Gut parasite পেটে কৃমি বা পরজীবী সংক্রমণের ১০ টি কারন ও ন্যাচারালি প্রতিকার 10 Causes and Natural Remedies for Worms or Parasite Infections in the Stomach

পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
বয়স কালেও ত্বকের টানটান ভাব ধরে রাখে Plant based collagen

পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী

পেটে কৃমি বা অন্যান্য পরজীবী। সমস্যা কি ? সারা বছর পেটের সমস্যায় ভোগা। যাকে চিকিৎসক গন বলেন, Gut Parasites. যে কারনে সারা বছর আমাশয়, কৃমি সংক্রমণ ইত্যাদি। কেন পেটে কৃমি, অ্যামিবা বা পরজীবী বিষয়ে আজ আমরা বিস্তারিত জানব।
আমাদের  অজান্তেই পেটের ভেতর বাসা বেঁধেছে এই শত্রু। পেট ব্যথা, আমাশয়, গ্যাস, ওজন কমে যাওয়া এ জাতীয় সমস্যা লেগেই আছে। কিন্তু কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না ? হয়তো ভাবছেন, “এটা সাধারণ পেট খারাপ,” কিন্তু আড়াল থেকে সর্বনাশ করছে এমন শত্রু, যা আপনার শরীর থেকে পুষ্টি চুরি করে ভেতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে!
আপনি কি জানেন ? আপনার হজমতন্ত্র কেবল আপনার একার নয়। এখানে লক্ষ-কোটি অণুজীবের পাশাপাশি মাঝে মাঝে জায়গা করে নেয় কিছু অবাঞ্ছিত ভাড়াটে। যাদের বলা হয় পরজীবী বা প্যারাসাইট (Parasites)।
এদের মধ্যে কৃমি, অ্যামিবা (যা আমাশয়ের জন্য দায়ী) সবচেয়ে পরিচিত। পরজীবী বা প্যারাসাইট আসলে কারা ? ব্যাপারটা সহজভাবে বুঝতে হবে। পরজীবী হলো এমন জীব, যারা অন্য কোনো জীবের ভেতরে বা গায়ে বসবাস করে। যেমন এক্ষেত্রে আমাদের শরীরে বসবাস করে। আর পুষ্টি শোষণ করে বেঁচে থাকে। বিনিময়ে আমাদের অসুস্থ করে তোলে।
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী

এরা প্রধানত দুই রকম 

প্রোটোজোয়া (Protozoa) এবং হেলমিন্থস (Helminths)। প্রোটোজোয়া হলো এককোষী, আণুবীক্ষণিক জীব। খালি চোখে দেখা যায় না। দূষিত পানি বা খাবারের মাধ্যমে শরীরে ঢোকে। যেমন: এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা (আমাশয়ের কারণ) এবং জিয়ার্ডিয়া।
আর হেলমিন্থস (Helminths) হলো বহুকোষী কৃমি, যা অনেক সময় খালি চোখেও দেখা যায়। যেমন: গোলকৃমি (Roundworm), ফিতাকৃমি (Tapeworm), হুককৃমি (Hookworm)। আসুন একটু সহজ করে বুঝি।
মনে করুন আপনার অন্ত্র বা পাকস্থলী একটি সুন্দর বাগান। আপনি ভালো খাবার দিয়ে সেই বাগানের গাছগুলোকে পুষ্টি দিচ্ছেন, মানে শরীর কে। কিন্তু পরজীবীরা হলো সেই বাগানের আগাছার মতো। যারা গাছের সার-পানি-পুষ্টি সবকিছু চুরি করে নিজেরা বেড়ে ওঠে। বাগানটাকে নষ্ট করে দেয়। অর্থাৎ শরীর কে নষ্ট করে দেয়।
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
যেভাবে অন্ত্রে ঢুকে পরে শত্রুরা। জেনে নিন সেই কারন গুলো। এদের সংক্রমণের পথগুলো আমাদের খুব পরিচিত। আমাদের প্রতিদিনের যাপিত জীবনের সাথে জড়িত।
১. দুষিত পানি এবং খাবার এটাই শত্রু ঢোকার সাধারণ পথ। অপরিষ্কার পানি। রাস্তার খোলা খাবার। ঠিকমতো ধোয়া হয়নি এমন শাক-সবজি। রাস্তায় বিক্রি করা ফলও দুষিত পানিতে ধোয়া হয়। এই সবের মাধ্যমেই পেটে ঢুকে পরে শত্রু।
২. অপরিচ্ছন্ন হাত – টয়লেট করার পর ভালোভাবে হাত মুখ ধুতে হবে। খাবার খাওয়ার আগেও হাত মুখ পরিস্কার করা জরুরী। তা নাহলে কৃমির ডিম বা সিস্ট (Cyst) মুখে চলে যেতে পারে।
৩. মাংস সঠিক উপায়ে রান্না না করা – বিশেষ করে গরুর মাংস। গরুর মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ করতে হবে। তা নাহলে এতে ফিতাকৃমির লার্ভা থাকতে পারে। যা আধাসিদ্ধ খেলে শরীরে সংক্রমণ ঘটায়।
৪. খালি পায়ে হাঁটা – দূষিত মাটিতে, বিশেষ করে যেখানে মলমূত্র ত্যাগ করা হয়। সেখানে খালি পায়ে হাঁটলে হুককৃমির লার্ভা পায়ের ত্বক ভেদ করে শরীরে ঢুকতে পারে।
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
৫. শরীরের বিপদ সংকেত – পরজীবী সংক্রমণের লক্ষণগুলো অনেক সময় সাধারণ হজমের সমস্যার মতো মনে হতে পারে। তাই সচেতন থাকা জরুরি। লক্ষন গুলোর সাথে নিজের শারীরিক সংকেত মিলিয়ে নিন।
৬. দীর্ঘস্থায়ী হজমের সমস্যা – বারবার পেট ব্যথা, পেট কামড়ানো, ডায়রিয়া, আমাশয় (মলের সাথে রক্ত বা মিউকাস যাওয়া), পেট ফাঁপা এবং অতিরিক্ত গ্যাস। আই বি এস রোগ।
৭. দুর্বলতা এবং অপুষ্টি – খাদ্যে অরুচি, অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন কমে যাওয়া, রক্তশূন্যতা (Anemia) এবং সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগা। এমন হলে সচেতন হোন।
৮. মলদ্বারে চুলকানি – যদি রাতের বেলায় মলদ্বারে চুলকায়, তাহলে বুঝবেন পেটে কৃমি সমাবেশ করছে। এটা সাধারণত পিনওয়ার্মের একটি বড় লক্ষণ। যাকে আমরা বাংলায় বলি গুঁড়া কৃমি।
৯. আরও লক্ষণ – ঘুমের সমস্যা, ত্বকে র্যাশ বা চুলকানি, মাংসপেশিতে ব্যথা এবং মানসিক অস্বস্তি।
১০. মনোযোগ দিন – অনেকের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্কদের, শরীরে পরজীবী থাকলেও কোনো স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু তারা নিজেরা আক্রান্ত থাকেন এবং অন্যদেরও সংক্রমিত করতে পারেন।
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
প্রতিরোধ ও প্রতিকার – ভয়ের কারন নেই। আপানার হাতের কাছেই সমাধান। যেভাবে তাড়াবেন এই পাকস্থলির শত্রুদের।

হেলদি লাইফস্টাইল

এটাই আপনার সেরা অস্ত্র। শত্রুদের হত্যা করুন। একেবারে ন্যাচারালি। কৃমি, অ্যামিবা বা পরজীবীদের জন্য আপনার শরীরকে একটি “অযোগ্য বাসস্থান” (Inhospitable Environment) করে তুলুন।
পরিচ্ছন্ন থাকুন – খাওয়ার আগে, বাইরে থেকে এসে এবং টয়লেটের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং শাক-সবজি-ফল খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
যে সব খাবার বন্ধ করবেন – পরজীবীরা চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খুব ভালোবাসে। খাদ্য তালিকা থেকে অতিরিক্ত চিনি, ময়দা এবং জাঙ্ক ফুড বাদ দিলে তাদের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
ফারমেন্টেড ফুড – প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যেমন টক দই, সাউয়ার ক্রাউট, কিমচি এগুলো ফারমেন্টেড খাবার। খাবার গুলো অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়, যা পরজীবীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
কিছু খাবার প্রাকৃতিকভাবেই পরজীবী বিরোধী হিসেবে কাজ করে।
  • কুমড়োর বীজ: এতে থাকা ‘কুকুরবিটাসিন’ কৃমিকে প্যারালাইজড করে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
  • কাঁচা রসুন: এর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান পরজীবী ধ্বংসে দারুণ কার্যকর।
  • পেঁপের বীজ: এতে থাকা ‘পাপাইন’ নামক এনজাইম পরজীবী তাড়াতে সাহায্য করে।
  • নিম ও হলুদ: শত শত বছর ধরে প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

দুটি মজাদার সাস্থ্যকর সব্জির রেসিপি 

পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী

পেটে কৃমি আক্রান্ত হলে 

আমরা কৃমিতে আক্রান্ত হলে ঔষধ খাই। বাচ্চাদেরও খাওয়াই। পরজীবী সংক্রমণ শুধু ওষুধ দিয়ে জীবাণু মারার বিষয় নয়। এটি আমাদের বলে যে, শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং হজমতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমাদের দরকার সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শক্তিশালী হজমতন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদানের সমন্বয়।
তাহলেই শরীরের “ভেতরের বাগানটিকে” সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলা যাবে। বাগানে কোনো আগাছা জন্মাতে বা টিকতে পারবে না। আমরা সুস্থ থাকতে পারব। মেজাজ ভালো থাকবে। কাজের প্রতি ফোকাস বাড়বে। জীবনে সফলতা অর্জন সহজ হবে।
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী

পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী নিয়ে শেষ কথা

আমাদের সমস্ত রোগের উৎপত্তি হয় পেট থেকে। তাই পেটের সমস্যাকে অবহেলা করা যাবে না। শরীর যখন বারবার সংকেত পাঠায়, তখন তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরজীবী সংক্রমণ শুধু অস্বস্তিকরই নয়, এটি শরীরকে ভেতর থেকে ক্ষয় করে দেয়।
পরিচ্ছন্ন থাকুন, হেলদি লাইফস্টাইল অনুসরন করুন। অন্ত্রকে দিন সেই শক্তি, যা তাকে যেকোনো শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে। আমাদের সুস্থতা আমাদের হাতে। কৃমি, অ্যামিবা বা পরজীবী মুক্ত জীবনযাপন করুন।
সচেতন হন, সুস্থ থাকুন এবং পোস্ট টি সবাইকে শেয়ার করে দিন।
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
পেটে কৃমি অ্যামিবা বা পরজীবী
সেলিম হোসেন – তাং – ১৮/০৯/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *