স্মৃতি শক্তি কমে যাচ্ছে কেন? তরুণ বয়সেই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ ও প্রতিরোধের উপায়
বয়স বাড়লে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আজকাল অল্প বয়সীদের মধ্যেও হঠাৎ কিছু মনে করতে না পারা বা দ্রুত শেখার ক্ষমতা কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর মূল কারণ কী? গবেষণা বলছে, আধুনিক জীবনযাত্রা এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর জন্য দায়ী।
কেন কম বয়সে স্মৃতি শক্তি কমছে? (মূল কারণ ও বিজ্ঞান)
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার মূল কারণ লুকিয়ে আছে আমাদের শরীরের স্থূলতা এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের মধ্যে।

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও মস্তিষ্কের সম্পর্ক
অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের ফলে ওজন বাড়ে এবং একই সাথে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স (Insulin Resistance) দেখা দেয়।
১. গ্লুকোজ হাইপোমেটাবলিজম: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আমাদের মস্তিষ্ককে ধারাবাহিক ‘গ্লুকোজ হাইপোমেটাবলিজম’ (Glucose Hypometabolism)-এর মধ্যে রেখে দেয়। এর অর্থ হলো, মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় শক্তি, অর্থাৎ গ্লুকোজ, সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। মস্তিষ্কের গ্লুকোজ ব্যবহার করার ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই স্মৃতি শক্তি কমতে শুরু করে।
২. দ্রুত বার্ধক্য: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স মস্তিষ্কের সেলুলার লেভেলে বার্ধক্য বা বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে আমাদের দ্রুত শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৩. ডোপামিন উৎপাদন হ্রাস: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স মস্তিষ্কের ‘ডোপামিন প্রোডাকশন’ এবং ‘অ্যাক্টিভেশন’ দুটোই কমিয়ে দেয়। ডোপামিন হলো সেই হরমোন যা মনে সুখী ভাব ও উদ্দীপনা আনে। ডোপামিন কমে গেলে কাজে অলসতা ও অনীহা সৃষ্টি হয়, যা স্মৃতিশক্তির দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

সংশ্লিষ্ট পুষ্টি ঘাটতি
ওজন বেশি এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সাথে আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ঘাটতি দেখা যায়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য দায়ী:
- ভিটামিন বি-১ (B-1)
- ম্যাগনেসিয়াম
- ভিটামিন ডি
- আয়োডিন
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির ৭টি অভ্যাস
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলার পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে এই অভ্যাসগুলো নিয়মিত চর্চা করুন:
১. ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে প্রচুর অক্সিজেন পৌঁছায় এবং মস্তিষ্কের কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, ফলে ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন হাঁটা বা যেকোনো ধরনের ব্যায়াম করুন।
২. মেডিটেশন বা নামাজ: নিয়মিত মেডিটেশন মস্তিষ্কের ফোকাস বাড়াতে সাহায্য করে। মুসলিমদের জন্য জামাতে নামাজ আদায় করা মেডিটেশনের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এর ফল পেতে ধৈর্য সহকারে চর্চা করতে হবে।
৩. বই পড়া: প্রতিদিন ধৈর্য সহকারে বই পড়ার অভ্যাস করুন। এটি ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, ফোকাস ও চিন্তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৪. পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ভালো কোয়ালিটির ঘুম প্রয়োজন। ঘুমাতে যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে সমস্ত ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্মৃতি শক্তি লোপ পায়।
৫. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রতিদিনের ডায়েটে একমুঠো বাদাম, দুধ, মাখনের মতো খাবার যোগ করুন। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে এমন রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খান। চিনি ও চিনি জাতীয় খাবার সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন।
৬. নতুন কিছু করা: জীবনে পরিবর্তন আনুন। নতুন স্থানে ভ্রমণ, নতুন রান্না করা, ছবি আঁকা বা বাগানে কাজ করার মতো নতুন কোনো কাজ করার চেষ্টা করলে ব্রেইন বেশি সক্রিয় ও সচেতন হয়ে উঠে, যা স্মৃতিশক্তিকে মজবুত করে।
৭. মনে রাখার পদ্ধতি: যেকোনো কিছু মনে রাখার সঠিক সময় হলো খুব ভোরবেলা। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো নোট করে রাখার বা ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন। কোনো কিছু লিখলে ব্রেইন তা খুব সহজে মনে রাখতে পারে।

স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির ইসলামিক উপায় ও সতর্কতা
স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির দোয়া:
- বিসমিল্লাহ বলে পড়াশোনা শুরু করা।
- পবিত্রতা বজায় রাখা ও নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
- সুরা আলা, সুরা ইনশিরাহ, ও সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা।
- নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা।
- ‘রাব্বি জিদনি ইল্মা’ জিকির বেশি বেশি করা।
স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির সিরাপ বা ঔষধ প্রসঙ্গে: কোনো সিরাপ বা ঔষধ তাৎক্ষণিক সমাধান নয়। সমাধান আপনার জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আলোচিত প্রাকৃতিক নিয়মগুলোর মধ্যেই রয়েছে।










