ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় ৫ টি, শুরুটা সাধারন, শেষটা ভয়ঙ্কর। 5 ways to get rid of fatty liver that starts out simple, ends up terrifying

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি

ফ্যাটি লিভার: কারণ, লক্ষণ ও ৫টি প্রাকৃতিক মুক্তির উপায়

ফুলহাতা শার্টের আড়াল থেকেও যখন পেটটি সামনের দিকে বেশ ফুলে ওঠে, তখন ধরে নেওয়া যায়, সেই ব্যক্তি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত অথবা আক্রান্ত হওয়ার পথে। কর্মব্যস্ত কর্পোরেট জীবন বা অলস জীবনযাপনের কারণে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ে। ফ্যাটি লিভার একটি নীরব সমস্যা, যা সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

ফ্যাটি লিভার: সমস্যার গভীরতা ও চিকিৎসার ব্যয়

সারা বিশ্বে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ মানুষ এই লিভারের সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা নেহাত কম নয়; প্রায় সাড়ে ৪ কোটি লোক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। হিসাব করে দেখা গেছে, একজন রোগীর একবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গড়ে খরচ হয় প্রায় ১৬,৮১০ টাকা। এই বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসার মোট খরচ দেশের বার্ষিক স্বাস্থ্য বাজেটের চেয়েও দ্বিগুণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এই বিশাল অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত চাপ মোকাবিলায় লাইফস্টাইল বা জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলা আবশ্যক।

পেটের চর্বি ঝরানো খুবই সহজ, শুধু উপায় টা জানতে হবে। 

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি

ফ্যাটি লিভার কী ও কেন হয়?

লিভার (যকৃৎ) হলো আমাদের শরীরের প্রধান ডিটক্স অর্গান এবং পুরো শরীরের ম্যানেজার। এটি পুষ্টি, হরমোন এবং টক্সিসিটির ভারসাম্য বজায় রাখে। লিভার আমাদের শরীরের শক্তি উৎপাদনের অন্যতম প্রধান অঙ্গ।

যখন অতিরিক্ত চর্বি লিভারের কোষে জমা হয়, তখনই তাকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়।

ফ্যাটি লিভারের প্রকারভেদ

এই রোগ সাধারণত দুই ধরনের হয়: ১. অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার: যারা নিয়মিত অ্যালকোহল পান করেন, তাদের এটি হওয়ার প্রবণতা বেশি। ২. নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (NAFLD): এটি আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়।

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ

ফ্যাটি লিভার হওয়ার প্রধান কারণ ফ্যাটযুক্ত খাবার নয়, বরং অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ও দুর্বল জীবনযাপন।

  • কার্বোহাইড্রেটের অতিরিক্ত গ্রহণ: শরীরে গৃহীত কার্বোহাইড্রেট পুরোপুরি কাজে না লাগলে তা প্রথমে গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা থাকে। এই গ্লাইকোজেন খরচ না হলে তিন দিন পর সেটি ফ্যাটে পরিণত হয় এবং লিভারের গায়ে জমা হয়।
  • ব্যায়াম না করা: সারাদিন ঘরে বসে থাকা বা অফিসে দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে ক্যালোরি ব্যয় না হওয়া।
  • অন্যান্য ঝুঁকি: ডায়াবেটিস বা রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকা, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ এবং নির্দিষ্ট বয়সের পর বংশগত কারণেও যকৃতে চর্বি জমতে পারে।

শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার ধ্বংসের কারন গুলো জেনে নিন। 

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি

ফ্যাটি লিভারের গ্রেডিং

চর্বি জমার পরিমাণের ভিত্তিতে ফ্যাটি লিভারকে গ্রেড করা হয়:

  • ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১: লিভারে ৫% থেকে ১০% চর্বি জমা হলে এই পর্যায় ধরা হয়। এটি প্রাথমিক এবং সবচেয়ে নিয়ন্ত্রণযোগ্য পর্যায়। এই অবস্থায় সতর্ক হলে দ্রুত নিরাময় সম্ভব।
  • ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২: ১০% থেকে ২৫% চর্বি জমা হলে।
  • ফ্যাটি লিভার গ্রেড ৩: ৩০% এর বেশি চর্বি জমা হলে এই পর্যায়কে গুরুতর হিসেবে ধরা হয়, যা পরবর্তীতে লিভার সিরোসিসের দিকে যেতে পারে।

হেলদি খাবার গুলো সম্পর্কে সবারই জানা দরকার। 

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি

ফ্যাটি লিভারের সাধারণ লক্ষণ

অনেকেই শুরুতে এই রোগের লক্ষণ বুঝতে পারেন না। ফ্যাটি লিভার থেকে প্রথমে হেপাটাইটিস বা লিভারের প্রদাহ হয়, যা সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না হলে লিভার সিরোসিস হতে পারে। শুরুতে সতর্ক হওয়ার জন্য এই লক্ষণগুলো জানা জরুরি:

১. হজমে সমস্যা এবং খাবারে অরুচি। ২. খাওয়ার সময় বা পরে বমি বমি ভাব হওয়া। ৩. কোনো কোনো সময় পেট ফুলে যাওয়া। ৪. শরীরের মাসল ভেঙে ওজন কমে যাওয়া। ৫. মাথাব্যথা এবং ডিপ্রেশন বা মন খারাপ হওয়া।

রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রধান পরীক্ষা

ডাক্তাররা সাধারণত নিচের পরীক্ষাগুলো করিয়ে থাকেন:

  • লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT): SGPT (ALT) এবং SGOT (AST)-এর মাত্রা বেড়ে গেলে যকৃতের প্রদাহ বা ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়।
  • আলট্রাসনোগ্রাফি: লিভারে চর্বি জমার মাত্রা দেখার সবচেয়ে সাধারণ ও সহজ উপায় (Grade ১, ২, ৩)।
  • ফাইব্রোস্ক্যান / ইলাসটোগ্রাফি: লিভারের শক্ত হওয়ার মাত্রা (ফাইব্রোসিস/স্কারিং) পরিমাপ করে।
  • রক্ত পরীক্ষা: কোলেস্টেরল (Lipid Profile), ট্রাইগ্লিসারাইড, ফাস্টিং ব্লাড সুগার এবং হেপাটাইটিস পরীক্ষা করা হয়।

বেকিং সোডা কিভাবে খাবেন জেনে নিন।

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির ৫টি প্রাকৃতিক উপায়

ফ্যাটি লিভারের সমস্যাকে ঔষধ ছাড়াই জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিরাময় করা যায়।

১. খাদ্যাভ্যাসে কঠোর নিয়ন্ত্রণ (Low-Carb Diet)

  • বর্জনীয় খাবার: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায় এমন খাবার (যেমন: ভাত, রুটি, মিষ্টি, কেক, বিস্কুট, প্যাকেটজাত জুস, কোমল পানীয়, ফাস্টফুড) আপাতত বন্ধ করে দিন।
  • গ্রহণীয় খাবার: প্রতিবার খাবারের আগে এক বাটি সালাদ খাবেন। এরপর শাকসবজি, নদীর বা সমুদ্রের মাছ, ডিম ইত্যাদি খাবেন।
  • তেল পরিবর্তন: রান্নার তেল পরিবর্তন করে খাঁটি সরিষার তেল, অলিভ ওয়েল বা নারিকেল তেল ব্যবহার করুন।
  • হজম সহায়ক: হজম ক্ষমতা বাড়াতে খাবারের সাথে লেবুর রস অথবা ভিনেগার (অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার) খেতে পারেন।

আজীবন স্লিম থাকার সহজ উপায়। 

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি

ফ্যাটি লিভারের খাদ্য তালিকা   

২. নিয়মিত ব্যায়াম ও ভিটামিন ডি নিশ্চিত করা

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় রোদে কাটাবেন। এতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি নিশ্চিত হবে।
  • দৌড়, হাঁটা, বা জিম করার ফলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ব্যয় হবে এবং লিভারের গায়ে লেগে থাকা চর্বি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ঝরে যাবে।

৩. ফাস্টিং (বিরতিমূলক উপবাস) অনুসরণ করা

  • ফাস্টিং বা বিরতিমূলক উপবাস লিভারের চর্বি গলিয়ে শক্তিতে রূপান্তরের একটি কার্যকর উপায়।
  • ফাস্টিং শরীরের কোষগুলোকে রিসাইকেল করতে সাহায্য করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং লিভারকে সতেজ করে তোলে।

৪. স্বাস্থ্যকর ঘুম নিশ্চিত করা

  • পর্যাপ্ত এবং ভালো ঘুম লিভারসহ শরীরের সব অঙ্গের বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধারের জন্য অপরিহার্য। ঘুমের অভাব মেটাবলিক চাপ বাড়ায়।

৫. অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা রক্তে অতিরিক্ত চর্বি (কোলেস্টেরল) থাকলে হেলদি লাইফস্টাইল অনুসরণ করে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যিক।

যদি আপনি এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে একমাস অনুসরণ করতে পারেন, তবে ফলাফল দেখে আপনি নিজেই আনন্দিত হবেন। ফ্যাটি লিভার নিরাময়যোগ্য। জীবনযাত্রা পরিবর্তনই এর প্রাকৃতিক সমাধান।

ফ্যাটি লিভার আক্রান্ত বন্ধুকে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ২৩/১০/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী

Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *