লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারন জাতি বিপদে
বাংলাদেশে এই রোগে কতজন আক্রান্ত হয়েছে বলে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ধারণা করা হয়, দেশের হেপাটাইটিস বি ও সি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটির বেশি মানুষ। এদের পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ রোগী লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। সেই হিসাবে দেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রমণকে এক নীরব ঘাতক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসেবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারন সবার জানা থাকলে জাতি রক্ষা পাবে।
হু হু করে বাড়ছে কিডনি রোগী। প্রতিকারের উপায় জেনে নিন।

লিভার আক্রান্ত হলে কি হয়
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যখন লিভারের রোগের নানা পর্যায়ের পর কোষগুলো এমনভাবে আক্রান্ত হয় যে,এই অঙ্গ আর কাজ করতে পারে না, সেই পর্যায়কে একে সিরোসিস বলে বর্ণনা করা হয়।
লিভার সিরোসিস হলে যকৃতে সূক্ষ্ম সুতার জালের মতো ফাইব্রোসিসের বিস্তার ঘটে। যকৃতে তখন ছোট ছোট দানা বাঁধে। আস্তে আস্তে সেটির বিস্তার ঘটতে থাকে। ফাইব্রোসিস ছড়িয়ে পড়লে সেখানে আর যকৃত নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে না, ফলে যকৃত সংকুচিত হয়ে পড়ে। তারা বলছে লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারনের কথা।

লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারন ও প্রতিকার
১.আমেরিকা ও ইউরোপের একিউট লিভার ফেইলুর সংক্রান্ত যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় তার প্রধান কারণ হলো ওষুধ জনিত যকৃৎ রোগ। ওষুধজনিত যকৃৎ ফেইলুর প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় ও চিকিত্সা না করতে পারলে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৯০%। সুতরাং ওষুধজনিত লিভার ইনজুরির ঘটনা সংখ্যায় কম হলেও পরিণতি মারাত্মক। অতএব নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঔষধ সেবন করবেন না।
যে কোনো ধরণের ওষুধই লিভার ইনজুরি করতে পারে। তবে সাধারণত যে ওষুধজনিত লিভার ইনজুরি বেশি পাওয়া যায় সেগুলো হলো-প্যারাসিটামল, আইসোনিয়াজিড়, মিথোট্রিক্সেট, ফিনাইটয়েন এবং ভ্যালপ্রোয়েট।
২. লাইফ স্টাইল আপনার কেমন ? সারাদিন অফিস, বাসা বা আড্ডা ? রিক্সা, গাড়ি, লিফট ব্যাবহার করছেন যাতায়াতে ? তাহলে নিশ্চিত থাকুন, খাবার থেকে যতটা ক্যালরি গ্রহন করছেন, খরচ করছেন তার থেকে অনেক কম। এতে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যায়াম অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করতে পারে । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারে। সারা শরীরে অক্সিজেন বাড়াতে পারে এবং স্ট্রেস কমাতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস করুন।
৩. আলট্রা প্রসেস ফুড এগুলো যকৃতের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক। এই খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, সাদা চিনি, বাজে তেল এবং অসাস্থ্যকর স্টার্চ। এতে আরও যোগ করা বিভিন্ন রাসায়নিক। স্বাদ বাড়ানোর জন্য। শরীরে অতিরিক্ত চর্বির জন্য এই খাবার গুলো দায়ী। যত খাবেন, ততই বাড়বে চর্বি আর বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের সম্ভাবনা। যেমন – হাই প্রেসার, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ ইত্যাদি।
৪. আমরা খুব ব্যাস্ত তাই খাবারের দিকে খেয়াল নেই। রেস্টুরেন্ট, পার্টিতে যা পাচ্ছি তাই খেয়ে নিচ্ছি। এই সব বাজে খাবার ক্ষতি করছে যকৃতের। যা আমরা আমলেই নিচ্ছি না। আমাদের খাবারের বেশিরভাগ অংশটাই হতে হবে ন্যাচারাল। সাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল সমৃদ্ধ। তাই আগামীকাল কি কি খাবেন সেটা আজকেই ঠিক করুন। সবচেয়ে ভালো শুক্রবারে সময় করে পুরো সাত দিনের খাবারের মেনু তৈরি করে ফেলুন।
জেনে নিন – কিভাবে সারাজীবন ঔষধ এবং ডাক্তার থেকে দূরে থাকবেন।

৫. স্ট্রেস ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। যা রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলে। শরীরের মধ্য বিভিন্ন ভাইরাস সুপ্ত অবস্থায় থাকে। দীর্ঘকালীন স্ট্রেস সুপ্ত ভাইরাস কে একটিভ করে দেয়। ভিটামিন বি১, ভিটামিন ডি, ব্যায়াম এবং দীর্ঘ হাঁটা সবই স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি প্রতিদিন নিশ্বাসের ব্যায়াম করতে ভুলবেন না।
৬. লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারনে আছে অ্যালকোহল। এটা চলে যায় সরাসরি লিভারে! সফট ড্রিংক বলে পরিচিত পানীয়গুলি সবচেয়ে খারাপ। কারণ এতে অ্যালকোহল এবং চিনি থাকে। অ্যালকোহলকে আপনার জীবন থেকে চিরতরে বিদায় করে দিন।
৭. ভিটামিনের ঘাটতি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট লিভার ফাংশনের জন্য অপরিহার্য। একে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করার জন্য ব্রোকলি, ফুলকপি এ জাতীয় সবজি খান। রসুন এবং পেঁয়াজ সহ সালাদ খান। ঘাস খাওয়ানো গরুর মাংস,নদী এবং সমুদ্রের মাছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে যা লিভারকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
লিভার ধ্বংসের গল্প
দাওয়াত পেলে আমাদের একটু বাড়তি প্রস্ততি থাকে। কোন পোশাক পড়ব, কিভাবে যাব। সেখানে কি কি খাবার পরিবেশন করা হবে, সেই চিন্তাও মাথায় আসে। অথচ দাওয়াত খাওয়ার সময় আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। কিন্ত বেশিরভাগ মানুষ দাওয়াতে একটু বেশি খাওয়ার চিন্তাই করেন। দাওয়াতে বেশি খান। এমনি একজন ভদ্রলোক গেছেন দাওয়াত খেতে।
পড়ুন – কিভাবে সহজেই একমাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়।

সুস্বাদু লোভনীয় সব খাবার টেবিলে চলে এসেছে। তিনি খেতে শুরু করেছেন। খেয়েই যাচ্ছেন, থামতে পারছেন না। একসময় থামতে বাধ্য হলেন। টেবিল ছেড়ে উঠে হাতমুখ ধুলেন, পরিস্কার হলেন। বিশ্রামের জন্য বসলেন। শুরু হল অস্বস্তি। ডানে কাত হলেন আরাম লাগে না, বামে ঘুরলেন হাঁসফাঁস লাগে। অস্বস্তি বাড়তেই থাকল। আর বসে থাকতে পারলেন না।
চলে গেলেন ডাক্তারের চেম্বারে। ডাক্তার আদ্যপান্ত শুনলেন। প্রেসার দেখলেন, নার্ভ চেক করলেন। ডাক্তারের সহকারীকে ডাকলেন। সহকারী দ্রুততার সাথে দুটো ট্যাবলেট নিয়ে আসলেন।
ডাক্তার বললেন ” এত খেয়েছেন কেন ? আপনি তো বিপদে আছেন। ট্যাবলেট দুটো খেয়ে নিন।
ভদ্রলোক বললেন ” ঔষধ খাওয়ার জায়গা যদি পেটে খালি থাকত, তাহলে তো আরও একটা রসগোল্লা খেয়ে আসতাম।”
সেলিম হোসেন – ১১/০৯/২০২৪ ইং
ছবি গুলো প্রতীকী
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.