ময়ূর পাখির মিলন ৫ টি মজার তথ্য, ইউটিউবার কেন গ্রেফতার YouTuber arrested in India. 5 fun facts

ময়ূর পাখির মিলন

ময়ূর পাখির মিলন ও মুঘল সিংহাসন – ৫টি চমকপ্রদ তথ্য 

ময়ূর (Peacock), ভারতের জাতীয় পাখি, সৌন্দর্য, আভিজাত্য এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। তবে এই পাখিটিকে ঘিরে যেমন রয়েছে গভীর ভক্তি ও লোকবিশ্বাস। তেমনি রয়েছে কিছু চমকপ্রদ তথ্য এবং সাম্প্রতিক বিতর্ক। এই লেখায় আমরা ময়ূর সম্পর্কিত পাঁচটি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

১. বিতর্কের কেন্দ্রে জাতীয় পাখি: তেলেঙ্গানার ঘটনা 

২০২৪ সালের জুনে (১১ তারিখের কাছাকাছি) ভারতীয় মিডিয়া এনডিটিভি একটি চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশ করে। তেলেঙ্গানা রাজ্যের সিরসিল্লার বাসিন্দা এক ইউটিউবার। প্রণয় কুমার। ময়ূর জবাই করে রান্নার ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে ছড়িয়ে দেন।

ভারতের জাতীয় পাখি রান্না করে খাওয়ার এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত বিতর্কের জন্ম দেয়। রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হলে প্রণয় কুমার ভিডিওটি সরিয়ে নেন। পরবর্তীতে বনবিভাগের নজরে আসে এবং প্রণয় কুমারের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ময়ূর পালক দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিও যাচাই-বাছাই শেষে ময়ূর হত্যার অভিযোগে কুমারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সুপার অখিল মহাজন নিশ্চিত করেন, প্রচলিত ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পড়ুন – মদের ব্রান্ড কিভাবে এত জনপ্রিয় হল।  

ময়ূর পাখির মিলন
ময়ূর পাখির মিলন

২. ময়ূর পালক নিয়ে লোকবিশ্বাস (৩টি জনপ্রিয় ধারণা)

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ময়ূরের পালককে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয় এবং বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে এর ব্যবহার প্রচলিত আছে।

ক. নেতিবাচকতা দূর করতে

অনেকের ধারণা, ঘরে ময়ূর পালক রাখলে তা নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং পজিটিভ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। যদি পরিবারে রোজকার ঘরোয়া অশান্তি বা সমস্যা থাকে, তবে ময়ূর পালক এর প্রতিকার করতে পারে।

খ. আর্থিক সমস্যা দূরীকরণে

যারা টাকার অভাব বা দায়-দেনায় ভুগছেন, তারা যে বালিশে মাথা রেখে ঘুমান তার নিচে ময়ূর পালক রাখতে পারেন। এই বিশ্বাস অনুসারে, বালিশের নিচে পালকের সাথে এক টাকার কয়েন রাখলে রোগব্যাধি থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় এবং আর্থিক সমস্যা দূর হতে সময় লাগে না।

গ. মনোযোগ ও সাফল্য লাভে

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ময়ূর পালক পছন্দ করতেন। তাই অনেক মা-বাবা পড়াশোনায় অমনোযোগী ছেলে-মেয়েদের বইয়ের ভিতরে ময়ূর পালক রেখে দেন। বিশ্বাস করা হয়। এটি পড়াশোনায় বাধা সৃষ্টিকারী নেতিবাচক শক্তিকে ধ্বংস করে এবং জীবনে সাফল্য নিয়ে আসে।

পড়ুন – মন্দিরে চুরি নিয়ে মজার কাহিনি। 

ময়ূর পাখির মিলন
ময়ূর পাখির মিলন

৩. ময়ূর পাখির মিলন: অশ্রুজলের মিথ বনাম বাস্তবতা 

ময়ূর পাখির মিলন (Mating) নিয়ে একটি বহুল প্রচলিত ও ভুল ধারণা রয়েছে। তা হলো, অন্যান্য পাখি বা প্রাণীর মতো ময়ূর যৌন সঙ্গম করে না। বরং ময়ূরের অশ্রুজল পান করে ময়ূরী গর্ভবতী হয়!

২০১৭ সালে ভারতের রাজস্থান হাইকোর্টের একজন বিচারপতি মহেশচন্দ্র শর্মা গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণার দাবি জানাতে গিয়ে ময়ূরের পবিত্রতার প্রসঙ্গে এই দাবি করেন।

স্বাভাবিকভাবেই, বিচারপতির এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির খোরাক হয়। জীববিজ্ঞানীরা এবং ভিডিও প্রমাণ দিয়ে অনেকেই দেখান যে, ময়ূর ও ময়ূরী স্বাভাবিকভাবেই যৌন সঙ্গম করে বংশবৃদ্ধি করে। এটি কেবল একটি ভুল লোকবিশ্বাস বা পুরাণকথা।

ভিডিও দেখুন – ময়ুর এর দাম এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে। 

ময়ূর পাখির মিলন
ময়ূর পাখির মিলন

৪. মোঘলদের ময়ূর সিংহাসন: শিল্পের জাঁকজমক

ময়ূর পাখির মিলন নয়, বরং ময়ূরের নকশাই মোঘল সাম্রাজ্যের আভিজাত্যকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছিল। যা হলো ময়ূর সিংহাসন (The Peacock Throne)।

  • নির্মাণ: মোঘলদের ৫ম সম্রাট শাহজাহানের নির্দেশে শিল্পের সমঝদার বেবাদল খাঁ’র তত্ত্বাবধানে এটি ১৬২৮ থেকে ১৬৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর সময় ধরে তৈরি হয়।
  • খরচ: এর নির্মাণে তৎকালীন সময়ে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৮ কোটি রুপি, যা তাজমহল নির্মাণের (৪ কোটি রুপি) খরচের প্রায় দ্বিগুণ!
  • রূপ: অপূর্ব এই সিংহাসনটি ছিল স্বর্ণ, হীরা ও দুর্লভ মরকত মণি (পান্না) খচিত। এর চারটি পায়া ছিল খাঁটি স্বর্ণের এবং ১২টি মরকত মণির স্তম্ভের উপর চাঁদোয়া ছাদ আচ্ছাদিত ছিল।
  • ময়ূর: স্তম্ভের মাথায় মণি-মাণিক্য খচিত একজোড়া ময়ূর মুখোমুখি বসানো ছিল। মনে হতো ময়ূর দুটি যেন গাছের ফল খাচ্ছে। রকমারি জহরত দিয়ে সাজানো ময়ূরগুলোর লেজ ছিল নীল রঙের মণি দিয়ে তৈরি।
  • কোহিনূর: বিশ্বখ্যাত কোহিনূর হীরকখণ্ডটি এই সিংহাসনেই অপূর্ব দ্যুতিময় হয়ে শোভা পেত।

১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ দিল্লী আক্রমণ করেন এবং নগরী লুণ্ঠন করে এই মহামূল্যবান ময়ূর সিংহাসনটি নিয়ে যান।

অবাক করা অপহরনের কাহিনী যা আগে কখনো শুনেন নাই। 

ময়ূর পাখির মিলন
ময়ূর পাখির মিলন

৫. ময়ূর হত্যায় শাস্তি 

ভারতের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন, ১৯৭২ (Wildlife Protection Act, 1972) অনুযায়ী, জাতীয় পাখি ময়ূর হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা গুরুতর অপরাধ। আইন অনুযায়ী, জাতীয় পাখি হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি এবং জরিমানা হতে পারে। ইউটিউবার প্রণয় কুমারের বিরুদ্ধেও সেই প্রচলিত ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

পরিশেষ:

ময়ূর কেবল একটি সুন্দর পাখি নয়। এটি ভারতীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং সামাজিক চেতনার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর পবিত্রতা বজায় রাখা এবং এটি সম্পর্কিত সঠিক তথ্য প্রচার করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

ময়ূর পাখির মিলন নিয়ে কৌতূহলী পরিচিত জন এবং অন্যান্য তথ্য জানতে আগ্রহী সবার কাছে পোস্টটি শেয়ার করে দিন।

সেলিম হোসেন – ২০/০৯/২০২৪ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *