বেকিং সোডার ১১ টি চমৎকার ব্যাবহার। লেবু বেকিং সোডা শরীর কে এলকালাইন মুডে রাখে। 9 Great Uses of Baking Soda

বেকিং সোডার

বেকিং সোডার ১১টি বিস্ময়কর ব্যবহার: স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ও ক্রীড়াক্ষেত্রে এর ভূমিকা 

বেকিং সোডা, যা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (Sodium Bicarbonate) নামে পরিচিত। কেবল রান্নাঘরের উপাদান নয়। এটি আধুনিক ক্রীড়া বিজ্ঞান থেকে শুরু করে ঘরোয়া স্বাস্থ্য রক্ষায় এক অসাধারণ প্রাকৃতিক উপাদান। কেন এটি এত উপকারী এবং এর সঠিক ব্যবহার কী—চলুন জেনে নেওয়া যাক।

১. বেকিং সোডা ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি: ক্রীড়াবিদদের গোপন শক্তি

এটি পেশী ও পারফরম্যান্স বাড়াতে কতটা কার্যকর, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে একাধিক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।

ক. বর্ধিত গতি ও শক্তি

২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন জার্নাল অব স্পোর্টস (International Medicine Journal of Sports) এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রানাররা বেকিং সোডা সেবনের পর যখন দৌড়ান, তখন তাদের গতি, শক্তি এবং ক্লান্তি (Fatigue) মোকাবিলা করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

খ. খেলাধুলার পারফরম্যান্স

এই গবেষণার পর অনেক টেনিস খেলোয়াড় ও অ্যাথলেট এটি খাওয়া শুরু করেন। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন (The New England Journal of Medicine) ২০১০ সালে গবেষণার ফলাফল দেখিয়ে দেখিয়েছেন যে, নিয়মিত বেকিং সোডা সেবনকারী টেনিস খেলোয়াড়দের স্পোর্টস পারফরম্যান্স ও শট পাওয়ারের ধারাবাহিকতা বাড়ে।

ডাঃ ডোনালড-এর মতো বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন, এটি শরীরের পিএইচ (pH) স্বাভাবিক রাখতে এবং মেটাবলিজম (Metabolism) বাড়াতে সাহায্য করে, যা অ্যাথলেট এবং সাধারণ মানুষ—উভয়ের জন্যই উপকারী।

বেকিং সোডার ১১ টি চমৎকার ব্যাবহার
বেকিং সোডার ১১ টি চমৎকার ব্যাবহার

২. বেকিং সোডার রাসায়নিক উপকারিতা 

এটি মূলত অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, সুদিং, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, ডিটক্সিফাইং, এবং রিলাক্সিং প্রপার্টিজে ভরপুর। যারা গ্যাসের ট্যাবলেট খান, তারা এটি বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। কারণ এটি প্রাকৃতিক এবং গ্যাসের ট্যাবলেটের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এতে নেই।

বেকিং সোডা ও লেবু: বাফার কম্পোনেন্ট (Buffer Component)

লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে এই যৌগতে থাকা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট মিশে সোডিয়াম সাইট্রেট তৈরি করে, যা মূলত একটি বাফার কম্পোনেন্ট

বাফার কম্পোনেন্টের কাজ কী? এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ পিএইচ-এর মাত্রা সঠিক রাখতে সাহায্য করে। স্ট্রেস, বদহজম বা মেটাবলিক সমস্যার কারণে শরীরের পিএইচ মাত্রা বেড়ে বা কমে যেতে পারে। বাফার কম্পোনেন্ট শরীরকে একটি অ্যালকালাইন মুডে রাখে, যা সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

টিপস: প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই এই বাফার কম্পোনেন্টটি খেয়ে নিতে পারেন।

বেকিং সোডা অসাধারন উপকারী এই ন্যাচারাল উপাদান। 

বেকিং সোডার ১১ টি চমৎকার ব্যাবহার
বেকিং সোডার ১১ টি চমৎকার ব্যাবহার

৩. বেকিং সোডার ১১টি অসাধারণ ব্যবহার 

এই প্রাকৃতিক উপাদানটি আপনার স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় নানাভাবে কাজে আসতে পারে:

ক্রমিক উপকারিতা ব্যাখ্যা ও ব্যবহার পদ্ধতি
১. অম্বল ও অ্যাসিড সমস্যার উপশম এটিতে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট থাকায় এটি পেটের অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণকে নিউট্রালাইজ করে। ফলে অম্বল ও পেটের অন্যান্য সমস্যা দ্রুত কমে।
২. শরীরের পিএইচ ভারসাম্য রক্ষা শরীরের অম্লের পরিমাণ কমিয়ে এবং পিএইচ-এর ভারসাম্য ঠিক রেখে অস্টিওপরোসিস বা আর্থারাইটিসের মতো সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩. মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI) এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করলে এটি মূত্রনালির সংক্রমণের উপশম করার অন্যতম ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে।
৪. পেশীগত টান ও ব্যথা উপশম অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে শরীরে জমা হওয়া ল্যাকটিক অ্যাসিডের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। পানির সঙ্গে মিশ্রিত বেকিং সোডা পেশীর টানটান ভাব ও ব্যথার প্রতিষেধক হিসাবে অত্যন্ত উপকারী।
৫. কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি মার্কিন সোসাইটি অফ নেফ্রোলজির একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এটি শরীরের কিডনির কার্যকলাপ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
৬. গেঁটে বাত (Gout) উপশম ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ মূত্র ও টিস্যুতে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে গেঁটে বাত দেখা যায়। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেকিং সোডা অসম্ভব উপকার করে।
৭. প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর (Exfoliator) মৃত কোষ অপসারিত করে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে এবং ত্বকের পুরনো দ্যুতি ফিরিয়ে আনে। ব্যবহার: পানির সঙ্গে মিশিয়ে মুখে বৃত্তাকারে ঘষে লাগান। (সপ্তাহে দুই দিনের বেশি নয়)।
৮. ব্রণ ও ফুসকুড়ি কমায় টিনএজারদের ব্রণের মারাত্মক সমস্যা কমাতে এটি হাতের কাছেই রাখুন। ব্রণ এবং মুখে হওয়া ফুসকুড়ি কমাতে এটি অসাধারণ উপকার করে।
৯. ঠোঁটের কালোভাব দূরীকরণ মধু এবং বেকিং সোডা মিশিয়ে প্রতিদিন তিন মিনিট ঠোঁটে আলতোভাবে লাগিয়ে রাখলে ঠোঁটের কালোভাব দূর হতে পারে।
১০. দাঁত পরিষ্করণ ও দাগ ওঠানো দাঁত পরিস্কারে এটি অদ্বিতীয়। দাঁতের ওপর থেকে যেকোনো দাগ ওঠানোর জন্য এর ভূমিকা অসাধারণ।
১১. চুল নরম করা ও চুল গজানো কোনো বিজ্ঞানসম্মত মতামত না থাকলেও, অনেকে মনে করেন এটি চুলকে নরম করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

পড়ুন – লেবুর সাথে কিভাবে তৈরি করবেন উপকারী পানীয়। 

বেকিং সোডার ১১ টি চমৎকার ব্যাবহার
বেকিং সোডার ১১ টি চমৎকার ব্যাবহার

৪. বেকিং সোডা কখন খাবেন? (সঠিক নিয়ম)

বেকিং সোডা যখন তখন খাওয়া যাবে না, কারণ এর পিএইচ প্রভাব হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

  • খাবার পরে: খাবার খাওয়ার দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরে এটি গ্রহণ করুন। অর্থাৎ, যখন পেটের খাবার হজম প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে চলে যায়।
  • খাবার আগে: খাবার গ্রহণের এক ঘণ্টা আগেও এটি খেতে পারেন (খালি পেটে)।
  • রাতে: ঘুমানোর আগে খালি পেটে খেতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: খাবার গ্রহণের পরপরই বেকিং সোডা খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

মাছের একেতো সুস্বাদু, সেই সাথে উপকারী 

বেকিং সোডার ১১ টি চমৎকার ব্যাবহার
বেকিং সোডার ১১ টি চমৎকার ব্যাবহার

উপসংহার:

এখন থেকে এক কৌটা বেকিং সোডা আপনার হাতের কাছেই রাখুন। এটি আপনার এবং পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষায় দারুণ উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান হতে পারে। পরিচিত সবার সুস্থতার জন্য পোস্টটি শেয়ার করে দিন। 

সেলিম হোসেন – ১১/০৮/২০২৪ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া

বিশেষ কৃতজ্ঞতা (Reference): Dr. Eric Berg, Dr. Mujibul Haque, Dr. Jahangir Kabir, Dr. Mujibur Rahman, Dr. Mandell, Dr. Jason Faung, Dr. Sten Ekberg and many medical health journals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *