স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন,প্রেম থেকে প্রাণনাশ এবং ১ টি মজার গল্প । Husband murdered by wife, suicide due to love

স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন

দাম্পত্য কলহ যখন ভয়ংকর রূপ নেয়: স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন হওয়ার ৩টি লোমহর্ষক ঘটনা

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে সমাজে অসংখ্য গল্প, কৌতুক এবং সরস আলোচনা প্রচলিত আছে। হাসি-ঠাট্টার বেশিরভাগই থাকে সংসারে স্ত্রীর কর্তৃত্ব বা স্বামীদের ঘন ঘন ‘সরি’ বলার বাধ্যবাধকতা নিয়ে। যদিও বিশেষজ্ঞরা দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো রাখতে ঘন ঘন ‘সরি’ বলার পরামর্শ দেন, কারণ এটি সম্পর্কের মধ্যেকার অহংবোধ দূর করে।

তবে হাসির আড়ালে দাম্পত্যের এমন এক অন্ধকার দিকও আছে, যেখানে সম্পর্ক ভালোবাসার পরিবর্তে ভয়ংকর সহিংসতায় রূপ নেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্ত্রীর হাতে স্বামী খুনের মতো ঘটনাগুলো সমাজে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সম্পর্কের টানাপোড়েন, আর্থিক বিরোধ, পরকীয়া বা মানসিক চাপ—যে কারণেই হোক না কেন, এই সহিংসতা ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসে।

চলুন, এমন তিনটি নৃশংস ঘটনার খবর জেনে নিই, যা প্রমাণ করে দাম্পত্যের পথ সবসময় সরল নয়।

১. বটি ও বাঁশঝাড়ে নৃশংস খুন (গাজীপুর, ২০১৯)

২০১৫ সালে বিয়ে হয়েছিল জীবন্নাহার ও রফিকুল ইসলামের। গাজীপুরের শ্রীপুরে তারা দুজনেই পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তাদের চার বছরের একটি কন্যাসন্তানও ছিল।

বিবাদের কারণ: তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয় রফিকুলের বেতনের টাকা নিয়ে। রফিকুল চাইতেন জীবন্নাহার তার উপার্জনের টাকা স্বামীকে দিক, কিন্তু জীবন্নাহার সেই টাকা তার মায়ের কাছে রাখতেন। এই আর্থিক বিরোধের জের ধরে প্রায়ই তাদের ঝগড়া হতো।

ঘটনার বিবরণ: এক শীতের রাতে, তীব্র কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে রফিকুল স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েন। স্ত্রী জীবন্নাহার একটি ইট সংগ্রহ করে ঘুমন্ত রফিকুলের মাথায় প্রচণ্ড জোরে আঘাত করেন। রফিকুল খাট থেকে নিচে পড়ে গেলে জীবন্নাহার বারবার ইট দিয়ে আঘাত করতে থাকেন এবং একপর্যায়ে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেন।

লাশ গোপন: খুন করার পর জীবন্নাহার স্বামীর লাশ ওয়ারড্রোবে লুকিয়ে রাখেন। পরদিন কাজ থেকে ফিরে তিনি রান্নাঘর থেকে বটি এনে রফিকুলের দেহ থেকে মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করেন। এরপর পা দুটি টয়লেটের পাশে এবং মাথা-হাত নর্দমায় ফেলে দেন। দেহ বস্তায় ভরে ফেলে দেন পাশের বাঁশঝাড়ে।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে জীবন্নাহার খুনের ঘটনা স্বীকার করেন। পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

দাম্পত্য জীবনে কিভাবে সর্বনাশ ঢুকে পরে। সুখী দাম্পত্য জীবনের উপায় জেনে নিন। 

স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন
স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন

২. স্ত্রীর হাতের ‘বিষ মাখানো’ পায়েস (ভৈরব, ২০১৯)

রেলওয়ের সরকারি চাকরি পাওয়ার পর মাহবুবুর রহমানের চাহিদা বাড়ে। প্রতিবেশী মোছাঃ রোকসানার সাথে তার প্রেম ও পরে ২০০৮ সালে বিয়ে হয়। তাদের তিনটি সন্তানও ছিল।

বিবাদের কারণ: দাম্পত্য জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ রোকসানার সাথে আসিফ নামে এক যুবকের পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি হয়। মাহবুব তাদের এই সম্পর্কের মাঝে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ান।

ঘটনার বিবরণ: ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর মাহবুব বাড়িতে এলে রোকসানা তার প্রিয় পায়েস রান্না করেন। সেই পায়েসে প্রেমিক আসিফের সরবরাহ করা ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়। গভীর ঘুমে তলিয়ে যান মাহবুব। ঘুমন্ত স্বামীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কোপান রোকসানা এবং তার প্রেমিক আসিফ। নিজ বিছানায় খুন হন মাহবুবুর রহমান।

বিচার: এই ঘটনার পর পুলিশ রোকসানা ও তার প্রেমিক আসিফ দুজনকেই গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর সাক্ষ্য-প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক তথ্য যাচাই করে ২০২০ সালের ৩০ জুন আদালতে দুইজনকে দায়ী করে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আদালত দুজনকেই মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।

বিবাহিত নারী বা পুরুষ কেন পরকীয়া প্রেমে পড়ে। 

স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন
স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন

৩. ঝগড়ার শেষে ওড়না পেঁচিয়ে খুন (কুমিল্লা, ২০২৪)

জান্নাতুন নাঈম (১৯) ও এজহার উদ্দিন বাবলা (২৪) বিয়ের পর কুমিল্লার লালমাই উপজেলার দুতিয়াপুর এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তাদের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হতো।

ঘটনার বিবরণ: ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে তাদের মধ্যে পুনরায় ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে বাবলা খাটের কিনারে বসে আনমনা হয়ে পড়েন। জান্নাতুন নাঈম খাটে উঠে পিছন দিক থেকে ওড়না বাবলার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে ধরেন। অপ্রস্তুত বাবলা কোনো প্রতিরোধ করতে পারেননি এবং শ্বাস বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। পরে জান্নাতুন নাঈম নিজেই মরদেহটি সিলিংয়ের সাথে ঝুলিয়ে পুলিশকে ফোন করেন।

স্বীকারোক্তি: পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের পর জান্নাতুন নাঈম হত্যার দায় স্বীকার করেন। পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয় এবং মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

নিজের অজান্তেই আমরা সন্তানের সর্বনাশ করি। সন্তানকে সঠিক পথে রাখার উপায়। 

স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন
স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন

স্ত্রীর হাতের স্যুট নাকি অন্য কিছু 

শীতের  শুরুর সময়। সরকারী কর্মচারীদের এক অফিস। মধ্যম সারির এক কর্মকর্তা নতুন একটি স্যুট পরে অফিসে এসেছেন। অফিসে লাঞ্চের টেবিল সাজানো হয়েছে। ছোট বড় কর্মকর্তারা এক সাথে লাঞ্চ করছেন। সবাই স্যুটটির প্রশংসা করতে শুরু করলেন। কাপড় কোথা থেকে কিনেছেন ? রঙ টা অনেক সুন্দর। কোন টেইলারিং থেকে বানিয়েছেন নাকি রেডিমেড কিনেছেন ? ইত্যাদি প্রশ্ন।
স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন
স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন
নানান প্রশ্নে অতিষ্ঠ ভদ্রলোক বললেন ‘ এটা আমি কিনি নাই বানাইও নাই। এটি আমার স্ত্রীর হাতের স্যুট।  স্ত্রী আমাকে উপহার দিয়েছেন।’
উপহার ? কি উপলক্ষ্যে ? সবাই একবাক্যে জিজ্ঞেস করলেন।
কোন উপলক্ষ টুপলক্ষ নেই। ভদ্রলোক জবাব দিলেন। সাধারনত দুপুরে বাসায় যাই না। সেদিন হঠাৎ কোন এক প্রয়োজনে দুপুরে বাসায় গেলাম। আমাদের বেড রুমের সোফায় দেখি স্যুট টি পরে আছে। বউকে জিজ্ঞেস করলাম ‘ কি ব্যাপার, স্যুট আসলো কোথা থেকে ? ‘
বউ বলল ‘ এটা তোমার জন্য উপহার। তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য এখানে রেখে দিয়েছি।’

উপসংহার

দাম্পত্য সম্পর্ক নির্ভর করে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মান ও যোগাযোগের ওপর। যখন সম্পর্কের মধ্যে আর্থিক চাপ, পরকীয়া বা মানসিক সমস্যা প্রবেশ করে এবং তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হয়ে সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনাই সমাজে পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ ও অসহিষ্ণুতার ভয়াবহতা তুলে ধরে।

ব্লগ পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং – ০৪/০১/২০২৫ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *