ব্রেইন সতেজ রাখার ১০ টি উপায়


জাহিদ বলল, তারা পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত ছিল। এই সম্পর্ক নিউরোসাইকোলজিক্যাল স্তরে গভীর প্রভাব ফেলে। সাময়িক ভাবে ইতিবাচক অনুভূতি দেয়। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে আবেগজনিত ভারসাম্যহীনতা, তীব্র মানসিক চাপ তৈরি করে। Betrayal Trauma Syndrome প্রতারিত হলে মস্তিষ্কে অবিশ্বাস ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে। অনেকটা যুদ্ধপরবর্তী ট্রমার মতো।

ব্রেইন সতেজ রাখার ১০টি প্রমাণিত উপায়
সুস্থ জীবনযাপনের জন্য আমাদের মস্তিষ্ককে সচল ও সতেজ রাখা অপরিহার্য। এখানে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর ১০টি প্রমাণিত উপায় আলোচনা করা হলো:
১. নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করা এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বৃদ্ধির একটি দুর্দান্ত উপায়। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তির সাথে সম্পর্কিত অংশ, হিপ্পোক্যাম্পাস, ব্যায়ামের দ্বারা প্রচুর উপকৃত হয়।
- উপকারিতা: নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম হিপ্পোক্যাম্পাসে নতুন নিউরন তৈরি করে এবং এর আকার বৃদ্ধি করে।
- রোগ প্রতিরোধ: এটি বয়সজনিত ক্ষয়, বিষণ্নতা এবং আলঝাইমার রোগের কারণে হিপ্পোক্যাম্পাসের দ্রুত ক্ষয় প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
- শারীরবৃত্তীয় প্রভাব: ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে, নতুন রক্তনালী তৈরি করে এবং BNP (ব্রেন ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড) উৎপাদন বাড়ায়, যা স্নায়বিক সুরক্ষামূলক প্রভাব ফেলে।
২. সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করুন
একটি উক্তি আছে, “আমরা যা খাই, আমরা ঠিক তাই।” মস্তিষ্কের ৬০% চর্বি হওয়ায়, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং নির্দিষ্ট পুষ্টি অপরিহার্য।
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: ঘি, নারিকেল তেল, অলিভ ওয়েল, বাদাম, অ্যাভোকাডো— বিশেষ করে ওমেগা-৩ (সামুদ্রিক ও নদীর মাছ, ডিমের কুসুম) মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত ভালো। ওমেগা-৩ এর ঘাটতি বিষণ্নতা এবং অন্যান্য মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- সবুজ সবজি ও ফল: স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, কেল, পালং শাক, ব্রকলি মস্তিষ্কের বার্ধক্যকে ধীর করে।
- সেরোটোনিনের উৎস: ট্রিপটোফান (কাজুবাদাম, কুমড়োর বীজ, লাল চাল) ভালো লাগার হরমোন সেরোটোনিন সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয়।
- যা বাদ দেবেন: সাদা চিনি এবং পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খান যা ধীরে ধীরে হজম হয়।
জেনে নিন কোন খাবার গুলো কখনো খাবেন না।

৩. স্ট্রেস বা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
অতিরিক্ত এবং স্থায়ী স্ট্রেস আমাদের শরীর ও মন উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল এক্ষেত্রে প্রধান অপরাধী।
- কর্টিসলের প্রভাব: কর্টিসলের উচ্চ মাত্রা হিপ্পোক্যাম্পাসকে সংকুচিত করে, যা স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে এবং শেখার আগ্রহ কমিয়ে দেয়।
- নিয়ন্ত্রণের উপায়: দ্রুত হাঁটার মতো ব্যায়াম, উইমহফ বা ৪-৭-৮ নিশ্বাসের ব্যায়াম, ভালো বই পড়া, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো, এবং সামাজিক কাজ চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- ডিজিটাল ডিটক্স: চাপ কমাতে অযথা সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। নেতিবাচক মানুষ ও পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।

৪. গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করুন
প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম মস্তিষ্কের জন্য অপরিহার্য। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক সারাদিনের টক্সিন পরিষ্কার করে নতুনভাবে জেগে ওঠে।
- টক্সিন পরিষ্কার: গভীর ঘুমে মস্তিষ্ক অ্যামাইলয়েড প্লাকের মতো টক্সিন প্রোটিন পরিষ্কার করতে ব্যস্ত থাকে। অ্যামাইলয়েড প্লাকের উপস্থিতি আলঝাইমার রোগের একটি লক্ষণ।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি: ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের কোষগুলির ক্ষতি করে। গভীর ঘুমের সময় নতুন তথ্য প্রক্রিয়াজাত এবং সংশোধিত হয়, যা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
- ঘুমের অভ্যাস: বয়স্কদের ঘুমের ব্যাঘাত হয় ঠিকই, তবে ছোটবেলা থেকেই ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুললে বয়স্ক অবস্থায়ও ভালো ঘুম বজায় রাখা যায়।

৫. হাতে লিখে নোট নিন
কাগজে হাতে লেখার অভ্যাস স্মৃতিশক্তির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ল্যাপটপে টাইপ করার চেয়ে হাতে লিখলে বিষয়টি মস্তিষ্কে আরও ভালোভাবে গেঁথে যায়।
- জ্ঞানীয় বিকাশ: হাতের লেখা জ্ঞানীয় বিকাশকে উদ্দীপিত করে এবং ধারণা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- সংবেদনশীল-মোটর দক্ষতা: হাতে লেখা সংবেদনশীল-মোটর দক্ষতা অনুশীলন এবং শক্তিশালী করার একটি ভালো উপায়। এটি বিষয়বস্তু ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করে।
বউকে গল্প বলতে গিয়ে কেন হাসপাতালে অমিত।

৬. মস্তিষ্কের উদ্দীপনা (জ্ঞানের রিজার্ভ) বাড়ান
মস্তিষ্ক যত ব্যবহার করা যায়, তত এর ক্ষমতা বাড়ে। ব্যবহার কমলে কার্যকারিতা হারায়। মস্তিষ্কের ব্যায়াম হলো জ্ঞানের রিজার্ভ (Cognitive Reserve) উন্নত করা।
- জ্ঞানের রিজার্ভ: এটি মস্তিষ্কের যেকোনো ক্ষতি প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বোঝায়। মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও কাজ করার জন্য মস্তিষ্ক নিজেই একটি বিকল্প সমাধান তৈরি করতে পারে।
- ব্যায়ামের ধরন: নতুন ভাষা শেখা, স্ক্র্যাবলের মতো শব্দের খেলা, ভালো বই পড়া, নতুন কোনো কাজ শেখা— এসবের মাধ্যমে জ্ঞানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।
ছাগল এবং তিনটি ঢাকাইয়া রম্য গল্প।

৭. সামাজিক মেলামেশা বাড়ান
সামাজিক যোগাযোগ বাড়ালে বিষণ্নতা প্রতিরোধ করা যায় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে।
- গবেষণায় ফল: একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে বয়স্ক মহিলারা ভালোভাবে সামাজিকীকরণ করতেন, তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ২৬% কম ছিল। এমনকি কারও সাথে মাত্র ১০ মিনিটের কথোপকথনও জ্ঞানীয় কাজে কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারে।
- আত্মসম্মান: যারা সামাজিক মেলামেশা করেন, তাদের আত্মসম্মান বেশি থাকে এবং তারা নিজেদের যত্ন ভালোভাবে নেন, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য দুর্দান্ত।
ড্যামেজ ব্রেইন সতেজ রাখার উপায় নিয়ে বলছেন ডাঃ স্টেন একবারগ।

৮. জামাতে নামাজ বা ধ্যান (মেডিটেশন) করুন
জামাতে নামাজ আদায়ের সময় সকলের চিন্তা-চেতনা স্রষ্টার দিকে ধাবিত হয়, যা মস্তিষ্কে এক দারুণ শৃঙ্খলিত এবং শান্তিদায়ক প্রভাব ফেলে।
- ধ্যানের প্রভাব: ধ্যান বা মেডিটেশন মনকে শান্ত হতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের সকল অংশকে প্রভাবিত করে। এটি মস্তিষ্কের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
- কার্যনির্বাহী ক্ষমতা: প্রতিদিন ২৫ মিনিটের মননশীল ধ্যান মস্তিষ্কের কার্যনির্বাহী কার্যকারিতা উন্নত করে, মেজাজ উন্নত করে এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কারবালা নিয়ে যে কথা হুজুররা বলেন না।

৯. মাল্টিটাস্কিং পরিহার করুন
একসাথে একাধিক কাজ করার অভ্যাসটি মনে হতে পারে সময় বাঁচাচ্ছে, কিন্তু এটি আসলে উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়।
- উৎপাদনশীলতা হ্রাস: গবেষণা অনুসারে, মাল্টিটাস্কিং প্রায় ৪০% উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে এবং ত্রুটির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
- মস্তিষ্কের ক্ষতি: আমাদের মস্তিষ্ক মাল্টিটাস্ক করার জন্য তৈরি নয়। কাজের মধ্যে ঘন ঘন ঘোরাঘুরি স্মৃতিশক্তি হ্রাস করে এবং চাপ বৃদ্ধি করে। এমনকি এটি আইকিউ (IQ) কমিয়ে দিতে পারে।
- সমাধান: একবারে একটি কাজে ১০০% মনোযোগ দিন। কাজের তালিকা তৈরি করুন এবং সোশ্যাল মিডিয়া/ইমেল চেক করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী নির্ধারণ করুন।

১০. দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন আনুন
প্রতিদিন একই কাজ করলে মস্তিষ্ককে নতুন করে কাজ করতে হয় না; এটি চুপচাপ বসে থাকে।
- অভিনবত্ব: যখন আমরা একটি নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাই, মস্তিষ্ক তখন মনোযোগ দেয় এবং শেখা তথ্য ধরে রাখে। এটি সৃজনশীলতাকে উদ্দীপিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিকে সক্রিয় করে।
- বদলের নিয়ম: বাসায় ফেরার পথ সপ্তাহে ১/২ দিন পরিবর্তন করুন, নাস্তার টেবিলে পরিবর্তন আনুন বা ব্যায়ামের রুটিন পাল্টে ফেলুন। নতুন অভিজ্ঞতার জন্য বাইরে বেড়াতে যাওয়া মস্তিষ্কের সতেজতা বজায় রাখতে খুবই সহায়ক।
কাশ্মীরিরা কেন স্বাধীন হতে পারছেন না।

উপসংহার
আজকের আড্ডায় আমরা মস্তিষ্কের সতেজতা বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলো শিখলাম। আমাদের খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, মানসিক চাপ এবং দৈনন্দিন রুটিন— সবকিছুই আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করলে, আপনি কেবল কর্মক্ষম বয়সেই উন্নতি করতে সাহায্য পাবেন না, বরং আপনার মস্তিষ্ককে অবক্ষয়জনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে পারবেন, যার ফলে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত স্মৃতিশক্তি ভালো থাকবে। সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য আজ থেকেই এই নিয়মগুলো অনুশীলন শুরু করুন।
ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ০৫/০৬/২০২৫ ইং – প্রতিকী ছবি গুলো পেক্সেল থেকে নেয়া।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.










