অতিথি অভ্যর্থনা আফ্রিকায়, অতিথির সাথে রাত্রিজাপন করতে দেয়া হয় বাড়ির যুবতী মেয়েকে এবং আরও ৭ টি বিচিত্র প্রথা। And 7 other strange customs.

অতিথি অভ্যর্থনা

অতিথি অভ্যর্থনা: আপ্যায়নে নিজের স্ত্রীকে অর্পণ – হিম্বা উপজাতির অজানা কথা

অতিথিকে আন্তরিকভাবে আপ্যায়ন করা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের সামাজিক রীতির একটি অংশ। এতে আত্মীয়তার বন্ধন মজবুত হয় এবং সম্প্রীতি বাড়ে। কিন্তু আফ্রিকার কয়েকটি জনগোষ্ঠীর অতিথি অভ্যর্থনা ও জীবনযাত্রার প্রথা দেখলে সত্যিই অবাক হতে হয়—যার কিছু রীতি আবার অনেকের কাছে অস্বস্তিকরও ঠেকতে পারে।

চলুন, নামিবিয়ার ‘হিম্বা’ উপজাতির সেই চমকপ্রদ অতিথি আপ্যায়ন প্রথা এবং আফ্রিকার আরও কিছু অদ্ভুত সামাজিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

জীবনে সফলতা পেতে পিছনে তাকাবেন না। তাকালে কি হয় জানেন ? 

অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

হিম্বা উপজাতির বিস্ময়কর অতিথি অভ্যর্থনা

নামিবিয়ার আধা-যাযাবর উপজাতি হিসেবে পরিচিত ‘হিম্বা’ জনগোষ্ঠী মূলত নামিব মরুভূমিতে বসবাস করে। এদের জীবনযাত্রা যেমন বৈচিত্র্যে ভরা, তেমনই যৌনতা নিয়েও তাদের রয়েছে অদ্ভুত রীতিনীতি।

ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু প্রথা

হিম্বা সমাজে অতিথি অভ্যর্থনায় নিজের স্ত্রীদের অতিথির সঙ্গে রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। এই কাজে স্বামী নিজেই উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এই রীতিকে তারা বলেন ‘ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু’, যার সহজ অর্থ—অতিথির কাছে নিজের স্ত্রীকে অর্পণ করে দেওয়া।

  • রাত্রিযাপন: এই প্রথা চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। স্বামীদের সম্মতিতে এই উপজাতির বিবাহিত নারীরা পর্যটক বা ঘুরতে আসা অতিথিদের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হন।
  • স্বামীর ভূমিকা: এমনকি স্ত্রীর সঙ্গে কোনও অপরিচিত ব্যক্তি বা অতিথি ঘরে রাত কাটালে ঘরের বাইরে স্বামীর রাত কাটানোও সেখানকার সুপ্রাচীন রীতি।

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক: ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়

হিম্বাদের সমাজে বহুবিবাহ একটি প্রচলিত বিষয়। প্রায় প্রত্যেক মহিলাই সতীনের সঙ্গে সংসার করেন। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন বউ ঘরে আনলে প্রথম স্ত্রী তাকে সাদরে বরণ করে নেন। তেমনি মহিলাদেরও অন্য পুরুষদের সঙ্গে রাত্রী যাপনে বাধা দেওয়া হয় না।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, হিম্বা পুরুষদের ৭০ শতাংশেরও বেশি এমন এক সন্তানকে লালন-পালন করেন, যার জন্মদাতা পিতা অন্য পুরুষ। অর্থাৎ, হিম্বারা বিয়ের বাইরে সন্তান জন্ম বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখে।

হিম্বা জীবনধারা ও ঐতিহ্য

কুনেনে অঞ্চলে এই জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস করেন। মূলত পশুপালনই তাদের প্রধান পেশা। পশুপালন, রান্না করা, ঘর গোছানো এবং শিশুদের যত্ন নেওয়ার মতো গৃহস্থালির কাজগুলো পরিবারের মহিলারাই করে থাকেন।

কেন স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে দিলেন স্ত্রী। 

অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

আফ্রিকার আরও কিছু চমকপ্রদ সামাজিক প্রথা

আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলেও এমন কিছু প্রথা প্রচলিত আছে, যা বাইরের সমাজের মানুষের কাছে খুবই বিচিত্র ঠেকতে পারে:

১. যুবকদের নৃত্য প্রতিযোগিতা (নাইজার)

নাইজারের এক উপজাতির যুবকেরা প্রতি বছর ঐতিহ্যবাহী রং মেখে, বিচিত্র পোশাক পরে সংগীতের তালে তালে নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এর উদ্দেশ্য হলো— অবিবাহিতা তরুণী বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

  • সৌন্দর্যের মাপকাঠি: এই প্রতিযোগিতায় যুবকের সৌন্দর্যের মাপকাঠি তার উজ্জ্বল দুটি চোখ এবং ঝকঝকে দাঁতের পাটি।
  • আকর্ষণের কৌশল: যুবকরা তাদের চেহারায় যৌন আবেদন ফুটিয়ে তুলতে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ও দাঁত বিকশিত করে বিচারকের মন জয় করার চেষ্টা করে।

২. ঠোঁটে প্লেট লাগানোর প্রথা (মুরসি উপজাতি, ইথিওপিয়া)

ইথিওপিয়ার মুরসি উপজাতির মেয়েদের ওপর এই অদ্ভুত প্রথাটি চাপানো হয়।

  • প্রক্রিয়া: মুরসী উপজাতির বালিকাদের পনেরো-ষোল বছর বয়সে নিচের পাটির দাঁত ফেলে দেওয়া হয় এবং ঠোঁটের মাংস কেটে কাঠের প্লেট লাগিয়ে দেওয়া হয়।
  • পরিণতি: মাস তিনেকের মধ্যে মুখের সঙ্গে প্লেটটি সেট হয়ে যায়। এই প্লেট নারীর সামাজিক মর্যাদা ও মূল্য নির্ধারণ করে।
অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

৩. ষাঁড়ের পিঠের উপর লাফালাফি খেলা (হামার নৃগোষ্ঠী, ইথিওপিয়া)

ইথিওপিয়ার হামার নৃগোষ্ঠীর যুবকেরা এই কঠিন প্রদর্শনী আয়োজন করে।

  • পরীক্ষা: সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো অন্তত ১৫টি ষাঁড়ের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হয় যুবককে।
  • ফলাফল: সফল হলে বুঝতে হবে তার পিতা-মাতা কর্তৃক নির্বাচিত মেয়েকে বিবাহ করার জন্য যুবক প্রস্তুত। সফল না হলে বিয়ে করতে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হয়।

৪. থুথু দিয়ে অভ্যর্থনা ও শুভ কামনা (মাসাই উপজাতি, কেনিয়া)

পৃথিবীর অন্যান্য দেশে থুথু বা থুতু নিক্ষেপ ঘৃণা বা অপমান প্রকাশ করলেও কেনিয়ার মাসাই উপজাতিদের কাছে এটি আশীর্বাদ ও শুভ কামনার প্রতীক।

  • ব্যবহার: তারা থুতু দিয়ে অতিথি বরণ ও বিদায় করে। বিয়ের দিন পিতা তার মেয়ের কপালে থুতু ছিটিয়ে দেয়। দুই বন্ধু দেখা হলে হ্যান্ডশেক করার আগে হাতে থুতু লাগিয়ে নেয়। বাচ্চা জন্ম হলে তার গায়ে থুতু ছিটিয়ে সৌভাগ্য এবং দীর্ঘ জীবন কামনা করে।
অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

৫. পাত্রীকে অপহরণের মাধ্যমে বিয়ে (সুদান)

সুদানের এক উপজাতির মধ্যে এই প্রথা প্রচলিত। কেউ কোনো মেয়েকে বিবাহ করতে চাইলে প্রথমে তাকে সরাসরি অপহরণ করে নিয়ে যায়।

  • আলোচনা: এরপর পাত্রের মুরুব্বীরা মেয়ের বাড়িতে গিয়ে মেয়ের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
  • সম্মতি/অসম্মতি: মেয়ের বাবা রাজি হলে কন্যাকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। রাজি না হলে যুবক জোর করেই বিয়ে করে ফেলে।

উপসংহার

নামিবিয়ার বাকি সমাজ থেকে তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন হিম্বা জনগোষ্ঠীর এই প্রথাগুলো তাদের সমাজের সংস্কৃতি ও জীবনের অঙ্গ। তবে পশ্চিমা সভ্যতা, প্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষা এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে ধীরে ধীরে এই প্রথাগুলোতে পরিবর্তন আসছে। বিদেশি পর্যটকদের আগমনের ফলে হিম্বাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। হয়তোবা অদূর ভবিষ্যতে এই ধরনের বিচিত্র প্রথা থেকে তারা সরে আসতে পারে।

আফ্রিকায় বিপজ্জনক সময়, ডকুমেন্টারিতে দেখুন। 

অতিথি অভ্যর্থনা
অতিথি অভ্যর্থনা

ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন।

সেলিম হোসেন – তাং – ০২/০২/২০২৫ ইং Reference : প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *