ওয়েট লস ডায়েট চার্ট আছে, কিন্ত ওজন কমানোর পথে যে ৭টি ভুল আমরা করি!
ওজন কমানোর জন্য আপনি হয়তো খুব কঠোরভাবে একটি ডায়েট চার্ট অনুসরণ করছেন, কিন্তু দিন শেষে ফলাফল শূন্য। মনে হয় যেন পানি খেলেও ওজন বেড়ে যাচ্ছে! এমন হতাশাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন অনেকেই হন। এর কারণ ডায়েট চার্টের ত্রুটি নয়, বরং ওজন কমানোর পথে আমাদের কিছু সাধারণ ভুল এবং জীবনযাত্রার প্রতি মনোযোগের অভাব।
আসুন জেনে নিই কেন এমন হয় এবং ওজন কমানোর পথে আমরা যে ৭টি প্রধান ভুল করি, তার বৈজ্ঞানিক সমাধান কী।
মূল বাধা: খাবারের প্রতি আসক্তি (Addiction)
ওজন কমানোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো খাবারের প্রতি তীব্র আসক্তি বা ক্রেভিং। ফাস্ট ফুড, চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের স্বাদ আমাদের মস্তিষ্কে নেশার মতো কাজ করে। যতক্ষণ না আপনি এই আসক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন, ততক্ষণ ওজন কমানো কঠিন।
দ্রুত ওজন কমাতে যে সাপ্লিমেন্ট টি ডায়েটে রাখবেন

ওজন না কমার ৭টি প্রধান কারণ ও কার্যকর সমাধান
১. খাবারের সংখ্যা বেশি হওয়া
ওজন কমানোর জন্য খাবারের ক্যালরি খরচ হওয়া জরুরি। যদি আপনার ডায়েট চার্ট দিনে ৫-৬ বার খেতে বলে, তবে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি ঢুকে যায়। এতে শরীর জমে থাকা চর্বি ভাঙার সুযোগ পায় না।
সমাধান: দিনে খাবারের সংখ্যা ৬ বার থেকে কমিয়ে কমপক্ষে ৩ বার বা তার কমে নামিয়ে আনুন। এতে শরীর ফ্যাট বার্ন করার জন্য দীর্ঘ সময় পায়।
২. সঠিক খাবারের হিসাব না রাখা
ওজন কমানোর জন্য শুধু ক্যালরি কম নিলেই হয় না, আপনি কোন ধরনের খাবার খাচ্ছেন, তার হিসাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
সমাধান:
- বর্জন করুন: প্রসেসড ফুড (বার্গার, পিৎজা, কেক, মিষ্টি, বিস্কুট, সফট ড্রিংক, দোকানের জুস), দুধ চা এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার।
- মনোনিবেশ করুন: তাজা, প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত খাবার—যেমন সালাদ, সটে সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম, বীজ (কুমড়োর বিচি, সূর্যমুখীর বিচি, চিয়াসিড) এবং সীমিত পরিমাণে লাল চালের ভাত। কাঙ্ক্ষিত ওজনে না আসা পর্যন্ত মিষ্টি ফল এড়িয়ে চলাই ভালো।
পেটের অতিরিক্ত মেদ কে বিদায় জানান

৩. হরমোনের সমস্যাকে উপেক্ষা করা
থাইরয়েড বা পিসিওএসের (PCOS) মতো হরমোনের সমস্যা ওজন কমতে মারাত্মক বাধা দেয়। কেবল ডায়েট চার্ট অনুসরণ করে এসব সমস্যায় সুফল নাও পেতে পারেন।
সমাধান:
- হরমোনের সমস্যা থাকলে হেলদি লাইফস্টাইল অনুসরণ করুন।
- শরীরে জমে থাকা ফ্যাট ভেঙে শক্তি উৎপাদন করার প্রক্রিয়া, যাকে ফ্যাট অ্যাডাপটেশন বলা হয়, তা শুরু করুন। এর জন্য ঘি, বাটার, নারিকেল তেল, অলিভ ওয়েলের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট নিয়মিত খাদ্যে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
৪. ফ্যাট কমলেও পেশির পরিমান বাড়া
অনেকে নিয়মিত জিমে যান বা ব্যায়াম করেন। এর ফলে চর্বি কমলেও মাংসপেশি (Muscle Mass) বাড়ে। যেহেতু পেশি চর্বির চেয়ে বেশি ঘন, তাই আপনার ওজন একই থাকতে পারে বা সামান্য বাড়তেও পারে।
সমাধান: ওজন কমছে না দেখে হতাশ হবেন না। এক্ষেত্রে শুধু ওজন মাপার বদলে কোমরের মাপ এবং শরীরের চর্বির পরিমাণ (Body Fat Percentage) মাপুন। যদি কোমরের মাপ কমে এবং আপনি ফিট অনুভব করেন, তবে আপনি সঠিক পথেই আছেন।
কম বয়সীদের হার্ট কেন অসুস্থ হচ্ছে

৫. ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শুরু না করা
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (IF) শুধু ওজন কমায় না, এটি শরীরকে মেরামত (Autophagy) করতেও সাহায্য করে। এই তত্ত্বের প্রবক্তা ইয়োশিনারি ওহশুমি ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
সমাধান: ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শুরু করুন। প্রথম দিকে ১৩/১৪ ঘণ্টা দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। এটি ফ্যাট বার্ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।
৬. প্রোবায়োটিকের অভাব: গাট-ব্রেইন কানেকশন
বিজ্ঞানীরা এখন জানেন যে মস্তিষ্ক যেমন শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি আমাদের গাট বা অন্ত্রও মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করে (Gut-Brain Axis)। অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া (প্রোবায়োটিক) কম থাকলে বাজে খাবারের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়।
সমাধান:
- প্রোবায়োটিক বৃদ্ধি: টক দই, আচার বা ফারমেন্টেড খাবার খেয়ে অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ান।
- ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়লে বাজে খাবারের লোভ কমে যাবে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। খাবারের আসক্তি কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার ভালো কাজ দেয়।
৭. অপর্যাপ্ত ঘুম ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের অভাব
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস শরীরে করটিসল (Cortisol) হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ফ্যাট জমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে পেটের চারপাশে। একইভাবে ঘুমের অভাব হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়।
সমাধান: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা মানসম্মত ঘুম নিশ্চিত করুন এবং যোগা বা মেডিটেশনের মাধ্যমে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
প্রাকৃতিক মেডিসিন মরিঙ্গা, ক্যাপসুল ফরম্যাটে খেতে চাইলে ক্লিক করুন

আসক্ত মানুষের গল্প
হ্যাঁ নেশায় আসক্ত একজন মানুষের গল্প বলছি। যে লোক মদ খেয়ে নিজেকে অসুস্থ করে ফেলেছে।
মদাসক্ত হুমায়ুন অসুস্থ, বিছানায়। ডাক্তার মদ খেতে নিষেধ করলেন। হুমায়ুন ডাক্তার কে অনুনয় করলেন। বললেন ” আমার চল্লিশ বছরের অভ্যেস। সেই কলেজ লাইফ থেকে। যদি না খাই, অস্থির হয়ে যাব। পেট ফুলে মারা যাব। প্লিজ, নিষেধ করবেন না।” ডাক্তার হুমায়ুনের বউয়ের জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দিকে তাকালেন। বললেন ” সন্ধ্যার পর একপেগ খেতে দিবেন। এর বেশি নয়।”
হুমায়ুন আহাজারি করে উঠলেন ” একপেগ নয়, বাড়িয়ে দিন ডাক্তার সাহেব।” ডাক্তার বললেন ” দুই পেগ দিবেন।” হুমায়ুন আবারও বললেন ” আর একটু বাড়িয়ে দিন।” ডাক্তার বললেন ” তিন পেগ খাবেন। এর বেশি কোন অবস্থাতেই নয়।”
ডাক্তার চলে গেলে হুমায়ুন পরিচিত অন্য ডাক্তার কে ফোন করলেন। তিনিও মদ খেতে নিষেধ করলেন। হুমায়ুন এ ডাক্তার কেও অনুরোধ করলেন। শেষ পর্যন্ত ডাক্তার তাকে তিন পেগ পর্যন্ত খেতে অনুমতি দিলেন।
ওজন কেন কমে না তা নিয়ে বলছেন ডাঃ স্টেন একবারগ

এবারে মহল্লার এক এম বি বি এস কে ফোন করলেন। মদ পানে ডাক্তার নিষেধাজ্ঞা দিলেন। বরাবরের মত এ ডাক্তারের কাছ থেকেও তিন পেগ পর্যন্ত অনুমতি নিলেন।
সন্ধ্যার পর হুমায়ুন বালিশে হেলান দিয়ে বিছানায় বসলেন। বউ ফ্রিজ থেকে বোতল এনে দিল। গ্লাসে ঢেলে পান শুরু করলেন। এক পেগ, দুই পেগ করতে করতে পুরো বোতল শেষ করে ফেললেন।
যারা খাবারে আসক্ত। ওজন কমাতে নানা ওয়েট লস ডায়েট চার্ট অনুসরন করছেন তাদের কে পোস্ট টি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং – ২৭/০৯/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.









