কেক ডিজাইন হাজার রকম
বেকারি দোকান গুলোতে সাজানো থাকে। খুবই আকর্ষণীয় সব কেক। কোন টা লাল, কোন টা কালো চকলেট রঙের। আবার কোনটা আকর্ষণীয় ক্রিম কালার। হাফ পাউন্ড, এক পাউন্ড বা দুই পাউন্ডের কেক। অনেকেই জিভের পানি সামলাতে পারেন না। তাদের জন্য মিনি সাইজ ব্যবস্থা রেখেছে দোকানিরা। আছে কাপ কেক, জার কেক কি সুন্দর সুন্দর নাম ! ইদানিং যোগ হয়েছে হোম মেইড কেক।
ঢাকার আগারগাওয়ের অফিস পাড়া। এখানে রাস্তার উপর টেবিল বিছিয়ে হোম মেইড কেকের দোকান সাজান একদল নারী। তারা বিকেলে শুরু করেন। ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। টিকটিকার রা ক্যামেরা ধরেন। ইউটিউবার রা সাক্ষ্যাতকার নেন। ক্রেতাদের দৌড় ঝাপের ভিডিও করেন। সে এক হই হই রৈ রৈ কাণ্ড। সিমি আপা নামের এক কেক বিক্রেতা ভাইরাল হয়েছেন।
তার কেকের স্বাদে মাতোয়ারা ক্রেতারা। সিমির টেবিলের সামনে প্রচণ্ড ভিড়। কোন কোন পুরুষ তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেন। তা দেখে অন্য পুরুষেরা হাহুতাশ করেন। কেউ কেউ গান গাইতে অনুরোধ করে। সিমি গান গায়। সে এক হই হই রৈ রৈ কাণ্ড। এতে উৎসাহিত হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কেক পট্টি তৈরি হচ্ছে ! আমরা হুজুগে বাঙালি। একটি নষ্ট খাবার নিয়ে কি মাতামাতি !
আজ আমরা জানব কেক তৈরিতে কি কি রাসায়নিক মেশানো হয়। কেকের ইতিহাস। যে কারনে কেক খাবেন না।
বাচ্চা হচ্ছে না, তাহলে কোন ন্যাচারাল উপায়ে বাচ্চা পেটে আসবে

কেক ডিজাইনে রঙ রাসায়নিক
০৪/০৯/২০২৪ ইং তারিখে কলিকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। গবেষণা টি করেন কর্ণাটক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা এই গবেষণার জন্য নমুনা হিসাবে ১২টি বেকারি থেকে ২৩৫ ধরনের কেক সংগ্রহ করেন। আগস্টে নমুনা সংগ্রহের পর তিনি টানা দুই মাস পরীক্ষা করেন। বিশেষজ্ঞরা অক্টোবরে পরীক্ষার ফলাফল শেষ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেকের আকর্ষণীয় করতে দেয়া হয় কৃত্রিম রঙ। কেক যাতে পচে না যায়, একারনে দেয়া হয় প্রিজার্ভেটিভ। এই রঙ এবং প্রিজার্ভেটিভে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে। তারা আরও বলছেন, ক্যানসারের উপাদান আছে এমন কেক খেলে শুধু শারীরিক সমস্যাই হয় না, মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হতে পারে।
এ বিষয়ে খাদ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা শ্রীনিবাস বলেন, ব্যবসায়ীরা কেক দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে নাইট্রেট, নাইট্রাইটের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করেন। এই ক্ষতিকর রাসায়নিক পাকস্থলী ও অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম রং যেমন রেড ভেলভেট, ব্ল্যাক ফরেস্ট, কেকে সানসেট ইয়েলো এফসিএফ, টারট্রাজিন এবং কারমোইসাইন পাওয়া গেছে। এই রাসায়নিক গুলো থাইরয়েড, মূত্রাশয় এবং কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
খেয়াল করুন, আপনার আশেপাশেই অ্যালার্জির সমস্যায় আছেন বহু মানুষ। আর ক্যান্সার রোগী অনেক বেড়েছে।
গাট এবং লিভার ডিটক্স করার ন্যাচারাল উপায়

কবে থেকে কেক খাওয়া শুরু
প্রাচীন যুগে প্রায় ২০০০ বছর আগে
প্রাচীন গ্রিস ও রোমে প্রথম কেকের ধারণা পাওয়া যায়। তখন কেক আসলে ছিল মধু দিয়ে মিষ্টি করা রুটি বা রুটি-জাতীয় খাবার। গম, বাদাম, শুকনো ফল দিয়ে বানানো হতো, অনেক সময় মদ (ওয়াইন) মেশানো হতো।
মধ্যযুগে ১১শ–১৫শ শতাব্দীর দিকে
ইউরোপে কেক ধীরে ধীরে বিশেষ অনুষ্ঠান ও উৎসবের খাবার হয়ে ওঠে। যেমন আমরা দাওয়াত খাওয়া শেষে দই বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাই। তখনকার কেক ছিল ভারী ও ঘন। শুকনো ফল ও মশলা (দারুচিনি, জায়ফল) দেওয়া হতো। ইংল্যান্ডে “ফ্রুট কেক” তখন খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৭শ শতাব্দীর কথা
কেক বানানোর পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসে। তখন থেকেই আইসিং (চিনি দিয়ে সাজানো) শুরু হয়। ওভেন এবং উন্নত বেকিং প্রযুক্তি আসায় কেক আরও নরম ও ফ্লাফি হতে থাকে।
৪ বউয়ের যে গল্প আপনার চোখ খুলে দিবে

১৯শ শতাব্দী
বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা আবিষ্কারের পর আধুনিক কেকের সূচনা হয়। তখন থেকে কেক ফুলে ওঠা, হালকা ও নরম হয়ে যায়। জন্মদিন ও বিবাহ অনুষ্ঠানে কেক খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়।
২০শ শতাব্দী থেকে বর্তমান সময়
শিল্পায়নের কারণে কেক সবার কাছে সহজলভ্য হয়। আজকের মতো চকলেট কেক, রেড ভেলভেট, ব্ল্যাক ফরেস্ট, স্পঞ্জ কেক ইত্যাদি জনপ্রিয় হয়। এখন কেক শুধু উৎসব নয়, প্রতিদিনের খাবার হিসেবেও অনেক দেশে খাওয়া হয়। আর আমাদের জন্মদিন কি কেক ছাড়া কি সম্ভব ? দুনিয়া উলটে যেতে পারে কিন্ত জন্মদিনে কেক লাগবেই !
আপনি কি জানেন মহান আল্লাহ কাদের সাহায্য করেন

কেক ডিজাইন প্রধান প্রকারভেদ
১. বাটার কেক (Butter Cake)
মাখন বা তেল দিয়ে তৈরি নরম ও ফ্লাফি কেক। যেমন – ভ্যানিলা কেক, চকলেট কেক।
২. স্পঞ্জ কেক (Sponge Cake)
এতে বাটার ব্যবহার কম হয়, ডিমের ফোম দিয়ে নরম করা হয়। যেমন – ভিক্টোরিয়া স্পঞ্জ কেক।
৩. চিফন কেক (Chiffon Cake)
তেল, ডিমের সাদা অংশ ও বেকিং পাউডার দিয়ে বানানো হালকা কেক।
৪. এঞ্জেল ফুড কেক (Angel Food Cake)
শুধু ডিমের সাদা অংশ দিয়ে বানানো হয়, খুবই হালকা ও তুলোর মতো নরম।
৫. পাউন্ড কেক (Pound Cake)
সমান পরিমাণ ময়দা, চিনি, মাখন ও ডিম দিয়ে বানানো হয়। ঘন এবং ভারী ধরনের কেক।
৬. চিজ কেক (Cheesecake)
আসলে বেকড বা নন-বেকড ডেজার্ট, যার মূল উপাদান চিজ (ক্রীম চিজ, রিকোটা ইত্যাদি)।
৭. ফ্রুট কেক (Fruit Cake)
শুকনো ফল, বাদাম, মসলা মিশিয়ে তৈরি হয়। উৎসব যেমন বড়দিনে বেশি জনপ্রিয়।

কেক কেন খাবেন না
এতে নাকি বাটার ব্যবহার করা হয় ? তবে সস্তা ভেজিটেবল ব্যবহারের সম্ভাবনাই বেশি। যা অসাস্থ্যকর। তাকালেই দেখা যায় রঙের ব্যবহার। এই কেক খেয়ে বাচ্চারা হাইপারএকটিভ হয়ে পরে। স্বাদ বাড়ানোর জন্য কিছু কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। মাঝে মাঝে আব্দুল জলিল সাহেবের অভিযানে ধরা পরে। একটু বিস্তারিত বলি এবং সবাই মনে রাখি।
১. অতিরিক্ত চিনি থাকে
কেক বানাতে প্রচুর চিনি ব্যবহার করা হয়। বেশি চিনি খেলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে, দাঁতের ক্ষয়ও হয়।
২. ট্রান্স ফ্যাট ও মার্জারিন থাকে
দোকানে তৈরি কেক সাধারণত ভেজিটেবল শর্টেনিং, মার্জারিন বা অস্বাস্থ্যকর তেল দিয়ে বানানো হয়।এগুলো হার্টের জন্য ক্ষতিকর, লিভারে চাপ তৈরি হয়, তাই কোলেস্টেরল বাড়ে।
সুন্দরী রমণী ও বখাটের ঐতিহাসিক প্রেম কাহিনী

৩. ক্যালোরি খুব বেশি
ছোট এক টুকরা কেকেই অনেক ক্যালোরি থাকে। এতে ওজন দ্রুত বেড়ে যায়, নিয়মিত কেক খেলে থলথলে চর্বি জমবে শরীরে।
৪. কৃত্রিম রং ও ফ্লেভার
আগেই বলেছি, আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশ্রিত রঙ, ফ্লেভার ব্যবহার করা হয়। এগুলো দীর্ঘমেয়াদে লিভার, কিডনি ও হরমোনের ক্ষতি করতে পারে।
৫. ফাইবারের অভাব
কেকের প্রধান উপাদান ময়দা, চিনি ও ফ্যাট। এতে কোনো ফাইবার নেই, ফলে হজমে সমস্যা, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৬. নেশাসদৃশ প্রভাব ফেলে
চিনি ও ফ্যাটের মিশ্রণ মস্তিষ্কে ‘ডোপামিন’ বাড়ায়, ফলে বারবার খেতে ইচ্ছে করে। এটা আসক্তির মতো আচরণ তৈরি করে। যারা নিয়মিত কেক খান, তার অনুধাবন করতে পারছেন আসক্তির ব্যাপার টা।
কেক এবং অন্য খাবারে ব্যবহৃত রঙ নিয়ে জলিল একি করলেন !!

বিবেচনা করুন কেক ডিজাইন হাজার রকমের। এ খাবার বাচ্চাদের খাওয়ানো যায় ! নাকি নিজে খাওয়া যায় ?
পোস্টটি সবাইকে শেয়ার করে দিন। এই বিষাক্ত খাবার সমাজে ভয়ঙ্কর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সেলিম হোসেন – ১৬/০৯/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।









