মোবাইল ফোন বিহীন ১৩৪ দিন কিভাবে কাটল ? How did 134 days pass without a phone now a days?

মোবাইল ফোন

মোবাইল ফোনের বার্তা ও সেকাল-একাল: যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবর্তন

বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা জন্মের পর থেকেই দেখছে মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন, যার মাধ্যমে বার্তা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছে যায় মুহূর্তেই। স্মার্টফোন যোগাযোগকে এত সহজ করে দিয়েছে যে, তারা ভাবতেই পারে না—ফোন বা গাড়ি না থাকলে মানুষ কীভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করত। এমনকী, আমাদের ছোটবেলার ডাক বিভাগ কী কাজ করত, কেমন করে করত, সেটাও তাদের কাছে অজানা।

আজ আমরা জানব, আগেকার দিনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় খবর কীভাবে পৌঁছাত এবং দেখব এই ডিজিটাল যুগে এসেও একজন পিএইচডি শিক্ষার্থী কীভাবে ১৩৪ দিন মোবাইল ও ইন্টারনেট ছাড়া কাটিয়েছেন।

রাতে ঘুম আসে না, কেন আসে না। এখন থেকে চোখ বেয়ে ঘুম নামবে রাত এলেই। 

মোবাইল ফোন
আগেকার দিনের পোস্ট বক্স

১. সেকালের ডাক ব্যবস্থা: ডাক ও রানার

মুহাম্মদ শাহ তুঘলকের (১৩২৫-১৩৫১ সাল) শাসনকালে বার্তা আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত দ্রুত এবং সুসংগঠিত। তখনকার দিনে, বাদশাহর রাজধানী দিল্লি থেকে বর্তমান পাকিস্তানের শাহওয়ান শহর পর্যন্ত বার্তা পৌঁছাতে যেখানে সাধারণ মানুষের ৫০ দিন লাগত, সেখানে ডাক ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই বার্তা পৌঁছাত মাত্র ৫ দিনে

ডাক ব্যবস্থা যেভাবে কাজ করত:

  • ডাকের মাধ্যম: বার্তা পৌঁছানো হতো দুই ভাবে— পায়ে হেঁটে দৌড়ে এবং ঘোড়ার সাহায্যে। এই বার্তা বহনকে বলা হতো ‘ডাক’

  • রানার বা পিয়ন: যারা বার্তা বহন করে নিয়ে যেত, তাদের বলা হতো ‘রানার’

  • চৌকি: পৌনে এক মাইল দূরত্বে গ্রামের শেষ প্রান্তে রানারদের জন্য নির্ধারিত জায়গা ছিল, যাকে বলা হতো ‘চৌকি’

  • বার্তা হস্তান্তর: রানারের এক হাতে থাকত চিঠি এবং অন্য হাতে লাঠির মাথায় বাঁধা থাকত পিতলের ঘণ্টি। চৌকির কাছে পৌঁছানোর আগেই রানার ঘণ্টি বাজানো শুরু করতেন। ঘণ্টির শব্দ শুনে চৌকিতে অপেক্ষারত রানার প্রস্তুত হয়ে যেতেন এবং ডাক হাতে নিয়েই প্রাণপণে দৌড়াতেন। এভাবে দ্রুত এক রানার অন্য রানারের চৌকিতে বার্তা হস্তান্তর করে দিত।

  • ঘোড়ার ডাক: ঘোড়ার ডাকে ইরানের খোরাসান শহর থেকে তাজা ফলমূল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র খুব অল্প সময়ে দিল্লিতে পৌঁছে যেত। এমনকি, কখনো কখনো ডাক পিয়নরা ভয়ংকর অপরাধীকে স্ট্রেচারে বসিয়ে এক চৌকি থেকে আরেক চৌকিতে পৌঁছে দিত।

পরকীয়া বাড়ছে ভয়াবহ আকারে, কিন্ত কেমন টা হচ্ছে !!   

মোবাইল ফোন

২. ১৯৮০-এর দশক: ডাক বিভাগ ও পোস্ট অফিস

দ্রুতগামী রানারদের স্থান দখল করে নিয়েছিল যন্ত্রচালিত গাড়ি। ১৯৮০-এর দশকে বার্তা আদান-প্রদানে সরকারিভাবে প্রচলিত ছিল ডাক বিভাগ বা পোস্ট অফিস

  • পোস্ট বক্স: থানা সদর, হাটবাজার বা জনবহুল এলাকায় সরকারিভাবে একটি গোলাকার লাল রঙের বাক্স ঝোলানো থাকত, যেখানে এলাকার লোকজন তাদের চিঠিপত্র নির্দিষ্ট মুখ দিয়ে ফেলে যেতেন।

  • কার্যপ্রণালী: ডাক নিয়ে যখন গাড়ি আসত পোস্ট অফিসে, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বাক্স খুলতেন। বাক্সে জমা পড়া চিঠিপত্র সেই গাড়িতেই বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠিয়ে দেওয়া হত।

  • পিয়নের কাজ: পোস্ট অফিসে পৌঁছানো চিঠিপত্র পোস্ট মাস্টার বুঝে নিতেন এবং খাকি রঙের পোশাক পরা পিয়নরা পায়ে চালিত সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন।

কোন অফিস কর্মীদের ডেটিং এ যাওয়ার জন্য সুযোগ দেয় ? 

মোবাইল ফোন

৩. বর্তমান যুগ: মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের রাজত্ব 

সময় এখন আরও বদলে গেছে। এখনকার মানুষ চিঠিপত্রের কথা ভুলেই গেছে। এখন মোবাইল ফোনে কথা বলা হয়, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বা অহেতুক নানান তথ্য আদান প্রদান করা হয়। ইন্টারনেট সবকিছু সহজ করে দিয়েছে, তাই পোস্ট অফিসগুলোও তাদের আগের কার্যক্রমগুলো প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। 

মোবাইল ব্যাবহারে সাবধান থাকুন, নিজেকে বাচান। বলছেন ডাঃ নাবিল। 

মোবাইল ফোন   

৪. মোবাইল ফোনবিহীন ১৩৪ দিন: ইয়াং হাওয়ের অভিজ্ঞতা

বর্তমান যুগে স্মার্ট মোবাইল ফোনকে আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মতো মনে করা হয়। ঠিক এমন সময়ে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট ছাড়া টানা ১৩৪ দিন কাটিয়েছেন চীনের পিএইচডি শিক্ষার্থী ইয়াং হাও।

ইয়াং গত বছরের নভেম্বরে শানসি প্রদেশে তাঁর নিজের বাড়ি থেকে ছয় মাসের জন্য ভ্রমণে বেরিয়ে যান। তাঁর এই ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল: বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ছাড়া জীবনে কী কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে তা দেখা এবং তার অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করা।

সন্তানকে সফল দেখতে চান, জেনে নিন উপায়। 

মোবাইল ফোন

চ্যালেঞ্জ ও প্রাপ্তি:

  • ডিজিটাল চ্যালেঞ্জ: চীন প্রায় পুরোটাই ডিজিটাল দেশ। তাই প্রযুক্তি ছাড়া পথ চলতে গিয়ে তাঁকে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। সাধারণ কাজ, যেমন হোটেলে কক্ষ আগাম ভাড়া করা বা ট্যাক্সি ভাড়া করা, ভীষণ কঠিন হয়ে উঠেছিল।

  • মানুষের প্রতিক্রিয়া: তাঁর এই ফোনবিহীন জীবনযাপন দেখে বেশির ভাগ মানুষই অবাক হতেন। কেউ কেউ সন্দেহ করতেন, আবার কেউ কেউ একে “দারুণ মজার কিছু” বলে মনে করতেন।

  • অবিশ্বাস্য সুবিধা: নানা রকম সংকটের মুখে পড়লেও ইয়াং তাঁর মোবাইল ফোনবিহীন জীবনে অবাক করা কিছু সুবিধা খুঁজে পেয়েছেন। ক্রমাগত নোটিফিকেশনের ‘পিং’ শব্দ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়া জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি কোনো কাজে অধিক মনোনিবেশ করতে পেরেছেন।

  • অর্থপূর্ণ কাজ: বই পড়ে, লেখালেখি করে এবং নানা বিষয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করে ইয়াং সময় কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার নিজেকে প্রাচীন যুগের মানুষ মনে হয়েছে, সময় পরিভ্রমণ করে যে আধুনিক যুগে এসেছে।”

ইয়াং হাও এই অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করার এবং একটি তথ্যচিত্র তৈরির পরিকল্পনা করেছেন। আমরা তাঁর এই কৌতূহলী গবেষণার সাফল্য কামনা করি। 

যে বন্ধু সবসময় মোবাইল দেখতেই থাকে তাকে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন –  ০১/১১/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *