জ্বর কেন হয় ?
জ্বরের অভিজ্ঞতা কমবেশি আমাদের সবারই আছে। বিশেষ করে অল্প বয়সীরা বেশি ভুগে থাকে। এটা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ মুলক বিষয়। জ্বর কেন হয় ? যখন কোন অসুখে আমাদের শরীর আক্রান্ত হয়, তখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আক্রমন কারী জীবাণুকে হত্যা করতে পাল্টা আক্রমন চালায়। জীবাণু এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার যুদ্ধে শরীর গরম হয়ে উঠে। মুলত এটাই জ্বর। এটা হলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে বাড়তে বাড়তে ১০৩/১০৪ উঠে যায়।
জেনে নিন ঔষধ ছাড়াই যেভাবে আজীবন সুস্থ থাকতে পারেন।

আসুন জেনে নিই জ্বর কেন হয়।
সংক্রমণ (Infection) – ভাইরাসের আক্রমনে হয় সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কোভিড ইত্যাদি। আবার ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে হতে পারে টনসিলাইটিস, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। পরজীবী বা ফাঙ্গাসজনিত কারনেও শরীর তীব্র গরম হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়া – শরীর কোনো সমস্যা শনাক্ত করলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় যেন জীবাণুগুলো মারা যায়। এটা প্রথমেই বলেছি।
টিকা নেয়ার পর – অনেক সময় ভ্যাকসিন নেওয়ার পর হালকা তাপমাত্রা বাড়তে পারে, এটা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
অটোইমিউন রোগ – যেমন লুপাস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এসব রোগেও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি রোগ – ক্যানসার, থাইরয়েড সমস্যা বা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
ড্রাগের প্রতিক্রিয়া – কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায়ও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

জ্বর কেন হয় ভাইরাস জ্বরের লক্ষন কি কি
উচ্চ তাপমাত্রা – ১০০°F বা তার বেশি হতে পারে। ঠাণ্ডা লাগা বা কাঁপুনি, শরীর ব্যথা । গিরায় ব্যথা। মাথা ব্যথাগলা ব্যথা বা গলা বসে যাওয়া। হালকা সর্দি বা কাশিঘাম হওয়া, বিশেষ করে রাতেক্লান্তি বা দুর্বল লাগা। চোখ লাল হওয়া বা জ্বালা। ক্ষুধা না লাগা। হালকা ডায়রিয়া বা বমি বমি ভাব (কিছু ক্ষেত্রে)ত্বকে র্যাশ (বিশেষ করে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ায়)।

জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত
যে খাবার সহজে হজম হয়
ভাত + ডাল / ভাত + সবজিসেদ্ধ আলু বা অন্যান্য সেদ্ধ সবজি। খিচুড়ি (হালকা মসলা দিয়ে)স্যুপ (চিকেন স্যুপ, সবজি স্যুপ)
ফলমূল খাবেন
কলা (এনার্জি দেয় ও সহজে হজম হয়)আপেল, পেয়ারা, পেঁপেডাবের পানি – শরীরে পানিশূন্যতা রোধ করে। কমলা বা মাল্টা – ভিটামিন সি আছে, রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ভালো হয় তরল খাবার
প্রচুর পানি,গরম গরম চা (তুলসী, আদা, মধু দিয়ে)। ওআরএস / লবণ-চিনি পানি। গরম দুধ (যদি বমি না লাগে)হালকা স্যুপ, লেবু পানি।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাবেন
ডিম (সেদ্ধ বা অমলেট – হালকা করে)। চিকেন (স্যুপ বা সেদ্ধ করে)মাছ – সেদ্ধ বা ভাপা।
যেসব খাবার খাবেন না
অতিরিক্ত তেল, মসলা, ঝাল বা ভাজাপোড়া। কোল্ড ড্রিংকস বা আইসক্রিম (ঠাণ্ডা বাড়াতে পারে)। খুব ঠান্ডা পানি (হালকা গরম পানি খাওয়া ভালো)। দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার (সবসময় না – কারও কারও ক্ষেত্রে গ্যাস বা বমি হতে পারে)।
একমাসেই ঝরিয়ে ফেলুন শরীরের অতিরিক্ত চর্বি।

ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে কি
ডেঙ্গুতে কেন গোসল করবেন
ডেঙ্গুতে শরীর গরম থাকে, কিছু ঘাম হয় । তাই গোসল করলে আরাম লাগে। ত্বক পরিষ্কার রাখা যায়। চুলকানি বা র্যাশ কমে। হালকা গরম পানি বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
ডেঙ্গুতে বা যে কোন জ্বরে গোসলে সাবধানতা
একদম ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করবেন না। এতে শরীর কাঁপুনি দিয়ে তাপমত্রা বাড়তে পারে। হালকা গরম বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করুন। শরীর আরাম পায়, তাপমাত্রা কিছুটা কমেও যেতে পারে। খুব বেশি সময় ধরে গোসল করবেন না।
শরীর দুর্বল থাকে, তাই তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করে ফেলুন। সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো। প্রয়োজনে অল্প পরিমানে করবেন। সাবান শ্যাম্পুতে ত্বকে র্যাশ বা চুলকানি থাকলে সমস্যা বাড়তে পারে। গোসলের পর ভালোভাবে গা মুছে শুকনো কাপড় পরিধান করুন।
কখন ডেঙ্গুতে গোসল করবেন না
শরীর যদি খুব দুর্বল লাগে। যদি ঠান্ডা লেগে কাঁপুনি আসে। শরীরের প্লেটলেট খুব কম থাকে এবং চিকিৎসক নিষেধ করেন।
মিষ্টি আলু খুবই পুষ্টিকর খাবার, উপকারিতা জানলে নিয়মিত খাবেন।

জ্বর হলে কি করব ?
ডাক্তারের কাছে যাব ? না, আমাদের প্রথমেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিজেই জ্বরকে সারিয়ে তুলতে পারি। কাজটা করতে পারি ঘরোয়া ভাবে ন্যাচারালি। ৩ দিনেই সেরে যাবে অসুখ। এরপরও যদি না তাহলে ডাক্তার দেখাবেন।
তাপমাত্রা বাড়লে নাপা জাতীয় ট্যাবলেট খাবেন। তাপমাত্রা বেশি হলে তা দ্রুত কমিয়ে সহনশীল পর্যায়ে আনার জন্য এই উপায় মেনে চলতে শুরু করুন।
জ্বরের তীব্রতা বেশি হলে মাথায় পানিপট্টি দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা কমানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে এক টুকরা কাপড় পানিতে ভিজিয়ে কপালের ওপর রাখুন। কিছুক্ষণ পর সেটি তুলে আবার পানিতে দিয়ে তা থেকে সামান্য পানি ফেলে দিয়ে আবার কপালের ওপর ধরুন। এভাবে বারবার করতে থাকুন। আশা করা যায়, ভালো ফল পাবেন।
নারিকেল গুঁড়া কৃমির জম। ব্যবহার খুবই সহজ।

২. তুলসী এবং গরম পানি
তুলসী পাতার পানি জ্বর কমানোর জন্য বেশ কার্যকর। এ জন্য কিছু তুলসী পাতা ধুয়ে নিয়ে গরম পানিতে ছেড়ে দিন। এরপর সময় নিয়ে পানি ফুটান। সেই ফুটানো পানি নিয়ে ঠান্ডা করে প্রতিদিন সকালে পান করুন।
৩. লেবু এবং মধু
এ মিশ্রণটি তৈরি করতে প্রথমে এক চামচ মধু এবং অর্ধেক লেবুর রস নিন। এরপর এক গ্লাস সামান্য গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। এতে আপনার শরীরের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেবে।
৪. মধুর এবং আদার মিশ্রণ
এক কাপ গরম পানির সঙ্গে আদা বাটা ও মধু মিশিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণটি দিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন। আরও ভালো ফল পেতে এ মিশ্রণের সঙ্গে লেবু মেশাতে পারেন।
৫. রসুন এবং গরম পানি
প্রথমে একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে তাতে এক কোয়া রসুন কুচি কুচি করে কেটে বা বেটে ভিজিয়ে রাখুন। পানি ঠান্ডা হলে কিছুক্ষণ পরপর সেটি পান করুন। এর সঙ্গে চাইলে আপনি মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। ভালো ফলাফল পাবেন আশা করা যায়।
৬. অল্প গরম পানিতে গোসল
জ্বর হলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। এ জন্য শীত শীত অনুভূত হয়। তাই জ্বর যখন কমে ১০০ ডিগ্রিতে আসবে। তখন আপনি হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। জ্বর কিছুটা কমতে পারে।
জ্বর নাকি ভালো, ডাঃ এরিক বারগ কি বলেন !

৭. তরল জাতীয় খাবার
শরীরে জ্বর যত বেশি হবে, ততই ডি-হাইড্রেশন বাড়বে। তাই ওই সময় প্রচুর পানি খাওয়া উচিত। সম্ভব হলে ফলের রস ও হারবাল চা খেতে পারেন। অনেকটা উপকার মিলবে।
৮. বিশ্রাম নিতে হবে
জ্বর থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিন। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
৯. স্পঞ্জ করা ভালো উপায়
যদি গোসল করতে অসুবিধা হয়। তাহলে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ঠান্ডা পানি দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে। এ জন্য কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে শরীরের যেসব স্থানে গরম বেশি থাকে, সেখানে স্পঞ্জ বা মুছে ফেলুন। এতে জ্বর কিছুটা কমে আসবে।
সেলিম হোসেন – তাং – ২৩/০৪/২০২৫ ইং – ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.