গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর ৭ টি সহজ উপায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কে বিদায় দিন 7 Easy Ways to Reduce Diabetes During Pregnancy Say Goodbye to Gestational Diabetes

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর সহজ ও প্রাকৃতিক উপায়

আনন্দ থেকে উদ্বেগ: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস 

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটে দুটো লাল দাগ—মাতৃত্বের এক অনবদ্য অনুভূতির সূচনা। কিন্তু একজন নতুন মা যখন বিশেষজ্ঞের কাছে যান, তখন প্রায়শই তাকে ‘অসুস্থ’ আখ্যা দিয়ে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ‘অসুস্থ’ শব্দটি কেবল মনকেই ভেঙে দেয় না, বরং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যেও ঝুঁকি তৈরি করে।

একজন সুস্থ মানুষ যদি দীর্ঘদিন একটানা শুয়ে-বসে কাটান, তাহলে শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স (Insulin Resistance) বহু গুণে বেড়ে যায়। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে শর্করা কোষে প্রবেশ করতে পারে না এবং রক্তে জমা হতে থাকে। রক্তে শর্করার এই অতিরিক্ত উপস্থিতিকে আমরা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) বলি।

একজন নারী সন্তান ধারণে সক্ষম—এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই গর্ভাবস্থাকে অসুস্থতা না বলে, বরং একটি বিশেষ যত্নের সময় হিসেবে দেখা উচিত।

বাবা মায়ের যে ভুল গুলো সন্তানের ক্ষতি করে 

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস

কেন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে?

গর্ভাবস্থায় শরীরের ইনসুলিনের চাহিদা বেড়ে যায়। এই সময়ে যদি শরীর পর্যাপ্ত সক্রিয় না থাকে, অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়া হয় এবং ওজন দ্রুত বাড়ে, তবে শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে। গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বা সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকার নির্দেশ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে এই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

সন্তানের সফলতায় মাকে যা করতে হবে 

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ৭টি প্রাকৃতিক উপায়

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন বা ওষুধের ব্যবহারের আগে জীবনযাত্রায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা জরুরি। নিচে সহজ ও প্রাকৃতিক ৭টি উপায়ের মাধ্যমে মা ও শিশু উভয়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়।

১. জীবন্ত খাবার (Whole Foods) গ্রহণ

খাবারই হলো মূল ওষুধ। এই সময়ে খাবারের পরিমাণের চেয়ে মানের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে:

  • আল্ট্রা প্রসেসড ফুড পরিহার: পিৎজা, বার্গার, চিপস, কেক, বিস্কুট, মিষ্টি, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় এবং দোকানের জুস—সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় সম্পূর্ণরূপে বর্জন করুন।
  • সালাদ ও ফল: প্রতিটি প্রধান খাবারের আগে এক বাটি সালাদ (শসা, টমেটো, গাজর ইত্যাদি) এবং দেশি ফল খান।
  • স্বাস্থ্যকর প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট: লাল চালের ভাত (পরিমিত পরিমাণে), নদীর মাছ, দেশি মুরগির মাংস, ডাল, সামুদ্রিক মাছ এবং বাদাম খাদ্যতালিকায় রাখুন।
  • পেটের গ্যাস ও হজম: হজমে সহায়তার জন্য খাবারের ড্রেসিংয়ে লেবুর রস ও টক দই ব্যবহার করতে পারেন। পেটের গ্যাস বা হজমের সমস্যায় সামান্য পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার পান করা যেতে পারে।

২. সঠিক ঘুম ও বিশ্রাম

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে গভীর ঘুম অপরিহার্য।

  • ডিনার টাইম: সন্ধ্যা ৭-৮টার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করুন।
  • স্ক্রিন ফ্রি বেডরুম: রাত ১০টার মধ্যে সমস্ত ডিভাইস বন্ধ করে বিছানায় যান।
  • স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: ঘুমানোর আগে স্ট্রেস কমাতে ৪-৭-৮ বা অন্য কোনো ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ (শ্বাসের ব্যায়াম) অভ্যাস করুন। এতে মন শান্ত হবে এবং গভীর ঘুম হবে।

কোন বদভ্যাস রাতের ঘুম নষ্ট করে 

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস

৩. শারীরিক সক্রিয়তা (Activity) বজায় রাখা

যদি চিকিৎসকের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা না থাকে, তবে নড়াচড়া বন্ধ করা উচিত নয়।

  • স্বাভাবিক কাজ: হাঁটাচলা ও স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যান। এতে মেটাবলিজম ভালো থাকে এবং খাদ্য হজম হয়।
  • গর্ভকালীন ব্যায়াম: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা গর্ভকালীন ব্যায়াম (Prenatal Exercise) করুন। এটি শুধুমাত্র ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নয়, স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তোলে। তবে কোনো ভারি কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

৪. হলুদ ও প্রদাহরোধী উপাদান

হলুদে থাকা কারকিউমিন একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক মেডিসিন। এটি শরীরের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (Inflammation) দূর করতে সাহায্য করে, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমার অন্যতম সহায়ক।

  • হলুদ চা: নিয়মিত হলুদ চায়ের সঙ্গে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন (গোলমরিচ কারকিউমিনের শোষণ বাড়ায়)। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে।

হলুদের চা তৈরি করা সহজ 

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস

৫. সূর্যের আলো (ভিটামিন ডি)

শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হওয়ার জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টার মধ্যে অন্তত ১৫-২০ মিনিট গায়ে রোদ লাগান।

  • সূর্যের আলো শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে এবং গর্ভকালীন বিষণ্ণতা (Antenatal Depression) দূর করতেও সহায়ক।

৬. মানসিক প্রশান্তি ও আধ্যাত্মিকতা

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক বা স্পিরিচুয়ালিটির যত্ন নেওয়াও জরুরি।

  • ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রার্থনা বা মেডিটেশন (ধ্যান) করুন। এটি মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে শান্ত করে।

৭. ভালো বই পড়ুন ও সোশ্যাল মিডিয়া সীমিত করুন

  • জ্ঞানার্জন: গর্ভাবস্থায় ভালো বই পড়ুন। কথিত আছে, মায়ের জ্ঞানার্জনের প্রভাব সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশে পড়ে।
  • ডিজিটাল ডিটক্স: সোশ্যাল মিডিয়ায় অপ্রয়োজনীয় সময় কাটানো সীমিত করুন (সারাদিনে ৩০ মিনিটের বেশি নয়)। এটি দুশ্চিন্তা কমিয়ে মনে প্রশান্তি আনবে।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত সক্রিয়তা নিশ্চিত করলে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকবেন এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা ধারে কাছেও আসবে না।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ে ডাঃ এরিক বারগ যা বলেন 

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস

ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ১৬/০৮/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।

Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *