ভিটামিন বি ১২: শরীর ও মনের সুপার পাওয়ার—যে কারণে সাপ্লিমেন্টেও কাজ হচ্ছে না!
শরীরে শক্তির অভাব। দেহ-মন জুড়ে কেবলই অলসতা। সময়ে-অসময়ে ঝিমুনি। এই লক্ষণগুলো সাধারণত ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি১২ এর অভাবেই তৈরি হয়। ভিটামিন ডি নিয়ে আমরা হয়তো অন্য লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি, কিন্তু আজ আমরা জানব শরীর ও মনের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন বি১২ নিয়ে।
কিন্তু একটা মৌলিক প্রশ্ন থেকেই যায়—দুর্বলতা বা অলসতা কাটাতে অনেকেই ভিটামিন ডি এবং বি১২ খাচ্ছেন, কিন্তু কোনো উন্নতি হচ্ছে না কেন? এর পেছনে একটি গভীর প্রক্রিয়া লুকিয়ে আছে।

ভিটামিন বি ১২ শোষণের আসল রহস্য: কেবল খাওয়াই যথেষ্ট নয়!
পেটে ঢোকার পর ভিটামিন বি১২ সরাসরি খাবার থেকে বেরিয়ে এসে নিজে নিজেই শরীরে শোষিত হয় না। এটি একটি নির্দিষ্ট ও জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শোষিত হতে হয়। তখনই এটি যথাযথ কাজে লাগে।
যদি প্রয়োজনের কারণে আপনাকে এই সাপ্লিমেন্ট বা খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, তবে সবার আগে পেটের অ্যাসিডিক পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

শরীর খাবার থেকে ভিটামিন বি১২ শোষণ করে যেভাবে
১. পাকস্থলীর অ্যাসিডের ভূমিকা: পাকস্থলীতে খাবার হজমের জন্য অ্যাসিড নিঃসরণ হয়। খাবার থেকে ভিটামিন বি-১২ মুক্ত করার জন্য পাকস্থলীর এই অ্যাসিড (Hydrochloric Acid) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাবার হজমের জন্য পেটে পর্যাপ্ত অ্যাসিড থাকা প্রয়োজন।
২. সমস্যা কোথায়? * ওষুধের প্রভাব: গ্যাসের ঔষধের (যেমন PPIs) কারণে পেটের অ্যাসিডিক পরিবেশ নষ্ট হয়। * বয়সের প্রভাব: বয়স ৩০+ হলেই পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণ স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকে। হাইপোক্লোরাইড্রিয়া বা পাকস্থলীর অ্যাসিডের নিম্নমাত্রা ভিটামিন বি-১২ শোষণকে বাধাগ্রস্ত করে।
৩. সমাধানের চাবিকাঠি: আপেল সিডার ভিনেগার * যারা এই সমস্যায় আছেন, তারা নিয়মিত খাবার গ্রহণের পূর্বে আপেল সিডার ভিনেগারের সঙ্গে পানি মিশিয়ে খান। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডের উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, যা ভিটামিন বি-১২ শোষণে সরাসরি সহায়তা করে। তাহলেই আপনার সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ আর বৃথা যাবে না।

কেন ভিটামিন বি১২ আপনার জন্য এত জরুরি?
ভিটামিন বি-১২ রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদন, ডিএনএ সংশ্লেষণ এবং স্নায়বিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। শরীরে সঠিক পরিমাণে B12 থাকলে—
- শরীরে শক্তি বাড়ে, অলসতা দূর হয়।
- বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমের উন্নতি ঘটে।
- মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকে।
- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অসাড়তা এবং কাঁপুনি কমে যায়।
যে খাবারে ভিটামিন বি১২ বেশি থাকে
এই ভিটামিনের মূল উৎস হলো প্রাণীজ খাবার। আপনার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই যোগ করুন:
- মাংস: দেশী মুরগি, দেশী গরুর মাংস, খাসির মাংস, হাঁসের মাংস।
- অর্গান মিট: দেশী গরু বা অন্যান্য প্রাণীর কলিজা।
- মাছ: নদীর মাছ অথবা সামুদ্রিক মাছ।
- দুগ্ধজাত পণ্য: দুধ এবং দুধজাতীয় খাবার (পনির, টক দই ইত্যাদি)।
- ডিম: বিশেষ করে ডিমের কুসুম।
নিরামিষাশীরা যা করবেন
নিরামিষাশীদের জন্য সিরিয়াল, ইস্ট, উদ্ভিজ্জ দুধ (সয়া মিল্ক, আমন্ড মিল্ক, নারকেলের দুধ) হতে পারে ভিটামিন বি-১২-এর চমৎকার উৎস। আপনার খাদ্যতালিকায় এসব খাবার যোগ করলে স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় থাকবে।
ভিটামিন বি১২ এর সঙ্গে অন্যান্য খাবার
ভিটামিন বি-১২-সমৃদ্ধ খাবারগুলো অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খান, যা শোষণকে আরও বাড়িয়ে দেবে:
- ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (দুধজাতীয় খাবার, সবুজ শাকসবজি)।
- ভিটামিন বি-৯ (সবুজ শাকসবজি, ডালজাতীয় খাবার)।
- ভিটামিন বি-৬ (কলা, মুরগির মাংস, ডিম, আলু)।
পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা ও প্রোবায়োটিকের ভূমিকা
ভিটামিন বি-১২ শোষণের জন্য পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রোবায়োটিক পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং পুষ্টি উপাদানগুলোর দ্রুত শোষণে সহায়তা করে।
আপনার খাদ্যতালিকায় টক দই ও কিমচির মতো ফার্মেন্টেড খাবার যুক্ত করুন। পেঁয়াজ, রসুন, পাকা কলাও প্রোবায়োটিকের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
ভিটামিন বি১২–এর স্বল্পতার ঝুঁকি কাদের সবচেয়ে বেশি?
১. ভেজিটেবিয়ান ও ভেগান: যেহেতু ভিটামিন বি১২-এর মূল উৎস মাছ-মাংস, তাই নিরামিষাশীদের মধ্যে এর অভাব দেখা দেওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ২. অস্ত্রোপচার: পেটের চর্বি কমানোর জন্য কিংবা অন্ত্রের কোনো রোগের কারণে যাঁদের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, তাঁদের শরীরে এই ভিটামিনের শোষণ ব্যাহত হয়। ৩. দীর্ঘমেয়াদী ঔষধ সেবনকারী: দীর্ঘ মেয়াদে প্রোটন পাম্প ইনিহিবিটর (PPI)–জাতীয় ওষুধ সেবন করলে ভিটামিন বি-১২–এর অভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় সমাধান হচ্ছে খাবারের পূর্বে পানিতে মিশিয়ে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া।
ফ্যাটি লিভার নিয়ে কি বলছেন ডাঃ এরিক বারগ।

যেসব রোগ ও বদভ্যাসে ঝুঁকি বাড়ে
- রোগ: বিভিন্ন রোগ, যেমন ক্রোনস ডিজিজ, সেলিয়াক ডিজিজ, স্মল ইনটেস্টাইনাল ব্যাকটেরিয়াল ওভারগ্রোথ (এসআইবিও) ভিটামিন বি১২-এর শোষণকে প্রভাবিত করে।
- বদভ্যাস: মদ্যপান এবং ধূমপানের কারণেও ভিটামিন বি-১২–এর শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়।
ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ১১/০২/২০২৫ ইং Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.










