পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা নাকি ইলন মাস্ক ২ জায়ান্টের লড়াই – The richest man in the world, Mansa Musa or Elon Musk? A battle of the 2 giants

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

পৃথিবীর সেরা ধনী: মানসা মুসা

একালের ধনীদের অতীত ইতিহাস

বর্তমানে আমরা ইলন মাস্ক বা জেফ বেজোসের মতো টাইকুনদের বিশ্বের শীর্ষ ধনী হিসেবে জানি। ব্যবসা-ভিত্তিক ম্যাগাজিনগুলো নিয়মিত তাঁদের সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ করে। ইলন মাস্কের মতো জায়ান্ট কোম্পানি (যেমন স্পেসএক্স ও টেসলা)-এর মালিকের সম্পদ ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছালেও, তিনি ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা সর্বকালের সেরা ধনীর ধারেকাছেও নেই।

সেই সর্বকালের সেরা ধনী কে ছিলেন? তিনি ছিলেন ১৪ শতকের পশ্চিম আফ্রিকার এক মুসলিম শাসক— মানসা মুসা। তাঁর সম্পদের পরিমাণ এতই বিশাল ছিল যে, ইতিহাসবিদেরা তা নির্দিষ্টভাবে পরিমাপ করতেও পারেননি। মানি ডটকমের মতো অনেক প্রতিবেদন অনুসারে, মুসার সম্পদ এতটাই অকল্পনীয় ছিল যে, কোনো মানুষের পক্ষে যতটা বর্ণনা করা সম্ভব, তিনি তার চেয়েও বেশি ধনী ছিলেন।

রাসুলের ( রঃ ) ওফাতের পর কি ঘটনা ঘটেছিল !! 

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা
পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

পৃথিবীর সেরা ধনীর ক্ষমতা গ্রহণ ও মালির সাম্রাজ্য

মানসা মুসার জন্ম হয় একটি শাসক পরিবারে ১২৮০ সালে। ১৩১২ সালে তাঁর ভাই মানসা আবু-বকর সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং এক দুঃসাহসিক অভিযানে বের হন। আবু-বকর আটলান্টিক মহাসাগর এবং তার ওপারে কী আছে, সেই রহস্য উদঘাটনের কৌতূহল থেকে প্রায় ২ হাজার জাহাজ এবং হাজার-হাজার পুরুষ, নারী ও দাস-দাসী নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি জমান। তিনি আর কখনও ফিরে আসেননি।

এরপরই সিংহাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মানসা মুসা। তাঁর শাসনকালে মালির রাজত্ব বিপুলভাবে বিস্তার লাভ করে। মানসা মুসা তাঁর রাজত্বের সাথে আরও প্রায় ২৪টি শহর যুক্ত করেন, যার মধ্যে বিখ্যাত টিম্বাকটু অন্যতম।

মানসা মুসার সাম্রাজ্য পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে শুরু করে বর্তমান নাইজার, সেনেগাল, মৌরিতানিয়া, মালি, বুরকিনা ফাসো, গাম্বিয়া, গিনি-বিসাউ, গিনি এবং আইভোরি কোস্টের একটি বড় অংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এত বড় সাম্রাজ্যের প্রধান আয়ের উৎস ছিল স্বর্ণ ও লবণ-এর মতো মূল্যবান খনিজ সম্পদ।

একটি ছাগল মতিউরের জীবন জাহান্নাম করে দিল 

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা
পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

পৃথিবীর সেরা ধনীর স্বর্ণের ভান্ডার ও হজযাত্রা 

ব্রিটিশ মিউজিয়াম-এর তথ্য অনুযায়ী, তৎকালীন বিশ্বে যে পরিমাণ স্বর্ণ মজুত ছিল, তার প্রায় অর্ধেকটাই ছিল মালিতে এবং সেগুলোর মালিক ছিলেন মানসা মুসা। তাঁর সাম্রাজ্যের বিশাল বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো স্বর্ণ এবং অন্যান্য পণ্যের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত, যা তাঁকে আরও সম্পদশালী করে তুলেছিল।

যদিও তাঁর রাজত্ব এত মূল্যবান ছিল, তবুও বহির্বিশ্বে মালি সেভাবে পরিচিত ছিল না। মুসা ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। তাই তিনি সাহারা মরুভূমি এবং মিশর অতিক্রম করে মক্কায় হজ পালনের সিদ্ধান্ত নেন।

বলা হয়ে থাকে, ১৩২৪-১৩২৫ সালের সেই ঐতিহাসিক হজযাত্রায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বিশাল দল নিয়ে মালি ত্যাগ করেন মানসা মুসা। তাঁর বহরে পূর্ণ মন্ত্রী পরিষদ, কর্মকর্তা, সৈনিক, কবি, ব্যবসায়ী, উটচালক এবং প্রায় ১২ হাজার দাস-দাসী ছিলেন। এই বহরের দাসদের গায়েও স্বর্ণখচিত পারস্যের সিল্কের জামা ছিল।

পড়ুন জামাতে নামাজ আদায় নিয়ে বিজ্ঞান কি বলে 

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা
পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

কায়রোতে অর্থনৈতিক ধস কেন 

মানসা মুসার এই হজযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় সফর ছিল না, এটি ছিল তাঁর সম্পদের এক বিস্ময়কর প্রদর্শন। সেই বিশাল বহর যখন মিশরের কায়রো পৌঁছায়, তখন ঘটে অভাবনীয় এক ঘটনা।

কায়রোতে তিন মাস অবস্থানকালে মানসা মুসা এত বিশাল হারে মানুষকে স্বর্ণ দান করেন যে, পরবর্তী ১০ বছর ধরে ওই অঞ্চলে স্বর্ণের দাম তলানিতে গিয়ে পৌঁছায়। মুসার অতি-দানশীলতার কারণে মিশরের অর্থনীতিতে ভয়াবহ ধস নামে।

এই অভাবনীয় দানশীলতার মাধ্যমেই মানসা মুসা বিশ্বের নজরে আসেন এবং মালি বিশ্বের মানচিত্রে তার স্থান করে নেয়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন তাঁর রাজধানী টিম্বাকটু আসতে শুরু করে। একসময় টিম্বাকটু হয়ে ওঠে কিংবদন্তীর হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণের শহর

মানসা মুসাকে ১ ঘণ্টার একটি ইতিহাস কন্টেন্ট দেখুন 

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা
পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

মানসা মুসার বিদায়

১৩৩৭ সালে ৫৭ বছর বয়সে মানসা মুসা মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর মৃত্যুর পর মানসা মুসার সন্তানেরা সেই বিশাল সাম্রাজ্যকে ধরে রাখতে পারেননি। ছোট রাজ্যগুলো একে একে বেরিয়ে যেতে থাকে এবং একসময় পুরো সাম্রাজ্য ধসে পড়ে। পরবর্তীতে ইউরোপীয়দের আগমন ঘটে এবং তাদের কূটচালে প্রতাপশালী সম্রাট মানসা মুসার সাম্রাজ্য জৌলুস হারিয়ে পরাধীন হয়ে পড়ে।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন।

লেখক: সেলিম হোসেন – তারিখ: ২১/০৮/২০২৫ ইং বি.দ্র.: প্রতীকী ছবিগুলো পেক্সেলস থেকে নেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *