আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক মাহাথির মোহাম্মদ: জীবন, রাজনীতি ও দীর্ঘজীবনের রহস্য
সম্প্রতি ৯৯তম জন্মদিন উদযাপন করলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ডা. মাহাথির মোহাম্মদ (Mahathir Mohamad)। বিস্ময়করভাবে এখনো তিনি সুস্থ ও সক্রিয়। দীর্ঘ এই জীবন এবং রাজনৈতিক সাফল্যের রহস্য কী? সাংবাদিকরা তাঁকে এই প্রশ্ন করেছেন, এবং তিনি উত্তরও দিয়েছেন।
১. সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও রাজনৈতিক উত্থান
মাহাথির মোহাম্মদ ১৯২৫ সালের ১০ জুলাই কেদাহ রাজ্যের আলোর সেতার নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।
দীর্ঘতম শাসনকাল
- প্রথম মেয়াদ (১৯৮১–২০০৩): তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং একটানা ২২ বছর ২০০৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড গড়েন।
- দ্বিতীয় মেয়াদ (২০১৮–২০২০): স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের দীর্ঘ পনেরো বছর পর, যখন তাঁর বয়স ৯২ বছর, তখন তিনি দেশের দুর্নীতিতে ব্যথিত হয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ২০১৮ সালের ৯ মে তিনি সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
মাহাথিরের নেতৃত্বেই একটি অনুন্নত দেশ দ্রুত এশিয়ার ইউরোপ হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। টেংকু আবদুল্লাহকে জাতির জনক বলা হলেও, মাহাথিরকে বলা হয় আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক।
জীবনে সফল হতে আব্রাহাম লিঙ্কনের জীবনের কিছু ঘটনা আপানাকে অনুপ্রেরনা যোগাবে।

২. বিতর্ক সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ মালয়েশিয়া
মাহাথির মুহাম্মদের ২২ বছরের শাসনামল ছিল পরিবর্তনের, তবে বিতর্কও ছিল। বিশেষত ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অভিযোগ ওঠে এবং সরকার সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জাতিগত অসন্তোষ এবং শরীক দলগুলোর জোট ত্যাগের হুমকির মতো বড় সমস্যায় পড়লেও, তিনি মালয়েশিয়াকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হন।
সব সমালোচনা শেষে একটি বিষয় মেনে নেওয়া হয়—পুরো মালয়েশিয়াকে বদলে দেওয়ার কৃতিত্ব তাঁরই। তিনি মালয়েশিয়ার আধুনিকতার জনক।
জেনে নিন – আজীবন সুস্থ থাকতে কিভাবে ভালো অভ্যাস গড়তে হয়।

৩. দীর্ঘ জীবন ও সাফল্যের মন্ত্র: ৫টি উক্তি
তাঁর দীর্ঘ জীবন ও কর্মময় থাকার রহস্য কী? সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মাহাথির মোহাম্মদ তাঁর জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দর্শন তুলে ধরেছেন:
১.সাফল্যের চাবিকাঠি: “কোন কাজে সফল হতে দরকার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আর কঠোর পরিশ্রম।”
২. কঠোর পরিশ্রমের অভ্যাস: “একজন চিকিৎসক হিসাবে আপনি বেশির ভাগ রাতেই ডিউটিতে থাকেন, তাই আপনার অবিরাম ঘুম হয় না, এবং এটা আপনার জন্য পরিচিত একটি বিষয় হয়ে যায়। তাই, কঠোর পরিশ্রম আমাকে বিরক্ত করে না।”
৩. আইনের শাসন: “আইনের শাসন সবসময় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে না।”
৪. অর্থনৈতিক দর্শন: “আমি বিশ্বাস করি, মুদ্রা ব্যবসার বিষয় হওয়া উচিত নয়।”
৫. পরিকল্পনার গুরুত্ব: “পরিকল্পনা মানে ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি দেওয়া।”
সফল হতে নাদির শাহ্ কিভাবে বাধা পেরোলেন।

৪. মাহাথির মোহাম্মদের সাথে বাংলাদেশের যোগসূত্র
২০১৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে মাহাথির তাঁর পূর্বপুরুষের উৎস সম্পর্কে একটি তথ্য প্রকাশ করেন:
তিনি বলেছিলেন, “চট্টগ্রামের কাপ্তাই রাঙ্গুনিয়ার কোনো একটি গ্রামে আমার দাদার বাড়ি ছিলো।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে চট্টগ্রাম জেলার উত্তরাংশে রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন মরিয়মনগর গ্রামের এক যুবক ব্রিটিশ শাসিত মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। তিনি ছিলেন জাহাজের নাবিক। মালয়েশিয়ার এ্যালোর সেটর-এ গিয়ে তিনি এক মালয় রমণীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
- সেই দম্পতির ঘরে জন্ম নেন মুহম্মদ ইস্কান্দার।
- আর এই মুহম্মদ ইস্কান্দারের ছেলে সন্তান হিসেবে জন্ম নেন মাহাথির মুহম্মদ।
দেখুন – আজীবন সুস্থ থাকতে ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির কি পরামর্শ দিচ্ছেন।

এই সূত্র ধরে বলা যায়, চট্টগ্রাম জেলার মরিয়মনগর গ্রাম হচ্ছে মাহাথির মোহাম্মদের পূর্বপুরুষের দেশ। তাঁর শরীরে বাংলাদেশী রক্ত বহমান।
লেখক: সেলিম হোসেন তাং: ১১/০৭/২০২৪ ইং ছবি: পেক্সেলস থেকে সংগৃহীত।
সন্তানদেরকে কিংবদন্তী এই দেশপ্রেমিক নেতার জীবনী সম্পর্কে জানাতে পোস্টটি শেয়ার করে দিন।

