ভুল বিচারে কেন ভয়াবহ এই শাস্তি। 1 Wrongful trial-death penalty Why is this punishment terrible?

ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড

ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড

আদালতে জুতা ছুঁড়ে মারা। অতি সম্প্রতি বিচারকদের উদ্দেশ্যে জুতো ছুড়ে মারার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজারে আসামী কর্তৃক আর একটি দিনাজপুরে বাদী কর্তৃক। আমি অন্য একটি ভুল বিচারের মর্মান্তিক ঘটনা জানাবো। 

বিকেলের রোদ সোনালি রঙ ধারন করেছে। জেল খানার কন্ডেম সেলের দেয়ালে পরছে লালচে আলো। ভেতরে ফাঁসির আসামি কুদ্দুস মৃত্যুর অপেক্ষায়। ডেপুটি জেলার আমিনুর রহমান দ্রুত পায়ে হাঁটছেন সেলের দিকে। বয়সে নবীন, মাত্র ১১ মাস হল তিনি জয়েন করেছেন ডেপুটি জেলার হিসেবে।

ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড
ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড 

আরও পড়ুন – সাপের কামড় কেন ওয়ার্ল্ড নিউজ। 

আসামীর সেলে ঢুকলেন ডেপুটি জেলার। ফর্সা, সুদর্শন একজন যুবক বসে আছেন। ডেপুটি জেলার তাকে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করলেন ” আজকে রাতেই আপনার ফাঁসি হবে ” ।

যুবক ঘোষণা শুনে চুপচাপ থাকলেন, কোন চিৎকার নেই, চেঁচামেচি নেই। সাধারণত ফাঁসির আসামী ঘোষণা শুনে হট্ট গোল করেন। কিন্তু যুবক নির্বিকার, নির্লিপ্ত। 

আমিনুর সাহেব অবাক হলেন। বললেন ” আপানার কিছু বলার আছে ” ?

কুদ্দুস ঃ হ্যা, আমি শুধু ভাবছি বাবাকে হত্যা না করেও আমি আসামি। আমার ফাঁসি হতে যাচ্ছে। আমি দুনিয়া ছেড়ে যাচ্ছি। আমার বাচ্চা ছেলেটার কথা মনে পরছে।

ডেপুটি জেলার ঃ অর্থাৎ আপনি খুন করেননি !! তাহলে কে খুন করেছে ?

কুদ্দুস ঃ খুন করেছে আমার বোনে স্বামী। 

জেনে নিন – অবহেলায় রোগির মৃত্যু হলে কি করবেন। আইনত উপায় কি ? 

ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড
ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড

ডেপুটি জেলার ঃ কেন ? কিভাবে ?

কুদ্দুস ঃ ছোট বেলায় আমার মা মারা যান, আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আমার দুটো সৎ বোন আছে, তারা বিবাহিতা। আমার সৎ মা এবং তার এক মেয়ের স্বামী মিলে হত্যা পরিকল্পনা করেন। তাদের উদ্দেশ্য আমার বাবার সহায় সম্পদ দখলে নেয়া।

বউয়ের সাথে ঝগড়া করে একরাতে আমি বাবার বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলাম। বাবা অন্য ঘরে গিয়েছিলেন। হালকা শীতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলাম। হঠাৎ ঘরে ঢুকেন আমার বোনের স্বামী , তিনি কাঁথা টান দিয়ে সরিয়ে ফেলেন। আমাকে দেখতে পান, খুব দ্রুততার সাথে ঘর বেরিয়ে যান। এর কদিন পরেই একরাতে আমার বাবা খুন হন, তাকে জবাই করা হয়।

ডেপুটি জেলার ঃ আপনার কোন ইচ্ছা আছে, যেটা পুরন করতে পারি ?

যুবক ঃ হ্যা, আমি একটা চিঠি লিখব, এটা আমার মায়ের কাছে পৌঁছে দিবেন।

সন্তান কেন আপনার কথা শুনেনা। আজ থেকে সন্তান আপনার কথা শুনবে, কেন শুনবে জেনে নিন। 

ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড
ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড

ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড এবং চিঠি 

” মা তুমি তোমার জামাই মিলে আমারে হত্যা করলা আর আমারে দিলা ফাঁসি। কোর্টে সাক্ষী দিলা যে আমিই মারছি।  ঠিক আছে আমি তো চলে যাচ্ছি, তোমার সাথে দেখা হবে ওপারে। রোজ হাশরের মাঠে। তোমার সঙ্গে ওইখানে মোকাবেলা হবে। আর একটা কথা আমার বউ যদি অন্য কোথাও বিয়ে করতে চায়, তুমি বাধা দিওনা।

তুমি যতদিন বাইচা থাকবা ততদিন আমার ছেলেকে দেখবা। তুমি আমার ছেলেকে পড়াবা। আমি যখন একা কবরে যাচ্ছি তোমাকেও একা যেতে হবে। সে সময় তোমার মেয়ে এবং জামাই কেউ সঙ্গে  যাবে না। দুনিয়ায় তাদের কে নিয়ে এতবড় অপরাধ করলা, কিন্তু তাদের কাউকে তুমি পাবা না। তোমার সাথে চূড়ান্ত হিসাব নিকাশ হবে হাশরের ময়দানে “।

কুদ্দুস যখন চিঠি লিখছিল, তখন তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছিল। চোখের পানিতে কাগজ ভিজে যায়, লেখার কালি লেপটে যায়। জেলার আমিনুর রহমান চিঠিটি নিয়ে সিনিয়র অফিসার কে দিলেন। জানতে চাইলেন চিঠিটি কিভাবে পাঠাবেন। রেজিস্ট্রি ডাকে পাঠানোর পরামর্শ দিলেন সিনিয়র। নিজের টাকায় চিঠিটি পাঠালেন জেলার।

চমকে উঠল বিশ্ব, সন্তানের হত্যাকারীর সাথে কি অদ্ভুত আচরন করলেন মা। 

ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড
ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড

রাত আড়াইটার সময় ফাঁসি দেওয়ার সময় নির্ধারণ হল। নিয়ম অনুযায়ী এক ঘণ্টা আগে কুদ্দুস কে গোসল করানো হলো। এরপর সে নামাজ আদায় করল। মসজিদের ইমাম গিয়ে তাকে তওবা পড়ান।  রাত দেড়টার দিকে তাকে গোসল করানো হল, হুজুর তওবা পড়ালেন। কুদ্দুস দু রাকাত নামাজ আদায় করলেন।

ডেপুটি জেলার ঃ কিছু খাবেন ? কুদ্দুস ঃ একটু দুধ খাব। দ্রুত দুধের ব্যাবস্থা করা হলো। দুধ খাওয়া শেষে কুদ্দুস বলল ” স্যার চলেন ” ।

নিয়ম অনুযায়ী দুই হাতে হ্যান্ড কাফ পরিয়ে, সেল থেকে পঞ্চাস গজ দূরে ফাঁসির মঞ্চে নেয়া হল কুদ্দুস কে। ফাঁসির মঞ্চে যেতে আসামি যাতে দৌড় না দেয় বা অন্য কিছু না করে তাই হ্যান্ড কাফ পরানো হয়। কুদ্দুস কোন ঝামেলা করল না। ফাঁসির রশি গলায় ঝোলাল। এ ম্যাজিস্ট্রেট ডি জি সেনগুপ্ত, সিভিল সার্জন আব্দুল লতিফ, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কারাগারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভুল বিচার রায়ের কার্যক্রম থামাল না। 

সকালে লাশ নেয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয়। লাশ গ্রহন করতে তার মা আসেনি। এসেছিল তার বড় বোন ও তার স্বামী। কয়েক ঘণ্টা আগেই জেলার কুদ্দুসের মুখ থেকে শুনেছিলেন তার সৎ বোন এবং তার স্বামী মিলে বাবাকে হত্যা করেছে। জেলার তাদের দিকে এগিয়ে গেলেন ” আপনারা দুজন মিলে বাবাকে হত্যা করেছেন, আর দোষ চাপিয়েছেন কুদ্দুসের উপর।” তারা দুজন থতমত খেয়ে যান এবং অস্বীকার করেন। 

আগেকার দিনে গ্রাম বাংলায় কিভাবে বিয়ে নির্ধারিত, জানুন সেই কাহিনি। 

ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড
ভুল বিচারে মৃত্যুদণ্ড

ভুল বিচারের এই ঘটনাটি উজিরপুর বরিশালের। ১৯৬৪ সালে বরিশাল জেলা কারাগারে ফাঁসিটি কার্যকর হয়। ভুল বিচার এমন হয়, এমন ভুল বিচারে অনেক বড় ক্ষতি হয়, কিন্ত ক্ষতি পুরনের কোন সুযোগ থাকেনা। আমরা সবার জন্য দোয়া করি কেউ যেন এমন ভুল বিচার এবং মর্মান্তিক ঘটনার শিকার না হন।  

সেলিম হোসেন –  ১৮/১২/২০২৩ – ছবিগুলো প্রতীকী 

4 thoughts on “ভুল বিচারে কেন ভয়াবহ এই শাস্তি। 1 Wrongful trial-death penalty Why is this punishment terrible?

  1. Pingback: মোসাদ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, স্মার্ট গোয়েন্দা সংস্থা !! 1 detective department Israel - OVIZAT

  2. Pingback: প্রবাসীদের বঞ্চনা - প্রবাসীদের কষ্ট। রেমিট্যাঁন্স যোদ্ধা শুধুই গাল ভরা নাম। Bangladeshi expatriate worker feel pain abroad - OV

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *