প্রতিদিন বাদাম কেন খাবেন: স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু লাভের রহস্য
বাদাম শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং সব বাদামেই রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগুণ। আপনি কি জানেন, পৃথিবীর পাঁচটি বিশেষ এলাকা (ইউএসএর লোমা লিন্ডা, জাপানের ওকিনাওয়া, ইতালীর সার্ডিনিয়া, গ্রীসের ইকারিয়া, কোস্টারিকার নিকোয়া), যাদেরকে ‘ব্লু জোন’ বলা হয়, সেখানকার মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৯৯ বছর? অবাক করা বিষয় হলো, তাদের খাদ্যাভ্যাসের একটি প্রধান অংশ জুড়ে রয়েছে বীজ জাতীয় খাবার, যার মধ্যে বাদাম অন্যতম।
আসুন, আমরা সহজলভ্য চিনা বাদাম থেকে শুরু করে কাজু ও কাঠ বাদামের অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।
শুধু সবজিই খাবেন। সুস্থতা ধরে রাখতে খাবেন। জেনে নিন রেসিপি

চিনা বাদাম খাওয়ার ৭টি প্রধান কারণ:
১. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: নতুন গবেষণা অনুযায়ী, শরীরে ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) থেকে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিসের মতো কঠিন রোগ সৃষ্টি হয়। বাদামের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এই প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, ফলে শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমতে পারে না।
২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: রাতে ১০-১৫টি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩. বার্ধক্য রোধ: এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের বুড়িয়ে যাওয়াকে ধীর করে দেয় এবং কঠিন রোগকে শরীরে বাসা বাঁধতে বাধা দান করে।
৪. ওজন ও চর্বি হ্রাস: এই খাবারটি শরীরের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি বাজে খাবার ত্যাগ করলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ওজন কমবে দ্রুত। শরীর হবে ফিট এবং স্মার্ট। জেনে নিন ওজন কমানোর জার্নি।

৫. শক্তি বৃদ্ধি: প্রতিদিন একমুঠো খেলে আপনার সারাদিনের এনার্জি ঠিক থাকবে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
৬. মস্তিষ্কের সুস্থতা: বাদামে থাকা ভিটামিন বি৩ মস্তিষ্কের সুস্থতা নিশ্চিত করে এবং নিউরনের মাত্রা ঠিক রাখে।
৭. ক্যানসার প্রতিরোধ: প্রতিদিন মাত্র ১০ গ্রাম চিনা বাদাম খেলে ক্যানসার ও হৃদরোগসহ নানা রকম মরণব্যাধি থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
ছোলাকে বলা হয় পাওয়ার হাউস। কেন বলা হয় ? ছোলা কিভাবে খাবেন, কখন খাবেন জেনে নিন।

২. কাজু বাদাম (Cashews): হৃদযন্ত্রের বন্ধু
কাজু বাদাম প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। পরিমিত মাত্রায় নিয়মিত কাজু খেলে স্বাস্থ্যের জন্য নানা উপকার পাওয়া যায়।
কাজু বাদামের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা:
১. হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে: কাজু হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী চর্বি, তন্তু, প্রোটিন এবং আরজিনি নামক উপাদান ধারণ করে। এটি শরীরে প্রদাহ কমায়, যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে।
২. হাড় মজবুত করা: কাজু বাদামে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন কে আছে। নিয়মিত খেলে শরীরে খনিজের চাহিদা পূরণ হয় এবং হাড়কে সুগঠিত ও শক্তিশালী করে।
৩. দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষা: এতে প্রচুর পরিমাণে লুটেন ও জিয়াক্সাথিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা চোখকে আলোক রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং চোখে ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়।
৪. রক্তস্বল্পতা দূর: কাজুতে কপার বা তামা থাকে, যা রক্তের সমস্যা দূর করে। রক্তে কপারের অভাব হলে যে লৌহ স্বল্পতা দেখা দিতে পারে, তা কাজু পূরণ করে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য কাজু উপকারী। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং শক্তি পেতে শরীরে জমাকৃত চর্বি ভাঙতে উৎসাহিত করে।
পিনাট বাটার কেন খাবেন ? দেখুন ডাঃ এরিক বারগের ভিডিও।

৩. কাঠ বাদাম (Almonds): মস্তিষ্কের পুষ্টি ও ত্বকের যত্ন
কাঠ বাদাম বা আলমন্ডকে পুষ্টির পাওয়ার হাউস বলা যায়। এতে রয়েছে ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম।
কাঠ বাদামের বহুমুখী উপকারিতা:
১. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: মস্তিষ্ক প্রায় পুরোটাই ফ্যাটে তৈরি। কাঠ বাদামে থাকা ফ্যাট, রিবোফ্লাভিন ও এল ক্যারনিটিন নামক পুষ্টিগুণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে, কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং স্মৃতিভ্রম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
২. হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন-ই থাকে। ভিটামিন-ই হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ম্যাগনেসিয়াম হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৫০% পর্যন্ত কমে।
৩. ইনসুলিন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: খাবারের পর কাঠবাদাম খেলে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফসফরাস ও সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৪. হাড় ও দাঁতের সুরক্ষা: এতে থাকা ফসফরাস, মিনারেল ও ভিটামিন হাড় ও দাঁতকে মজবুত করে এবং অস্টিওপরোসিস (হাড়ের ক্ষয় রোগ) প্রতিরোধে সাহায্য করে।
কোন খাবার গুলো সাস্থ্যকর ? কোন খাবার কোন অসুখ গুলো প্রতিরোধ করে ? এ বিষয়ে সবারই জ্ঞ্যান থাকা দরকার।

৫. হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর: কাঠ বাদামে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে।
৬. ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য: এটি চুল ও ত্বকের জন্য খুব ভালো। এর শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বার্ধক্যের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ: এটি খাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ খিদে কম থাকে, ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায় এবং বিপাকের হার বেড়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ত্বক ফর্সা টক দই কেন ? টক দইয়ের উপকারিতা জানলে আজ থেকে প্রতিদিন খাবেন।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ
এই তিনটি বাদামের সুস্বাদু পুষ্টি বিবেচনা করে আমি নিজেই প্রায়শই তিন ধরনের বাদাম একসাথে খাই। ঘি এবং পিঙ্ক সল্ট সহযোগে হালকা রোস্ট করলে এটি খুবই সুস্বাদু হয়।
আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বাদাম অন্তর্ভুক্ত করে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন যাপন করুন।
সেলিম হোসেন – তাং ০৪/১১/২০২৪ ইং References: Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.










