কেন ঘন ঘন অসুস্থ হই? রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার ৩টি প্রধান কারণ
ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগা, এরপর কাশি, যা অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া সারতে চায় না। প্রায়ই পেটের গোলমাল লেগেই থাকে—সারা বছর ঔষধের উপর নির্ভর করেও রেহাই মিলছে না। আপনি এবং আপনার পরিবার ক্রমাগত অসুস্থতায় ক্লান্ত, যার ফলে নষ্ট হচ্ছে পারিবারিক শান্তি। সমস্যা কোথায়?
আসলে, আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity) দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে হলে আপনার জীবনযাত্রার তিনটি মূল ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে।

১. কেন ঘন ঘন অসুস্থ -প্রতিরোধক উপাদানের অভাব
আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে শ্বেত রক্তকণিকা। খাবারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পেলে রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে যায়, ফলে আপনি সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ৫ রকম খাবার
আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় নিশ্চিত করুন এই পুষ্টি উপাদানগুলো:
| পুষ্টি উপাদান | উৎস | কেন প্রয়োজন? |
|---|---|---|
| ভিটামিন সি | লেবু, পেয়ারা, আমড়া, কমলা, মাল্টা, আমলকি, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দ্রুত সক্রিয় করে। |
| ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট | গাজর, পালং শাক, কুমড়া, মিষ্টি আলু, ব্রোকলি | কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। |
| জিঙ্ক (Zinc) | বাদাম (কাঠবাদাম, আখরোট, কাজুবাদাম), কুমড়ার বীজ, ছোলা, মসুর ডাল, সামুদ্রিক মাছ (স্যালমন, টুনা) | শ্বেত রক্তকণিকার সঠিক কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। |
| প্রোটিন | ডিম, মাংস, মাছ, চিজ | শরীরের কোষ ও অ্যান্টিবডি তৈরির মূল ভিত্তি। |
| প্রাকৃতিক বুস্টার | রসুন, আদা, হলুদ, মধু | প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। |
সাস্থ্যকর আর সহজ উপায়ে দ্রুত ওজন কমান
ম্যাক্রোফেজের ভূমিকা
শ্বেত রক্তকণিকাগুলোর মধ্যে একটির নাম হলো ‘ম্যাক্রোফেজ’। এরা হামাগুড়ি দিয়ে রোগ সৃষ্টির অণুজীবগুলোকে খেয়ে ফেলে। এছাড়াও, অণুজীবের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং শরীরে ঝামেলা সৃষ্টিকারী মৃত কোষগুলোকেও এরা খেয়ে ফেলে, যা রোগ ছড়ানো প্রতিরোধ করে। ম্যাক্রোফেজের অভাব হলে অণুজীবেরা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। তাই খাবারের নামে সিঙাড়া, পুরি, চিকেন ফ্রাই বা চানাচুরের মতো বাজে খাবার পরিহার করুন।

২. পেটের সমস্যার মূল: অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতা
বিশেষজ্ঞরা বলেন, “রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি বড় অংশ থাকে মানুষের অন্ত্রে বা পেটে।” বিজ্ঞানীরা এখন পাকস্থলীকে দ্বিতীয় মস্তিষ্ক বলছেন। আমাদের পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রোইন্টেসটাইনাল ট্র্যাক্টে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাস করে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সরবরাহ করে।
ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ ও প্রভাব
অন্ত্রে ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়ার মাত্রায় ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে:
- ঘন ঘন অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
- বিভিন্ন ‘অটোইমিউন ডিজিজ’ এবং প্রদাহের আশঙ্কা বাড়ে।
- পেটে ভালো ব্যাকটেরিয়ার অভাবে বিভিন্ন হজমের সমস্যা বাড়ে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।
খাবারের পর যদি পেটের মধ্যে কোঁ কোঁ শব্দ হয়, পেট ফুলে থাকে, গ্যাস হয়, ঘন ঘন টয়লেটে যেতে হয়—তাহলে ধরে নিতে পারেন পেটে ভালো ব্যাকটেরিয়ার অভাব রয়েছে।
প্রোবায়োটিক ছাড়া কোন দিন সুস্থ হতে পারবেন না

সমাধান: প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার
এই সমস্যার সমাধানে নিয়মিত প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার খেতে হবে। টক দই, সাউয়ার ক্রাউট, ডার্ক চকলেট, কিমচি, ভিনেগার হলো প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার। প্রতিদিনের খাবারে টক দই রাখলে পেটে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়বে। সাউয়ার ক্রাউট এক্ষেত্রে সেরা খাবারগুলোর একটি, যা আপনি ঘরেও তৈরি করতে পারেন।
৩. ঘুমের অভাব ও মানসিক চাপ (স্ট্রেস)
ঘুমের অভাব: ন্যাচারাল মেডিসিনের ঘাটতি
ঘুম হলো প্রকৃতির দেওয়া ন্যাচারাল ঔষধ। ঘুমের অভাব শরীরে বহু ধরনের ক্ষতি করে:
- হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে ও ওজন বাড়ে।
- হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
- শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা কমে যায়।
- স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয় এবং ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ বাড়ে।
- বিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী ঘুমের অভাব হলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, আলঝেইমার, ডিমেনশিয়া ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ে।
ফ্যামিলি প্র্যাকটিস জার্নালে প্রকাশিত ১১টি গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, ৭-৯ ঘণ্টার কম ঘুম উচ্চ শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় এবং নিয়মিত ঠাণ্ডা, জ্বর, সর্দি, কাশি লেগে থাকে।
আর কোনদিন ঘুমে ডিস্টার্ব হবে না

স্ট্রেস: শরীরের নীরব শত্রু
স্ট্রেস শরীর এবং মনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস থাকলে ভালো ঘুম হয় না, মাঝপথে ঘুম ভেঙে যায়, যা ক্রনিক ঘুমের অভাব সৃষ্টি করে। এছাড়া, হজমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়। উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে।
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের উপায়
- নিয়মিত নামাজ ও দোয়া: স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের জন্য ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করুন এবং কিছু সময় ধরে দোয়া করুন। এতে আপনি বেশ হালকা অনুভব করবেন।
- নিয়মিত ব্যায়াম: বাইরে যাওয়ার সুযোগ না থাকলে ঘরেই প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে পারেন।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: প্রতিদিন ১০ মিনিট ধরে নিশ্বাসের ব্যায়াম করুন। (যেমন: ৪-৭-৮ ব্রিদিং সেশন ইউটিউবে খুঁজে দেখতে পারেন)।
- ধ্যান বা মেডিটেশন: মনকে শান্ত রাখতে ধ্যান বা মেডিটেশন ভালো কাজ দেয়।
কেন আমরা অসুস্থ হই এ বিষয়ে বলছেন ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির

সহজ এই নিয়মগুলো মেনে চললে, “কেন ঘন ঘন অসুস্থ হই”—এই প্রশ্ন আর করতে হবে না। ইনশাআল্লাহ, আপনি সুস্থ ও সতেজ থাকতে পারবেন।
যারা ঘন ঘন অসুস্থ হন, তাদের এই পোস্টটি শেয়ার করে দিন।
লেখক: সেলিম হোসেন – তাং – ১৯/০৯/২০২৫ ইং তথ্যসূত্র: Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.









