ভিটামিন ডি৩: হাড়ের শক্তি, রোগ প্রতিরোধ ও ওজন কমানোর রহস্য (কোভিডে এর ভূমিকা কী?)
ভিটামিন D3 হলো চর্বিতে দ্রবণীয় একটি অপরিহার্য খাদ্য উপাদান, যা শুধু হাড় ও দাঁতের গঠন নয়, বরং শরীরের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এর গুরুত্ব নতুন করে আলোচিত হয়েছে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়।
ডাক্তারের পিছনে ছুটছেন, ঔষধ খাচ্ছেন। কিন্ত জানেন না ওমেগা৩’র কথা ! নিয়মিত ওমেগা৩ খাবেন।

কোভিডে ভিটামিন ডি৩ এর ভূমিকা: পশ্চিমা বিশ্বের অভিজ্ঞতা
করোনা মহামারীর সময় আমরা একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি—ইউরোপ, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি ছিল, অথচ আফ্রিকা ও এশিয়াতে করোনার প্রভাব ছিল তুলনামূলকভাবে সামান্য।
অনেকের ধারণা, এর একটি মূল কারণ ছিল ঐ সব দেশের মানুষের শরীরে ভিটামিন D এর অভাব। বেশ কিছু গবেষণায় এই মত দেওয়া হয়েছে যে, পর্যাপ্ত ভিটামিন D শরীরে থাকলে তা করোনা ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বডিকে রক্ষা করতে পারে। যারা রোদে কাজকর্ম করেন বা দিনের কিছু সময় রোদে কাটান, তাদের দেহে এই ভিটামিনটির পর্যাপ্ত উপস্থিতি থাকায় তারা তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ভিটামিন D3 (যা মূলত ভিটামিন D এর একটি রূপ) এর আসল কাজ কী এবং কেন এটি ছাড়া আমাদের জীবনযাত্রায় এত সমস্যা তৈরি হয়, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ঔষধ ছাড়াই মাত্র একমাসে ফ্যাটি লিভার দূর করুন।
ভিটামিন D3 এর মূল কাজ ও উপকারিতা
ভিটামিন D1, D2 এবং D3 এর মধ্যে ভিটামিন D3 হলো শরীরের জন্য সবচেয়ে সক্রিয় এবং কার্যকরী রূপ। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ করা।
এখানে ভিটামিন D3 এর প্রধান উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো:
১. হাড়কে মজবুত করে (Osteporosis রোধ)
ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম শোষণ করে এই ভিটামিন, যা হাড়ের মূল গঠন তৈরি করে। ভিটামিন D এর অভাবে হাড় দুর্বল হয় এবং বয়স্কদের মধ্যে অস্টিওপরোসিস রোগ হয়, যার ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
২. শিশুদের জন্য অপরিহার্য
শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের হাড়ের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে শিশুদের হাড়ে বিকৃতি বা রিকেট রোগ হতে পারে।
৩. দাঁতের ক্ষয় রোধ
ভিটামিন D সাপ্লিমেন্ট শিশু ও বয়স্কদের দাঁতের ক্ষয়রোধে সাহায্য করে। এটি দাঁতের মিনারেলের উন্নতি ঘটিয়ে দাঁতকে শক্তিশালী করে।
৪. পেশীর শক্তি বৃদ্ধি
শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এই উপাদানটি পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
৫. ওজন কমানোর জার্নিতে সহায়ক
যারা ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় আছেন, তাদের জন্য ভিটামিন D3 খুবই প্রয়োজনীয়।
- এটি ক্ষুধা কম অনুভব করায়, ফলে অপ্রয়োজনীয় শর্করা গ্রহণের প্রবণতা কমে।
- এটি পরিশ্রমের ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্লান্তি ভাব কমায়। বেশি সময় পরিশ্রম করলে শরীর থেকে চর্বি ঝরবে বেশি।
কোন বদ অভ্যাস রাতের ঘুম নষ্ট করে ?

ভিটামিন D3 এর অভাবজনিত প্রধান লক্ষণ
অনেকেই আছেন, যারা নিজেরাও জানেন না যে তারা ভিটামিন D এর অভাবে ভুগছেন। নিচের লক্ষণগুলো নিজের মধ্যে দেখতে পেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
- ক্লান্তি ও অবসাদ: এর ঘাটতি হলে শরীর দ্রুত ক্লান্ত লাগে এবং অবসাদগ্রস্ত লাগে।
- মাংসপেশির দুর্বলতা: মাংসপেশীর দুর্বলতা বা কাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- বিষণ্ণ মন: এই ভিটামিনটির অভাব বিষণ্ণতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ফলে মানসিক চাপ অনুভূত হতে পারে এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
- হাড় ভেঙে যাওয়া: হাড় দুর্বল হয়ে যায় বলে সহজেই হাড় ফাটল বা ভেঙে যেতে পারে। হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথাও হতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপের প্রভাব: এই খাদ্য উপাদানের অভাবে উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি: অস্টিওপরোসিস, জরায়ু ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং মেদবৃদ্ধি প্রতিরোধে এই উপাদানের ভূমিকা আছে।
যদি নিজের মধ্যে ওপরের লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন, তাহলে কাছাকাছি হাসপাতালে গিয়ে এর মাত্রা পরীক্ষা করে নিন।
ডিম নিয়ে নানান কথা। প্রতিদিন কয় টা ডিম খাবেন জেনে নিন।

ভিটামিন D3 এর প্রাকৃতিক ও খাদ্য উৎস
ভিটামিন D3 এর সবচেয়ে ভালো খবর হলো—এর মূল উৎসটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে!
১. সূর্যের আলো (বিনামূল্যের উৎস)
ভিটামিন D3 এর মূল প্রাকৃতিক উৎস হলো সূর্যের আলো, বিশেষ করে UV-B রশ্মি।
- সময়: সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে যখন সূর্যের তেজ বেশি থাকে, তখন ত্বক অনাবৃত অবস্থায় থাকলে ত্বকের কোষ ফোটোলাইসিস প্রক্রিয়ায় সূর্যালোককে ভিটামিন D3 তে রূপান্তরিত করে।
- পরিমাণ: প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট রোদে কাটানোর চেষ্টা করুন।
ভিটামিন ডি৩ নিয়ে বলছেন ডাঃ এরিক বারগ।

২. ভিটামিন D3 সমৃদ্ধ ৬টি খাদ্য উৎস
সূর্যের আলো ছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট খাবার থেকেও এই ভিটামিন পাওয়া যায়:
১. ডিমের কুসুম: ডিমের কুসুম বাদ না দিয়ে খান। এটি সবরকম ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ।
২. কলিজা: গরু বা খাসির কলিজা (বিশেষত বাচ্চাদের চিকেন ফ্রাই না খাইয়ে কলিজা খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে)।
৩. মাছের তেল: কড লিভার অয়েল বা মাছের তেল। চাষের মাছের চেয়ে নদীর মাছ বা সামুদ্রিক মাছে বেশি ভিটামিন D থাকে।
৪. দুধ: যে গরু রোদে যায় এবং ঘাস খায়, সেই গরুর দুধ ভিটামিন D3 এর ভালো উৎস।
৫. চিজ: বিভিন্ন রকম চিজ থেকেও এটি পাওয়া যায়।
৬. সাপ্লিমেন্ট: যদি খুব বেশি ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন D3 সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
জীবনে সফল হতে যে বইটি আপনার পড়া প্রয়োজন।

ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে দিন।
সেলিম হোসেন – তাং ২০/০১/২০২৫ ইং Reference: Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.










