ভিটামিন বি ১২ শরীর ও মনের
শরীরে শক্তির অভাব। দেহমন জুড়ে অলসতা। সময়ে অসময়ে ঝিমুনি। শরীরে এমন অবস্থা তৈরি হয় ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে। ভিটামিন ডি নিয়ে আমরা আরেকটি লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আজ আমরা বিস্তারিত জানব ভিটামিন বি ১২ নিয়ে। শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত জরুরি ভিটামিন বি ১২।

শরীর খাবার থেকে ভিটামিন বি ১২ শোষণ করে যেভাবে

রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদন, ডিএনএ সংশ্লেষণ এবং স্নায়বিক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন বি–১২। কিছু শারীরিক সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন বি–১২–এর শোষণ বাড়ানো সম্ভব। এতে শরীরে শক্তি বাড়ে, বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমের উন্নতি ঘটে, মানসিক অবস্থা থাকে স্থিতিশীল।
খাবার থেকে ভিটামিন বি–১২ অবমুক্ত করার জন্য পাকস্থলীর অ্যাসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাইপোক্লোরাইড্রিয়া অর্থাৎ পাকস্থলীর অ্যাসিডের নিম্নমাত্রা ভিটামিন বি–১২ শোষণ বাধাগ্রস্ত করে। বিশেষ করে বয়স্ক এবং যাঁরা অ্যান্টাসিডজাতীয় ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাই আবারও বলি, খাবার খাওয়ার আগে আপেল সিডার ভিনেগারের সঙ্গে পানি মিশিয়ে খেলে পাকস্থলীর অ্যাসিডের উৎপাদন উদ্দীপিত হয়, যা ভিটামিন বি–১২ শোষণে সহায়তা করে।

যে খাবারে ভিটামিন বি–১২ বেশি থাকে
১. দেশী মুরগি, দেশী গরুর মাংস, খাসির মাংস, হাঁসের মাংস।
২. দেশী গরু বা অন্যান্য প্রাণীর কলিজা।
৩. নদীর মাছ অথবা সামুদ্রিক মাছ।
৪. দুধ এবং দুধজাতীয় খাবার (পনির, টক দই ইত্যাদি)
৫. ডিম (বিশেষ করে ডিমের কুসুম)
শুধু ক্যালসিয়াম খেলেই হবে না। আরও কি করতে হবে জেনে নিন।

নিরামিষাশীরা যা করবেন
নিরামিষাশীদের জন্য সিরিয়াল, ইস্ট, উদ্ভিজ দুধ (সয়া মিল্ক, আমন্ড মিল্ক, নারকেলের দুধ) হতে পারে ভিটামিন বি–১২–এর চমৎকার উৎস। আপনার খাদ্যতালিকায় এসব খাবার যোগ করলে ভিটামিন বি–১২–এর স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় থাকবে। সামগ্রিকভাবে আপনার কর্মশক্তি বাড়বে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটবে, গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়াগুলো ভালোভাবে সম্পন্ন হবে।
ভিটামিন বি ১২ এর সঙ্গে অন্যান্য খাবার
ভিটামিন বি–১২–সমৃদ্ধ খাবারগুলো অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খান। যেমন ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (দুধজাতীয় খাবার, সবুজ শাকসবজি), ভিটামিন বি–৯ (সবুজ শাকসবজি, ডালজাতীয় খাবার, ভিটামিন বি–৬ (কলা, মুরগির মাংস, ডিম, আলু)।
হু হু করে বাড়ছে কিডনি রোগী। আজীবন কিডনি ভালো রাখার উপায় জেনে নিন।

প্রোবায়োটিকের ভূমিকা
ভিটামিন বি–১২ শোষণের জন্য পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রোবায়োটিক পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে, পুষ্টি উপাদানগুলোর দ্রুত শোষণে সহায়তা করে। আপনার খাদ্যতালিকায় টক দই ও কিমচির মতো ফার্মেন্টেড খাবার যুক্ত করুন। পেঁয়াজ, রসুন, পাকা কলাও প্রোবায়োটিকের উৎস।
ভিটামিন বি ১২–এর স্বল্পতার ঝুঁকি কাদের সবচেয়ে বেশি
ভিটামিন বি১২–এর মূল উৎস মাছ-মাংস। তাই যাঁরা ভেজিটেরিয়ান কিংবা ভেগান। তাঁদের শরীরে এই ভিটামিনের অভাব দেখা দেওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
পেটের চর্বি কমানোর জন্য কিংবা অন্ত্রের কোনো রোগের কারণে যাঁদের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, তাঁদের শরীরে এই ভিটামিনের শোষণ ব্যাহত হয়। দীর্ঘ মেয়াদে প্রোটন পাম্প ইনিহিবিটর (পিপিআই)–জাতীয় ওষুধ সেবন করলেও ভিটামিন বি–১২–এর অভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় সমাধান হচ্ছে খাবারের পূর্বে পানিতে মিশিয়ে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া।
ফ্যাটি লিভার দূর করার মত সহজ কাজ আর কি আছে !

যেসব রোগ ও বদভ্যাসে ঝুঁকি বাড়ে
বিভিন্ন রোগ, যেমন ক্রোনস ডিজিজ, সেলিয়াক ডিজিজ, স্মল ইনটেস্টাইনাল ব্যাকটেরিয়াল ওভারগ্রোথ (এসআইবিও) ভিটামিন বি ১২–এর শোষণকে প্রভাবিত করে। এসব রোগ দেখা দিলে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে। মদ্যপান এবং ধূমপানের কারণেও ভিটামিন বি–১২–এর শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়।
শরীরে ভিটামিন বি ১২ -এর শোষণ ভালোভাবে হচ্ছে, তা কীভাবে বুঝবেন
১. শারীরিক শক্তি বাড়বে
২. বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি হবে
৩. মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল হবে
৪. অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অসাড়তা এবং কাঁপুনি কমে যাবে
৫. চুল, ত্বক ও নখ হবে আগের চেয়ে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল
ফ্যাটি লিভার নিয়ে কি বলছেন ডাঃ এরিক বারগ।

সেলিম হোসেন – তাং ১১/০২/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.