পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা নাকি ইলন মাস্ক ২ জায়ান্টের লড়াই – The richest man in the world, Mansa Musa or Elon Musk? A battle of the 2 giants

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। জায়ান্ট কোম্পানি স্পেসএক্স ও টেসলার মালিক। ব্যবসা ভিত্তিক ম্যাগাজিন ফোর্বস বলছে, মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ৫০ হাজার কোটি ডলার। এই ম্যাগাজিন নিয়মিত বিশ্বের সেরা ধনীদের সম্পদের পরিমান প্রকাশ করে। কিন্তু তিনি সর্বকালের সেরা ধনীর ধারে কাছেও নেই ! 

১৪ শতকে পশ্চিম আফ্রিকার এক মুসলিম শাসক। তার কাছে এত পরিমাণ সম্পদ ছিল যে, তার দানের কারণে মিশরের অর্থনীতিতে নামে ধস। আজকের আফ্রিকার সঙ্গে কয়েক শ’ বছরের পূর্বের আফ্রিকার কোনো মিল নেই। আজ আমেরিকা পৃথিবীর প্রাণকেন্দ্র। তখন আফ্রিকা ছিল পৃথিবীর প্রাণকেন্দ্র। আর আফ্রিকাতেই সাম্রাজ্য গড়েছিলেন মুসলিম শাসক ‘মানসা মুসা’। 

তিনি ছিলেন মালির শাসক। এতটাই সম্পদশালী ছিলেন যে, তার সম্পদের পরিমাণ ধারণাও করতে পারেনি ইতিহাসবিদরা। মানি ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারও পক্ষে যতটা বর্ণনা করা সম্ভব মানসা মুসা এর চেয়েও ধনী ছিলেন। ইতিহাসের সেরা ধনী কে এই মানসা মুসা?

রাসুলের ( রঃ ) ওফাতের পর কি ঘটনা ঘটেছিল !! 

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা
পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসার ক্ষমতা গ্রহন  

মানসা মুসা ১২৮০ সালে একটি শাসক পরিবারেই জন্ম নেন। তিনি ক্ষমতায় বসার আগে মালির শাসক ছিলেন তার ভাই মানসা আবু-বকর। ১৩১২ সালে আবু-বকর সিংহাসন ত্যাগ করেন। একটি অভিযানে বের হন। আটলান্টিক মহাসাগর এবং তার ওপারে কী আছে তা নিয়ে খুব কৌতূহল ছিল আবু-বকরের।

বলা হয়, ২ হাজার জাহাজ এবং হাজার-হাজার পুরুষ, নারী এবং দাস-দাসী নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি জমান তিনি। তবে এরপর আর কখনও ফিরে আসেননি আবু-বকর। দায়িত্ব কাঁধে এসে যায় মানসা মুসার। তিনি মালির শাসনভার গ্রহণ করেন। তার শাসনামলে মালি রাজত্বের বিস্তার ঘটতে থাকে। মানসা মুসা তার রাজত্বে আরও ২৪টি শহর যুক্ত করেন। যেগুলোর একটি ছিল টিম্বাকটু।

আটলান্টিক মহাসাগর থেকে শুরু করে বর্তমান নাইজার, সেনেগাল, মৌরিতানিয়া, মালি, বুরকিনা ফাসো, গাম্বিয়া, গিনি-বিসাউ, গিনি এবং আইভোরি কোস্টের বড় অংশ মানসা মুসার রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এত বড় সাম্রাজ্য ! স্বাভাবিক ভাবেই প্রচুর আয়। তার আয়ত্ত্বে আসে স্বর্ণ ও লবণের মতো মূল্যবান খনিজ সম্পদ।

একটি ছাগল মতিউরের জীবন জাহান্নাম করে দিল 

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা
পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

মানসা মুসার হজ্জ যাত্রা 

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সোনা মজুত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ৮ হাজার ১৩৩ দশমিক ৪৬ টন। এটা পৃথিবীর ৫.৮২ ভাগ মাত্র। ব্রিটিশ মিউজিয়াম বলছে, তৎকালীন বিশ্বে যে পরিমাণ স্বর্ণের মজুত ছিল তার অর্ধেকই ছিল মালিতে। সেগুলোর সবটারই মালিক ছিলেন মানসা মুসা। ভাবুন তো একবার, কত সম্পদের মালিক ছিলেন মুসা ! 

বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো তার সাম্রাজ্যে স্বর্ণ এবং অন্যান্য পণ্যের ব্যবসা করতো। সেই বাণিজ্য থেকে আরও সম্পদশালী হয়ে ওঠেন মানসা মুসা। তবে স্বর্ণের বিশাল মজুত থাকলেও, এই রাজত্ব বহির্বিশ্বে অতটা পরিচিত ছিল না। মুসা ছিলেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। তিনি সাহারা মরুভূমি এবং মিশর পার হয়ে মক্কায় হজ পালনের সিদ্ধান্ত নেন। 

বলা হয়ে থাকে, ৬০ হাজার মানুষের একটি দল নিয়ে মালি ত্যাগ করেন মানসা মুসা। তার সেই দলে ছিলেন সম্পূর্ণ মন্ত্রী পরিষদ, কর্মকর্তারা, সৈনিক, কবি, ব্যবসায়ী, উটচালক এবং ১২ হাজার দাস-দাসী। একই সাথে খাবারের জন্য ছিল ছাগল এবং ভেড়ার এক বিশাল বহর। তার বহরের দাসের গায়েও ছিল স্বর্ণখচিত পারস্যের সিল্কের জামা।

পড়ুন জামাতে নামাজ আদায় নিয়ে বিজ্ঞান কি বলে 

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা
পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

ভেঙে পরে অর্থনীতি 

এরপর সেই বহর যখন কায়রো পৌঁছায় তখন ঘটে অভাবনীয় এক ঘটনা। কায়রোতে তিন মাস অবস্থান করেন মানসা মুসা। সে সময় তিনি যে হারে মানুষকে স্বর্ণ দান করেছেন তাতে পরবর্তী ১০ বছর ওই পুরো অঞ্চলে স্বর্ণের দাম তলানিতে গিয়ে পৌঁছায়। ভেঙে পড়ে অর্থনীতি।

জানা যায়, মানসা মুসা এত বেশি স্বর্ণ দান-খয়রাত করেন যে, মালির চারণকবিরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা মনে করতে থাকেন, মালির সম্পদ বিদেশের মাটিতে নষ্ট করেছেন মানসা মুসা।

অতি দানশীলতার কারণেই বিশ্বের নজরে আসেন মানসা। মূলত এ কারণেই মালি বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। মুসার নাম ছড়িয়ে পরে মাশরেক থেকে মাগরিবে। দূর-দুরান্ত থেকে মানুষজন টিম্বাকটু আসতে শুরু করে।

১৯ শতকেও মালির টিম্বাকটু ছিল কিংবদন্তীর হারিয়ে যাওয়া এক স্বর্ণের শহর। এমনকি ভাগ্যান্বেষণে ইউরোপ থেকেও পর্যটকরা এই টিম্বাকটুর খোঁজ করতেন। আর এর পেছনের কারণ ছিল কয়েকশ’ বছর আগে মানসা মুসার সেই শাসনামল। 

চুলকানি নিয়ে নানারকম কুসংস্কার নিয়ে পড়ুন 

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা
পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

মানসা মুসার বিদায় 

১৩৩৭ সালে ৫৭ বছর বয়সে মারা যান মানসা মুসা। তার মৃত্যুর পর মানসা মুসার ছেলেরা আর সেই সাম্রাজ্য ধরে রাখতে পারেনি। ছোট রাজ্যগুলো একে একে বেরিয়ে যেতে থাকে। একসময় পুরো সাম্রাজ্য ধসে পড়ে।

পরবর্তীতে ইউরোপীয়দের আগমন ঘটে মালিতে। তারা ধীরে ধীরে আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে। ইউরোপীয়দের কুটচালে প্রতাপশালী সম্রাট মানসা মুসার সাম্রাজ্য জৌলুস হারায়। পরাধীন হয়ে পরে। 

মানসা মুসাকে ১ ঘণ্টার একটি ইতিহাস কন্টেন্ট দেখুন 

পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা
পৃথিবীর সেরা ধনী মানসা মুসা

এতক্ষনে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন পৃথিবীর সেরা ধনী কে। পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ২১/০৮/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *