রথম স্ত্রী দাঁড়িয়ে—যাকে তিনি জীবনে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করতেন।
যে সুপার ফুড আশ্চর্যজনক উপকারি, এখান থেকে কিনুন

চার স্ত্রীর রূপক বিশ্লেষণ
বেলাল আহমেদ তখন গল্পের বিশ্লেষণ করে জাহিদকে বোঝালেন, এই চার স্ত্রী আসলে আমাদের জীবনে কিসের প্রতীক:
- ছোট বউ = আমাদের শরীর (Body): শরীরই আমাদের সবচেয়ে পছন্দের। একটু মাথা ব্যথা বা সামান্য কেটে গেলে আমরা অস্থির হয়ে পড়ি। সুন্দর দেখাতে বা সুস্থ রাখতে আমরা অর্থ ও মনোযোগের সর্বোচ্চ ব্যয় করি।
- দ্বিতীয় ও তৃতীয় বউ = আমাদের সম্পদ, ক্যারিয়ার, ব্যবসা, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন (Wealth & Relationship): এগুলোর প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও মনোযোগ আটকে থাকে। আমরা সারাক্ষণ দৌড়াই আরও সম্পদ পেতে, খ্যাতি অর্জন করতে।
- প্রথম বউ = আমাদের মন বা আত্মা (Mind/Soul): এটিই সেই জিনিস, যাকে আমরা সবচেয়ে বেশি অবহেলা করি, ভালোবাসাহীন রাখি। অথচ মৃত্যুর পরে বা শেষ সময়ে আমাদের এই মন বা আত্মাই আমাদের সাথে থাকে। কিন্তু সারা জীবন অবহেলা ও দুশ্চিন্তার ভারে এটি থাকে বিষণ্ণ ও দুর্বল।

মনের যত্ন নিবেন যেভাবে
বেলাল জোর দিয়ে বললেন, যেহেতু আত্মাই আমাদের সাথে যায়, তাই আমাদের আত্মার যত্ন নেওয়া সবচেয়ে জরুরি। এটি করলে দেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়বে না এবং কম আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে উঠবে।
মনের যত্নের কিছু কার্যকর প্রাকৃতিক উপায়:
১. প্রার্থনা ও আধ্যাত্মিকতা: মুসলিমদের জন্য প্রতিদিন নামাজ পড়া (বিশেষ করে তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়া এবং শেষে দীর্ঘ সময় দোয়া করা), ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য তাদের মতো প্রার্থনা করা—এগুলো মনের যত্নে দারুণ কাজ দেয় এবং মনকে শান্ত রাখে।
২. ধ্যান (Meditation): প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মেডিটেশন বা মাইন্ডফুলনেস চর্চা করলে মন শান্ত ও স্থির হয়।
৩. শারীরিক সুস্থতা: ভালো ঘুম (পর্যাপ্ত ৭-৮ ঘণ্টা) খুব জরুরি। প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে।
৪. সামাজিক মেলামেশা: স্মার্ট ফোনে নয়, বাস্তবে মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা এবং সামাজিক মেলামেশা বাড়ানো নিজের মনকে ভালো রাখে।
৫. স্বাস্থ্যকর খাবার: শরীরের সুস্থতা মনের স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
মানসিক সমস্যার লক্ষন নিয়ে বলছেন ডাঃ কুশাল

মনের যত্ন নিন, কারণ মনের অবহেলাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
লেখক: সেলিম হোসেন – তারিখ: ৩০/০৯/২০২৫ ইং বি.দ্র.: প্রতীকী ছবিগুলো পেক্সেলস থেকে নেওয়া। তথ্যসূত্র (Reference): Dr Kushal, Yahia Amin, Ahsan Aziz khan.









