যে কারনে মনের যত্ন
যে জিনিস ধরা যায় না। ছোঁয়া যায় না। কিন্ত দারুন প্রভাব রাখে মানব জীবনে। তাহল আমাদের মন। দৃশ্যত আমরা শরীর কে দেখতে পাই। শরীর আর মন মিলিয়েই একজন মানুষ। শরীর যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কারনে অসুস্থ হয়। তেমনি মনও অসুস্থ হতে পারে। শরীর আর মনের মধ্যে দারুন সংযোগ আছে। শরীর অসুস্থ হলে মন খারাপ হয়ে যায়। মন খারাপ থাকলে শরীর চলতে চায় না। আবেগ অনুভুতি প্রকাশের বেলায়ও শরীর মন একসাথে সাড়া দেয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ সাল। এখানে দেখানো হয়, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। শিশু-কিশোর ও তরুণদের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। এ জরিপের হিসাব অনুযায়ী বলা যায়, বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি মানুষ মনো রোগে আক্রান্ত। কি ভয়ানক ! অনেকে আমরা জানিই না কতটা মানসিক ভাবে অসুস্থ আমরা।
রিপোর্ট টা পরে দারুন চিন্তিত হল জাহিদ ইসলাম। ভাবল, আমি কি মানসিক ভাবে অসুস্থ ! নিজেকেই বলল জাহিদ। অফিসের কাজ প্রায় শেষের দিকে। মাগরিবের সময় হয়ে আসছে। প্রতিদিনের কিছুক্ষনের মধ্যে চলে আসবে বেলাল আহমেদ। যিনি ইউনিভার্সিটিতে সাইকোলজি পড়ান।
যে অভ্যাস গুলো মানুষ কে সুখী করে তোলে

মনের যত্ন এবং চার বউয়ের গল্প
মাগরিবের পরে দু বন্ধু মুখোমুখি বসে। চায়ের কাপ দিয়ে গেল অফিস বয় রাজু। দারুন দেখতে চায়ের রঙ। বেশ কাঁচা পাতির সুগন্ধ নাকে লাগছে। চায়ে চুমুক দিয়ে বেলাল বলল, এই চা’তে কি দেয়া আছে ? দারুন স্বাদ তো !
এতে দেয়া আছে, বাটার, মধু। আর হ্যান্ড ব্লিন্ডার দিয়ে ব্লিন্ড করা হয়েছে। আমি একটা বিষয় ভাবছি। মানুষের মন নিয়ে। তুই তো এ বিষয়ে ছাত্রদের পড়াস। মনের যত্ন নেয়ার কি প্রয়োজন আছে ?
হ্যাঁ আছে, অবশ্যই আছে। একটা গল্প বলি। বিদেশে ট্রেনিংয়ে গিয়ে গল্পটি শুনেছিলাম। বলল বেলাল।
এক ধনী লোকের চার বউ। ছোট বউকে খুবই ভালবাসতেন, যত্ন করতেন। সবচে দামী উপহার গুলো কিনে দিতেন। সাথে নিয়ে ঘুরতেন। বন্ধু বান্ধব, নিকটজনদের নিকট প্রশংসা করতেন। বলতেন, ছোট বউ কত সুন্দর, আকর্ষণীয়। তার আনন্দ, তৃপ্তির জায়গা ছোট বউ। ছোট বউয়ের কোন ঝামেলা হলে অস্থির হয়ে পরতেন। সব মনোযোগ ছিল ছোট বউয়ের দিকে।
ত্বকের উজ্জলতা বাড়ানো এবং বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকানোর ন্যাচারাল উপায়ের কোলাজেন কিনুন

দ্বিতীয় স্ত্রীকেও বেশ ভালবাসতেন। এই বউ সব সম্পত্তি এবং বাড়িঘর দেখাশুনা করতেন। যে কারনে ভদ্রলোক স্বস্তি অনুভব করতেন। কিন্ত বাইরের লোকের হিংসে হত। তারা বলতেন, তোমার এই বউ সর্বনাশ করবে। সম্পত্তি সহ কারও সাথে পালিয়ে যেতে পারে।
তৃতীয় স্ত্রীও কিছুটা ভালোবাসা পেতেন। এই বউ ব্যবসায়িক কাজে সহায়তা করতেন। লোকে এই বউয়ের ব্যাপারেও ভদ্রলোককে সতর্ক করতেন।
কিন্ত প্রথম স্ত্রীর বেলায় ভদ্রলোক ছিলেন একেবারেই উদাসীন। ভালোবাসতেন না। কোনরুপ আদর যত্ন করতেন না। যে কারনে বড় বউ বিষণ্ণ হয়ে পরেছিলেন। প্রচুর ডিপ্রেশন ছিল তার। সাস্থ্য ভেঙে গিয়েছিল। নানা দুশ্চিন্তায় সৌন্দর্য হারিয়ে গিয়েছিল।
যে সুপার ফুড আশ্চর্যজনক উপকারি, এখান থেকে কিনুন

চার বউ এবং ভদ্রলোকের পরিনতি
একদিন ভদ্রলোক খুব অসুস্থ হয়ে পরলেন। সবরকম চিকিৎসা শেষে ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিলেন। ভদ্রলোক বুঝতে পারলেন তিনি আর বাঁচবেন না। কাছের লোকজন গুলো ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে লাগল। দুনিয়াটাকে শুন্য শুন্য মনে হল। তিন বউকে ডাকলেন।
ছোট বউকে বললেন, মৃত্যুর পরে তুমি কি আমার সাথে যাবে। অসম্ভব ! আমি কেন তোমার সাথে যাব। ছোটবউ একবাক্যে ভদ্রলোকের আহবান নাকচ করে দিলেন।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বউকে একই কথা বললেন। তারাও বললেন, প্রশ্নই ওঠে না। তুমি মারা যাওয়ার পর কেন তোমার সাথে যাব ?
তিনি খুব বিমর্ষ হয়ে পরলেন। এতকিছু করলেন বউদের জন্য। অথচ সবাই মুখের উপর না করে দিল। একটুও দ্বিধা করল না। ঠিক এমন সময় একটি ক্ষীণ কণ্ঠ শুনতে পেলেন। কেউ খুব কাছে এসে বলছেন, ‘তোমার কোন চিন্তা নেই। আমি তোমার সাথে যাব।’

ভদ্রলোক অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখেন, তার প্রথম স্ত্রী দাঁড়িয়ে। যার কথা তার মনেই থাকত না। সব সময় অবহেলা করতেন। অথচ তিনি মৃত্যুর পর সাথে যেতে চাচ্ছেন !
এই বড় বউ টা কে জানিস ? এটা হল, আমাদের মন বা আত্মা। আর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বউ হচ্ছে, আমাদের ব্যবসা বানিজ্য, সম্পদ, ক্যারিয়ার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজন, সন্তান সন্ততি। এসবের প্রতি আমাদের সব ভালোবাসা, মনোযোগ আটকে থাকে। আমরা সারাক্ষন দৌড়াই আরও সম্পদ পেতে।
ছোট বউ হল, আমাদের শরীর। একটু মাথা ব্যাথা বা কোথাও সামান্য কেটে গেলে সব মনোযোগ সেদিকে থাকে। আমরা অস্থির হয়ে পরি কখন কাটা জায়গাটা সেরে উঠবে। সুন্দর দেখাতে সাধ্যের মধ্যে অর্থ ব্যয় করি। সুন্দর পোশাক পরি। দামী পারফিউম মাখি। সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে চিকিৎসা করি। কিন্ত মন বা আত্মার দিকে খেয়াল নেই।
ছোট সন্তানদের সাথে বাবা মা যে ভুল গুলো করেন

মনের যত্ন যেভাবে নিবেন
অথচ মৃত্যুর পরে আত্মাই আমাদের সাথে যায়। কিন্ত আত্মার যত্ন আমরা নেই না। আমরা মুসলিমরা প্রতিদিন নামাজ পরি। এতে আত্মার যত্ন নেয়া হয়। তাহাজ্জুদ বেশি কাজ করে মনের উপর। ফজরের নামাজ জামাতে পড়া এবং নামাজ শেষে দীর্ঘ সময় দোয়া করা, মনের যত্নে দারুন কাজ দেয়। যারা ভিন্ন ধর্মী আছেন, তারা তাদের মত প্রার্থনা করতে পারেন। মেডিটেশন করতে পারেন। এতে করেও মনের যত্ন নেয়া হবে, মন শান্ত হবে।
এছাড়াও ভালো ঘুম খুব জরুরী। প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে। সামাজিক মেলামেশা বাড়াতে হবে। স্মার্ট ফোনে নয়, বাস্তবে। মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা নিজের মন কে ভালো রাখে। খেতে হবে সাস্থ্যকর খাবার। এগুলো করলে দেশে আর মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়বে না। যারা কম আক্রান্ত আছে, তারা সুস্থ হয়ে উঠবে। বেলাল কথা গুলো একনাগাড়ে বলল।
মানসিক সমস্যার লক্ষন নিয়ে বলছেন ডাঃ কুশাল

সবাইকে পোস্ট টি শেয়ার করে দিন। কে মানসিক রোগী বলা যায় না। আপনার শেয়ার কারও কাজে লাগতে পারে। সেলিম হোসেন – তাং – ৩০/০৯/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।
Reference – Dr Kushal, Yahia Amin, Ahsan Aziz khan.