আইন পেশা কি। ১ টি রম্য গল্প, সুন্দরী সুজানা এবং আইন পেশার ইতিহাস। 1 funny story, beautiful Susana and the history of the legal profession  

আইন পেশা কি

আইন পেশা কি এবং সুন্দরী সুজানা 

চা টা খেতে দারুন লাগছে , বলল বেলাল আহমেদ

হুম, এতে বাটার এবং মধু দেয়া আছে। খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি ক্ষুধাও নিবারন করে। আর এর পুষ্টি নিয়ে তোকে জ্ঞ্যান দিতে চাই না। কারন বাটার আর মধুর উপকারিতা তোর জানা আছে। ইদানিং আমার খুব কৌতূহল আইন পেশা কি। তুই আজ এটা নিয়ে বলবি আমাকে ? একটানা কথা বলে থামল জাহিদ ইসলাম।

হ্যা অবশ্যই বলব, আইন পেশা কি। তোর কি মনে আছে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল। যেদিন ব্রাজিলের খেলা থাকত, সেদিন ক্যামেরা বার বার গ্যালারিতে ফোকাস করত এক তরুণীর। যার নাম ছিল সুজানা। মেয়েটি সুন্দরি এবং লাস্যময়ী। পেশায় মডেল। ব্রাজিলিয়ান স্টার রোনালদোর প্রেমিকা ছিলেন তিনি। যারা সেই বিশ্বকাপ দেখেছিলেন, অনেকেই ভুলে গেছেন, কারও হয়তবা সুজানার কথা মনে আছে।

হ্যা বেশ মনে আছে, রোনালদোর সেই খেলা ভোলার নয়। আর সুজানা তো সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে যায়। কিন্ত আইন পেশার সাথে সুজানার কি সম্পর্ক। জাহিদ বলল

হ্যা, সম্পর্ক আছে। সুজানা নামের সাথে। আমরা বলব হাজার হাজার বছর আগেকার আরেক সুন্দরি সুজানার কথা। যার সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে ছিল শহর এবং গ্রামে। কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবাই একনামে তাকে চিনতেন। যার কথা এখনো মনে রেখেছে বিশ্ব। হয়ত মনে রাখবে সুজানার কাহিনী, যতদিন পৃথিবী থাকবে। তাকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল আইন পেশা।

আদিকালের ব্যাবিলন নগরী। কাছের একটি গ্রামে বাস করতেন সুজানা। ছিলেন দরিদ্র ঘরের বধু। কিন্ত তার রুপ যৌবন পুরুষদের মাথা ঘুরিয়ে দিত। তার সততা আর উত্তম চরিত্রের কাহিনী মানব ইতিহাসে কিংবদন্তি। স্থান পেয়েছে পবিত্র  বাইবেলে। আইনের শিক্ষকগণ সুযোগ পেলেই ছাত্রদেরকে সুজানার কাহিনী শোনান। তারই আলোকে আইন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার পরামর্শ দেন।

মানুষের সামনে কথা বলতে ভয় পান, তাহলে জেনে নিন 

আইন পেশা কি
আইন পেশা কি

আইন পেশা কি এবং ইতিহাস  

ব্যাবিলন তখন শাসন করেন নেবুচাদজান। তিনি অ্যাসিরীয় সম্রাট। তার অধীনে আরও ছিল সিরিয়া, ইরাক, জেরুজালেমসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। কেন্দ্রীয় শাসন চলত পুরো এলাকায়। নেবুচাদ শাসনকাজ পরিচালনা সহজ করতে সাম্রাজ্যকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করেন। আজকের ইউনিয়ন পরিষদের মত। সেখানে শাসন কর্তা নিয়োগ করেন মুরুব্বীদের। যাকে বলা হত ‘ কাউন্সিল অব এল্ডার্স’।

এ কাউন্সিল এলাকায় রাজস্ব আদায় করত। পুলিশি ব্যবস্থা তদারকি করত। দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলা নিস্পত্তি করা ছিল তাদের কাজ। সুজানার গ্রামের কাউন্সিল অব এল্ডার্সের সদস্য ছিল দুজন বয়স্ক মানুষ। যাদের কুকর্মের কারনে এ কাহিনী বাইবেলে জায়গা করে নিয়েছে।

অনেকের মত দুই মুরুব্বিও সুজানার রুপে মুগ্ধ হন। সুজানা স্বামীর সাথে বাইরে বের হলে তারা চোখ ভরে দেখতেন সুজানাকে। সুজানা বাগান ঘেরা পুকুরে গোসল করতেন। এসময় সাথে থাকত বাড়ির কাজের মেয়ে।  গোসলের সময় মুরুব্বি দুজন গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতেন।

ভায়েগ্রা আবিস্কারের মজার কাহিনী পড়ুন 

আইন পেশা কি
আইন পেশা কি

সুজানার হাত ধোয়া, মুখ ধোয়া, পায়ে সাবান ঘষা দেখে তারা পুলকিত হতেন। গোসল শেষে উঠে আসার সময় দেহের সমস্ত বাঁক স্পষ্ট হয়ে উঠত। তা দেখে আনন্দ চরমে উঠত কাউন্সিলরদের। তারা পাগলপারা হয়ে উঠলেন। কামাতুর হয়ে হিতাহিত জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলেন। নিজেদের আনন্দ চরিতার্থ করার উপায় খুঁজতে লাগলেন।

সুযোগ এসে গেল। প্রতিদিনের মত গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন বৃদ্ধরা। গোসল করার সময় কি মনে হল। হঠাৎ কাজের মেয়েটিকে তেল আনতে পাঠালেন সুজানা। আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলেন দুজন। সুজানাকে কুপ্রস্তাব দিলেন। দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করলেন সুজানা। তারা জাপটে ধরলেন সুজানাকে। সুজানা চিৎকার করে উঠলেন। ছেড়ে দিয়ে ঝোপের আড়াল দিয়ে পালিয়ে গেলেন দুজন। দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়ে গেলেন।

কাউন্সিল অব এল্ডার্স নিজেদের আদালতে অভিযোগ আনলেন, সুজানা ব্যাভিচারি। জনৈক যুবকের সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত ছিলেন সুজানা। তারা নিজ চোখে দেখেছেন। মামলার চাক্ষুস সাক্ষী তারা দুজনেই।

তখন বিচার বিভাগ আর নির্বাহী বিভাগ একসাথে ছিল। আদালতে সাক্ষ্যগ্রহন, ওকালতি, সাক্ষীদের ক্রস এক্সামিনেশন ঐ সময় ছিলনা। বৃদ্ধ দুজন নির্বাহী বিভাগের প্রধান ছিলেন। একই সাথে বিচার কাজ পরিচালনা করতেন। তারাই অভিযোগ গ্রহন অথবা নিজেরাই সুয়োমোটো জারি করতেন।

আইন পেশা কি
আইন পেশা কি

কাউন্সিল যদি নিজেরা সাক্ষী দিতেন, তবে অন্য সাক্ষীর দরকার পড়ত না। একারনে সুজানার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ দায়ের সহজ ছিল। তৎকালীন প্রথা অনুযায়ী ব্যাভিচারি নারীকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে হত্যা করা হত। সুজানার বিরুদ্ধেও রায় হয়ে গেল। বিপদে পরলেন সতী, সুন্দরী রমণী। রায় কার্যকরের দিন ধার্য হয়ে গেল।

হাজার হাজার লোকের বিশাল সমাবেশ। দরিদ্র সুন্দরীকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে। তার রক্ত ঝরবে। উন্মত জনতা দেখবে। সুজানার করুন আর্ত চিৎকার শুনতে উন্মুখ জনতা। কিন্ত কারও মাথায় আসছে না, এই মহিলা সৎ এবং ধার্মিক। উল্টো কেউ কেউ ভাবছে যখন পাথর ছোঁড়া হবে। তখন জামাকাপর সরে যাবে দেহ থেকে। রুপের আগুন ঝলক দিবে। সেই রুপ দেখার সুযোগ নিতে চায় কিছু জনতা।

পাথর ছোঁড়া শুরু হবে। এমন সময় ‘ থামুন, থামুন’ বলে চিৎকার করে উঠল এক যুবক। তার নাম দানিয়েল। জনতার উল্লাস ধ্বনি ছাপিয়ে সবার কানে পৌঁছল চিৎকারের শব্দ। ঘটনার আকস্মিকতায় চুপ হয়ে গেল পুরো সমাবেশ। প্রথমে জনতা ভয় পেয়ে গেল। এরপর বলল ‘ তুমি কি করতে চাও’ ?

কিশোর কিশোরীরা কেন আত্মহত্যা করে 

আইন পেশা কি
আইন পেশা কি

দানিয়েল বলল ” আমি দুই সম্মানিত কাউন্সিলরকে প্রশ্ন করতে চাই। আপনাদের সামনে, তবে দুজন কে একসাথে নয়। একজন দূরে সরে থাকবেন। অন্যজনকে প্রশ্ন করব। উনি উত্তর দেয়ার পর সরে যাবেন। এরপর অন্যজনকে প্রশ্ন করব।”

জনতা আনন্দ ধ্বনি করে সমর্থন দিল দানিয়েল কে। বৃদ্ধ দুজন প্রকাশ্য সমাবেশে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হলেন।

দানিয়েল প্রথম বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করলেন ” আপনি কখন এবং কোথায় সুজানাকে ব্যাভিচারে লিপ্ত হতে দেখেছেন ? ”

সেদিন ছিল চাঁদনী রাত, একটি গাছের নিচে সুজানা যুবকের সাথে অপকর্ম করছিল। কাউন্সিলর বৃদ্ধ বললেন।

এরপর দ্বিতীয় বৃদ্ধকে সামনে আনা হল। তাকেও একই প্রশ্ন করা হল।

দিনের আলোয় একটি মাঠের মধ্যে সুজানা যুবকের সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত হয়েছিল। দ্বিতীয় কাউন্সিলর বললেন।

কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলন কবে থেকে শুরু 

আইন পেশা কি
আইন পেশা কি

বিক্ষোভে ফেটে পরল জনতা। তারা ক্ষোভে চিৎকার, চেঁচামেচি করতে লাগলেন। একটু আগে যারা সুজানার মৃত্যুদণ্ড দেখতে চেয়েছিলেন, এখন তারাই দুই বৃদ্ধের মৃত্যুদণ্ড চাইছেন। ঘটনা পুরো বিপরীত হয়ে গেল। বৃদ্ধ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হল। দুই বৃদ্ধের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত হল ফৌজদারি বিচারের সাক্ষ্য গ্রহন ব্যবস্থা।

কোন কোন ঐতিহাসিক দানিয়েল কে সাহসী যুবক বলেন। ইহুদি খৃস্টানরা আল্লাহ প্রেরিত বিশেষ মানব বলেন দানিয়েল কে। মুসলিমরা নবী বলে মানেন। অন্যদিকে আইন বিজ্ঞানের শিক্ষক, আইন পেশার লোকজন, বিচারঙ্গের বিচারক গন তাকে মানবজাতির প্রথম উকিল বলেন।

আইন পেশা কি এবং গ্রিস 

প্রাচীন গ্রিস। মুলত সেখানেই রাষ্ট্রীয়ভাবে ওকালতি পেশা স্বীকৃতি লাভ করে। এথেন্স নগরীতে। গ্রিক সভ্যতার পুরো সময় উকিলরা মক্কেলদের কাছ থেকে কোন টাকা বা ফি নিতনা। এমন কি সামান্য উপহার গ্রহণও ছিল অপরাধ। পেশাটিকে অত্যন্ত মহৎ মনে করা হত। অভিজাত পরিবার, শিক্ষিত বা সচ্ছল লোকেরা কাজটি করতেন। তারা ওকালতিকে মানব সেবার সুযোগ বলে মনে করতেন।

বিস্ময়কর ! ইউটিউবার নিশার আয় বছরে ১১ কোটি টাকা 

আইন পেশা কি
আইন পেশা কি

৪০৫ খ্রিস্টাব্দে এথেন্স সুপ্রিম কোর্ট একটি রায় প্রদান করে। সেখানে তারা বলেন, কোন উকিল মক্কেলের কাছ থেকে কোন টাকা নিতে পারবেন না। যদি নেন তাহলে তা ঘুষ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এরপর ইতিহাস ঘুরে যায়। বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্র হয় রোম। তখন দেওয়ানি এবং ফৌজদারি আইনের ব্যপ্তি আরও বাড়ে। উকিলদের কাজের পরিধিও বাড়ে বহুগুন। তারপরেও কোন আইনজীবী হাত পেতে টাকা নিতেন না। মক্কেলদের সাথে দরদাম করে কোন কিছু নিতে পারতেন না।

উকিলরা আদালতে লম্বা এবং কালো গাউন পরেন। এটা শুরু হয় সম্রাট জাস্টিনিয়ানের আমলে। তখন তারা গাউনের পিছনে, ঘাড়ের নিচে ছোট পকেট রাখতেন। কোন ক্লায়েন্ট মামলায় খুশী হলে উকিলদের স্বর্ণমুদ্রা দিতেন। এটা তারা উকিলের অজান্তে গাউনের পকেটে রেখে দিতেন। উকিল বাড়িতে ফিরলে ২/১ স্বর্ণমুদ্রা পেতেন। আবার কখনো কখনো কিছুই পেতেন না।

তরুনেরা ভুগছে যৌন দুরবলতায়, কিন্ত কেন 

আইন পেশা কি
আইন পেশা কি

এভাবেই ওকালতি পেশাটি ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করে। ১২১৫ সালে বিখ্যাত ম্যাগনাকার্টা সাক্ষরিত হয়। এরপর বিচারক এবং আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক শক্তিতে পরিনত হন।

পৃথিবীতে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। এখন মানুষ আগের থেকে সভ্য হয়েছে। কিন্ত আইন পেশা যেভাবে শুরু হয়েছিল, সে জায়গায় আর নেই। মহৎ চিন্তা থেকে সরে আজ পুরোটা ব্যবসায়িক হয়েছে। ব্যবসা থেকে ক্ষেত্র বিশেষে প্রতারনায় রুপ নিয়েছে। একারনে ছড়িয়েছে নানান গল্প। আমি তেমনি একটি গল্প শোনাই তোকে।

ঠিক আছে বল, বলল জাহিদ

এক উকিল তার পুত্রকে পাঠিয়েছেন ব্রিটেনে ব্যারিস্টারি পড়তে। পুত্র ভালোভাবে আইন পড়া শেষ করে দেশে ফিরল। বাবা পুত্রকে নিজের ল ফার্মে যোগ দেয়ালেন। প্রথম মামলা শেষ করে বাসায় ফিরলেন পুত্র। খুবই উচ্ছসিত। মামলা টি জিতেছেন।

আইন পেশায় সফল হতে যা করতে হবে 

আইন পেশা কি
আইন পেশা কি

খাবার টেবিলে আনন্দের সাথে মাকে বললেন, মা জান, আব্বা দেওয়ানি মামলা টা নিয়ে দশ বছর যাবত ভুগছিল। আজকে আমি সেটা নিস্পত্তি করে ফেললাম।

বাবা খাওয়া বন্ধ করলেন, বললেন ” ওরে বোকা, ঐ মামলার টাকায় তোমাকে বিলেত পাঠিয়েছি। পড়াশোনার খরচ পাঠিয়েছি। তুমি সেখানে থেকেছ, খেয়েছ, ব্যারিস্টারি পাস করেছ। এই মামলাটা ছিল বলেই বেঁচে গেছি।”

সেলিম হোসেন – ৩১/৮০৭/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *