প্রেম, ব্যর্থতা এবং সংঘাতের ঐতিহাসিক গল্প – Historical love story

প্রেম
প্রেম ব্যর্থতার ঐতিহাসিক গল্প।  

ঘটনাটি শেয়ার করেছেন ভারতের বিখ্যাত লেখক খুসবন্ত সিং তার লেখা বই ” ট্রুথ লাভ অ্যান্ড এ লিটল ম্যালিস” এ। তিনি তখন আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন পাকিস্তানের লাহোর কোর্টে। আইনজীবী হিসেবে তরুন তার বন্ধুরাও ছিল তরুন। তো সেই তরুন আইনজীবী বন্ধুরা কি করতেন সেটা আগে জেনে নেই। তার লেখা থেকে –

আইন পেশায় যৌন বিষয় বরাবর আগ্রহ উদ্রেককারী বিষয়। আমার সময়ের তরুন আইনজীবীদের মন জুড়ে থাকত বিষয়টি। একজন আইনজীবী প্রতি রোববার সন্ধ্যায় পার্টির আয়োজন করত এবং তার অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য তিব্বি নামের এক বিখ্যাত বেশ্যালয় থেকে বেশ্যা সংগ্রহ করে আনত। সে সবসময় খবর রাখত যে, বেশ্যা বাজারে ‘নতুন মাল’ এসেছে কিনা। 

প্রেম

নবাগত এক আইনজীবী আমাদেরকে এক শেতাঙ্গানি বারবনিতার সাথে তার দেহ বিনিময়ের রগরগে গল্প বলত। এবং দেহের কোথায় কোথায় সে কামর বসিয়েছে বা নখ দিয়ে খামছে ধরেছে সেই দাগ দেখাত। এ ধরনের আসরে একটি প্রতিযোগিতা হত যে, একটা ছোট ডিকশনারি সুতো দিয়ে উত্থিত পুরুষাঙ্গে বেঁধে দেয়া হত। দেখা হত কারটা না বেঁকে ডিকশনারি ধারন করতে পারবে। কৈশোর সুলভ দোষ দিয়ে বেড়ে ওঠা লোক ছিল তারা।  

অভিবক্ত ভারতের লাহোরের সেসন জজ আদালত। ইংরেজ বিচারক ডোনাল্ড ফালসো। সুন্দরী এবং উল্লেখযোগ্য সম্পদের মালিক প্রেম প্রকাশ কাউর। শিখ ধর্মীয় মানুষ । তার বিয়ে হয়েছিল লুধিয়ানার বিত্তবান ঠিকাদারের একমাত্র পুত্রের সঙ্গে। তার স্বামী ছিল ব্যাভিচারী, সে সিফিলিসে আক্রান্ত হয়। বিয়েকে পূর্ণতা দানের আগেই তার মৃত্যু ঘটে। স্বামীর সম্পদও তার মালিকানায় চলে আসে। তিনি আরও ধনী হন।  

সিমলায় অবকাশ যাপনে গিয়ে তিনি ডেভিকোষ রেস্টুরেন্টে বসে চা পান করছিলেন। এক মুসলিম তরুন মলে বেড়ানোর সময় তাকে জানালার পাশে একাকী বসে থাকতে দেখে। তাদের চার চোখের মিলন হয় এবং প্রেম কাউরের হাসি যুবক কে প্রশ্রয় দেয়। মুসলিম যুবক তার সাথে চা পান করে। যুবক টি ছিল বেকার, অকর্মা। একজন নাপিতের ছেলে। পরিপূর্ণ ভাবে জানাজানির আগেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়। দুটো ছেলে জন্ম নেয়। ছেলে দুটোর খৎনা করানো হয়।  

জেনে নিন – কিভাবে সফলতার পথে হাঁটতে হয় 

প্রেম এবং= প্রেমিক প্রেমিকার রোমান্টিক পিক  

প্রেম

অভদ্র, অকর্মা স্বামীর কর্মকাণ্ডে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে উঠেন শিখ সুন্দরী। তিনি আলাদা হতে চান। স্বামীর নামে দুটো মামলা ঠুকেন কোর্টে। একটি সন্তানদের হেফাজতের প্রশ্নে অপরটি বলপূর্বক সম্পত্তি আটকে রাখার ফৌজদারি মামলা। তাকে সহায়তা করেন খালাত ভাই ব্যারিস্টার গুরনাম সিং ।      

স্বামী নিয়োগ দেন তৎকালীন লাহোরের বিখ্যাত আইনজীবী মনজুর কাদের কে। মনজুর কাদের পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। 

স্বামীর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছিলেন মনজুর কাদের। তিনি তিনটি নিদর্শন রাখলেন ডোনাল্ড ফালসোর সামনে।

পড়ুন – বাড়ছে ডিভোর্স কিন্ত কেন ?  

একটি শিখ রমণীর ইসলাম ধর্ম গ্রহনের এফিডেবিট অন্যটি বিয়ের নিকাহ্নামা। এরপর মনজুর কাদের তৃতীয় নিদর্শন পেশ করলেন। রিবনে বাধা সুন্দর একটি কাগজের প্যাকেট। ফালসোর টেবিলে রাখলেন। বললেন ” মহামান্য বিচারক, এটিই হচ্ছে চূড়ান্ত প্রমান, প্রেম কাউর শিখ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন স্বেচ্ছায়।”  

প্রেমিক প্রেমিকার রোমান্টিক ছবি 

প্রেম

এটা কি ? ফালসো জানতে চাইলেন। মহামহিম এটি খুললে ভিতরে কি আছে, আপনি দেখতে পাবেন। মনজুর কাদের বললেন। বিচারক ফালসো বিরক্তি সহকারে প্যাকেট টি খুললেন এবং তিনি এমনভাবে হাত সরিয়ে নিলেন, মনেহল তার হাতে বিদ্যুতের শক লেগেছে।

তার ফর্সা মুখ টমেটোর মত লাল হয়ে উঠল। তিনি গর্জে উঠলেন ” এটা কি ধরনের প্রমান”?

মনজুর কাদের বললেন ” মহামান্য আদালত, এগুলো ভদ্রমহিলার যৌন কেশ। যেদিন আমার মক্কেলের সাথে তার বিয়ে হয়, সেদিন সে এই কেশ মুণ্ডন করে স্বামীকে উপহার দেন।”  মহামান্য আদালতের জানা আছে যে, শিখরা কখনো তাদের চুল কাটে না। 

এটি সরিয়ে নিন, গারবেজে নিক্ষেপ করুন। ফালসো আবারও গর্জে উঠলেন।

পড়ুন – ইউনেস্কো শুরুর দিকের মজার কাহিনী 

প্রেম

সেলিম হোসেন – তাং ২১/০৫/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী ।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *