চুল পড়ার কারণ ও প্রাকৃতিক সমাধান
কলেজ ক্যাম্পাসের দুশ্চিন্তা: টাক হয়ে যাওয়ার ভয়
তখন সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হওয়া নতুন দিনের শুরু। নতুন বন্ধুত্ব তৈরি হলো, আর সেখানেই চোখে পড়ল দুশ্চিন্তার ছাপ। আমার এক বন্ধু তার নতুন বন্ধুকে দেখল ক্লাসে ঢোকার আগে বিষণ্ণ মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ? “চুল পড়ে যাচ্ছে! এই হারে চলতে থাকলে কলেজ শেষ করতে করতে মাথা টাক হয়ে যাবে।”
বন্ধুর পরামর্শে সেই উদ্বিগ্ন ছাত্রটি গেল একজন নামী ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার সুদর্শন, রোগীর প্রতি দয়ালু, কিন্তু তার চেম্বারে ঢুকেই সে হতবাক। ডাক্তারের পুরো মাথা চকচক করছে, পেছনে দু-একশ’ চুল ছাড়া।
ছেলেটি বুঝতে পারল, যার নিজেরই চুল নেই, তার কাছে চুল পড়ার চিকিৎসা করানো অর্থহীন। বাজারে চুল গজানোর নামে যেসব তেল ও পণ্য বিক্রি হয়, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসা ছাড়া আর কিছু নয়। চুল পড়ার সমস্যা বুঝতে হলে বৈজ্ঞানিক কারণগুলো জানা এবং প্রাকৃতিক উপায়ে এর মোকাবিলা করা জরুরি।
ন্যাচারালি দ্রুত ত্বক ফর্সা করার উপায়

চুল পড়ার কারণ ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
সাধারণত, দৈনিক ১০০টি পর্যন্ত চুল পড়া এবং তা আবার গজিয়ে ওঠা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু যখন চুল পড়ার হার বেড়ে যায় এবং নতুন চুল কম গজায়, তখনই মাথা খালি হতে শুরু করে। এর পিছনে বেশ কিছু কারণ দায়ী।
১. অপুষ্টি ও ভুল ডায়েট
পুষ্টির ঘাটতি চুল পড়ার একটি প্রধান কারণ। বিশেষ করে তরুণ বয়সীরা ফিট থাকার নামে ভুল ডায়েটিং করলে সুষম খাদ্যের ঘাটতি তৈরি হয়। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি (বিশেষ করে বায়োটিন), সি, ডি, ই, এবং মিনারেলস (আয়রন, জিঙ্ক) নিয়মিত গ্রহণ করা অপরিহার্য।
- উপাদান সমৃদ্ধ খাবার: ডিমের কুসুম, কলিজা, বিভিন্ন বাদাম, কুমড়ো বীজ, সূর্যমুখী বীজ, কলা, মিষ্টি আলু, মাশরুম এবং ব্রকোলি।

২. হরমোনের তারতম্য (থাইরয়েড ও পিসিওএস)
- থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা ব্যাহত হলে চুল তৈরি বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং চুল বেশি পড়তে পারে।
- পিসিওএস (PCOS): মেয়েদের মধ্যে পিসিওএস-এ আক্রান্ত হলে ডিম্বাশয় থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে পুরুষ হরমোন (অ্যান্ড্রোজেন) তৈরি হয়, যার ফলে অতিরিক্ত চুল পড়ে।
৩. ছত্রাক সংক্রমণ (Fungal Infection)
মেয়েরা কখনো কখনো ভেজা চুল দীর্ঘ সময় ঢেকে রাখে। স্যাঁতস্যাঁতে মাথার ত্বকে ছত্রাকের আক্রমণ ঘটতে পারে। চুলকানো বা মাথার ত্বক লাল হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো এই সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়।
৪. চুলের রাসায়নিক চিকিৎসা ও অতিরিক্ত তাপ
চুলে রঙ করা, ব্লিচিং, বা চুল স্ট্রেইট করার মতো কারণে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ চুলের গোড়া দুর্বল করে দেয়।
- তাপের ক্ষতি: আয়রন বা গরম ব্লো-ড্রাইং থেকে আসা অতিরিক্ত তাপ চুলের গোড়ায় ক্ষতি করে, যার ফলে চুল ভেঙে যায় বা পড়ে।
ওজন কমাতে বুলেট কফি দারুন কার্যকর

৫. ক্ষতিকারক শ্যাম্পুর ব্যবহার
আমরা যে শ্যাম্পু ব্যবহার করি, তার বেশিরভাগই রাসায়নিক উপাদানে তৈরি।
- সালফারযুক্ত রাসায়নিক: শ্যাম্পুতে ব্যবহৃত সালফারযুক্ত রাসায়নিক মাথার ত্বক থেকে প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে ফেলে, ত্বক শুষ্ক করে তোলে। এতে চুলের প্রোটিন ভেঙে যায় এবং বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে চুল ভেঙে পড়ে।
- সোডিয়াম ক্লোরাইড: এই উপাদান মাথার ত্বককে শুষ্ক করে বা চুলকায় এবং চুল পড়ার হার বাড়িয়ে দেয়।
৬. অতিরিক্ত টাইট হেয়ারস্টাইল
চুলকে খুব বেশি টানটান করে বাঁধলে বা এমন হেয়ারস্টাইল করলে চুলের ফলিকল স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ভেজা অবস্থায় চুল স্টাইল করলেও চুল ভেঙে যেতে পারে।
শরীর মনের জন্য ভিটামিন বি ১২ অতীব প্রয়োজন, কোন খাবারে পাবেন

৭. ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া (Trichotillomania)
এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক রোগ, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার নিজের চুল টেনে ধরে। এর ফলে প্রায়শই মাথার কিছু অংশ টাক হয়ে যায়। এমন ক্ষেত্রে একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
৮. তীব্র মানসিক চাপ ও অসুস্থতা
হঠাৎ কোনো তীব্র মানসিক চাপ (যেমন অস্ত্রোপচার বা আঘাতজনিত ঘটনা) বা গুরুতর অসুস্থতা, এমনকি উচ্চ জ্বরও সাময়িকভাবে প্রচুর চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
৯. দূষিত পদার্থ (Toxins)
পরিবেশগত দূষণ এবং শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেলেও চুলের বৃদ্ধি কমে যায় এবং চুল পড়া বাড়ে।
তরুনেরা কেন যৌন কর্মে কেন অক্ষম হয়ে পরছে

চুল পড়া বন্ধ করতে আপনার করণীয়
চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর জন্য প্রয়োজন একটি সামগ্রিক জীবনধারা পরিবর্তন এবং যত্ন:
- পুষ্টিকর খাবার: নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান, যেখানে সালাদ বা জীবন্ত খাবারের পরিমাণ বেশি থাকবে।
- স্বাভাবিক শুকানো: ব্লো ড্রায়ার বা অতিরিক্ত তাপ ব্যবহার করবেন না। স্বাভাবিকভাবে চুল শুকান।
- কোমলতা: হেয়ার স্টাইল করতে গিয়ে চুল বেশি টাইট করে বাঁধবেন না। চুল ধোয়া বা আঁচড়ানোর কাজটি খুব কোমলতার সাথে করুন। নিয়মিত চুল আঁচড়ানো জরুরি।
- রাসায়নিক পরিহার: কোনো ধরনের রাসায়নিক চুলে ব্যবহার করবেন না। ন্যাচারাল শ্যাম্পু বা হেয়ার জেল ব্যবহার করুন এবং ব্যবহারের পর তা সঠিকভাবে ধুয়ে ফেলুন। এগুলো দীর্ঘ সময় মাথায় থাকলে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
- মেডিকেল পরামর্শ: থাইরয়েড বা পিসিওএস-এর মতো শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি আপনার চুল পড়া অনেকটাই কমাতে পারবেন এবং সুস্থ চুল ফিরে পাবেন।
চুলপরা বন্ধে ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের পরামর্শ আপনার দারুন কাজে আসবে

ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন। লেখক: সেলিম হোসেন তারিখ: ০৯/০৯/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.









