মির্জা গালিব সফল
অনাগ্রহ সত্ত্বেও ছেলের স্কুলের দিকে পা বাড়ালাম। প্রথম সাময়িক পরীক্ষাটা শেষ। খাতা বিতরনের দিন। গার্ডিয়ানরা এসেছেন ছেলেমেয়েদের ফলাফল নিতে। একটা বাচ্চার মা তার ছেলের খাতা দেখছিলেন। মায়ের চোখ আটকে যায় ইংরেজি খাতায়। ২৫ এর মধ্যে ১৯ নম্বর পেয়েছে ছেলেটি।
অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন মা। চেঁচাতে শুরু করলেন ভদ্রমহিলা। ৬ নম্বর কেন কম পেলি ? ছেলেটির আশপাশে তার বন্ধুরাও দাঁড়িয়েছিল। মায়ের চেঁচামেচিতে ভীষণ লজ্জা পেল ছোট্ট ছেলেটি। একেবারে নীরব হয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকাল। অপমানে ফর্সা কচি মুখ হল রঙহীন।
মায়ের অপমানজনক কথা বাচ্চাদের মনে ভীষণ দাগ কাটে। এমন অপমানে বাচ্চারা নিজেদেরকে গুটিয়ে নিতে পারে। বিরূপ প্রভাব পরে বাকি জীবনে। অথচ মায়ের একটু উৎসাহ, খানিক টা আদর, প্রশংসামূলক বাক্য বাচ্চাদের বিখ্যাত করে তুলতে পারে। এমন উদাহরন অনেক আছে।
কিভাবে বাচ্চারা সফল হবে ২ টি শিক্ষণীয় গল্প

কবি মির্জা গালিব সফল আপনার সন্তানও সেরা হবে
ছেলেটির বয়স মাত্র ১৫ বছর। ডাক নাম তকি মীর। ১৮০০ সালের গোড়ার দিকে কথা। তখন দিল্লির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মোগলেরা। তাদের দরবারে কবি এবং কবিতার খুব সমাদর। তৎকালীন সময়ে কবিরা ছিলেন দেশের সেলিব্রেটি।
দিল্লিতে মোগলদের সবচাইতে ধনী নবাব ‘রইস উদ্দিন’। সন্ধ্যায় তার বাড়িতে কবিতা উৎসব চলছে। এমন কবিতা উৎসবের অনুষ্ঠানকে বলা হত ‘মুসায়ের’। রাজ দরবারের কর্তা ব্যক্তি সহ বহু সাধারন মানুষ এসেছেন কবিতা, রঙ ঢং উপভোগ করতে। অনুষ্ঠানের মুল আকর্ষণ দিল্লির প্রধান কবি ‘ পরওয়ানা ‘ ।
এই পরওয়ানার কবিতা খুবই সাধারন মানের, এমন মন্তব্য করেছেন তকি মীর। অল্প বয়সী কবি, যার কবিতা এখনো তেমন পরিচিতি পায়নি। তকি মীরের কথা গুলো পরওয়ানার কানে পৌঁছেছে।
পরওয়ানা ক্ষিপ্ত ছিলেন তকি মীরের উপর। পরওয়ানার কানে কানে একজন বলে গেল ‘ এই অনুষ্ঠানে তকি মীর উপস্থিত আছে।’ চোখ দুটো জ্বলে উঠল পরওয়ানার। উঠে দাঁড়ালেন, দর্শকদের বললেন, ‘ এবার তামাশা দেখুন।’
আমেরিকার সেরা সফল প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন

ঘামতে শুরু করলেন তকি মীর
তখনকার দিনে আজকের মত বিদ্যুৎ বাতির ঝলকানি ছিল না। ছিল নানান রকমের মোমবাতি। তকি মীরের চেহারার সামনে মোমবাতি যাচ্ছে। মুখের সামনে মোমের আলো ধরা হল। দর্শকদের চোখ তকি মীরের উপর। তাকে অপমান করতে উদ্যত হলেন পরওয়ানা।
তিনি উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, আজকের মুসায়েরে তকি মীর কবিতা পাঠ করবেন। মীর সাহেব, আপনি মঞ্চে আসুন। জনতা আপনার অপেক্ষায়। তাচ্ছিল্যের সুরে কথা গুলো বলে থামলেন পরওয়ানা।
বুকের মাঝে ধরফর শুরু হল। ঘামতে শুরু করলেন তকি মীর। তার পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা নেই। কিন্ত পরওয়ানার ডাকে সারা না দিলে মুসায়েরে হাসাহাসি শুরু হবে। চ্যালেঞ্জ নিলেন তকি মীর। উঠে গেলেন মঞ্চে।
সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস গুলো জেনে নিন

অল্প বয়সী সুন্দরী বউ
তার কবিতা পাঠে নীরব হয়ে গেল দর্শক। মুগ্ধতা সবার মনে। ওয়াহ, ওয়াহ, মুকাররাহ শব্দ করল দর্শকগন। অনেক দর্শক মীরের হাতে দিলেন উপহার। অনেক রৌপ্য মুদ্রা উপহার পেলেন। রইস উদ্দিনের অল্প বয়সী সুন্দরী বউ উপহার দিলেন স্বর্ণ মুদ্রা এবং একটি চিরকুট।
মনে দারুন এক উত্তেজনা আর আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তকি মীর। বিছানায় শুয়ে পরলেন। দর্শকের করতালি আর হর্ষ ধ্বনির শব্দ কানে বাজতে থাকল। মনে মনে ভাবলেন ভণ্ড পরওয়ানা কে একদম নিচে নামিয়ে দিয়েছি। এখন কোন মাহফিলে আমি উপস্থিত থাকলে সে আর মুখ দেখাতে পারবে না। আনন্দের আতিশয্যে রাতে ঘুম হল না।
সকালে মাকে সব খুলে বললেন তকি মীর। মুদ্রা গুলো মাকে দিলেন। অভাবের সংসার, মা দারুন খুশি হলেন। বললেন ‘ তোমার বাবা বেহেস্ত থেকে তোমার জন্য দোয়া করছেন। তুমি একদিন হিন্দুস্তানের সেরা কবি হবে।, মা তাকে উৎসাহিত করলেন।
চাকরি ছেড়ে ইউটিউবার বছরে আয় ১১ কোটি টাকা

তারা বাচ্চাদের সেভাবে পড়ায় না
মায়ের প্রশংসায় তকি মীর দারুন উচ্ছসিত হয়েছিলেন। তিনি সেরা হয়েছেন। তিনি মীর্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব। যাকে আমরা চিনি ‘ কবি মীর্জা গালিব’ হিসেবে। দিল্লির নিজামুদ্দিন দরগাহের নিকটে অবস্থিত মির্জা গালিবের সমাধি। তার নামে কলিকাতায় রাস্তা আছে।
তার বাড়ি এখন জাদুঘর। মহাত্মা গান্ধী রোডের একটি চৌরাস্তা তার নামে। গালিব একাডেমি, গালিব কলেজ, কত কি ! এখনো আমরা তার উক্তি শেয়ার করি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আমাদের দেশেও উর্দু সাহিত্যে গালিবের লেখা পড়ানো হয়।
আপনার সন্তানও বিখ্যাত হবে। আল্লাহতায়ালা তাকে একটি ইউনিক যোগ্যতা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আমাদের সন্তানেরা যে কারিকুলামে লেখাপড়া করে। উন্নত দেশ, লেখাপড়া বা জ্ঞ্যান বিজ্ঞানে উন্নত তারা বাচ্চাদের সেভাবে পড়ায় না।
আমাদের দাদা দাদিদের বিয়ে হত কিভাবে

উত্তর নিজেই পেয়ে যাবেন
ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস বর্তমান পৃথিবীর সেরা ব্যবসায়ী। সেরা ধনী মানুষ। তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠান না। বাড়িতেই পড়ান। তাদের বাচ্চারা কি লেখাপড়া শিখবে না ? অবশ্যই শিখবে। একাডেমিক যোগ্যতা বড় বিষয় হিসেবে তারা দেখেন না। তারা জানেন সন্তানের বিশেষ যোগ্যতা, যেটা ন্যাচারালি এসেছে, সেটার যত্ন নিতে হবে। তাহলেই এই শিশু আগামিদিনে পৃথিবী জয় করবে।
আপনার বাচ্চা কত নম্বর পেল, সেটা বড় বিষয় নয়। খেয়াল করে দেখুন আপনার ক্লাসের যারা ভালো ছাত্র ছিলেন, আর যারা লাস্ট বেঞ্চে বসতেন তারা এখন কি করেন। উত্তর নিজেই পেয়ে যাবেন। সন্তান কে উৎসাহিত করুন। যে কাজটা সে ভালো পারে, ভালোভাবে করে। তাহলেই আপনার সন্তানকে একদিন সারাদেশ চিনবে।
স্কুল ব্যাগের বোঝা নিয়ে পড়ুন ইত্তেফাকের রিপোর্ট

সবার সন্তানের জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ
ব্লগ পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – ০৭/০৮/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।
Pingback: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর ৭ টি সহজ উপায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কে বিদায় দিন 7 Easy Ways to Reduce Diabetes During Preg
Pingback: জামাতে নামাজ আদায় কেন করবেন - বিজ্ঞান কি প্রমান দেয় ? ৩৭ টি হাদিস Why should you pray in congregation - does science prove it? 37 hadiths - OVIZAT
Pingback: তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা যা ঈমান বাড়িয়ে দিবে What is fate? 2 facts about fate that will increase faith - OVIZAT
Pingback: ভয়াবহ মোবাইল রোগ নোমোফোবিয়া Nomophobia - ৬ উপায়ে দূর করুন Nomophobia, the dreaded mobile disease - overcome it in 6 ways - OVIZAT
Pingback: স্বপ্নময় শৈশব কৈশোরে বাবা মায়ের ৫ টি ভুল - 5 mistakes parents make in their dreamy childhood and adolescence - OVIZAT
Pingback: মহান আল্লাহ কাদের সাহায্য করেন, প্রমাণিত ১ টি ঐতিহাসিক ঘটনা Who does Almighty Allah help? 1 proven historical event - OVIZAT