আল্লাহ কাদের সাহায্য করেন
ঋণের দায়ে রীতিমত বিপর্যস্ত ছিলেন মিনারুল। বয়স ৩৫ বছর। রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে। গত ১৫/০৮/২০২৫ ইং তারিখে তিনি প্রথমে স্ত্রী কে হত্যা করেন। এরপর দুই সন্তান কে হত্যা করেন। তারপর নিজে আত্মহত্যা করেন। সারাদেশে ভাইরাল হয়ে পরে ঘটনাটি। হৃদয় ভেঙে যায় দেশবাসীর।
আমাদের সবার জীবনে প্রতিনিয়ত সমস্যা আসে। কিছু কিছু সমস্যা আমাদের জীবন কে অস্থির করে দেয়। তবে কোন সমস্যায়ই ভেঙে পরা উচিত নয়। আল্লাহ্র সাহায্য চাওয়া প্রয়োজন। হোক সেটা ঋণ বা অন্য কোন সমস্যা। সঠিক ভাবে আল্লাহ্র কাছে চাইলে তিনি অবশ্যই সাহায্য করবেন আমাদের।
” আর সাহায্য শুধুমাত্র পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী আল্লাহ্রই পক্ষ থেকে – সুরা আল ইমরান – আয়াত – ১২৬”
আসুন আল্লাহ্র সাহায্যের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা জেনে নেই। জুন মাসের কড়া রোদ। বিশ্রী গরমে ধুলিময় বাতাস। দিল্লিকে মনে হচ্ছে উত্তপ্ত কড়াই। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত শেষ মোগল। সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর। দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থান নিয়েছে ইংরেজ সৈন্যরা। তারা দখল করতে চায় মোগলদের মসনদ।

ঝড় বৃষ্টির সাহায্যে আবাহাওয়া কোমল
নবাব সিরাজ দৌলার পতনের ঠিক ১০০ বছর পর। ২৩ শে জুন ১৮৫৭ সাল। কমান্ডার হাডসন সৈন্যেদের নির্দেশ দিলেন প্রাসাদ দখলে মার্চ করতে। সৈন্যরা এগিয়ে যেতেই মোগল বাহিনী কামানের গোলা নিক্ষেপ করা শুরু করল। কামান, গাদা বন্দুক থেকে গুলি বর্ষণ শুরু করল ইংরেজ বাহিনী।
ইংরেজদের দলে আছে একদল শিখ যুবকেরা। হাডসন তাদের কে যুদ্ধে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাদের একজন নেহাল সিং। হাডসনের আর্দালি নিযুক্ত হয়েছেন। নেহাল সিং যুদ্ধ করছিল। দুই পাহাড়ের মাঝখান থেকে হামলা চালাচ্ছিল। অনেক সৈন্য মারা পরল ইংরেজ বাহিনীর। তবুও মোগল বাহিনী পিছু হটল। ধরা পরল মোগলদের ২৭ জন সেনা। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করলেন হাডসন।
কয়েক দিন থেমে থেমে চলল আক্রমন, পাল্টা আক্রমন। উভয় পক্ষের গুপ্তচর ধরা পরল, নিহত হল। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ। বিকেলেই রাতের অন্ধকার নেমে এল। আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘ। কান ফাটানো শব্দে মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের ঝলকানি। তুমুল বাতাস আর প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হল।

ইংরেজদের আক্রমন দিল্লিতে
পরদিন ভোর। আলো ফুটতেই পরিচ্ছন্ন এক পৃথিবী। গাছের পাতা গুলো ধুয়েমুছে তরতাজা সবুজ। শিশুদের আনন্দে মাতামাতি, চলছে আকাশে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা। বাড়ির ছাদে নাচছে ময়ুর। অনেক দিন গরমের পরে হিমেল হাওয়া। সব মিলিয়ে এক উৎসব মুখর পরিবেশ।
এটাই আক্রমনের সেরা সময়। হাডসন সৈন্যদের তৈরি করে আক্রমনের নির্দেশ দিলেন। কাশ্মীরি এবং মোরি গেটের কাছে কামান গর্জে উঠল। মোগল সৈন্যরা পাল্টা জবাব দিল। বুম বুম শব্দ। সবাই দৌড়ে যার যার ঘরে আশ্রয় নিল।
কৌশল কাজে লাগল। অন্যদিকে নেহাল রা সবজি মন্দির এলাকা ঘিরে ফেলল। তারা একটি বাগান বাড়িতে প্রতিরোধের সম্মুখীন হল। নেহালদের কামানের গোলায় বাড়ির ছাদের একাংশ ধ্বসে গেল। প্রতিরোধ ছেড়ে সবাই পালিয়ে গেল। সৈন্যরা বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই অবাক কাণ্ড। একজন ৪০ বছর বয়সী মহিলা তরবারি ঘোরাচ্ছেন তাদের উদ্দ্যেশে।
বন্দুকের সামনে তরবারি ! একটুও ভয়ডর নেই। উজ্জ্বল চোখ, নাকে জ্বলজ্বল করছে হীরা। কানে ও হাতে স্বর্ণালঙ্কার। পরনে রেশমি পোশাক। তাকে গ্রেফতার করে হাডসনের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। হাডসন চেয়ারে বসে নোটবুক এবং কলম নিলেন।

আনোয়ারা বাঈয়ের ঈমান
হাডসন – নাম কি তোমার ?
মহিলা – আনোয়ারা বাঈ
হাডসন – তুমি কোথায় থাক ?
আনোয়ারা – চৌরি বাজার
হাডসন – তোমার দলের সেনাপতি কে ?
আনোয়ারা – বখত খান
হাডসন – সবজি মন্দিরে কতজন সৈন্য আছে।
আনোয়ারা – আমি জানি না। আমাকে আজই এখানে পাহারা দেয়ার জন্য আনা হয়েছে। মেয়েদের ব্যারাকে থাকি।
হাডসন – মেয়েদের ব্যারাক ?
জি হুজুর ! কিছু মেয়ে জিহাদিনও আছে।
হাডসন – তুমি এখানে কি করছিলে ?
আনোয়ারা – আগেই বলেছি। দু মাস আগে জেহাদে যোগ দেয়ার পর আমি আমার পেশা ছেড়ে দিয়েছি।
হাডসন সাহেব খুব রেগে গেলেন।
হাডসন – তোমরা বেজন্মা মুসলিমরা কি রক্ত ঝরিয়ে জেহাদ কর !
আনোয়ারা – তোমরা আমাদের গর্ভবতী মেয়েদের পেটে তরবারি ঢুকিয়ে হত্যা করেছ। আমি নিজ চোখে দেখেছি, শিশুদের কে শুন্যে ছুঁড়ে দিয়ে বেয়নেট বিঁধিয়ে হত্যা করেছ।
রাগে লাল হয়ে গেল হাডসনের মুখ। বললেন, একে নিয়ে যাও, বেহেশতে পাঠিয়ে দাও।

আল্লাহ্র সাহায্য এসে গেল
নেহাল তাবুতে নিয়ে এলেন আনোয়ারাকে। নারী দেখে তার অধিনস্তরা হই হই করে উঠল। অনেক দিন পর তারা নারী দেহ উপভোগ করবে ! একজন চিৎকার করে বলল, নেহালিয়া, তুমি আগে অস্ত্র শান দাও। এরপর আমরা পালাক্রমে ভোগ করব।
আনোয়ারা চুপচাপ শুনলেন সব। সরদার্জি, যদি তুমি অনুমতি দাও, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, মাগরিবের নামাজ আদায় করব। তারপর তোমাদের যা খুশি করতে পার।
সমস্বরে সবাই বলল, তাকে আল্লাহ্র কাছে মোনাজাত করতে দে, সে হাল্কা হবে। আমাদেরও হাল্কা করবে।
ঠিক আছে, তারাতারি করবে। নেহাল বলল। ভেজা মাটিতে ওড়না বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে শুরু করল আনোয়ারা। একটু পরেই এতগুলো মানুষ যাকে ধর্ষণ করবে, এরপর মেরে ফেলবে। তিনি এতটা নির্ভার থাকেন কিভাবে !! ভাবছিল নেহাল।
আচ্ছালুমুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ বলে, ছালাম ফেরালেন আনোয়ারা। নেহাল জানতেন, মুসলিমরা নামাজ শেষে যখন ডানে বায়ে মুখ ঘুরায়, তখন সবার ভালোর জন্য দোয়া করে।
নামাজ শেষে উঠে দাঁড়ালেন আনোয়ারা, আমি প্রস্তত এখন যা খুশি করতে পার। কেউ কোন উত্তর দিল না। কেউ তার মুখের দিকে তাকাল না। নেহাল তাকে তাঁবুর মধ্যে নিয়ে গেল। তিনটে চাপাতি আর মসুর ডাল খেতে দিল। আনোয়ারা অবাক ! দ্রুত খেয়ে নিন, তারা দিল নেহাল।

বন্দুক লোড করে আনোয়ারা কে নিয়ে অন্ধকারে বেড়িয়ে পরল নেহাল। প্রহরীরা চ্যালেঞ্জ করল। পাসওয়ার্ড উচ্চারন করল নেহাল। যেতে দিল প্রহরীরা। কিছুদুর যাওয়ার পর বলল, এখান থেকে বাড়ি যাওয়ার পথ চিনবেন। হ্যাঁ, চিনতে পারব।
ঠিক আছে, চলে যান।
হতভম্ব আনোয়ারা, ভেজা চোখে বলল, আল্লাহ তোমার আর তোমার সন্তানদের আজীবন নিরাপদে রাখুন। দীর্ঘজীবী করুন, বলে হাঁটতে শুরু করল।
বন্দুক উঁচিয়ে আকাশের দিকে একটি ফাঁকা গুলি করল নেহাল।
বেশি বিপদে পরলে আমরা ভুলে যাই আল্লাহকে। কিন্ত একজন বাঈজি ভোলেনি। আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন। ইজ্জত এবং জীবন বাঁচিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন।
যারা খুব সমস্যায় আছেন তাদের কে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ২০/০৯/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।