অতিথি অভ্যর্থনা আফ্রিকায়, অতিথির সাথে রাত্রিজাপন করতে দেয়া হয় বাড়ির যুবতী মেয়েকে এবং আরও ৭ টি বিচিত্র প্রথা। And 7 other strange customs.

অতিথি অভ্যর্থনা

অতিথি অভ্যর্থনা আফ্রিকায়

অতিথিকে আন্তরিক ভাবে আপ্যায়ন করতে হয়। এটা সব দেশে সব সামাজিক রীতিতে বিদ্যমান আছে। এতে আত্মীয়তার বন্ধন মজবুত হয়, সম্প্রীতি বাড়ে। কিন্ত আফ্রিকার একটি জনগোষ্ঠীর অতিথি অভ্যর্থনা দেখলে অবাক হতে হয়। কারও কাছে বিষয় টা গা ঘিন ঘিন ব্যাপার। পৃথিবীর আর কোন দেশের জনগোষ্ঠী এমন কাজ করে না। কিভাবে তারা অতিথিদের সেবা করে সেটা আমারা জানব। তবে তার আগে আফ্রিকানদের আরও কিছু চমকপ্রদ সামাজিক প্রথা সম্পর্কে জেনে নেয়া দরকার।

জীবনে সফলতা পেতে পিছনে তাকাবেন না। তাকালে কি হয় জানেন ? 

অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

১. যুবক দেড় নৃত্য  

প্রকৃতিতে পাখি এবং মৌমাছি বিপরিত লিঙ্গের সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতে নাচানাচি করে। হয়তোবা সেখান থেকেই শিক্ষাটা নিয়েছে নাইজারের এক উপজাতির যুবকেরা। প্রতি বছর মুখে ঐতিহ্যগত রং মেখে, বিচিত্র পোশাক পরে সংগীতের তালে তালে নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় যুবকেরা। উদ্দেশ্য, কম্পিটিশনে অবিবাহিতা তরুণী বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এ প্রতিযোগিতায় যুবকের সৌন্দর্যের মাপকাঠি তার উজ্জল দুটি চোখ এবং ঝকঝকে দাঁতের পাটি। যুবকরা তাদের চেহারায় যৌন আবেদন ফুটিয়ে তুলতে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ও দাঁত বিকশিত করে বিচারক মহোদয়ার মন জয় করতে চেষ্টা করে। 
অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

২. ঠোঁটে প্লেট লাগানো 

অদ্ভুত কাণ্ডটি করে ইথিওপিয়ার মুরসি উপজাতির লোকেরা। যন্ত্রণা টা মেয়েদের উপর দিয়ে যায়।  মুরসী উপজাতির বালিকাদের পনের ষোল বছর বয়সে নিচের পাটির দাঁত ফেলে দিয়ে মাংস কেটে কাঠের প্লেট লাগিয়ে দেয়। অবাক ব্যাপার, মাস তিনেকের মধ্যে মুখের সাথে প্লেট সেট হয়ে যায়। তিন মাস যাবত একটি কাঠের টুকরা দিয়ে প্লেটটি ঠেকিয়ে রাখা হয়। তারা কিভাবে খাবার মুখে চালান দেয় আল্লাহই ভালো জানেন।

৩. ষাঁড়ের পিঠের উপর লাফালাফি খেলা 

এই ইথিওপিয়ারই আরেক নৃ গোষ্ঠী হামার। এই গোষ্ঠীর যুবকেরা ষাঁড়ের উপর লাফালাফির প্রদর্শনী আয়োজন করে। ষাড়গুলো লাইন করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। প্রত্যেক যুবককে অন্তত ১৫ টি ষাড়ের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। সফল হলে বুঝতে হবে তার পিতা-মাতা কর্তৃক নির্বাচিত কোন মেয়েকে বিবাহ করতে প্রস্তুত হয়েছে। বড্ড কঠিন পরীক্ষা বটে ! সফল না হলে বিয়ে করতে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হয় যুবককে। বার বার ফেল করলে কি হয় সে বিষয়ে তথ্য নেই।

কেন স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে দিলেন স্ত্রী। 

অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

৪. থু থুতে ঘৃণা নেই বরং দোয়া 

যদি আমরা কারও গায়ে থু থু নিক্ষেপ করি তাহলে পরিবেশ অগ্নিগর্ভ হবে। পৃথিবীর অন্য দেশ গুলোতে একই অবস্থা। ব্যাতিক্রম কেনিয়ার মাসাই উপজাতি। তারা থুতু দিয়ে অতিথি বরণ ও বিদায় করে, শুভ কামনা করে, বিয়ের দিন পিতা তার মেয়ের কপালে থুতু ছিটিয়ে দেয়। দুই বন্ধু দেখা হলে হ্যান্ডশেক করার আগে হাতে থুতু লাগিয়ে নেয়। বাচ্চা জন্ম হলে তার গায়ে থুতু ছিটিয়ে সৌভাগ্য এবং দীর্ঘ জীবন কামনা করে। ভাবতেই গা ঘিনঘিন করে। তবে আমরাও কেটে ছিঁড়ে গেলে থুতু লাগিয়ে দেই। আরও একটা গোপনীয় কাজে প্রয়োজনে আমরা থু থু ব্যবহার করি !! 

৫. নাচের তালে তালে সম্মোহন 

এই প্রথা প্রচলিত আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া এবং বতসোয়ানার সান উপজাতির মধ্যে। সবাই মিলে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড ঘিরে মন্ত্র পড়তে পড়তে কয়েক ঘন্টা এমন কি সারা রাত নৃত্য করতে থাকে। সম্মোহিত না হওয়া পর্যন্ত নৃত্য ও মন্ত্র পাঠ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে সম্মোহনী অবস্থায় তারা আগুনের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারে। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা মন থেকে হিংসা দ্বেষ ক্রোধ দূর ও রোগ বালাই প্রতিরোধ করে বলে বিশ্বাস করে।
অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

৬. বিয়ের পোশাক 

সাউথ আফ্রিকার নেবেলে উপজাতি তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে পোশাকের একটা প্রথা চালু আছে। বরের হবু শাশুড়ি তার জন্য চামড়ার উপর পুথি লাগিয়ে কারুকার্য করে সুন্দর একটা পোশাক উপহার দেয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বিবাহিত মহিলারা একই ধরনের পোশাক পড়ে অনুষ্ঠানে সৌন্দর্য ছড়ায়। অনুষ্ঠানে বর নৃত্য করে তাকে সুন্দর সময় উপহার দেওয়ার জন্য কনের প্রতি ধন্যবাদ প্রদান করে।

৭. বিয়ের পাত্রীকে কিডন্যাপ 

বিয়ের পাত্রীকে কিডন্যাপ করে পাত্র। এমন প্রথা প্রচলিত সুদানের এক উপজাতির মাঝে। কেউ কোন মেয়েকে বিবাহ করতে চাইলে তাকে সরাসরি কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়। তখন পাত্রের মুরুব্বীরা ছোটে মেয়ের বাড়িতে। পাত্রের পক্ষে মেয়ের বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মেয়ের বাবা রাজি হলে কন্যাকে ভালো করে পিটাতে থাকেন। রাজি না হলে আর কি করা যায়, বিয়ে পাগল যুবক জোর করেই বিয়ে করে ফেলে। বিয়েকে কেন্দ্র করে দুনিয়াভর কত যে আজব আচার অনুষ্ঠান রয়েছে তার লেখাজোখা  নেই। 
তবে আরও চমকপ্রদ ঘটনা নামিবিয়ার হিম্বা উপজাতিদের মাঝে।
অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

অতিথি অভ্যর্থনা হিম্বাদের মাঝে

আফ্রিকার নামিবিয়ার একটি উপজাতি ‘ হিম্বা’। আধা-যাযাবর উপজাতি বলে বিশ্বের কাছে পরিচিত এরা। এই উপজাতির মানুষেরা মূলত নামিব মরুভূমিতেই বসবাস করেন। এদের জীবনযাত্রা যেমন বৈচিত্র্যে ভরা, তেমনই যৌনতা নিয়েও তাদের রয়েছে অদ্ভুত রীতিনীতি।

যা আধুনিক সমাজের মানুষ স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবেন না। সেখানে অতিথি অভ্যর্থনায় নিজের স্ত্রীদের অতিথির সঙ্গে রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। আর এই কাজে উৎসাহ দেন স্বামী নিজেই।

এমনকি কোনও নারী যদি অতিথির সঙ্গে মিলনে না-ও রাজি হন তবুও তাকে শারীরিক ভাবে স্পর্শ না করেই অতিথির ঘরে রাত কাটাতে হবে। এই রীতিকে তারা বলেন ‘ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু’, যার সহজ অর্থ অতিথির কাছে নিজের স্ত্রীকে অর্পণ করে দেওয়া। এই প্রথা চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। স্বামীদের সম্মতিতেই এই উপজাতির বিবাহিত নারীরা পর্যটক বা ঘুরতে আসা অতিথিদের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হন।

ইঁদুর বিড়ালের অবাক করা ঘটনা, ইউনেস্কোর প্রথম হেড অফিসে। 

অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

বহুবিবাহ হিম্বাদের একটি প্রচলিত বিষয়। প্রায় প্রত্যেক মহিলাই সতীনের সঙ্গে সংসার করেন। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন বৌ ঘরে আনলে তাকে সাদরে বরণ করে নেন প্রথম স্ত্রী। তেমনি মহিলাদেরও  অন্য পুরুষদের সঙ্গে রাত্রী যাপনে বাঁধা দেওয়া হয়না। বরং তাদের সমাজে এটা দোষের কিছু নয়।

অতিথি অভ্যর্থনা এবং পিতা কে 

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, হিম্বা পুরুষদের ৭০ শতাংশেরও বেশি এমন এক সন্তানকে লালন-পালন করেন, যার জন্মদাতা পিতা অন্য পুরুষ। হিম্বারা বিয়ের বাইরে সন্তান জন্ম বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখে। স্ত্রীর সঙ্গে কোনও অপরিচিত ব্যক্তি বা অতিথি ঘরে রাত কাটালে ঘরের বাইরে স্বামীর রাত কাটানোও সেখানকার সুপ্রাচীন রীতি।

হু হু করে বাড়ছে কিডনি রোগী। আজীবন কিডনি সুস্থ রাখার উপায় জেনে নিন। 

অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

হিম্বা উপজাতির বিয়ের রীতিও অত্যন্ত প্রথাগত এবং ঐতিহ্যবাহী। যা তাদের সমাজের সংস্কৃতি ও জীবনের অঙ্গ। হিম্বা সমাজে বিয়ের আগে বর ও কনের পরিবারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সাধারণত, পুরুষকে তার বাগ্‌দত্তার পরিবারকে কিছু গবাদি পশু (গরু বা ছাগল) প্রদান করতে হয়। যা পুরুষের সামাজিক অবস্থান এবং পরিবারের ক্ষমতা চিহ্নিত করে।

কুনেনে হিম্বা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস করেন। মূলত পশুপালনই তাদের পেশা। জীবনযাপনের জন্য কৃষিনির্ভর হলেও গবাদি পশু পালন তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। পশুপালন, রান্না করা, ঘর গোছানো এবং শিশুদের যত্ন নেওয়ার মতো গৃহস্থালির কাজ করে থাকেন পরিবারের মহিলারাই।

আফ্রিকায় বিপজ্জনক সময়, ডকুমেন্টারিতে দেখুন। 

অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

নামিবিয়ার বাকি সমাজ থেকে তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন হিম্বারা। তবে পশ্চিমি সভ্যতার আলোয় ধীরে ধীরে শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হচ্ছেন হিম্বাদের নতুন প্রজন্ম। প্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং বিশ্বায়নের প্রভাব পড়ছে হিম্বাদের উপরেও। বিদেশি পর্যটকদের আগমন, যাঁরা হিম্বাদের সংস্কৃতি দেখতে আসেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে হিম্বাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও। হয়তোবা এখন তারা বউ দিয়ে অতিথি অভ্যর্থনার এই প্রথা থেকে খুব দ্রুতই বের হয়ে আসবেন।

সেলিম হোসেন – তাং – ০২/০২/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *