বিটরুট জুসের উপকারিতা
কয়েক বছর আগে বিটরুটের সাথে পরিচিত হই। কাঁচা বাজারের দোকানে সাজানো থাকে। দেখতে ক্রিকেট বলের মত। কৌতূহলে একদিন সবজিটির নাম জিজ্ঞেস করলাম। দোকানি বললেন ‘ বিটরুট’। আরও বললেন ‘ ভাই এটা কাটলে একদম রক্তের মত লাল রঙ বের হয়। তরকারির সাথে খেতে অনেকেই নেয়।’
অনেক দিন পর শখ করে কিনলাম। তরকারিতে দিলাম, খেতে তেমন স্বাদ নয়। আগ্রহ কমে গেল। এরপর দিলাম সালাদে। মনেহল, সালাদের স্বাদ কমিয়ে দিয়েছে। তারপর আর বিটরুট কেনা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় খেয়াল করলাম, এটা নিয়ে অনেক মাতামাতি হচ্ছে। জানতে চেষ্টা করলাম এতে কি আছে ? কেন এত মাতামাতি ?
প্রচুর পরিমান পুষ্টি আছে এতে। যেমন – ভিটামিন সি,ভিটামিন এ,ফোলেট (ভিটামিন বি৯),আয়রন,ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম,ফাইবার। এই উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে। আর এটা জুস করে খাওয়া সবচে বেশি উপকারি এবং সুস্বাদু।
দ্রুত ওজন কমাতে যে সাপ্লিমেন্ট টি দারুন কাজ দেয়

বিটরুট জুসের উপকারিতা ৭ টি
১.রক্তস্বল্পতা – কারও কারও শরীরে প্রয়োজনীয় রক্ত তৈরি হয় না। বিটরুট আয়রনে ভরপুর, যা হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। তারা নিয়মিত খেলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া দূর হয়।
২. নাইট্রেট – এতে থাকা নাইট্রেট শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে, যা রক্তনালী প্রসারিত করে এবং উচ্চ রক্তচাপ রোগীরা নিয়মিত খাবেন। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খুব সহায়তা করে।
৩. পটাশিয়াম – পটাশিয়াম হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এতে থাকা বেটালিন শরীরের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. এনার্জি বুস্টার – জিমে যাওয়ার পূর্বে বা পরে খেলে ভালো অনুভব করেবেন। বিটরুট একটি দারুণ এনার্জি বুস্টার। খালি পেটে বিটরুট খেলে শরীর দ্রুত শক্তি পায়।
৫. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট – এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল রাখে, ব্রণ কমায় এবং চুলের সাস্থ্য ভালো করে। মানুষের বুড়িয়ে যাওয়াকে ধীর করে দেয়।
রেডমিট বা লালমাংস খেতে বাধা নেই

৬. ভুলে যাওয়া – সোশ্যাল মিডিয়ার কারনে অনেকেই কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না। স্মৃতি শক্তি কমে গেছে। নিজ কাজের কথা ভুলে যান। মস্তিষ্ক আগের মত ফাংশন করেনা। ছোট বড় সবাই এখন কমবেশি এই সমস্যায় ভুগছেন। তারা নিয়মিত খেলে দারুন উপকার পাবেন। মস্তিস্কের দুর্বলতা দূর হবে।
৭. হজম শক্তি – ভেজাল আর বাজে খাবারে প্রায় সবার পেটের অবস্থাই খারাপ। খেলেই পেট ফুলে যায়, পেটের মধ্যে গুড়গুড় শব্দ হয়। হজম শক্তি কমে গেছে। খাবার থেকে শরীর পুষ্টি নিতে পারে না। বিধায় শরীরে শক্তি কম। তারা নিয়মিত খেলে হজম শক্তি বাড়বে। বিটের যৌগগুলি লিভারের এনজাইমের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং পিত্তের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। পেট পরিস্কার করে।
আয়ু বাড়ানো এবং আরও যে কারনে বাদাম খাবেন

বিটরুট কি শালগম
অনেকেই মনে করেন বিটরুট শালগম। না, তা নয়, দুটো ভিন্ন সবজি। বিটরুটের বৈজ্ঞানিক নাম Beta vulgaris। এটি লাল বা খয়েরি রঙের হয়। যেখানে শালগমের বৈজ্ঞানিক নাম Brassica rapa। এটি সাধারণত সাদা বা হালকা রঙের হয়। উভয়ই মূল উদ্ভিজ্জ হলেও, এদের পুষ্টিগুণ, গঠন ও স্বাদে ভিন্নতা রয়েছে।
বিটরুট কারা খাবেন না
- কিডনি রোগীরা বিটরুট খেতে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। কারন কিডনি রোগের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- প্রচুর ফাইবার থাকায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায় বিটরুট। এক্ষেত্রে খাবার সময় পরিমান টা ঠিক করে নিবেন। প্রথমে অল্প খেয়ে খেয়ে অভ্যাস করুন।
- অস্টিওপোরোসিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির বিটরুট খাওয়া যাবে না।
- যাঁরা নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন, বিটরুট খেলে রক্তচাপ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অল্প অল্প খেয়ে ফলাফল দেখে নিবেন।
দ্রুত ওজন কমানোর সাস্থ্যকর এবং সহজ উপায়

বিটরুট কোথায় পাওয়া যায়
অনলাইনেও প্রচুর বিটরুট পাউডার পাওয়া যায়। পাউডার কিনতে সাবধান। এদের মান নিয়ন্ত্রন যন্ত্রপাতি নেই। এরা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় কোন বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা অনুসরন করে না। এগুলো কেনা থেকে বিরত থাকুন। তাজা বিটরুট কিনুন। অলসতা ঝেরে ফেলে জুস করে খান। জুস করা খুব সহজ।
বিটরুটের উপকারিতা নিয়ে বলছেন ডাঃ এরিক বারগ

বিটরুট জুসের উপকারিতা পেতে রেসিপি
একটা বিটরুন নিন। পানিতে ধুয়ে ছিলে নিন। ছোট ছোট করে কাটুন। এক ইঞ্চি আদা কুচি কুচি করে কাটুন। এগুলো ব্লিন্ডারে ঢালুন। এতে দিন এক টেবিল চামচ ভিনেগার। এক টেবিল চামচ লেবুর রস। পুদিনা পাতা দিতে পারেন। অল্প পিঙ্ক সল্ট দিন। পরিমান মত পানি দিন। ব্লিন্ড করুন। তৈরি হল বিটরুট জুস।
সাস্থ্য সচেতন সবাইকে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সুস্থ জাতি গড়ে তুলতে শামিল হোন। সেলিম হোসেন – ২২/০৯/২০২৫ ইং
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.









