আইবিএস কি ভাল হয়? ওষুধ ছাড়াই স্থায়ী মুক্তির ৫টি পরীক্ষিত উপায়
সেলিম হোসেন – ২৪/০৬/২০২৫ ইং
আপনি যদি আইবিএস (Irritable Bowel Syndrome) বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম-এ আক্রান্ত হন, তবে সম্ভবত আপনি জানেন শহরের কোন মার্কেটের টয়লেট পরিষ্কার। কোন ফ্লোরে টয়লেট সহজে পাওয়া যায়। কারণ বার বার টয়লেটে যাওয়া আপনার জীবনের এক বিরক্তিকর বাস্তবতা। কোমরে ব্যথা আর মনের ভয় নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়া। দীর্ঘদিনের ওষুধেও সুফল না পাওয়া এবং সেই সাথে যৌন স্বাস্থ্যের অবনতি। সব মিলিয়ে জীবনটা যেন এক দারুন ‘স্ট্রেস’ময় যাত্রা।
আসলে, আইবিএস কি সত্যিই ভালো হয়? হ্যাঁ, রোগটির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে এবং লাইফস্টাইলে কিছু সঠিক পরিবর্তন আনলে ওষুধ ছাড়াই একে মোকাবিলা করা এবং সুস্থ থাকা সম্ভব।
লিভার কে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচান ন্যাচারালি

আইবিএস কি ভাল হয় এবং এর প্রকারভেদ
আইবিএস হলো অন্ত্রের এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যার কারণে পেটে ব্যথা, গ্যাস এবং মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন আসে। এটি ক্যান্সার বা ঐ জাতীয় রোগের মতো ভয়ঙ্কর নয়, তবে জীবনযাত্রার মান মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয়।
আইবিএস-এর চারটি উপশ্রেণী রয়েছে:
| উপশ্রেণী | মূল উপসর্গ |
|---|---|
| আইবিএস-ডি (IBS-D) | বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডায়রিয়া এবং পেটের অস্বস্তি। |
| আইবিএস-সি (IBS-C) | বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের অস্বস্তি। |
| আইবিএস-মিশ্র (IBS-Mixed) | পর্যায়ক্রমে ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য, সাথে পেটে অস্বস্তি। |
| আইবিএস-ইউ (IBS-U) | অ-শ্রেণীবদ্ধ (Unsubtyped) মিশ্র লক্ষণ। |
আইবিএস হলে যে সমস্যাগুলো দেখা যায়
- পাচনতন্ত্রের সমস্যা: দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট পরিষ্কার না হওয়া, পায়ু পথে তীব্র জ্বালা।
- পেটে অস্বস্তি: খাবার খাওয়ার আগে বা পরে পেট মোচড়ানো, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হওয়া এবং দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু নির্গমন।
- শারীরিক ও মানসিক প্রভাব: শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি, কাজের প্রতি অনীহা, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অনীহা।
- সম্পর্কের সমস্যা: যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া বা ইন্টারকোর্সের ডিউরেশন খুব কম হওয়া, যা অনেক সময় সংসারে অশান্তি তৈরি করে।
- উদ্বেগ বৃদ্ধি: আইবিএস-এর কারণে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়, যা রোগের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
দ্রুত ওজন কমানোর সহজ এবং সাস্থ্যকর উপায়

৫ আইবিএস কি ভাল হয় ? আজীবন মুক্ত থাকুন ঔষধ ছাড়াই
আইবিএস-এর মূল সমস্যা দূর করতে অভ্যন্তরীণ প্রদাহ (Inflammation) কমানো এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। এই ৫টি উপায় নিয়মিত অনুসরণ করলে আপনি আজীবন সুস্থ থাকতে পারবেন:
১. খাবারের সময় ও পদ্ধতি পরিবর্তন
খাদ্য গ্রহণের পদ্ধতি বদলানো সুস্থতার প্রথম ধাপ।
- ভিনেগার পান: খাবারের ১০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার (ACV) মিশিয়ে পান করুন। (যদি ACV সমস্যা করে, তবে খাবারের মাঝখানে পান করতে পারেন)।
- খাবার চিবানো: খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে এবং ধীরে ধীরে খান। খাওয়ার সময় ফেসবুক, টিকটক বা মেইল চেক করা থেকে বিরত থাকুন।
- খাবারের ক্রম: খাবারের প্রথমেই সালাদ খাবেন, এরপর সবজি। সবশেষে মাছ/মাংস সহকারে শর্করা জাতীয় খাবার খাবেন। সালাদ শেষে খাওয়াটা ভুল পন্থা।
- পানি পান: খাবারের মাঝখানে কোনো পানি পান করবেন না। খাবার শেষ করার কমপক্ষে এক ঘণ্টা পর পানি পান করুন।
ফাস্টিং করার নিয়ম এবং উপকারিতা জেনে নিন

২. প্রদাহ সৃষ্টিকারী খাবার বাদ দিন ও প্রোবায়োটিক যোগ করুন
আইবিএস-এর মূল কারণ হলো অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করা খাবার। এগুলি সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে।
- বর্জনীয় খাবার: গম বা আটা থেকে তৈরি খাবার, কোমল পানীয়, বিস্কুট, চানাচুর, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার (যদি সমস্যা করে), এবং আল্ট্রা প্রসেসড ফুড (পিজ্জা, বার্গার, চিকেন ফ্রাই, পুরি, সিঙ্গারা ইত্যাদি)।
- প্রোবায়োটিক যোগ করুন: প্রতিবার খাবারের সাথে প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার যেমন—টক দই (যদি সহ্য হয়), কিমচি (Kimchi), সাওয়ার ক্রাউট (Sauerkraut) ইত্যাদি খান।
৩. নিয়মিত ফাস্টিং করুন (উপবাস)
নিয়মিত ফাস্টিং বা উপবাস আপনার পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ‘ম্যাজিকের’ মতো কাজ করতে পারে।
- শুরুর নিয়ম: প্রথম দিকে ১২ ঘণ্টা থেকে ফাস্টিং শুরু করুন।
- সুবিধা: অভ্যস্ত হয়ে গেলে ২০-২৩ ঘণ্টা ফাস্টিং করুন। এতে করে পেট খাবার হজম করার যথেষ্ট সময় পাবে। দীর্ঘ ফাস্টিং করলে পেটে স্টেমসেল তৈরি হয়। স্টেমসেল ক্ষতিগ্রস্ত পাকস্থলীকে মেরামত করতে সাহায্য করে।
৪. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন
আইবিএস-এর তীব্রতার পিছনে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ একটি বড় কারণ। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এই চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং এক মাসের মধ্যে আপনি জাদুকরী ফলাফল পেতে পারেন।
- পদ্ধতি: ইউটিউবে ‘৪-৭-৮ ব্রিদিং সেসন’ লিখে সার্চ দিন। ডাঃ উইলের পদ্ধতি বা ‘উইম হফ মেথড’ (Wim Hof Method) সবচেয়ে ভালো। নিয়মিত এই ব্যায়াম করুন।
৫. ভালো ঘুম ও ব্যায়াম নিশ্চিত করুন
সুস্থ অন্ত্রের জন্য ভালো ঘুম এবং শারীরিক পরিশ্রম অপরিহার্য।
- ঘুম: রাত ১০-১১ টার মধ্যে বিছানায় যান এবং ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠুন।
- ব্যায়াম: শরীরের সহনীয় মাত্রায় ব্যায়াম করুন। দৌড়াতে পারলে খুবই ভালো।
- কফি এনেমা (ঐচ্ছিক): মাঝে মাঝে কফি এনেমা (Coffee Enema) করতে পারেন, যা অন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
আই বি এস নিয়ে বিস্তারিত বলছেন ডাঃ এরিক বারগ

ইনশাআল্লাহ, এই পদ্ধতিগুলো মেনে চললে আপনি আজীবন সুস্থ থাকতে পারবেন এবং আপনার পছন্দের খাবারগুলো (উপকারী খাবারের তালিকায় থাকা) উপভোগ করতে পারবেন।
আশা করি, আইবিএস কি ভালো হয়—এই প্রশ্নটি আপনার মন থেকে চিরতরে দূর হবে।
তথ্যসূত্র আইবিএস কি ভাল হয় : Dr. Eric Berg, Dr. Mujibul Haque, Dr. Jahangir Kabir, Dr. Mujibur Rahman, Dr. Mandell, Dr. Jason Faung, Dr. Sten Ekberg and many medical health journals.
ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন।









