কম বয়সীদের লিভার সমস্যা কেন – ১০ টি লক্ষন এবং ন্যাচারালি নিরাময়ের উপায় – Why do young people have liver problems – 10 symptoms and natural ways to cure them

লিভার সমস্যা
ওজন কমাতে সুস্থ থাকতে নিয়মিত খান Vinegar capsules

কম বয়সীদের লিভার সমস্যা: নীরব ঘাতক ও বাজে খাদ্যাভ্যাস

সম্প্রতি পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) আমাকে একটি মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা নাড়া দেয়। একটি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা তিনজন অল্প বয়সী মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়—একজন সদ্য এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেছে, বাকি দুজন এইচএসসি পড়ুয়া।

তাদের স্বাস্থ্য এতটাই জীর্ণ যে তাদের শরীর শুকিয়ে ‘নারী সৌন্দর্য’ হারিয়ে গেছে। আরও অবাক করা বিষয় হলো, তাদের হাতে খাবারের প্লেট থাকলেও চোখ স্থির ছিল স্মার্টফোনের স্ক্রিনে। ডান হাতে খাবার খাচ্ছে আর বাম হাতে চলছে স্ক্রলিং।

তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই কম বয়সেও তাদের লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রত্যেকেরই প্রচণ্ড পেট ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং শেষ পর্যন্ত অপারেশন করতে হয়েছে।

অভিভাবকদের আক্ষেপ আর হতাশার কমন উত্তর ছিল, “মেয়েগুলি সারাদিন চিপস, বার্গার, সিঙ্গারা, পুরি এজাতীয় খাবার খেত। পানি কম খায়, ভাত খেতেই চায় না।”

কম বয়সীদের লিভার সমস্যা
কম বয়সীদের লিভার সমস্যা

এই বাজে খাদ্যাভ্যাসের জন্য দায়ী কে?

কম বয়সীদের মধ্যে লিভার সমস্যার জন্য মূলত দায়ী তাদের বাজে খাদ্যাভ্যাস। কিন্তু এই অভ্যাস কে তৈরি করছে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মা বা অভিভাবকরাই এর জন্য দায়ী।

আমরা সকালে স্কুলের টিফিনে বাচ্চাদের হাতে তুলে দিই কেক, বিস্কুট। স্কুল ছুটির পর তাদের হাতে তুলে দেই চিপস, আইসক্রিম। আবার রাতের বেলায়, বাবা বাড়িতে ফেরেন চিকেন ফ্রাই, পিৎজা, বার্গার ইত্যাদি ‘স্পেশাল ট্রিট’ নিয়ে।

এই ধরনের আলট্রা প্রসেসড খাবারে থাকে প্রচুর চিনি, লবণ এবং স্বাদ বাড়ানোর জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল। এসব খাবারের স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে বাচ্চারা বাসার স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চায় না। বাজে খাবার খেতে খেতে তারা বড় হতে থাকে। এসব আলট্রা প্রসেসড খাবার হজমে লিভারের ওপর প্রচুর চাপ তৈরি করে, যা একসময় লিভারকে অকার্যকর করে তোলে।

কম বয়সীদের লিভার সমস্যা
কম বয়সীদের লিভার সমস্যা

লিভার সমস্যার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ

লিভার শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ প্রক্রিয়াজাত করে। যখন লিভার ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে নানা লক্ষণ দেখা দেয়। কম বয়সে এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত সচেতন হওয়া উচিত:

১. ক্রমাগত ক্লান্তি ও দুর্বলতা সারারাত পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও যদি ক্লান্তি দূর না হয়, তবে তা লিভার সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। টক্সিন প্রক্রিয়াজাত করতে লিভারকে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করতে হয় এবং শরীরকে শক্তি প্রদানকারী প্রোটিনের উৎপাদন কমে যায়।

২. পেট ফোলা এবং ব্যথা লিভারের সমস্যা হলে পেটের উপরের দিকে (ডান পাঁজরের নিচে) ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। এই ব্যথা ডুবো তেলে ভাজা খাবার খাওয়ার পর তীব্র হতে পারে। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে পেটে যে ফোলাভাব দেখা যায়, তা অ্যাসাইটস নামে পরিচিত।

৩. ত্বক এবং চোখে হলুদ আভা (জন্ডিস) জন্ডিস লিভার সমস্যার সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ। লিভার যখন কার্যকরভাবে বিলিরুবিন (Bilirubin) প্রক্রিয়া করতে পারে না, তখন চোখ ও ত্বক হলুদ রঙ ধারণ করে।

বিনা ঔষধে আজীবন ডায়াবেটিস মুক্ত থাকুন 

কম বয়সীদের লিভার সমস্যা
কম বয়সীদের লিভার সমস্যা

৪. গাঢ় হলুদ প্রস্রাব লিভার সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তপ্রবাহে বর্জ্য পদার্থ জমা হয়, যার ফলে প্রস্রাবে গাঢ় হলুদ বা বাদামী রঙ দেখা দেয়। এর সাথে ক্লান্তি বা জন্ডিস থাকলে তা লিভারের ক্ষতির লক্ষণ হতে পারে।

৫. বমি বমি ভাব বিশেষ করে খাওয়ার পরে ক্রমাগত বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হয়ে যাওয়া লিভার সমস্যার লক্ষণ। লিভার অতিরিক্ত চাপে থাকলে মেটাবলিজমের হার কমে যায়, ফলে হজম শক্তি হ্রাস পায়।

৬. ক্ষুধা কমে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত লিভার পুষ্টি সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যর্থ হলে ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। পছন্দের খাবারও খেতে ইচ্ছা করে না বা অল্প খেলেই পেট ভরে যায়।

গর্ভাবস্থায় আর ডায়াবেটিস হবে না 

কম বয়সীদের লিভার সমস্যা
কম বয়সীদের লিভার সমস্যা

৭. ত্বকে চুলকানি (Pruritus) ত্বকে চুলকানি বা প্রুরিটাস লিভার রোগের আরেকটি লক্ষণ। লিভারের কার্যকারিতা কমে গেলে ত্বকে পিত্ত লবণ জমা হয়, যা চুলকানির সৃষ্টি করে।

৮. সহজে ক্ষত এবং রক্তপাত রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান তৈরিতে লিভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না, ফলে শরীরে সহজেই ক্ষত সৃষ্টি হয় বা ঘন ঘন নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।

৯. পা এবং গোড়ালি ফোলা (Edema) পা এবং গোড়ালিতে ফোলাভাব, যা এডিমা নামে পরিচিত। এটি ঘটে যখন লিভার পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যালবুমিন (Albumin) তৈরি করতে অক্ষম হয়—যে প্রোটিন শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে।

১০. মলের রঙের পরিবর্তন ফ্যাকাশে বা মাটির রঙের মল পিত্তনালীর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যা লিভারের রোগের কারণে ঘটে। আবার, স্বাভাবিকের চেয়ে গাঢ় রঙের মল অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ইঙ্গিত দিতে পারে।

ঔষধ ছাড়াই ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্ত হউন

কম বয়সীদের লিভার সমস্যা
কম বয়সীদের লিভার সমস্যা

লিভার সমস্যা নিরাময়ের সহজ উপায়: বাজে খাবার পরিহার

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সেই মেয়েগুলোর অভিজ্ঞতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, লিভারের মূল শত্রু হলো আলট্রা প্রসেসড খাবার এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় (কোক, সেভেন আপ, মোজো, স্পীড, দোকানের জুস)। এসব বাজে খাবার হজমে প্রচুর চাপ তৈরি করে, যা সরাসরি লিভারের উপর গিয়ে পড়ে।

আমাদের সন্তানদের ভালোভাবে বেড়ে ওঠায় সহায়তা করা আমাদের মূল দায়িত্ব। লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি।

আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞা করি সন্তানদের বাজে খাবার খাওয়াব না। তাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াবো।

লিভার সুরক্ষায় যেসব খাবার আবশ্যক:

  • শাকসবজি ও সালাদ: প্রচুর পরিমাণে তাজা শাকসবজি এবং সালাদ।
  • শস্য: লাল চালের ভাত, এবং ফাইবার সমৃদ্ধ শস্য।
  • প্রোটিন: নদীর মাছ, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, মাংস, এবং টক দই।
  • স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: সবরকম বাদাম, কুমড়ো বিচি, সূর্যমুখীর বিচি ইত্যাদি।
  • ফার্মেন্টেড খাবার: বাঁধাকপির সাওয়ার ক্রাউট (Sauerkraut) বা অন্যান্য ফার্মেন্টেড খাবার হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে।
  • পর্যাপ্ত পানি: নিশ্চিত করুন যে তারা সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করছে।

লিভার সমস্যা থেকে ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের ভিডিও টি দেখুন।

কম বয়সীদের লিভার সমস্যা
কম বয়সীদের লিভার সমস্যা

মনে রাখবেন, সারা জীবন সুস্থ থাকা কঠিন নয়। বাজে খাদ্যাভ্যাস পরিহার এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই হলো লিভার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়।

সবাইকে সচেতন করতে পোস্টটি শেয়ার করে দিন।

লেখক: সেলিম হোসেন – ৩১/০৮/২০২৫ ইং তথ্যসূত্র: Dr Eric Berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *