মাত্র ১৫ দিনে ফর্সা ত্বক? ক্রিম থেকে সাবধান!
১. ‘১৫ দিনে ফর্সা ত্বক’—বিভ্রান্তিকর লাইভের আড়ালে
ফেসবুক, ইউটিউবে বিভিন্ন আপু লাইভে এসে দাবি করেন, তাদের প্রোডাক্ট ব্যবহারে মাত্র ১৫ দিনে ধবধবে ফর্সা ত্বক পাওয়া সম্ভব। লাইভে আসা এই আপুদের ত্বকে সাধারণত কোনো দাগ থাকে না, যা দেখে অনেকেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। আসল সত্য হলো, এই সবটাই জাদুকরি মেকআপের কারসাজি। বর্তমানের উন্নত মেকআপ একজন শ্যামলা বা কালো রঙের মানুষকেও অনাবৃত অংশে সম্পূর্ণ ফর্সা দেখাতে পারে।
লাইভকারীরা তাদের দেহের যে অংশটুকু দেখান, তা নিখুঁত মেকআপের আবরণে ঢাকা থাকে। এতে বিভ্রান্ত হন আমাদের বোনেরা। বিভ্রান্তি বাড়াতে তারা পেইড লোকজন দিয়ে প্রচুর লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট করান।
যেমন, একটি লাইভে একজন কমেন্ট করেছেন, “আপু, ২ দিন হলো আমি ১৪,৫০০ টাকার প্রোডাক্ট হাতে পেয়েছি। সবগুলো খুব ভালো। তবে রানি ক্যাপসুল ও 50x কোনটা কখন খাব প্লিজ জানাবেন।”
বিষয়টি খেয়াল করুন: মাত্র দুই দিনেই তিনি বুঝে ফেললেন প্রোডাক্টটি খুব ভালো! আর ১৪,৫০০ টাকার প্রোডাক্ট কেনার কথা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য একটাই—অন্যদেরকে উৎসাহিত করা।
এরা সাত দিনে দুধের মতো ফর্সা, ইরানিদের মতো ফর্সা বা কাশ্মীরিদের মতো সুন্দর হওয়ার মতো চটকদার অফার দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন। প্রশ্ন হলো, যদি ক্রিমগুলো এতই ভালো হয়, তবে কেন এই আপুরা এক বা দুই মাস পরপরই নতুন ব্র্যান্ড আমদানি করেন?
মাত্র এক মাসে চর্বি ঝরিয়ে ন্যাচারাল উপায়ে ওজন কমিয়ে ফেলুন।

২. মাত্র ১৫ দিনে ফর্সা ত্বক : ক্রিমে কী থাকে?
আসলে, কালো রঙের মানুষ ফর্সা হয় না। যদি হতো, তবে পৃথিবীতে কালো রঙের মেয়ে খুঁজে পাওয়া যেত না। তাহলে ঘটনাটা কী?
এইসব ‘ফর্সা ত্বক’ ক্রিমে থাকে মার্কারি (Mercury), লেড (Lead), স্টেরয়েড, এবং অজস্র ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ।
এই রাসায়নিকগুলো ত্বকের উপরিভাগের পাতলা স্তরটিকে (Epidermis) তুলে ফেলে। একারণে ত্বক কিছুদিন ফর্সা দেখায়। কিছুদিন পর, ত্বক আগের চেয়েও বেশি কালো হয়ে যায় এবং ত্বকের সর্বনাশ ঘটে।
ঘরে ঘরে থাইরয়েড, প্রতিদিন ঔষধ, মুক্তি পাওয়ার উপায় জেনে নিন।

মাত্র ১৫ দিনে ফর্সা ত্বক ক্রিমের স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
- ত্বকের ক্ষতি: ত্বকে ফুসকুড়ি, স্থানে স্থানে রং বদলে যাওয়া, কালশিটে পড়া দেখা যায়। ত্বক অতিরিক্ত সূর্য-সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণে মেছতা (Melasma) পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- সংক্রমণের ঝুঁকি: ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায়।
- স্নায়ু ও মানসিক সমস্যা: ক্রিম ব্যবহারে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, বিষণ্ণতা ও মানসিক অস্থিরতা থেকে স্নায়ু বৈকল্যজনিত সমস্যা হতে পারে।
- অর্গানিক ক্ষতি: মার্কারি থেকে ত্বকের ক্ষতির পাশাপাশি সফট টিস্যুরও সমস্যা হয়। এটি কিডনি এবং থাইরয়েডের সমস্যার প্রধান কারণ হতে পারে। বর্তমানে ঘরে ঘরে থাইরয়েড সমস্যা দেখা যাওয়ার পেছনে এই ধরনের রাসায়নিক ক্রিমের ব্যবহার অন্যতম দায়ী।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি: দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ত্বকের ক্যানসারের শঙ্কাও থাকে।
হু হু করে বাড়ছে কিডনি রোগী। আজীবন কিডনি সুস্থ রাখার উপায় জেনে নিন।

৩. প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা ত্বক পাওয়ার উপায়
ত্বকের যত্ন নেওয়া কখনোই অসম্ভব নয়, এমনকি ব্যস্ত সময়েও। ত্বক ফর্সা করতে নয়, বরং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে নিয়মিত যত্ন নিলে যে ফল পাবেন, তা কোনো রাসায়নিক ক্রিমে আসবে না। যেহেতু আমাদের হাতে সময় কম, তাই চটজলদি ফল পেতে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে জানব, যা ত্বক ভালো রাখতে কাজ করে।
ক. ৫টি খাবার যা ত্বককে রাখে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর:
| খাবার | প্রধান উপাদান | ত্বকের উপকারিতা |
|---|---|---|
| ১. সাইট্রাস ফল | ভিটামিন সি | কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বাড়ায়। (যেমন: লেবু, কমলা, জাম্বুরা)। |
| ২. আখরোট | ভিটামিন ই ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট | ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একমুঠো যথেষ্ট। |
| ৩. সবুজ শাক | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট | ত্বক থেকে ফ্রি র্যাডিকেল অপসারণ করে এবং ত্বককে অল্প সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্যকর করতে সহায়তা করে। |
| ৪. গ্রিন টি | ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট | ত্বককে ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করে এবং পানীয় হিসেবে খুবই স্বাস্থ্যকর। |
| ৫. পর্যাপ্ত পানি | জলীয় উপাদান | শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শরীরের দূষিত পদার্থ দূর করে ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখে। (ডাব, রসালো ফল, স্যুপও উপকারী)। |
ঔষধ ছাড়াই ফ্যাটি লিভার দূর করা যায় মাত্র একমাসে।

খ. ৪টি লাইফস্টাইল টিপস:
১. পর্যাপ্ত ঘুম: রাত জেগে থাকলে মুখ তার উজ্জ্বলতা হারিয়ে কালো হয়ে যায়। পর্যাপ্ত ঘুম ত্বককে সুস্থ রাখে।
২. চিনি পরিহার: অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত চিনি মুখের চামড়া টানটান করে ভাঁজ ফেলে দেয়।
৩. নিয়মিত যত্ন: সপ্তাহে অন্তত একটা দিন ভালো করে স্ক্রাব, ফেসওয়াশ ও ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন।
৪. রাতে পরিষ্কারকরণ: বাইরে থেকে এসে কোনোভাবেই মুখ অপরিষ্কার অবস্থায় শুয়ে পরা যাবে না। স্কিনের ধরন অনুযায়ী ফেস পরিষ্কার করে তবেই ঘুমাতে হবে এবং ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিধাতা আপনাকে যে ত্বকের রং দিয়েছেন, তার যত্ন নিলে সেই রঙের মধ্যেই আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা কয়েক গুণ বাড়তে পারে এবং গ্ল্যামারও বাড়বে। একবার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো বেদে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখুন, প্রাকৃতিকভাবেই তাদের ত্বকের সৌন্দর্য অন্যরকম।
মনে রাখবেন: ত্বক ফর্সা করার চেয়ে ত্বক সুস্থ রাখা বেশি জরুরি।
ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম নিয়ে ভয়াবহ রিপোর্ট

সেলিম হোসেন – ২২/০২/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া
- Reference: Dr Eric Berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.









