কিছুই ভালো লাগেনা – সোশ্যাল মিডিয়ায় অশান্ত হৃদয় ১০ উপায়ে মুক্তি Nothing feels right – 10 ways to release a troubled heart on social media

কিছুই ভালো লাগেনা

কিছুই ভালো লাগেনা অশান্ত হৃদয় 

উফ ! আর ভাল্লাগে না। রিলস থেকে শর্টস। আবার সেখান থেকে টিকটকে। তারপরেও ভালো লাগে না। ফেসবুকে ঢুকে পরেন। পিনাকির পোস্ট দেখে দারুন উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। কমেন্ট করলেন। আপনাকে গালি দিয়ে একজন রিপ্লাই করল। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আপনার। তার চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করলেন পিনাকিয় ভাষায়।
হঠাৎ রাকিব হোসেনের ভিডিও সামনে চলে আসল। রাকিবের বউ মিতুকে খুব ভালো লাগে আপনার। মনে নানান ইচ্ছা জাগে। ভিডিও দেখছেন। সুন্দরী মিতুর হাসিমুখ, ছলাকলা হৃদয়ে ঝড় তুলেছে, এমন সময় আপনার বউয়ের ফোন। তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। কড়া কথা শুনিয়ে দিলেন বউকে।
হঠাৎ মনটা বিস্বাদে ভরে গেল। বউকে ইদানিং বিরক্তিকর মনে হয়। সেক্স ড্রাইভ কমে গেছে। প্রচুর ক্ষুধা লাগে। বার্গার কেক মিষ্টি এগুলো খেতে অনেক ভালো লাগে। কি হয়েছে আপনার ? নিয়ন্ত্রন হারিয়েছেন। মস্তিস্কের নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিনের উপর। তাই কিছুই ভালো লাগেনা।
এখন উপায় কি ? কি করতে হবে ? প্রথমে আমাদের কে জানতে হবে নিউরোট্রান্সমিটার সম্পর্কে।
কিছুই ভালো লাগেনা
কিছুই ভালো লাগেনা

নিউরোট্রান্সমিটার এবং কিছুই ভালো লাগেনা 

নিউরোট্রান্সমিটার হলো রাসায়নিক বার্তাবাহক, যা ছাড়া আপনার শরীর কাজ করতে পারে না। তাদের কাজ হলো একটি নিউরন (স্নায়ু কোষ) থেকে কাছাকাছি নিউরনে রাসায়নিক সংকেত (“বার্তা”) বহন করা । অর্থাৎ আমরা খুশির কিছু দেখলে, শুনলে বা জানলে সে বার্তা নিউরোট্রান্সমিটার এক নিউরন থেকে অন্য নিউরন কে জানিয়ে দেয়। একে একে মস্তিস্কের সব নিউরনে আনন্দ সংবাদ পৌঁছে যায়। তখন আমাদের মনে, চেহারায় খুশিরভাব প্রকাশ পায়।
অনুরুপভাবে যখন দুঃখ বা কষ্টের কিছু দেখি, শুনি বা জানি। তখন নিউরোট্রান্সমিটার এক নিউরন থেকে আরেক নিউরনে বিস্বাদের সংবাদ পাঠায়। আমরা দুঃখিত হয়ে পরি। পাশের কোষটি বা নিউরন অন্য একটি স্নায়ু কোষ, একটি পেশী কোষ বা একটি গ্রন্থি হতে পারে। নিচে কয়েক প্রকার নিউরোট্রান্সমিটার এবং তার কাজ সম্পর্কে জেনে নেই। 
কিছুই ভালো লাগেনা
কিছুই ভালো লাগেনা
ডোপামিন 
আনন্দ, উদ্দিপনা এবং আমাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা ঘুরি আনন্দ পেতে। একটা পোস্ট বা ভিডিও আমাদের আনন্দ দেয় বা উদ্দিপনা বাড়ায়। 
গ্লুটামেট 
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান উত্তেজক ট্রান্সমিটার।
GABA গাবা 
একটি প্রতিরোধক নিউরোট্রান্সমিটার যা সংকেত প্রবাহে বাধা দেয়।
সেরোটোনিন 
এটা আমাদের আবেগের হরমোন। মায়ের সাথে সন্তানের দেখা হলে যে অনুভুতি তৈরি হয়, বন্ধুর সাথে দেখা হলে বা অন্য প্রিয়জনদের দেখা হলে। মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অ্যাসিটাইলকোলিন
মনোযোগ, স্মৃতি এবং ঘুম নিয়ন্ত্রণে এই হরমোনের ভালো ভুমিকা রয়েছে।

ক্রমাগত ফ্যাটিগ নিয়ে বিস্তারিত বলছেন ডাঃ এরিক বারগ

কিছুই ভালো লাগেনা
কিছুই ভালো লাগেনা

ডোপামিন সোশ্যাল মিডিয়ার দখলে 

‘ফোকাস’ বা মনোযোগ আমাদের অমুল্য সম্পদ। এই ফোকাস কে সোশ্যাল মিডিয়া দখল করে নিচ্ছে। বিভিন্ন অ্যাপ দখল করে নিচ্ছে। তারা আমাদের ফোকাস কে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীদের কাছে। টাকা কামাচ্ছে। আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে অসংখ্য অ্যাপ সেভাবেই ডিজাইন করা। ইউটিউব, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে আমরা যত সময় ব্যয় করব, তাদের আয় তত বাড়বে।

এই সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে কার্যকর আবিস্কার হল নোটিফিকেশন। এটা দিয়েই তারা আমদের আটকে রাখে। সোশ্যাল মিডিয়া বা অ্যাপ ঘন ঘন নোটিফিকেশন পাঠায়। আমরা প্রতিনিয়ত চেক করি।

প্রথমে যখন কন্টেন্ট গুলো দেখতেন তখন ডোপামিন আপনাকে আনন্দ দিত। অল্প ডোপামিন নিঃসরণ হলেই মজা পেতেন। কিন্ত এখন মজা পাচ্ছেন না, আরও বেশি ডোপামিন দরকার। কোন কন্টেন্ট আর ব্রেইনে চাহিদামত ডোপামিন উদ্দীপিত করতে পারছেনা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রলিং করে বিরক্ত হয়ে পরছেন।
কিছুই ভালো লাগেনা, ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। ওজন বেড়ে যাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে কারন ছাড়া রেগে যাচ্ছেন। কারও কথা সহ্য হচ্ছে না। রিক্সাওায়ালা, মুদি দোকানির সাথে ঝগড়া হচ্ছে। বউয়ের কথায় বিরক্ত হচ্ছেন। এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার উপায় কি ? উপায় আছে। ১৫ দিনের একটি রুটিন নিন।
কিছুই ভালো লাগেনা
কিছুই ভালো লাগেনা

যা যা করবেন 

১. সোশ্যাল মিডিয়ায় কত সময় ?  সারাদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় কাটাবেন না। রাত ৯ টার পর ফোন থেকে দূরে থাকুন। সকাল ৯ টার পূর্বে কোন এ্যাপে ঢুকবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় একেবারেই না যাওয়া সবচে ভালো।
২. মিষ্টি খাবার  চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া ছেড়ে দিন। বিশেষ করে প্রসেসড ফুড। এসব খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্য মেশানো হয়। সানফ্রানসিসকো ইউনিভারসিটির শিশু বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট লাসটিং। চিনির আসক্তি নিকোটিনের সমান।
৩. রোদে থাকা সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩ টার মধ্যে ৩০-৪৫ মিনিট রোদে থাকবেন।
৪. টিভি দেখা  সন্ধ্যার পর টিভির সামনে বসবেন না। টিভি আপনার বিরক্তির অন্যতম কারন।
৫. ব্যায়ামের বিকল্প নেই  প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম ন্যাচারাল ডোপামিন নিয়ে আসবে। ভালো লাগা শুরু হবে।
৬. আধ্যাত্মিকতা  জামাতে মনোযোগ দিয়ে নামাজ আদায় করুন। ফোকাস বাড়বে। অন্য ধর্মের হলে মেডিটেশন করুন।
৭. কি খাবেন  প্রতিদিন খাবারে ডিম, ঘি, বাদাম রাখুন। গরুর মাংস খেতে কোন বাধা নেই।
৮. জীবন্ত খাবার  প্রতিদিন সালাদ খাবেন, এটা জীবন্ত খাবার। ভাতের থেকে বেশি সবজি খাবেন।  অবশ্যই লাল চালের ভাত।
৯. সুযোগের ব্যবহার  সময় পেলেই অফিসের চেয়ার ছেড়ে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন।
১০. শ্বাসের ব্যায়াম  নিশ্বাসের ব্যায়াম করুন। ইউটিউবে উইমহফ মেথড লিখে সার্চ দিলেই পাবেন। অথবা ডাঃ ওয়েল ৪-৭-৮ ব্রিদিং সেসন লিখে সার্চ দিলে পাবেন।
কিছুই ভালো লাগেনা
কিছুই ভালো লাগেনা
এভাবে মাত্র ১৫ দিন চলুন। নিজেই অনুভব করবেন জীবনে শৃঙ্খলা ফিরেছে। মনে তৃপ্তি পাবেন। কাজে ফোকাস বেড়ে যাবে। বউকে আগের চেয়ে সুন্দরী মনে হবে। চেষ্টা করুন মাত্র ১৫ দিন !
বহু মানুষ এমন সমস্যায় ভুগছেন। সবার উপকারের জন্য পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং – ০৬/০৯/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *