গল্প বলা প্রতিযোগিতা
আড্ডায় অমিত যখন হাসির গল্প বলা শুরু করে, তখন বন্ধুরা কেউ বাইরে তাকায়, কেউ ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়। অনেক হাসির গল্প বললেও ওর দিকে উদ্ভ্রান্তের মত তাকায়। অমিত চেষ্টা করছে গল্প গুছিয়ে বলতে। কিন্ত হচ্ছে না।
গল্প ভালো বলে মোটিভেশনাল স্পিকাররা
খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন। তাদের কথা শুনতে মানুষ টাকা খরচ করে টিকেট কাটে ।
এমনই এক বক্তার কথা শুনতে গিয়েছিলেন অমিত, তার মুখেই শুনব পুরো ঘটনার বিবরণ। তার আগে গল্প কিভাবে বলতে হয় জেনে নেই।
গল্প বলার কৌশল কি
যারা ভালো গল্প বলেন তারা শুধু গল্প বলেন না। তারা মনোযোগ দিয়ে অন্যদের গল্প শুনেন। তারা তাদের শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া শারীরিক ভাষা, মুখের ভাব এবং প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। অন্যদের গল্প শুনে অনুধাবন করেন। এরপর নিজের গল্প বলা শুরু করেন শ্রোতার চাহিদা অনুযায়ী। তখন এই মিথস্ক্রিয়া স্রোতাদের ব্যস্ত রাখতে সাহায্য করে। শ্রোতারা নিজেদের গল্পের একটি অংশ মনে করে।

আমরা তো এখন জানি যে, স্টোরিটেলিং হচ্ছে একটা আর্ট। তার মানে এর কোন সহজ বা কঠিন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। অন্য সব আর্টের মতো গল্প বলার জন্য সৃজনশীলতা, রূপকল্প এবং দক্ষতা – এই গুলো লাগবেই। খোঁজখবর নিলে দেখবেন অনেক প্লট ভাল গল্প কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘ক্লিক’ করে না। আবার খুবই শাদামাটা, পুরাতন গল্পও মাঝে মধ্যে নতুন উপস্থাপনার গুণে মারমার কাটকাট হয়ে উঠতে পারে।
আপনাকে ভাল কথক হয়ে উঠতে হলে প্রচুর পড়তে হবে। প্রত্যেকটা গল্প পড়ার সময় আগে বলা নিয়মকানুন গুলো মিলিয়ে নিতে হবে। দেখবেন রবীন্দ্রনাথের গল্পের সঙ্গে হেমিংওয়ের গল্পের কাহিনীর মিল থাকলেও বলার ভঙ্গির কোন মিল নাই। হুমায়ুন আহমেদের গল্প পড়লে মনে হয় চরিত্র গুলো চোখের সামনে হাঁটাহাঁটি করেছে।
গল্প বলার ৫টি পর্যায় কি কি
এ ক্ষেত্রে একটি নিয়ম অনুসরন করতে পারেন। রেসিপিটি দুর্দান্ত কথা বলার সারমর্ম। গল্প বলতে ৫ টি পর্যায় আছে। পাঁচটি – চরিত্র, প্রেক্ষাপট, দ্বন্দ্ব, চূড়ান্ত পরিণতি, সমাপ্তি । গল্পের চরিত্র কে এবং কিভাবে আছে সেটা বর্ণনা করুন। এরপর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করুন। তারপর দ্বন্দ্ব, চূড়ান্ত পরিণতি এবং সমাপ্তি। এই নিয়ম মানলে শ্রোতারা মুগ্ধ হবে। একদিনে হবে প্রাকটিস করুন।

অমিতের গল্প বলা
পিনপতন নীরবতা পুরো হল্রুম জুড়ে। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। অমিত ভাবছেন আজকে কথা বলার আকর্ষণীয় বিষয় টা রপ্ত করবেনই। এমন সময় বক্তা মঞ্চে উঠলেন। দর্শকদের দিকে তাকালেন। শুভেচ্ছা জানিয়ে অতিথি বক্তা ধারাবাহিক গল্প শুরু করলেন। এক পর্যায়ে বললেন “এত বছর পরে, লুকানোর আর কিছুই নেই। আমি জীবনের সবচেয়ে মধুর দিনগুলো এমন এক নারীর সাথে কাটিয়েছি, যে ‘আমার স্ত্রী’ নয়!”
বলেই বক্তা চুপ !!
উপস্থিত দর্শকরাও হতভম্ব !!
দীর্ঘ নীরবতা ভঙ্গ করে বক্তা বলে উঠলেন : সেই নারী ছিলেন আমার ‘মা’ ।
এই অভূতপূর্ব ব্যাখ্যা শুনে সারা হল হাততালিতে ফেটে পড়ল । অমিতের চোখ দিয়েও জল বেরিয়ে এল । অনুপ্রাণিত হল অমিত।
বাড়ি ফিরে, বোতল গ্লাস নিয়ে বসল অমিত । চার পেগ খাবার পর, কথাগুলো মনে পড়ল অমিতের । ভাবল, বউকে চমকে দেবার এর থেকে ভালো সুযোগ আর হবে না ! বউ জানুক আমিও গল্প বলতে শিখেছি ।
রান্নাঘরে গেল। টলায়মান দুটি পা।
অমিতকে ঢুকতে দেখে গলদঘর্ম বউ একবার তাকালো ।

কোনোরকম ভণিতা না করে অমিত বলল : এত বছর পরে, লুকানোর আর কিছুই নেই। আমি জীবনের সবচেয়ে মধুর দিনগুলো এমন এক নারীর সাথে কাটিয়েছি, যে “আমার স্ত্রী” নয় !
পরের লাইনটা আর মনে পড়ল না। তো … মনেই পড়ল না । নেশা চড়ে গেছিল ।
বউ স্থির দৃষ্টিতে অমিতের দিকে তাকিয়ে ।
ঘাবড়ে গিয়ে বিড়বিড় করে বলল অমিত : ‘আমার ঠিক মনে পড়ছে না নারীটা, কে ছিলো’ !
পরের দিন হাসপাতালের বেডে হুঁশ ফিরেছিল অমিতের । সারা গায়ে ব্যান্ডেজ । বেলুন দিয়ে মারের চোটে হাত, পা, চোয়াল ভেঙে গেছিলো । গরম ডাল পড়ে মাথার চুল উঠে গেছিলো ।
প্রাণে বেঁচে গেছি … এই অনেক। ভাবল অমিত

সেলিম হোসেন – তাং ০৫/০৫/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী।