অনলি ফর ম্যান ১ টি মাস্টার পিছ
যুবকের চোখে রঙিন সপ্ন। ব্যস্ত সময় কাটছে। বউয়ের গহনা কেনা, ড্রেস কেনা। ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে স্যান্ডেল। কত কি ! খুব বেছে বেছে কমিউনিটি সেন্টার ঠিক করা হয়েছে। মান সম্পন্ন কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। কনে আগে থেকেই পরিচিত। তাদের প্রেমের রসায়ন কয়েক বছরের। আর মাত্র কয়েক দিন। এরপরে শুধুই সুখের সাগরে অবগাহন।
তার বিবাহিত বন্ধুরা মনে মনে বলছেন, ‘চান্দু বিয়েটা হয়ে যাক, এরপর বুঝবে মাসের দিন গুলো কিভাবে পার হয়’। যারা বিবাহিত আছেন, তারা জানেন, বিয়ের পর আসে জীবনের বাস্তবতা। প্রেম তো মুভির মত রঙিন বিষয়। প্রেমের সময়ে প্রেমিক বা প্রেমিকা একজন আরেক জনকে দেখলে খুশি হয়ে ওঠে। একজনের কথা শোনার জন্য আরেক জন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই বুঝি কল আসল !
এত আকর্ষণ কেন পরস্পরের প্রতি ? বিজ্ঞানিরা বলেন ‘ প্রেমিক প্রেমিকা পরস্পর কে দেখলে, তাদের শরীরে অক্সিটোসিন নামক হরমোন রিলিজ হয়। যা তাদের কে প্রচণ্ড আনন্দ দেয়। বিয়ের দিন থেকেই অক্সিটোসিন নিঃসরণ কমতে থাকে। খুব দ্রুতই অক্সিটোসিন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়।
জীবনে আসে বাস্তবতা। বাস্তবিক সংসারে কত ঝামেলা ! এখন আর একজন অন্যজনকে দেখলে আগের মত আনন্দ পায় না। দেখা যায়, আজ যে প্রেমিকা কাল সে ভয়াবহ আচরন করে। কেন সংসারে অশান্তি, দায়ী কে ? পুরুষ দায়ী ?

অনলি ফর ম্যান জানতে হবে নিজেকে
আসলে বিষয় টা ভালোভাবে জানতে হবে। আমরা দাম্পত্য জীবনকে শান্তিময় করতে, বিষয়টা বিস্তারিত জানব। ছুটির দিনে সকালে যখন আমি কেডস, ট্রাউজার পরে ব্যায়ামের জন্য বের হই, তখন আমার ছেলে মেয়েও আমার সাথে বের হয়। ছেলেটা বড়, বয়স ১১+ আর মেয়েটা ছেলের ৫ বছরের ছোট।
কলোনির ভিতরের রাস্তায় ভালোভাবেই হাঁটা বা দৌড়ানো যায়। রাস্তার পাশে বাড়ি। কিছু বাড়ির সামনে ফুলের গাছ। লাল, সাদা, গোলাপি নানান রকম ফুল। মেয়ে সেখান থেকে ফুল ছিঁড়বেই। তাকে আটকানো যায় না। কিন্ত ছেলের সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।
বাসায় যদি ছেলেকে বলি, আব্বু পানি খাব। সে পানি এনে দেয়। যে মগে আমি পানি খাই সেই মগেই নিয়ে আসে। কিন্ত মগের তিন ভাগের একভাগ ভরা থাকে। আর মেয়েকে বললে, একই মগে পানি নিয়ে আসে। মগ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। ছোট্ট হাতে খুব সাবধানে পানির মগ ধরে এনে আমাকে দেয়।
নারী আর পুরুষের শারীরিক গঠনে যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি মানসিক গঠনেও।

অনলি ফর ম্যান নারীর মনের কথা বলে
নারীর মন কিভাবে কাজ করে ? নারীর আবেগের জায়গাটা আমরা খেয়াল করি না। কোন যত্ন নেই না। তাদের আবেগ আমাদের কাছে তুচ্ছ মনে হয়। আমাদের অবহেলায় ঘরে অশান্তি বাড়ে। ঘরকে শান্তিময় করতে পারেন। কিভাবে করবেন ? তার স্বভাব কে বুঝতে হবে। লেখক ‘আদহাম শারকাবি’ নারীর স্বভাবকে চমৎকার করে তুলে ধরেছেন ‘অনলি ফর ম্যান’ বইয়ে।
তিনি বলেছেন, আমরা চাই সবকিছুতে নারীরা তেমনি প্রতিক্রিয়া দেখাক, যেমন প্রতিক্রিয়া আমরা দেখাই। আমরা যেমন করে সবকিছু ভাবি, তারাও তেমন করে ভাবুক। যে বিষয় কে আমরা স্বাভাবিক ভাবে নেই, সেগুলোকে নারিরাও স্বাভাবিক ভাবে নিক। যে বিষয় আমরা গুরুত্বের সাথে দেখি, তারাও গুরুত্বের সাথে দেখুক।
পুরুষ আশা করে নারী পুরুষের ভাবনা অনুযায়ী চলবে। নারীর কাছে যা প্রত্যাশা করে, নারী তাই করবে। অথচ এটা এমন বিষয়, যা কখনো সম্ভব নয়। কিন্ত আমরা তো বিয়ে করে ফেলেছি ! বাকি জীবন একসাথে পাড়ি দিব। তাহলে উপায় কি ?

অনলি ফর ম্যান পুরুষের দায় নিয়ে বলে
উপায় হল, নারীর মানসিক গঠনের ভিন্নতাকে বুঝতে হবে। তাকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে হবে। তাহলে দাম্পত্যে নতুন করে জীবন কে গড়তে পারব। ভালোবাসা অতি মনোরম জিনিস। সবচেয়ে সুন্দর এবং সুদৃঢ় বন্ধন। যা দুটি মানুষ কে একটি সুতায় বেঁধে রাখে।
আমরা চাই বা না চাই চরিত্রের ভিন্নতা নিয়েই জন্ম গ্রহন করি। আমাদের চিন্তার ধরন ভিন্ন। অনুভব ও অনুভুতি ব্যক্ত করার ধরনও আলাদা। এর মুল কারন হলো, আমাদের সৃষ্টির উৎসের ভিন্নতা।
আল্লাহ তায়ালা হজরত আদমের ( আঃ ) মত মাটি থেকে হাওয়া ( আঃ ) কে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্ত তিনি চান যে, তাদের উভয়ের মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন তৈরি হোক। তারা একসাথে পৃথিবীতে পথ চলুক। এই গ্রহের সমাপ্তি পর্যন্ত নারী পুরুষ পরস্পরের পাশে থাকুক।

লেখক জন্মেছেন লেবাননের ‘সুর’ শহরে। সেখানেই বেড়ে ওঠা। তিনি এখন মুলত একজন ইসলামের দায়ি। লিখেছেন বেশ কিছু বই। আরাবিয়ান যুব সমাজে দারুন জনপ্রিয়। বইটি লিখতে তিনি বিভিন্ন বিজ্ঞজনের সহায়তা নিয়েছেন। করেছেন প্রচুর পড়াশুনা।
লেখক বিভিন্ন সভা সেমিনারে লেকচার দেন। সেই সুবাদে সেখানে উপস্থিত নারীদের মনের কথা জেনেছেন। অভিনব উপায়ে নিয়েছেন নারীর মতামত। যে যুবক নতুন বিয়ে করতে যাচ্ছেন তার জন্য বইটি অবশ্য পাঠ্য। আর যারা বিবাহিত আছেন তারাও পাঠ করবেন। চমকে উঠবেন, কত অহেতুক ভুল করে জীবনের শান্তি নষ্ট করে চলেছেন !

বইটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – ১৭/০৮/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।