অর্গানিক ভিনেগার: উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম
আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar – ACV) বর্তমানে একটি বহুল পরিচিত স্বাস্থ্যকর পানীয়। বিশেষ করে এর “উইথ মাদার” (With Mother) রূপটি, যা স্বাস্থ্য সচেতন মহলে খুবই জনপ্রিয়। এই তরল পানীয়টি দীর্ঘকাল সুস্থ থাকার জন্য এক আবশ্যিক সহযোগী হতে পারে।
অর্গানিক ভিনেগার কী এবং কীভাবে তৈরি হয়?
আপেল সিডার ভিনেগার হলো আপেলের রস থেকে তৈরি এক ধরনের ভিনেগার, যা দ্বিগুণ গাঁজন (Double Fermentation) প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।
- প্রথম ধাপ: আপেলের রসকে প্রথমে গাঁজন করে আপেল সিডার তৈরি করা হয়।
- দ্বিতীয় ধাপ: এরপর আপেল সিডারকে পুনরায় গাঁজন করে আপেল সিডার ভিনেগারে রূপান্তরিত করা হয়।
এই দ্বিগুণ গাঁজনের ফলে আপেলের রসের প্রাকৃতিক শর্করা প্রথমে অ্যালকোহলে এবং পরে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে (Acetic Acid) ভেঙে যায়। অ্যাসিটিক অ্যাসিডই ভিনেগারের মূল উপাদান।
জীবনে কত টাকার প্রয়োজন ? টাকাকে কিভাবে কাজে লাগাবেন।

মাদার (Mother) কী?
অর্গানিক, আন-ফিল্টারড ভিনেগারের নিচে যে ঘোলাটে, জালের মতো অংশটি দেখা যায়, সেটিই হলো “মাদার” (Mother)। এটি হলো অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া ও ইস্টের একটি জটিল মিশ্রণ।
উপাদানসমূহ: অ্যাসিটিক অ্যাসিড ছাড়াও অর্গানিক ভিনেগারে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, অ্যামাইনো অ্যাসিড, দ্রবণীয় ফাইবার, লাইভ এনজাইম এবং পলিফেনল (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট)। এর প্রোবায়োটিক গুণাবলী অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই সহায়ক।
একমাসেই ওজন কমাতে চান। ন্যাচারালি সাস্থ্যকর উপায়ে কমিয়ে ফেলুন।

কেন খাবেন আপেল সিডার অর্গানিক ভিনেগার? (হজমের প্রাকৃতিক সমাধান)
আমাদের সুস্থ থাকা বা অসুস্থ হয়ে পড়ার কেন্দ্র হলো পাকস্থলী। পাকস্থলীর অ্যাসিডের পরিবেশ ঠিক থাকলে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। শিশুদের পাকস্থলীতে খাবার হজমকারী অ্যাসিড ও এনজাইম প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত হয়, তাই তাদের হজমে সমস্যা কম হয়। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অ্যাসিড নিঃসরণের পরিমাণ কমতে থাকে।
হজমের সমস্যায় অনেকে গ্যাসের ওষুধ খান, যা সাময়িক স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
আপেল সিডার ভিনেগার এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সমাধান দেয়। এটি নিয়মিত গ্রহণ করলে পেটে অ্যাসিডের পরিবেশ ঠিক থাকে, এনজাইমের জোগান বাড়ে এবং প্রোবায়োটিকের অভাব পূরণে সহায়তা করে।
আজীবন ডায়াবেটিকস মুক্ত থাকতে লেখাটি পড়ুন।

আপেল সিডার অর্গানিক ভিনেগারের মূল উপকারিতা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তরল পানীয়টির বহুবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে:
১. ওজন কমাতে সহায়ক: আপেল সিডার ভিনেগার বিএমআর (BMR – বডি মেটাবলিক রেট) বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুমের পাশাপাশি এটি গ্রহণ করলে দ্রুত ভালো ফল পাওয়া যায়।
২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ঘুমানোর আগে দুই টেবিল চামচ ভিনেগার খেলে সকালে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধির গতি প্রায় চার শতাংশ কমে আসে।
৩. কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: এটি রক্তের কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪. হজমে সহায়তা: যাদের হজমের সমস্যা আছে, তারা খাবার খাওয়ার আগে বা পরে কুসুম গরম বা সাধারণ পানির সাথে এক/দুই চামচ ভিনেগার মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এটি হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম ও অ্যাসিডের নিঃসরণ বাড়িয়ে গ্যাস ও পেট ফোলা সমস্যা দূর করে।
হেলদি লাইফ স্টাইলে কোলেস্টেরল কোন চিন্তার বিষয় নয়।

৫. অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি: গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়ার কারণে এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (জীবাণুনাশক) এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহরোধী) বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ এবং শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৬. মিষ্টি খাবারের আকাঙ্ক্ষা হ্রাস: ওজন কমানোর যাত্রায় মিষ্টি খাবারের তীব্র আকাঙ্ক্ষা (Cravings) দূর করতে ভিনেগার খুবই কার্যকর। মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করলে এক টেবিল চামচ ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো ধীরে ধীরে পান করুন।
৭. হেঁচকি বন্ধ করা: এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেয়ে ফেললে এর টক স্বাদ অতিরিক্ত উত্তেজিত স্নায়ুকে শান্ত করে দ্রুত হেঁচকি বন্ধ করতে পারে।
৮. গলা খুসখুস উপশম: ১/৪ কাপ কুসুম গরম পানির সাথে ১/৪ কাপ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে এক ঘণ্টা পর পর কুলকুচা (gargle) করলে গলার ইনফেকশন ছড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ হয় এবং উপশম পাওয়া যায়।
পেটে সবসময় গ্যাস হয়, ন্যাচারালি দূর করে ফেলুন পেটের গ্যাস।

ভিনেগার ব্যবহারের অন্যান্য টিপস
- অ্যালকালাইন ড্রিংক: দুই চামচ ভিনেগারের সাথে এক চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে, ফেনা ওঠা বন্ধ হলে ২৫০-৩০০ মিলি পানি যোগ করে পান করুন। এটি শরীরকে অ্যালকালাইন (ক্ষারীয়) মুডে নিয়ে আসে।
- প্রাকৃতিক শেভিং লোশন: অর্ধেক পানি এবং অর্ধেক ভিনেগার মিশিয়ে একটি বোতলে ভরে প্রাকৃতিক শেভিং লোশন হিসেবে ব্যবহার করুন। এটি অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
- জীবাণুনাশক: গোসলের পানিতে সামান্য ভিনেগার মিশিয়ে নিলে এটি ত্বকের জন্য জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করবে।
হু হু করে বাড়ছে কিডনি রোগী। আজীবন কিডনি সুস্থ রাখার উপায় জেনে নিন।

খাঁটি ভিনেগার চেনার উপায় ও সতর্কতা
ভালো ভিনেগার চেনার উপায়
খাঁটি ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে পান করলে একটি টক ও ঝাঁঝালো স্বাদ অনুভূত হবে। এছাড়া, তাজা ভিনেগারের মধ্যে বেকিং সোডা দিলে তাতে প্রচুর ফেনা উঠবে। শতভাগ নিশ্চিত হতে ল্যাবে পরীক্ষা করানোই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়।
আপেল সিডার অর্গানিক ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
কখন খাবেন:
- খাবারের আগে/পরে: খাবার গ্রহণের ১০ মিনিট আগে বা পরে খেতে পারেন।
- বেকিং সোডার সাথে: বেকিং সোডার সাথে খেলে অবশ্যই খালি পেটে বা খাবার গ্রহণের দেড় ঘণ্টা পরে খাবেন।
- ওজন কমাতে: ওজন কমানোর জন্য দিনে তিনবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
যেভাবে খাবেন:
- এক গ্লাস সাধারণ বা কুসুম গরম পানির সাথে ১/২ চামচ ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন।
- সালাদ ড্রেসিং বা রান্না করা মসুর ডালে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
কতদিন খাবেন: পরিমিত পরিমাণে সারা জীবন এটি গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়।
সতর্কতা:
- যারা আলসারে (Ulcer) আক্রান্ত, তারা প্রথমে আলসার দূর করে তারপর ভিনেগার খাবেন।
- কারো যদি ভিনেগার খাওয়ার পর শরীর ঘামে বা অস্থির লাগে, তবে তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে মুল্যবান পরামর্শ দিচ্ছেন ডাঃ এরিক বারগ।

ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – ২২/১১/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.









