মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়া
সিজোফ্রেনিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি মানসিক অসুস্থতা। যা রোগীর চিন্তাভাবনা, আবেগ ও আচরণকে দারুনভাবে প্রভাবিত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাব মতে, বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ এতে আক্রান্ত। প্রতিদিন আমরা যে স্ট্রেস অনুভব করি বিষয় টা তেমন নয়। বরং সঠিক পরিচর্যা ছাড়া জীবন কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
আজকে কাজের বেশ চাপ আছে। এশার আগে ছাড়া বাসায় যাওয়ার সুযোগ নেই। অফিস বয় রাজুকে বাসা থেকে ২ জনের ডিনার আনতে বলল জাহিদ ইসলাম। বিকেলেই চলে আসবে বন্ধু বেলাল আহমেদ। ইউনিভার্সিটি টিচার। ছাত্রদের সাইকোলজি পড়ায়।
মাগরিবের পূর্বে জাহিদের অফিসে ঢুকল বেলাল। কিরে, আজ আসতে এত দেরি কেন ?
আজকে আমার এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। কয়েকদিন ধরেই ফোন করছিল। তার বউয়ের কি সমস্যা ! তো সেখানে গেলাম, সব কিছু শুনলাম। বউ এবং স্বামীর সাথে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বললাম। বউটা সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। কি করতে হবে পরামর্শ দিলাম। তারপর সোজা তোর এখানে।
সিজোফ্রেনিয়া ! সেটা আবার কি !
ইংরেজিতে শব্দটার উচ্চারন স্কিজোফ্রেনিয়া। বাংলায় আমরা সহজ করে বলি সিজোফ্রেনিয়া। রোগ টা কি বিস্তারিত বলছি।
তরুন তরুণীদের মধ্যে বিয়ে ভীতি বাড়ছে জেনে নিন প্রতিকার

সিজোফ্রেনিয়া কী?
এটি একটি জটিল মানসিক ব্যাধি। যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে সমস্যায় পরেন। এতে ভুল ধারণা (Delusion), মায়া (Hallucination), বিশৃঙ্খল চিন্তাভাবনা ও অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়। আমার এই আত্মীয়ের বিবাহিত জীবন ৮ বছরের। তাদের দুটো সন্তান। বড়টার বয়স ৭ বছর। ছোটটার বয়স ২ বছর।
বাচ্চাদের নিয়ে সময় কাটে বউয়ের। তাদের যত্নআত্তি রান্না বান্না সবকিছুই ভালোভাবে সম্পন্ন করে। প্রথম দিকে বিষয় টা আমলে নেয় নি স্বামী। বউ মাঝে মধ্যেই কিছু কথা বলে, যা শুনে স্বামী বেশ অবাক হয়। হয়ত স্বামী অফিসে আছে এমন সময় বউ ফোন দেয়, তুমি কোথায় আছ ? তোমার রুমে মেয়েটা কে ? আসলে অফিস রুমে অন্য কেউ নেই। স্বামী রীতিমত চিন্তিত। এমন আরও যা যা ঘটে সেগুলো বলছি।
৪ বউয়ের গল্প আপানার জীবন বদলে দিবে

সিজোফ্রেনিয়া লক্ষণ
সাধারনত তিন টি লক্ষন দেখা যায়
১. পজিটিভ বা ইতিবাচক লক্ষন
-
রোগী নিজের কানে পরিচিত কারও কণ্ঠস্বর শুনতে পায়। যা শুনে তা সবই নেতিবাচক। কোন কোন সময় চোখের সামনে দেখতে পায়। অনেক টা ভিডিও দেখার মত। যাকে আমরা (Hallucination) বলি। এই বউটাও কানে পরিচিতদের কণ্ঠ হুবুহু শুনতে পায়। যা শুনে সব নেতিবাচক।
-
তার মনে আসে অবাস্তব ধারণা বা ভ্রান্ত বিশ্বাস (Delusion)। অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি বা আচরণ প্রকাশ করে। কখনো কখনো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে। একদিন ঝগড়া করে বউটা আমার আত্মীয়ের আক্রমন করে। তার গেঞ্জি ছিঁড়ে ফেলে।
২. নেগেটিভ বা নেতিবাচক লক্ষণ
-
আক্রান্ত রোগী আবেগহীন বা অনুভূতিহীন হয়ে যেতে পারে।
-
এসময় তারা সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলে। কারও সাথে মিশতে চায় না। কাউকে বিশ্বাস করে না।
-
নিজের কাজ বা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে যায়।
৩. কগনিটিভ লক্ষণ
-
মনোযোগ দিয়ে কোন কাজ করতে পারে না। প্রয়োজনীয় কাজের কথা ভুলে যায়।
-
কোন কাজে বা সমস্যায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
-
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। দুঃখজনক ভাবে সব গুলো সমস্যাই বউটার মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়া আপনার যে সর্বনাশ করে চলেছে

সিজোফ্রেনিয়ার কারণ
এ রোগ কেন হয় ? জাহিদ বলল
বিজ্ঞানিরা এর সঠিক কারন এখনো নিরুপন করতে পারেনি।। তবে তারা বলেছে, কয়েকটি বিষয় এটিকে প্রভাবিত করে –
-
জেনেটিক (বংশগত) কারণ – অতীতে পরিবারে কেউ আক্রান্ত থাকলে। পরবর্তী প্রজন্মের কারও মধ্যে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে।
-
মস্তিষ্কের রাসায়নিক অসামঞ্জস্য – যদি দুটো হরমোন ব্যালেন্স হারায় যেমন , ডোপামিন ও গ্লুটামেট।
-
গর্ভাবস্থায় জটিলতা – সন্তান সম্ভবা মা গর্ভাবস্থায় পুষ্টিহীনতায় ভুগলে এমন টা হতে পারে।
-
স্ট্রেস ও পরিবেশগত কারণ – শৈশবে মানসিক ট্রমা বা অতিরিক্ত চাপ। সাধারণত ডিভোর্সি বাবা মায়ের সন্তানদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মোবাইলে যে ভয়াবহ অসুখ, প্রতিকার জেনে নিন

সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসা
১. ওষুধ সেবন
অ্যান্টি-সাইকোটিক ওষুধ রোগীর ভ্রান্ত ধারণা, মায়া ও অস্বাভাবিক আচরণ কমাতে সহায়তা করে।
২. থেরাপি
-
কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT): রোগীকে বাস্তবতা বুঝতে সাহায্য করে।
-
কাউন্সেলিং: পরিবার ও সামাজিক সহায়তার মাধ্যমে মানসিক স্থিতিশীলতা আনা।
লাইফস্টাইলের পরিবর্তন
১. ভালো ঘুম – রোগীর ভালো ঘুমের ব্যবস্থা করতে হবে। রাত ১০ দশটার মধ্যে লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলে ভালো ঘুমের আশা করা যায়। এতে করে ভোর বেলায় বিছানা ছাড়া সহজ হবে। মস্তিষ্ক যথেষ্ট বিশ্রাম পাবে।
২. পুষ্টিকর খাবার – স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের জন্য যেমন জরুরী। মানসিক রোগ স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্তদের জন্য আবশ্যক। কোন বাজে খাবার এসব রোগী খাবে না। যেমন – চিনি মেশানো সমস্ত খাবার। কেক, মিষ্টি, দোকানের জুস, সফট ড্রিঙ্ক ইত্যাদি। ভাজা পোড়া খাবার। চিকেন ফ্রাই, বার্গার, পিতজা ইত্যাদি। মাছ, দেশী মুরগি, গরুর মাংস, সামুদ্রিক মাছ, নদীর মাছ, শাক সবজি, সালাদ, বাদাম, কুমড়ো বিচি, লাল চালের ভাত এগুলো খাবে।
৩. শারীরিক পরিশ্রম – নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কারন এর কোন বিকল্প নেই। চাপ মুক্ত থাকতে প্রতিদিন নিশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে। এতে করে মস্তিস্কের উদ্দিপনা বাড়বে। ইউটিউবে উইম হফ মেথড বা ডাঃ ওয়েল ব্রিদিং সেসন লিখে সার্চ দিলে নিশ্বাসের ব্যায়ামের অনেক ভিডিও পাওয়া যাবে। সেগুলো দেখে খুব সহজেই নিশ্বাসের ব্যায়াম করা যাবে।
৪. অ্যালকোহল – মাদক ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা সবার জন্য জরুরী। আমাদের সবারই এই বোধটুকু আছে। মানসিক রোগ স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্তরা মাদকের ধারে কাছেও যাবেন না।
কিশোর কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে কেন

সিজোফ্রেনিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা এবং গল্প
যদিও স্কিজোফ্রেনিয়া পুরোপুরি নিরাময় যোগ্য নয়, তবে সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা নিলে রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। পরিবার ও সমাজের সমর্থন এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
স্কিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য মানসিক ব্যাধি। প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো চিহ্নিত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাহলে রোগী সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন। মানসিক রোগ নিয়ে লজ্জা বা ভয়ের কিছু নেই। বরং চিকিৎসা ও সহানুভূতিই হতে পারে সমাধান।
সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে একটি কোরীয় রিসার্চ পেপার দেখুন

দারুন একটা বিষয় জানা গেল। আজ কি কোন মজার গল্প শুনব না ? জাহিদ বলল
হ্যাঁ, শোনাব। বেলাল গল্প বলা শুরু করল।
দুজন শিখ মহিলা গল্প করছিল। নিজেদের পারিবারিক সমস্যা নিয়ে। একজন বলল, আমার স্বামী রাতে খুব দেরি করে বাড়িতে ফিরে। কি করা যায় বহেনজি ?
দ্বিতীয় জন বলল, খুব সোজা। আমার স্বামীও দেরি করে বাড়িতে ফিরত। এটা তার বদঅভ্যাসে পরিনত হয়েছিল। এক রাতে সে খুব দেরী করে বাড়ি ফিরল। দরজায় টোকা দিতেই, আমি চিৎকার করে বললাম ‘ কে ইন্দ্রজিত এসেছ। এরপর থেকে সে আর কখনো বাড়ি ফিরতে দেরী করেনি। ‘
পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং – ১৩/১১/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.









